৫২ - بَابُ مَا جَاءَ فِيْ تَقْصِيْرِ الصَّلَاةِ فِي السَّفَرِ
১৪৯ - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْـمُنْكَدِرِ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ: صَلَّيْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ الظُّهْرَ أَرْبَعًا، وَالْعَصْرَ بِذِي الْـحُلَيْفَةِ رَكْعَتَيْنِ.
বাব নং ৬৭. ৫২. সফরে নামায কসর পড়া প্রসঙ্গে
১৪৯. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির থেকে, তিনি হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা রাসূল (ﷺ) ’র সাথে মদীনায় যোহর নামায চার রাকাত আদায় করেছি এবং যুলহুলাইফাতে আসরের নামায দু’রাকাত আদায় করেছি। (বুখারী, ২/৪৩/১০৮৯)
ব্যাখ্যা: এই হাদিসটি হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) রেওয়ায়েত করেছেন এবং তিনি এই হাদিসকে সহীহ বলেছেন। হাদিসটি সফরে নামায কসর পড়া সম্পর্কে সুস্পষ্ট দলীল।
১৫০ - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ ، قَالَ: كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُصلِّيْ فِي السَّفَرِ رَكْعَتَيْنِ، وَأَبُوْ بَكْرٍ، وَعُمَرُ لَا يَزِيْدُوْنَ عَلَيْهِ.
১৫০. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি আলকামা থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) সফরে (চার রাকাত বিশিষ্ট) নামায দু’রাকাত পড়তেন এবং হযরত আবু বকর ও ওমর (رضي الله عنه) এর উপর অতিরিক্ত কিছু করতেন না। (ইবনে মাজাহ, ১/৩৭৭/১১৯৩)
ব্যাখ্যা: ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র মতে সফরে কসর পড়া ওয়াজিব। তিনি দলীল হিসেবে উপরোক্ত দু’টি হাদিস ছাড়াও বুখারী-মুসলিমে বর্ণিত হাদিস পেশ করেন। বুখারী শরীফে আছে-
عن بن عمر يقول صحبت رسول الله صلى الله عليه وسلم فكان لايزيد فى السفر على ركعتين وابابكر وعمر وعثمان كذالك-
“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) , আবু বকর, ওমর ও ওসমান (رضي الله عنه)’র সাহচর্যে ছিলাম। তারা সফরে কখনো দু’রাকাতের বেশী পড়েন নি।
➥ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল (رحمة الله), (২৫৬ হিঃ) সহীহ্ বুখারী শরীফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠাঃ ১৪৯, করাচী
মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে,
-عن عائشة ان الصلوة اوّل ما فرضت ركعتين ثم اتمها فى الحضر فاقرات صلوة السفر على الفريضة الاولى-
“হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নামায প্রথমত দু’রাকাত ফরয হয়েছিল। অতঃপর সফরে দু’রাকাত স্থায়ী থাকে এবং স্থায়ী বাসস্থানে নামায চার রাকাত হয়ে যায়।”
➥ ইমাম মুসলিম (رحمة الله) (২৬১ হিঃ), মুসলিম শরীফ, খন্ড ১ম, পৃষ্ঠাঃ ২৩১, করাচী
নাসাঈ শরীফে ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,
قال ان الله عز وجل فرض الصلوة على لسان نبيكم صلى الله عليه وسلم فى الحضر اربعًا وفى السفر ركعتين -
“আল্লাহ তায়ালা তোমাদের নবীর জবানে নামায ফরয করেছেন আবাস স্থলে চার রাকাত, সফরে দু’রাকাত। ইমাম শাফেঈ (رحمة الله)’র মতে সফরে কসর ও পুরা উভয় পড়া জায়েয তবে কসর পড়া উত্তম। ইমাম মালিম ও আহমদ (رحمة الله)’র মতে কসর পড়া মুবাহ।
ইমাম শাফেঈ (رحمة الله) দলীল হিসেবে কুরআনের আয়াত,
-وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِي الْأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَقْصُرُوا مِنَ الصَّلَاةِ
“যখন তোমরা জমিনে ভ্রমণ করবে তখন নামায কসর করলে কোন গুনাহ নেই।” (সূরা নিসা, আয়াত, ১০১)
হানাফীদের পক্ষ থেকে এর জবাব হলো আয়াতটি অপর আয়াত لاجناح عليه ان يطوف بهما এর ন্যায়। অর্থাৎ এ আয়াত দ্বারা যেমন সাফা মারওয়া পবর্তদ্বয় সাঈ করা ওয়াজিব অনুরূপ ঐ আয়াত দ্বারাও সফরে নামায কসর পড়া ওয়াজিব।
অতএব, রাসূল (ﷺ) সহ বড় বড় সাহাবায়ে কিরামগণ থেকে সফরে দু’রাকাত পড়ার কথা প্রমাণিত যখন হয়েছে, তখন সফরে চার রাকাত পড়া মাকরূহ বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। এ মাসয়ালায়ও ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র মাযহাব অধিক সঠিক।
১৫১ - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللهِ: أَنَّهُ أَتَىٰ فَقِيْلَ: صَلَّىٰ عُثْمَانُ بِمِنًى أَرْبَعًا، فَقَالَ: إِنَّا لِلهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ، صَلَّيْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ رَكْعَتَيْنِ، وَمَعَ أَبِيْ بَكْرٍ رَكْعَتَيْنِ، وَمَعَ عُمَرَ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ حَضَرَ الصَّلَاةَ مَعَ عُثْمَانَ، فَصَلَّىٰ مَعَهُ أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ، فَقِيْلَ لَهُ: اسْتَرْجَعْتَ، قُلْتَ مَا قُلْتَ، ثُمَّ صَلَّيْتَ أَرْبَعًا؟ قَالَ: الْـخِلَافَةُ، ثُمَّ قَالَ: وَكَانَ أَوَّلَ مَنْ أَتَمَّهَا أَرْبَعًا بِمِنًى.
১৫১. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি আলকামা থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, জনৈক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে বলল, হযরত ওসমান (رضي الله عنه) মিনায় নামায চার রাকাত পড়েছেন। তখন তিনি বললেন, انا لله وانا اليه راجعون (অতঃপর বললেন) আমি রাসূল (ﷺ) ’র সাথে দু’রাকাত এবং হযরত ওমর (رضي الله عنه)’র সাথে দু’রাকাত নামায পড়েছি। এরপর তিনি হযরত ওসমান (رضي الله عنه)’র সাথে নামাযে অংশ গ্রহণ করেন এবং তাঁর সাথে চার রাকাত নামায পড়েন। ফলে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, আপনি এ ব্যাপারে ইন্নালিল্লাহ পড়েছেন অথচ আপনি নিজেই চার রাকাত পড়েছেন? তিনি উত্তরে বলেন, এটা খিলাফতের আদব রক্ষা করা হয়েছে। অতঃপর তিনি বলেন, হযরত ওসমান (رضي الله عنه) হলেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি মিনায় চার রাকাত পড়েছেন। (ইবনে মাজাহ, ২/১৪৫/১৯৬২)
ব্যাখ্যা: হযরত ওসমান (رضي الله عنه) হজ্ব সমাপন করার পর মিনায় অবস্থানের নিয়্যত করেছিলেন। তাই তিনি চার রাকাত আদায় করেছেন। আব্দুর রাযযাক (رحمة الله) এরূপ বর্ণনা করেছেন। এছাড়া ইমাম আহমদ (رحمة الله) এই ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, যখন হযরত ওসমান (رضي الله عنه)’র আমলের উপর লোকজন বিস্ময় প্রকাশ করেন, তখন তিনি ওযর পেশ করে বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে এটা বলতে শুনেছি من تاهل فى بلد فليصل صلوة المقيم “যখন কেউ কোন শহরে অবস্থান করে এবং পরিবারবর্গ নিয়ে বসবাস শুরু করে, তখন সে যেন মুকীমের ন্যায় নামায আদায় করে।”