❏ বিষয় নং-২৯: আতায়ী অদৃশ্য জ্ঞান:
দেওবন্দী এবং গাইরে মুকাল্লিদ আহলে হাদীস পন্থিরা রাসূলে পাক (ﷺ) এর আতায়ী ইলমে গায়েবকেও শিরক বলে, এমন কি এ আকিদা পোষণ কারীকে আবু জাহেলের চেয়েও জঘন্য মুশরিক বলে থাকে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা হল মহান আল্লাহর অনুগ্রহে আদি-অন্তের অবস্থা এবং অদৃশ্যের জ্ঞান রাখেন। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-
وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَجْتَبِي مِنْ رُسُلِهِ مَنْ يَشَاءُ
-“এবং আল্লাহর শান এ নয় যে, হে সর্বসাধারণ! তোমাদের কে অদৃশ্যের জ্ঞান দিয়ে দেবেন। তবে আল্লাহ নির্বাচিত করে নেন তার রাসূলগণের মধ্য থেকে যাঁকে চান।’’ ৩৫২
৩৫২. সূরা আলে ইমরান- আয়াত নং-১৭৯
ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) এর আকিদা:
আল্লামা ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতি (رحمة الله) তাঁর তাফসীরে বলেন-
{وَلَكِنَّ اللَّه يَجْتَبِي} يَخْتَار {مِنْ رُسُله مَنْ يَشَاء} فَيُطْلِعهُ عَلَى غَيْبِه
-‘‘এর অর্থ হল আল্লাহ রাসূলগণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা করে ইলমে গায়ব দান করেন।’’ ৩৫৩
৩৫৩. ইমাম সুয়ূতি, তাফসিরে জালালাইন শরীফ, ৯২ পৃ.
আল্লামা হাক্কী (رحمة الله)’র আকিদা:
আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন-
فَانَّ غَيْبَ الحَقَائِقِ وَالْأَحْوَالْ لَا يَنْكَشِفُ بِلَا وَاسِطَةِ الرَّسُوْلِ
-‘‘সুতরাং রাসূলে আকরাম (ﷺ) এর উসিলা ব্যতীত কোন অদৃশ্য বস্তুর প্রকৃত অবস্থা প্রতিভাত হয় না।’’ ৩৫৪
৩৫৪. তাফসীরে রুহুল বায়ান, ২য় খণ্ড, ১৩২ পৃ.
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ وَكَانَ فَضْلُ اللهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا
-“এবং আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা কিছু আপনি জানতেন না এবং আপনার উপর আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে।” ৩৫৫
৩৫৫. সূরা নিসা, আয়াত নং-১১৩
ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) এর আকিদা:
ইমামুল মুফাসসিরীন ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন-
مَا فِيهِ مِنْ الْأَحْكَام وَالْغَيْب
-‘‘(আপনাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা হল) আহকাম এবং ইলমে গায়ব।’’ ৩৫৬
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৩৫৬.
ইমাম সুয়ূতি, তাফসিরে জালালাইন, ১২২ পৃ.,
❏ মহিউস সুন্নাহ ইমাম বাগভী (رحمة الله) এ আয়াতের তাফসিরে লিখেন-
وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ..... وَقِيلَ: مِنْ عِلْمِ الْغَيْبِ
-‘‘(আপনার রব আপনাকে যা জানতেন না তা শিক্ষা দিয়েছেন) মুফাসসিরানে কিরাম বলেছেন, তা হলো ইলমে গায়ব।’’ (তাফসিরে মা‘আলিমুত তানযিল, ১/৭০০ পৃ.)
❏ এ আয়াতের তাফসিরে ইমাম তাবারী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
{وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ} [النساء: ১১৩] مِنْ خَبَرِ الْأَوَّلِينَ وَالْآخَرِينَ , وَمَا كَانَ , وَمَا هُوَ كَائِنٌ قَبْلَ
-‘‘(আপনার রব আপনাকে যা জানতেন না তা শিক্ষা দিয়েছেন) মুফাস্সিরানে কিরাম বলেছেন, তা হলো সৃষ্টির প্রারম্ভ থেকে লয় পর্যন্ত এবং ইতোপূর্বে যা হয়েছে যা কিয়ামতের পূর্বে হবে তা আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন।’’ (তাফসিরে তবারী, ৭/৪৮০ পৃ.)
❏ ইমাম সাম‘আনী (رحمة الله) এর আয়াতের তাফসিরে লিখেন-
{وعلمك مَا لم تكن تعلم} يعْنى:.....قيل: من علم الْغَيْب
-‘‘(আপনার রব আপনাকে যা জানতেন না তা শিক্ষা দিয়েছেন) মুফাসসিরানে কিরাম বলেছেন, তা হলো ইলমে গায়ব।’’ (তাফসিরে সাম‘আনী, ১/৪৭৭ পৃ.)
❏ ইমাম খাযেন (رحمة الله) এ আয়াতের তাফসিরে লিখেন-
وقيل علمك من علم الغيب ما لم تكن تعلم وقيل معناه وعلمك من خفيات الأمور وأطلعك على ضمائر القلوب وعلمك من أحوال المنافقين وكيدهم ما لم تكن تعلم
-‘‘মুফাসসিরানে কিরাম বলেছেন, রাসূল (ﷺ) যা জানতেন না তা হলো ইলমে গায়বের জ্ঞান যা মহান রব নবীজীকে নিজেই শিক্ষা দিয়েছেন। আবার কোনো কোনো মুফাসসিরানে কিরাম বলেছেন, আপনাকে অতি গোপনীয় বিষয় এবং অন্তরের রহস্যসমূহ এবং মুনাফিকদের অবস্থা সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন।’’ (তাফসিরে খাযেন, ১/৪২৬ পৃ.)
❏ আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) বলেন-
্রعلمك ما لم تكن تعلمগ্ধ نكته فعلمت علم الأولين والآخرين
-‘‘(আপনার রব আপনাকে যা জানতেন না তা শিক্ষা দিয়েছেন) তার ব্যাখ্যায় নবীজী নিজেই বলেন, আমি সৃষ্টির প্রারম্ভ থেকে লয় পর্যন্ত সব কিছু সম্পর্কে অবগত।’’ (তাফসিরে রুহুল বয়ান, ৫/৪৩৩ পৃ.)
❏ তিনি তার উক্ত বিখ্যাত তাফসিরে আরও লিখেন-
وعلم نبينا عليه السلام القرآن واسرار الالوهية كما قال وعلمك ما لم تكن تعلم
-‘‘নবী করীম (ﷺ) কোরআনের গভীর জ্ঞান, মহান রবের রহস্যময় জ্ঞান সম্পর্কে অবগত ছিলেন, যেমন মহান রব তা‘য়ালা আপনার রব আপনাকে যা জানতেন না তা শিক্ষা দিয়েছেন।’’ (ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বয়ান, ৯/২৮৯ পৃ.)
❏ ইমাম নিযামুদ্দীন নিশাপুরী (رحمة الله) এ আয়াতের তাফসিরে লিখেন-
الثاني أن يكون المراد منها خفيات الأمور وضمائر القلوب أي علمك ما لم تكن تعلم من أخبار الأولين،
-‘‘এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরদের দ্বিতীয় অভিমত হলো, আপনাকে অতি গোপনীয় বিষয় এবং অন্তরের রহস্যসমূহ জানিয়ে দেয়া হয়েছে অর্থাৎ যা আপনি যা জানতেন না তা অর্থাৎ তা হল সৃষ্টির প্রারম্ভের ঘটনাবালী।’’ (তাফসিরে নিশাপুরী, ২/৪৯৪ পৃ.)
❏ বিখ্যাত হাদিসের সমালোচক, ইমাম ইবনে জাওযী (رحمة الله) লিখেন-
والثاني: أخبار الأولين والآخرين،
-‘‘এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরদের দ্বিতীয় অভিমত হলো, সৃষ্টির প্রারম্ভ থেকে লয় পর্যন্ত সব কিছু সম্পর্কে আপনাকে অবহিত করেছেন।’’ (ইবনে জাওযী, যাদুল মাইসীর, ১/৪৭০ পৃ.)
━━━━━━━━━━০━━━━━━━━━━
ইমাম নাসাফী (رحمة الله)’র আকিদা:
আল্লামা নাসাফী (رحمة الله) বলেন-
{وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ} من أمور الدين والشرائع أو من خفيات الأمور وضمائر القلوب
-‘‘পুত্র পবিত্র শরীয়তের আহকাম এবং দ্বীনের বিষয়সমূহ শিক্ষা দিয়েছেন এবং অদৃশ্যজ্ঞানের এমন সব বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন যা আপনি অবগত ছিল না। আবার কারো মতে এর অর্থ হল আপনাকে অতি গোপনীয় বিষয় এবং অন্তরের রহস্যসমূহ জানিয়ে দেয়া হয়েছে।’’ ৩৫৭
৩৫৭. ইমাম নাসাফী, তাফসীরে মাদারিকুত তানযীল, ১ম খণ্ড, ৩৯৫ পৃ.
আল্লামা মোল্লা মঈন কাশেফী (رحمة الله)’র আকিদা:
আল্লামা কাশেফী (رحمة الله) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন-
آں علم ما كان وما يكون ہست كہ حق سبحانه در شب اسرا بلا حضرت عطا فرمود چنا نچہ در حديث معراج ہست كہ من درزيه عرش بهدم قطره در حلق من ريحنتذ فَعَلِمْتُ مَا كَانَ وَمَا يَكُوْن
-‘‘এটা হল আদি-অন্তের জ্ঞান যা পবিত্র মেরাজ রজনীতে হুযুর আকরাম (ﷺ) কে দান করা হয়েছে। যেমন মেরাজ শরীফের হাদিসে রাসূলে পাক (ﷺ) বলেন, আমি আরশের নীচে ছিলাম এ সময় আমার কণ্ঠনালীতে একফোঁড়া দেয়া হল, এর ফলে আমি পূর্বাপর সবকিছু সম্পর্কে অবগত হলাম।’’ (তাফসীরে হুসাইনী, ১৪৪ পৃ.)
আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
الرَّحْمَنُ (১) عَلَّمَ الْقُرْآنَ (২) خَلَقَ الْإِنْسَانَ (৩) عَلَّمَهُ الْبَيَانَ (৪)
-“পরম-দয়ালু আপন মাহবুবকে কোরআন শিক্ষা দিয়েছে। মানবতার প্রাণ মুহাম্মদ (ﷺ) কে সৃষ্টি করেছেন, যা সৃষ্টি হয়েছে এবং যা সৃষ্টি হবে সব কিছুর (পূর্বা-পর) সপ্রমাণ বর্ণনা তাঁকেই শিক্ষা দিয়েছেন।’’ ৩৫৮
৩৫৮. সূরা রহমান, আয়াত নং-১-৪
আল্লামা খাযেন (رحمة الله)’র আকিদা:
তাফসীরে খাযেনে উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে
وقيل أراد بالإنسان محمدا صلّى الله عليه وسلّم علّمه البيان يعني بيان ما يكون وما كان لأنه صلّى الله عليه وسلم ينبئ عن خبر الأولين والآخرين وعن يوم الدين
-‘‘কোন কোন মুফাস্সিরগণ বলেছেন যে, (উক্ত আয়াতে) ইনসান বলতে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে বুঝানোর উদ্দেশ্য। (عَلَّمَهُ الْبَيانَ)-এর মমার্থ হলো, তাঁকে (মুহাম্মদ (ﷺ) কে) পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যা হবে সব বিষয়ের বিবরণ এবং কিয়ামতের দিন হওয়া পর্যন্ত সব অবহিত করেছেন।’’ ৩৫৯
৩৫৯. ইমাম খাযেন, তাফসীরে লুবাবুত তা‘বীল, ৪/২২৫ পৃ.
আল্লামা কাযী সানাউল্লাহ পানিপথী (رحمة الله)’র আকিদা :
তিনি বলেন-
وَعَلَّمَكَ الْعُلُوْمِ بِالْاَسْرَارِ وَالْمُغِيْبَاتِ
-‘‘আল্লাহ তা‘য়ালা আপনাকে অদৃশ্যের জ্ঞান দিয়েছেন।’’৩৬০
৩৬০. কাযি সানাউল্লাহ পানিপাথি, তাফসীরে মাযহারী, ২/২৩৪ পৃ.
আল্লামা জারুল্লাহ যামাখশশারীর আক্বিদা:
আল্লামা যামাখশশারী তার স্বীয় তাফসীরে কাশশাফে বলেন-
من خفيات الأمور وضمائر القلوب، أو من أمور الدين والشرائع.
-‘‘গোপন বিষয় মানুষের অন্তরের খবর এবং দ্বীনের বিষয় এবং শরীয়তের হুকুম আহকাম সমূহ।’’ ৩৬১
৩৬১. যামাখশারী, তাফসীরে কাশশাফ, ১ম খণ্ড, ৫৬৪ পৃ.
আল্লামা বাগবী (رحمة الله)’র আকিদা:
তাফসীরে মুআলিমুত তানযীলে এই আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে-
وَقَالَ ابْنُ كَيْسَانَ: خَلَقَ الْإِنْسانَ (৩) يَعْنِي مُحَمَّدًا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَّمَهُ الْبَيانَ (৪) يَعْنِي بَيَانَ مَا كَانَ وَمَا يَكُونُ لِأَنَّهُ كَانَ يُبِينُ عَنِ الْأَوَّلِينَ وَالْآخَرِينَ وَعَنْ يَوْمِ الدِّينِ.
আল্লাহ তা‘য়ালা ইনসান তথা হুযুর আকরাম (ﷺ) কে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে আদি-অন্তের সবকিছুর জ্ঞান দেয়া হয়েছে।“ ৩৬২
৩৬২. ইমাম বাগভী, তাফসীরে মুআলিমুত তানযীল, ৪/৩৩১ পৃ.
সুতরাং কুরআন সুন্নাহর আলোকে বুঝা গেল আহলে হাদীস এবং দেওবন্দীরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।