সপ্তবিংশ অধ্যায়
দাওয়াত দেওয়া ও গ্রহণ করার সুন্নাত পদ্ধতি
মেহমানদারি ও সম্পর্কোন্নয়নের রয়েছে দুটি মাধ্যম। একটি হচ্ছে দাওয়াতকারী তথা মেজবান, অপরটি হচ্ছে দাওয়াত গ্রহণকারী বা মেহমান। দাওয়াত গ্রহণ এবং প্রদানে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
পারিবারিক ও সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষায় দাওয়াত প্রদান ও গ্রহণ অনেক জরুরি বিষয়। কারণ ইসলাম দাওয়াত গ্রহণ ও প্রদানের মতো বড় সামাজিকতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে।
কুরআন ও হাদিসে এসব বিষয়ে অনেক তাগিদ দেয়া হয়েছে। আবার সম্পর্ক নষ্ট করার ব্যাপারে হাদিসে ভয়াবহ শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রাখতে মেহমানদারি তথা দাওয়াত গ্রহণ এবং প্রদানের রয়েছে উত্তম আদব। তা হলো-
দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে সুন্নাত পদ্ধতিঃ-
১। সুন্নাতের নিয়তে আন্তরিকতা সঙ্গে দাওয়াত দেয়া, তা যেন লোক দেখানোর উদ্দেশ্য না হয়।
২। মেহমান আসার সঙ্গে সঙ্গে দেরি না করে আপ্যায়ন করা। আর আপ্যায়নের সময় দেরি না করে মেহমানকে খাবার দেয়া উত্তম।
৩। খাবার ব্যাপারে প্রশ্ন না করে খাবার পরিবেশন করা।
৪। মেহমানদারির শুরুতে হালকা খাবার ও পরে সাধ্যমতো ভারি ও উত্তম খাবার পরিবেশ করা। কারণ জান্নাতে প্রথমে মুমিন বান্দাকে ফল দিয়ে আপ্যায়ন করা হবে এবং পরে ভারী খাবার পরিবেশনের দিকনির্দেশনা রয়েছে।
৫। মেহমান যদি হকদার, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী হয় তবে তাদের যথাযথ আপ্যায়ন ও খেদমত করা।
৬। মেহমানদারির পর বিদায়ের মুহূর্তে মেহমানকে সামনে এগিয়ে দিয়ে আসাও প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত।
দাওয়াত গ্রহণে সুন্নাত পদ্ধতিঃ-
১। সমস্যা না থাকলে দাওয়াত কবুল করা।
২। দাওয়াত গ্রহণে ধনী-গরিব সবেইকে সম্মান করা।
৩। দাওয়াত গ্রহণের সময় (মেজবানকে) সুনির্দিষ্ট কোনো খাবারের ব্যাপারে নিজেকে তাগিদ না দেয়া। তবে যদি নির্দেশনা থাকে তবে, সবচেয়ে সহজসাধ্য মেনু নির্বাচন করাই উত্তম।
৪। দাওয়াত গ্রহণকারী ব্যক্তি সঙ্গে করে অতিরিক্ত কাউকে দাওয়াতে না নেয়া। যদি অনুমতি থাকে তবে সে ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই।
৫। দাওয়াতের সুনির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা করা।
৬। মেজবান যাই আয়োজন করুন না কেন; তা সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করা।
৭। আয়োজনকারীদের খাবারের স্বাদ ও মেহমানদারীর প্রশংসা করা।
৮। খাবারসহ মেহমানদারির যাবতীয় আয়োজন শেষে দাওয়াত প্রদানকারীর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা।
৯। দাওয়াতে উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে উপঢৌকন বা উপহার দেয়ার ভয় বা লজ্জায় দাওয়াত বর্জন না করা।
১০। দাওয়াত গ্রহণ করে একাধারে কারো বাড়িতে ৩ দিনের বেশি অবস্থান না করা।
১১। ফেতনার আশংকা থাকলে যে বাড়িতে পুরুষ অভিভাবক নেই; সে দাওয়াতে না যাওয়া।
১২। সামর্থ থাকলে মেজবানের বাড়িতে সাধ্যানুযায়ী হাদিয়া বা উপঢৌকন নেয়া।