ব্যক্তির জন্যই হবে অনুতপ্ত তাওবাকারীর সে ব্যক্তির জন্য নয়, যে তাওবা করেনি।
পঞ্চমতঃ হযরত সাওয়াদ ইবনে কারিব (رضي الله عنه) ওহাবীদের এ ধারণা খন্ডনের জন্য রাসুলের কাছে ফরিয়াদ করেছেন।
যষ্ঠতঃ প্রথমেই যে বলেছিলাম, হুজুর সৈয়দে আলম (ﷺ)-এর শাফায়াত সবচেয়ে নিকটতর। তা থেকে উন্নতি করে শাফায়াতকে হুজুরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন এবং এ সত্যই অবশিষ্ট রয়েছে। আর সকল শাফায়াতকারী নবীর দরবারেই শাফায়াতের জন্য দরখাস্ত করবেন। আল্লাহর নিকট হুজুর (ﷺ) ব্যতীত কোন শাফায়াতকারী নেই। যেমন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন ‘আমি সকল নবীদের শাফায়াতের মালিক, এটা আমার গর্ব নয়।'
সপ্তমতঃ তিনি প্রমাণ করেছেন, যে রাসুলে পাক (ﷺ)-এর সাহায্য প্রার্থী হবে, সে অবশ্যই হুজুরের সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। এতে ওহাবীদের পেশাওয়ার - (ইসমাইল দেহলভী) উক্তির খন্ডন রয়েছে। সে এ উক্তি করেছিলাে, নবীয়ে করীম (ﷺ) স্বীয় কন্যার কল্যাণ করতেও অক্ষম। অন্যেরতাে প্রশ্নও উঠেনা।' সুতরাং এ সম্মানিত সাহাবীর এ সামান্য বাক্যের মহা কল্যাণ দেখুন! নিশ্চয়। হাদিস সাক্ষ্য যে, রাসুলে পাক (ﷺ) তাঁর এ সকল বাক্যবলী স্থায়ী করে রেখেছেন। এটাই বুঝে নিন। আর আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-“যে দিবসে আল্লাহ তায়ালা সকল নবীদের একত্রিত করবেন এবং তাদের বলবেন তােমরা কি উত্তর দিবে? আরজ করবেন, আমাদের কিছু জানা নেই।
আমি বলছি, আম্বিয়ায়ে কিরাম প্রকৃত অবস্থার উপর বাক্যলাপ করেছেন এবং স্বীয় (সত্ত্বাগত) জ্ঞানের পরিপূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন। এ কারণে যে, ছায়া যখন বাস্তবের সম্মুখীন হয়, তখন সে কিছু দাবী করতে পারে না। আর ফিরিস্তারা আরজ করেছেন, আপনার পবিত্রতা আমাদের এ সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই, কিন্তু আপনি যা আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। এখানে ফিরিস্তারা প্রকৃত প্রদত্ত জ্ঞান সম্পর্কে বাক্যলাপ করেছেন। সুতরাং উভয়ের অস্বীকারকে একত্রিত করলে দেখা যায়, হযরত আম্বিয়ায়ে কিরাম শিষ্টাচারের দিক দিয়ে ফিরিস্তাদের থেকেও অনেক ঊর্ধ্বে, তা’জীমের সম্মান দিক দিয়েও তাদের সবার উপর দরুদ ও সালাম।
ফিরিস্তাদের যখন স্মরণ আসলাে, তখন তারা নিজ বাক্য পরিবর্তন করলেন এবং হাছর (বিশিষ্টতা) মুলকভাবে ইরশাদ করলেন যে, নিশ্চয়ই আপনি জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময় অর্থাৎ আপনি ব্যতীত কোন জ্ঞানী নেই। সারাংশ হলাে, সব আল্লাহর জন্য আর তার প্রদত্ত ব্যতীত কেউ কিছুর জ্ঞান রাখেনা। তাহলে কথার মােড় এদিকেই ঘুরলাে যা ইমামগণ বিশ্লেষণ করেছেন যে, অস্বীকার (টিকা ১) এরই যে, কেউ স্বয়ং আল্লাহ প্রদত্ত ব্যতীত সত্তাগত ভাবে জ্ঞানী নয়।
(টিকা ১) যে ব্যক্তি জেনেছে এবং দেখেছে যা প্রথম নজরে' অতিবাহিত হয়েছে? অতঃপর পারস্পরিক প্রতিকুলতার অপবাদ দিয়েছে সুস্পষ্ট আয়াত সমূহে। নিশ্চয়ই সে অলসতা করেছে ও ধােকা খেয়েছে। আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থী যেন তিনি আমাদের পূর্বাপর সকল গুনাহ ক্ষমা করেন!
আল্লাহ ব্যতীত পাঁচটি বিষয়ের জ্ঞান সম্পর্কে কেউ অবগত নয়-এর ব্যাখ্যাঃ
কতেক ব্যক্তি “রওজুন নাফীর শরহে জামেউসসগীর মিন আহাদীসীল, বাশীর” থেকে উদ্ধৃত করে বলেন-“বাকী রইলাে হুজুরে করীম (ﷺ) এর এ বাণী, আল্লাহ ব্যতীত এ পঞ্চবস্তুর জ্ঞান সম্পর্কে কেউ অবগত নয়’। এর অর্থ হলাে এ পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞান সত্ত্বাগতভাবে কেউ জানেন না তিনি ব্যতীত। কিন্তু কখনাে আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান দ্বারা জানা যায়। কেননা, এখানে এর জ্ঞানী বিদ্যমান। এবং আমরা এর জ্ঞান অনেক ব্যক্তির কাছ থেকে জ্ঞাত হয়েছি। যেমন আমরা এক সম্প্রদায়কে দেখেছি যে, তাদের জানা ছিলাে, কখন তারা ইনতিকাল করবেন এবং পেটের সন্তান মায়ের গর্ভে আসার পূর্বেই জেনে নিয়েছেন।”
আমি বলছি, শরহুসসুদূরে’ ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী ‘বাহাজাতুল আসরারে’ ইমাম নুরুদ্দীন আবিল হাসান আলী নখয়ী শানুফী 'রাওজাতুর রায়াহীন’ ও ‘খােলাসাতুল মাফাখীরে ইমাম আসয়দ আবদুল্লাহ ইয়াফিয়ী, এছাড়া আরাে অনেক আওলিয়ায়ে কিরামের কিতাবে এ বিষয় সম্পর্কিত অনেক বর্ণনা এসেছে যা অস্বীকার করার উপায় নেই; কিন্তু বৃঞ্চিতরা। আল্লাহ আমাদেরকে তাদের বরকত থেকে বঞ্চিত না করুন। অনুরূপ ভাবে ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (رحمة الله) শরহে হামজায়া’ গ্রন্থে অদৃশ্য *জ্ঞান প্রদত্ত হওয়ার বিশ্লেষণ করেছেন। সেখানে তিনি বলেন-
“আম্বিয়া ও আওলিয়ায়ে কিরামের জ্ঞান আল্লাহ প্রদত্ত। (কিন্তু) আল্লাহর ঐ জ্ঞান নয় যা তার সাথে খাস। আর তা আল্লাহ তায়ালার ঐ গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত যা ধ্বংসহীন, স্থায়ী, অনন্ত-অফুরন্ত, চিরস্থায়ী এবং পরিবর্তন-পরিবর্ধন ও ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে সম্পূর্ণ পাক-সাফ ও পবিত্র। এতটুকু পর্যন্ত ইরশাদ করেছেন যে, এটা অস্বীকার করা যায় না যে, আল্লাহ তাঁর কতেক নৈকট্যশীল বান্দাদের অদৃশ্য জ্ঞান প্রদান করেন। এমন কি ঐ পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞানও যেগুলাে সম্পর্কে রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন যে, তা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানেন না। এ কারণে শেখ আবদুল হক মােহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) শরহে মিশকাতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন-“এর অর্থ (টিকা ১) হলাে "পঞ্চজ্ঞান আল্লাহ প্রদত্ত ব্যতীত (টিকা ২)।"
______________
টিকা ১। লুমআতের বক্তব্য হলাে- ‘উদ্দেশ্য হচ্ছে এ যে, আপনি আল্লাহ তায়ালার তায়ালার শিক্ষা ব্যতীত জানেন না।' ইমাম কুস্তুলানী (رحمة الله) ইরশাদুসসারী’তে সুরা আনআমের তাফসীরে বলেছেন- “তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন, কেউ এর অবতরণের (বর্ষণের) স্থান অগ্র পশ্চাদ ব্যতীত জানেন না। আর কোন শহরে বর্ষিত হয়ে কোন শহর অতিক্রম করবেনা তা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানেন না। কিন্তু যখন তিনি নির্দেশ প্রদান করেন, তখন তাঁর ফিরিস্তা ও মােয়াক্কেলগণ জেনে নেন। আর তিনিও অবগত হন যাকে আল্লাহ স্বীয় মাখলুক থেকে ইচ্ছে নির্দেশ করেন। আর যা কিছু গর্ভাশয়ে রয়েছে, তিনি ব্যতীত তা কেউ জানেন না। কিন্তু যখন তিনি নির্দেশ করেন, তখন ফেরেস্তারা এবং যাকে আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছে স্বীয় মাখলুক থেকে জ্ঞাত হন। আল্লাহ তায়ালার এ বাণী ‘কিন্তু তাঁর নির্বাচিত রাসুলদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে তিনি এ সম্পর্কে অবহিত করেন থেকেই তা প্রমাণ করা হয়েছে। আর ওলী হলেন রাসুলের অনুসারী। তাঁদের থেকেই নিয়ে থাকেন।
টিকা ২'।
অনুরূপ বলেছেন আল্লামা শিহাবুদ্দীন (رحمة الله) “ইনায়াতুল কাযীতে’ (তাঁর নিকট রয়েছে গায়বের চাবিকাঠি)। আল্লাহ তায়ালার সাথে এটা খাস করার কারণ এ যে, প্রারম্ভ ও মূল অবস্থায় তা যেভাবে ছিলাে, তেমনি আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত আর কেউ জানেন না। আল্লাহর প্রশংসা! আমাদের আধিক্যের কোন প্রয়ােজন নেই। সৈয়দ মদনীই এ পুস্তিকায় যা তার দিকে সম্পর্কিত হয়েছে বলেছেন, যার বক্তব্য নিম্নরূপ- “আমরা এখানে কতেক ইমামদের অভিমত বর্ণনা করছি, বিশ্লেষণের স্থানের জন্য। সুতরাং আমরা বলছি হাফিজ ইবনে কাসীর স্বীয় তাফসীরে বলেছেন-আল্লাহ তায়ালার বাণী-(আল্লাহর নিকটই রয়েছে কিয়ামতের জ্ঞান) এটা গায়বের চাবিকাটিসমূহ যা আল্লাহ তায়ালা নিজের জন্য খাস করে। নিয়েছেন। তাঁর শিক্ষা ব্যতীত কেউ তা জানেনা। কিন্তু তাঁর শিক্ষা দেয়ার পর এ সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়।”..... আল্লাহর জন্য প্রশংসা, সুতরাং উদীয়মান সূর্য রশির ন্যায় প্রতীয়মান হলাে এর। অর্থ হলাে-“আল্লাহ প্রদত্ত ব্যতীত পঞ্চ জ্ঞান তাঁর জন্য খাস হওয়া। সুতরাং তিনি ব্যতীত তা কেউ জানেন না, কিন্তু তিনি যাকে জ্ঞাত করান। এ হলাে, আমাদের দাবী। সত্য সমাগত, বাতিল পরাভূত। নিশ্চয় বাতিল পরাভূত হওয়ারই ছিলাে। আল্লাহর জন্যই স্তুতি বন্দনা। সাহায্য এসেছে, কর্ম সম্পাদনা হয়েছে এবং আল্লাহর কর্ম প্রকাশিত হয়েছে, অথচ তারা তা অপছন্দই করতাে। স্বীয় আকল, জ্ঞান ও বিবেক দ্বারা কেউ জানেন না। এ কারণে যে, এ পঞ্চজ্ঞান ঐ অদৃশ্য বস্তুসমূহের অন্তর্গত, যা আল্লাহ প্রদত্ত ব্যতীত কেউ অবগত নন।” যুগের ইমাম বদরুদ্দীন আইনী (‘ওমদাদুল ক্বারী শরহে বুখারীতে উল্লেখ করেন-“ইমাম কুরতুবী (رحمة الله) বলেছেন, এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, এ পঞ্চ অদৃশ্য বস্তুসমূহ অবগত হওয়াতে কারাে জন্য লােভের স্থান নেই। আর নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আল্লাহ তায়ালার এ বাণী-“আল্লাহর নিকট গায়বের চাবিকাটি দ্বারা এ পঞ্চজ্ঞানের।
(২) আল্লামা আলী ক্বারী (رحمة الله) “মিরক্কাতে” হাদীসে জিবরাইলের ব্যাখ্যায় তা উল্লেখ করেছেন। অনুরূপ আল্লামা কুলানী (رحمة الله) ইরশাদুসসারী’তে বর্ণনা করেন। আমি এরা হলেন হানাফী, শাফেয়ী ও মালেকী মাযহাবের শীর্ষস্থানয়ি ওলামায়ে কিরাম।
যেমনঃ ইমাম আইনী, ইমাম কুরতুবী, ইমাম শাতনুফী, ইমাম ইয়াফী, ইমাম সুয়ুতী, ইমাম কুস্তুলানী, ইমাম ইবনে হাজর, আল্লামা কৃারী, আল্লামা শানুওয়ানী, শেখ বায়জুরী, শেখ আবদুল হক্ব মােহাদ্দেছ দেহলভী, শেহাবুদ্দিন খেফাযী (রহঃ) প্রমুখ। হে সৈয়দ সাহেব! আপনি নিজে এবং যারা জীবন চরিত ও ফজিলত সম্পর্কিত গ্রন্থ রচনা করেছেন, সকল সুফী গ্রন্থকার ও তাঁদের অনুসারী দ্বীনের আমির ও আরাকীন ওল-মায়ে কিরাম। যাদের সালের দিকে আপনি তা সম্পর্কিত করেছেন যে, তারা সবাই শুধুমাত্র স্বীয় বিরুদ্ধতার কারণে এ বস্তু যা রাসুলে পাক (ﷺ) কুরআনে করীম থেকে জ্ঞাত হয়েছেন সে সম্পর্কে মহা ভ্রান্তিতে রয়েছে এবং তারা অকাট্যভাবে দ্বীনের বিরুদ্ধোচরণ করেছে। কেননা, তারা মতভেদ ও বিবাদ করে দিয়েছে ঐ সত্য ও সুস্পষ্ট বক্তব্যে যাতে না ছিলাে কোন সন্দেহ,না কোন কঠোরতা। এটা (তার বক্তব্য) হলাে কঠিন বিপদসঙ্কুল, শক্ত নিভীকতা এবং কঠোর ত্রুটিপূর্ণ, ভ্রান্ত ও ধ্বংসাত্মক ধারণা। তােমরা নিজেদের ব্যাপারে কি বললাঃ হে নিরােত্তরকারীরা! অতঃপর এগুলােকে পরবর্তীদের থেকে সিরযিমায়ে কৃলীলা ও শীর্ষস্থানীয় কতেক সুফীদের বলে তাবীর করা দৃষ্টিয়ানুভূতি থেকে হটকারিতা এবং হকের সাথে প্রতারণা। বরং তারা হলেন বড়দল ও বৃহৎ সম্প্রদায় তাঁদের বক্তব্যসমূহকে কেউ খন্ডন করেন নি। কিন্তু যারা অন্তরে দ্বীনের ফিতনা-ফ্যাসাদ ও বিশৃঙ্খলা করতে চাই।। তাদের সৃষ্টির কোন নিশ্চয়তা নেই। যেমন মােতাজেলা, ওহাবী (আল্লাহ তাদের অপমানিত করুন)। অথবা তাদের যাদের পদস্খলন ঘটেছে যারা তাদের লিখায় সীমাতিক্রম করেছে, আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
তাফসীর (ব্যাখ্যা) করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি পঞ্চজ্ঞান কারাে জন্য দাবী করে এবং তা রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর জ্ঞান দান বলবে না, সে স্বীয় দাবীতে মিথুক।”
দেখুন! শুধুমাত্র তাকে মিথুক বানিয়ে দিয়েছে, যে ঐ পঞ্চজ্ঞানকে নিজের জন্য রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর মাধ্যম ছাড়া দাবী করে। অধিকন্তু জোর গলায় বলা হয়েছে-‘নবী (ﷺ) পঞ্চগায়ব সম্পর্কে জ্ঞাত আছেন এবং আউলিয়ায়ে কিরামদের যাকে ইচ্ছে বলে দেন। আল্লামা ইব্রাহীম বায়জুরী কাসীদায়ে বুরদার’ ব্যাখ্যাগ্রন্থে বিশ্লেষণ করেছেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ)কে আল্লাহ তায়ালা এ পঞ্চ জ্ঞান প্রদানের পূর্বে তিনি দুনিয়া হতে তশরীফ নিয়ে যাননি।
আমি বলছি, এ পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞান সম্পর্কে যা উপরােল্লেখিত হয়েছে তা অত্যন্ত সুস্পষ্ট গায়বের অন্তর্ভুক্ত। এর সীমা তিনিই জানেন, যিনি দান করেছেন এবং যাকে দান করেছেন [আল্লাহ তায়ালা ও রাসুলুল্লাহ (ﷺ)]। তিনি কি এমন প্রকাশ্য ঘটনাদি যা বন্টন করে আলাদা করে রাখা হয়েছে তাতে কৃপনতা। করবেন? এ বিষয়টিকে শানওয়ানী “জমীউন নিহায়া” গ্রন্থে হাদীস সহকারে বর্ণনা করেছেন যে, নিশ্চয়ই বর্ণিত হয়েছে “আল্লাহতায়ালা নবীয়ে করীম (ﷺ)কে (তার সান্নিধ্যে) নেন নি, যতক্ষণ প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে হুজুরকে জ্ঞান প্রদান করা হয়নি।” আমি বলছি, নিশ্চয়ই আমরা ঐ আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করেছি যা এর মর্মার্থ স্পষ্ট করে দেয় এবং ঐ সহীহ হাদীসমূহ যা এর বিষয়কে সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করে। তাছাড়া তাতে কতেক মুফাচ্ছেরীন থেকে এ ভাষ্য উদ্ধৃত করেছেন যে, এ পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞানসমূহ কেউ স্বয়ং সত্ত্বাগতভাবে মাধ্যমবিহীন আল্লাহ ব্যতীত জানেন না। এর জ্ঞান মাধ্যম সহকারে আল্লাহর সাথে খাস নয়।? * আমি বলছি বরং এখনতাে তা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের সাথে খাস হলাে। কারণ, আল্লাহ তায়ালার জ্ঞানে মাধ্যম হওয়া অসম্ভব। '
‘ইবরিজ' নামক কিতাবে স্বীয় পীর ও মুর্শিদ আমাদের সরদার আবদুল আজীজ (رحمة الله) থেকে উক্ত করেছেন- এ আয়াতে যে পাঁচটি অদৃশ্য বস্তু উল্লেখ আছে তা থেকে নবীয়ে করীম (ﷺ)-এর উপর কোন বস্তু লুকায়িত নেই। আর পঞ্চগায়ব হুজুর (ﷺ)-এর জন্য কেনই বা লুকায়িত থাকবে? অথচ হুজুরের উম্মতের সাত কুতুবও তা সম্পর্কে জানেন; অথচ, তাঁদের স্থান গাউসের নীচে সুতরাং কোথায় গাউস আর কোথায় সৃষ্টির আদি-অন্তের সৈয়দ, যার কারণে সকল সৃষ্টির অস্তিত্ব।” * আমি বলছি, সাত কুতুব দ্বারা আবদালগণই উদ্দেশ্য, যারা সত্তর আবদালের থেকেও মর্যাদাবান এবং গাউসের দু'জন উজীর থেকে যাদের স্থান নিম্নে। এছাড়া ‘ইবরিজে’ তিনি (رحمة الله) আরাে বলেছেন “ঐপঞ্চ অদৃশ জ্ঞানের বিষয় হুজুর সৈয়দে আলম (ﷺ)-এর নিকট কিভাবে গােপনীয় হতে পারে? অথচ হুজুরের ইন্তেকাল প্রাপ্ত উম্মতগণের মধ্যে তাছাররুফের ক্ষমতাবান কেউই ততক্ষন তাছাররুফ (মৃত্যু পরবর্তী সাহায্য) করতে পারে না, যতক্ষণ ঐ পঞ্চ বিষয়ে না জানেন।” সুতরাং হে অস্বীকারকারীরা তার এ বাক্যগুলাে শ্রবণ করাে, আল্লাহর ওলীদের মিথ্যা সাব্যস্ত করােনা। তাদের মিথ্যা প্রতিপন্ন দ্বীনের ধ্বংস ডেকে আনে। অতিসতুর আল্লাহ তায়ালা প্রতারকদের থেকে প্রতিশােধ গ্রহণ করবেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর আরিফ বান্দাদের উসিলায় আমাদের ক্ষমা করুন, আমীন।
_______________
(১) আলহামদুলিল্লাহ! আমি এটা অস্বীকৃতি জ্ঞাপক পুস্তিকার পূর্বে লিখেছি। তাতে ঐ ব্যক্তির দিকে ইঙ্গিত রয়েছে যে আওলিয়ায়ে কিরাম ও সুফীয়ানে কিরাম থেকে পলায়ন করেছে এবং কৌশল অবলম্বন করেছে যে, শেখ আবদুল ওয়াহাব শা’রানী (رحمة الله) স্বীয় কিতাব আল ইওয়াকৃত ওয়াল জাওয়াহিরে’ বলেন- আল্লাহর কাছে ক্ষমা এ থেকে যে, আমি অধিকাংশ ইসলামী দর্শনবেত্তাদের বিরুদ্ধাচরণ করবাে এবং সে আকীদা পােষন করবাে যা কতেক গায়রে মাসুম (নিস্পাপ নন) আহলে কাশফদের উক্তির বিশুদ্ধতার বিপরীত। কেননা, আকায়েদের ক্ষেত্রে ইমাম শারানীর (رحمة الله) কালাম আহলে সুন্নাতেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহর পানাহ তা থেকে যে, আউলিয়ায়ে কিরাম তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করেছেন। আর যে উক্তিতে তার বিপরীত ধারণা তা হয়তঃ তাদের অপবাদ ও প্রতারণা। যেমন স্বয়ং উক্ত ইমাম চার লাইন পরে এ উক্তি বর্ণনা করেছেন। নতুবা অল্পজ্ঞানের কারণে তারা এদিকে ইঙ্গিত করে এর উদ্দেশ্য পর্যন্ত পৌঁছতে পারে নি, যেমন তিনি নিজে বাক্যের প্রারম্ভেই তাঁর নিজের উক্তি বর্ণনা করেন- আমি প্রত্যেক ঐ ব্যক্তিকে উপদেশ করছি, যে আহলে কাশফের উক্তি বুঝার ক্ষমতা রাখেনা সে যেন কালাম শাস্ত্রবিদদের বাহ্যিক উক্তির উপর অগ্রসর না হয় এবং তা থেকে অতিক্রম না করে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন অতএব, যদি তাতে এমন মােষলধারে বৃষ্টিপাত নাও হয় তবে হাল্কা বর্ষণই যথেষ্ট। এরপর এ মহান ইমাম বর্ণনা করেন-এজন্য আমি অধিকাংশ স্থানে আহলে কাশফদের বাণীর পরে বলে দিই যে, চিন্তা-ভাবনা ও অনুসন্ধান করাে অথবা এর অনুরূপ শব্দ দ্বারা বা , তাঁদের বাক্যের মর্ম বুঝার জন্য কালাম শাস্ত্রবিদদের পরিভাষা প্রকাশ করে দিই নিশূপ থাকার জনা।
_________
পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞানের বিস্তারিত বিবরণঃ মােদ্দা কথা হলাে, কুরআনের কেউ খন্ডনকারী নেই, তা প্রত্যেক বস্তুর জন্য বিস্তারিত ও স্পষ্ট বর্ণনা। তিনি পৃথিবীতে কোন বস্তু উঠিয়ে রাখেন নি। সুতরাং ঐ আয়াতসমূহ এবং ইলমে গায়বের অস্বীকৃতির সমতা বিধান সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সুতরাং স্বীয় প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে?
চতুর্থতঃ আল্লাহর শক্তি বলে ভরসা করে ময়দানে ঝাপিয়ে পড়ে আমি বলছি, যে ব্যক্তি দাবী করেছে যে, আল্লাহর জ্ঞানের সাথে খাস হবার ক্ষেত্রে অন্যান্য গায়বের তুলনা এ পঞ্চজ্ঞানের অধিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তারা কি এর দ্বারা বুঝাতে চায় যে,তাতে সলবে উমুম (ব্যাপকতার অস্বীকার) আছে, যা এতদ্ব্যতীত অন্য কারাে জন্য নয়? (অর্থাৎ তার পরিবেষ্টিত জ্ঞান অন্য কারাে জন্য, নয়।) নাকি উমুমে সলব (অস্বীকারের ব্যাপকতা) (যা থেকে অন্য কেউ কিছু জানেনা)?
প্রথম বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ঐ পঞ্চজ্ঞান ব্যতীত আল্লাহর যত জ্ঞান। রয়েছে সব বলে দেয়া হয়েছে। এ ভিত্তিতে অর্থ হবে-‘আল্লাহ তায়ালা সব আম্বিয়ায়ে কিরাম অথবা বিশেষতঃ আমাদের নবীকে এ পঞ্চজ্ঞান ব্যতীত, সকলবস্তুর জ্ঞান প্রদান করেছেন যাতে কিছু অবশিষ্ট নেই।
• বাকী রইলাে পঞ্চজ্ঞান। এর আংশিক জ্ঞাত করানাে হলেও সব হুজুরকে অবগত করানাে হয়নি। আর দ্বিতীয় বক্তব্যের ভিত্তিতে এটাই হাসিল হবে যে, আল্লাহ তায়ালা জ্ঞান থেকে মূলতঃ কাউকে কোনবস্তু কখনাে জ্ঞাত করান নি। অবশিষ্ট গায়বের বিপরীত; তা থেকে যাবে ইচ্ছে অবগত করিয়েছেন। প্রথম অর্থ। নিঃসন্দেহে বাতিল; তা থেকে যাকে ইচ্ছে অবগত করিয়েছেন। প্রথম অর্থ নিঃসন্দেহে বাতিল; না হয় আবশ্যক হয়ে পড়বে যে, রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞান আল্লাহ রাব্বল আলামীনের সত্ত্বা ও সকল গুণাবলীকে এমন পরিপূর্ণ পরিবেষ্টনের সাথে পরিবেষ্টিত হয়, যার পূর্বে প্রকৃতপক্ষে কোন পর্দা অবশিস্ট রইলাে না। অনুরূপ, হুজুর সৈয়দে আলম (ﷺ)-এর জ্ঞান সকল অসীম পরম্পরাকে পরিবেষ্টনকারী হবে, যা অসীম থেকে অসীমতরের মধ্যে অনেক বার অর্জিত হয়েছে। যেমন পূর্বে আমি বর্ণনা করে এসেছি যে, এ সবগুলাে এ পাঁচ থেকে পৃথক। অবশ্য এর প্রবক্তা আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতও নই ওহাবীদেরতাে প্রশ্নই উঠেনা যারা রাসুল পাক (ﷺ)-এর শান ক্ষুন্ন করার জন্য কোমর বেঁধে দাঁড়িয়েছে। আর দ্বিতীয় অর্থও সুস্পষ্ট বাতিল। কেননা, এ পঞ্চ বস্তুর মধ্যে কতেকের জ্ঞান অবশ্যই প্রমাণিত রয়েছে, যাকে আল্লাহ দেয়ার ইচ্ছা করেছেন।
গর্ভাশয়ের জ্ঞানঃ
খতীব এ বাগদাদ ১ এবং আবু নাঈম ‘দালাইলুন্নবুয়তে” হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমাকে উম্মুল ফজল (رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন-- ‘আমি হুজুর (ﷺ) এর সামনে দিয়ে অতিক্রম করেছিলাম। হুজুর (ﷺ) ইরশাদ করলেন, তুমি সন্তান সম্ভবা, তােমার গর্ভে ছেলে রয়েছে। যখন তার জন্ম হবে। তখন আমার কাছে নিয়ে আসবে।' উম্মুল ফজল আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার গর্ভে সন্তান কোথা থেকে আসবে? অথচ কুরাইশরা কসম খেয়ে বলেছে যে, তারা স্ত্রীদের কাছেও যাবে না। ইরশাদ হলাে, আমি যা বলছি তাই হবে। উম্মুল ফজল বললেন, যখন ছেলে সন্তান প্রসব হলাে আমি হুজুরের পবিত্র খেদমতে উপস্থিত হলাম। হুজুর (ﷺ) ছেলের ডান কর্ণে আজান ও বাম কর্ণে ইকামত দিলেন এবং স্বীয় থুথু মােবারক তার মুখে দিলেন আর তার নাম রাখলেন আবদুল্লাহ। অতঃপর বললেন, নিয়ে যাও খলীফাদের পিতাকে। আমি হযরত আব্বাসের নিকট হুজুরের এ ইরশাদ বর্ণনা করলাম। তিনি হুজুরের পবিত্র খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন, উম্মুল ফজল এমনি বলেছেন। ইরশাদ করলেন, কথা তাই যা আমি তাকে বলেছি। সেই খলিফাদের পিতা, এমনকি শেষ পর্যন্ত তার (বংশ) থেকে সিফাহ এবং মাহদীর আবির্ভাব হবে। (১) আমি বলছি, ইমাম তাবরানী মুজামে কবীর ও ইবনে আসীর সৈয়দুনা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে রেওয়াতের বর্ণনা করেন। রাসুলে পাক (ﷺ) ইব্রাহীমের মা হ্যরত মারিয়া কিবতিয়া (رحمة الله)-এর নিকট তাশরীফ নেন, যখন তিনি (হযরত ইব্রাহীম) তাঁর শেকম মােবারকে ছিলেন। আরও একটি হাদীস বর্ণনা করেন, (যাতে রয়েছে) হযরত জিব্রাইল আমার নিকট আসলেন এবং আমাকে সু-সংবাদ দিলেন যে, মারিয়ার গর্ভে আমার সন্তান রয়েছে। সে সকল মাখলুকের মধ্যে আমার সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ হবে। তিনি আমাকে বলেছেন-আমি যেন তাঁর নাম ইব্রাহীম’ রাখি। আর জিব্রাইল আমার কুনিয়াত (ডাক নাম) আবু ইব্রাহীম তথা ইব্রাহীমের পিতা রেখেছেন। ইমাম সুয়ুতী “জামে কবীর” গ্রন্থে বলেছেন যে, এর সনদ (বর্ণনা পরম্পরা) বিশুদ্ধ।
আমি বলছি, হুজুর (ﷺ) তাই জ্ঞাত হয়েছেন, যা গর্ভাশয়ে ছিলাে। শুধু তাই নয় এর থেকে আরাে বেশী কিছু জেনেছেন। আর তাও জ্ঞাত হয়েছেন যা উদরের সন্তানের পিঠে ছিলাে। তাও জ্ঞাত হয়েছেন যা কয়েক গােত্রের পরের সন্তানের পেটের পেটে রয়েছে। এ কারণে হুজুর আকৃদাস (ﷺ) ইরশাদ করেছেন “খলীফাদের পিতাকে নিয়ে যাও” এবং ইরশাদ করেছেন-“তার থেকে এবং তার (বংশ) থেকেই সিফাহ এবং মাহদীর আবির্ভাব হবে।” মদিনার আলিম ইমাম মালেক (رحمة الله) হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, ছিদ্দীকে আকবর (رضي الله عنه) তাঁর বনজ সম্পদ থেকে বিশ উশক খেজুর। উম্মুল মুমিনীন (رحمة الله)কে দান করে গাছ থেকে পেড়ে নিতে বলেছিলেন। যখন তার ওফাতের সময় আসলাে তখন তিনি বললেন “হে আমার প্রিয় কন্যা, আল্লাহর শপথ! কোন ব্যক্তির ধন-সম্পদ আমার নিকট তােমাদের প্রিয় নয়। আমার পর তােমাকে কারাে মুখাপক্ষেী হওয়ার ব্যাপারে আমি চিন্তিত নই। আমি তােমাকে যে বিশ উশক খেজুর দান করেছি তা বৃক্ষ থেকে তুলে নিও। যদি তুমি তা কেটে নিজের হেফাজতে রাখতে তাহলে তা তােমারই হতাে কিন্তু আজকে তা তােমার। উত্তরাধিকারীদের সম্পদ। এর উত্তরাধিকারী তােমার দু’ভাই ও বােনেরা। সুতরাং তাদের মধ্যে তুমি তা আল্লাহর ফরায়েজ মত বন্টন করে দিবে। হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) আরজ করলেন-আব্বাজান,আল্লাহর শপথ! যদি এমন এমন অনেক সম্পদ। থাকতাে, তবুও আমি তা আমার বােন আসমাকে দিয়ে দিতাম, কিন্তু আমার। দ্বিতীয় বােন কে? ইরশাদ করলেন, যা বিনতে খারেজার (তোমার মা) গর্ভে রয়েছে, আমি তা কন্যা সন্তানই দেখছি।'
ইবনে সা'দ 'তাবাক্বাত' গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ছিদ্দীকে আকবর (رضي الله عنه) বলেছেন-“তা বিনতে খারেজার গর্ভেই রয়েছে, আমার হৃদয়ে ইলহাম করা। হয়েছে যে, তা কন্যাই হবে। তুমি তার সম্পর্কে সদ্ব্যবহারে উসিয়ত কবুল করাে। তাঁর একথার ভিত্তিতে উম্মে কুলসুম জন্মগ্রহণ করেছেন।” আর নিশ্চয়ই অনেক বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, গর্ভাশয়ের জন্য একজন ফিরিস্তা নির্ধারিত রয়েছেন। তিনি শিশুদের আকৃতি তৈরী করেন-পুরুষ। ও মহিলা, সুন্দর ও কদাকার এবং তার বয়স ও রিজক লিখে থাকেন। আর তা ভাগ্যবান নাকি দুর্ভাগা হবে-তাও তিনি জানেন--যা কিছু উদরে রয়েছে; এবং এটাও জ্ঞাত হন যে, তার উপর কি অতিবাহিত হবে।
বুখারী ও মুসলিম শরীফে সাহল ইবনে সা'দ (رحمة الله) থেকে বর্ণিত খায়বরের হাদীসে রয়েছে, নবীয়ে করীম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন-“আল্লাহর শপথ! কাল এ ঝান্ডা ঐ ব্যক্তিকে প্রদান করবাে, যার হাতে আল্লাহ বিজয় প্রদান করবেন। সে আল্লাহ ও রাসুলকে ভালবাসে, আর আল্লাহ ও তাঁর রাসুলও তাকে ভালবাসে। অতঃপর তিনি ঐ ঝান্ডা হযরত আলীকে প্রদান করেন। হুজুর পাক (ﷺ) এ উক্তি শপথ এর স্থানে (লামে তাকীদ ও নুনে তাকীদ) দ্বারা তাকীদ ও নিশ্চয়তা সহকারে ইরশাদ করেছেন। বুঝা গেলাে, আগামীকাল কি করবেন তা নিশ্চয়ই হুজুরের জ্ঞানে ছিলাে। নিশ্চয়ই হুজুরে করীম (ﷺ) অবগত ১ ছিলেন যে, তাঁর বেছাল শরীফ মদীনায়ে তায়্যেবায় হবে, এ কারণেই তিনি আনসারদের ইরশাদ করেছেন-“আমার জীবন সেখানেই, যেখানে তােমাদের জীবন, আর আমার ইনতেকাল তথায় যেখানে তােমাদের ইনতিকাল”। এ হাদীস ইমাম মুসলিম হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন।
(টিকা ১) এ পরিচ্ছেদ সকল পরিচ্ছেদ থেকে অধিকতর প্রশস্ত। সুতরাং প্রত্যেক ঐ বস্তু নবীয়ে করীম (ﷺ) যে সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন—জিহাদ ও ফিতনাসমূহ, সৈয়দুনা হযরত মসীহ (আঃ)-এর অবতরণ, ইমাম মাহদীর আবির্ভাব, দাজ্জাল, ইয়াজুজ-মাজুজ এবং দাব্বাতুল আরদের আবির্ভাব ইত্যাদি। যা অনেক, অসীম ও অগণিত। এ সবগুলােই এ পরিচ্ছেদের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম আইনী (رحمة الله) ওমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারীর ‘ঈমান অধ্যায়ে বর্ণনা করেন,
ইমাম নসফী (رحمة الله) তাফসীরে 'মাদারেকে' উল্লেখ করেন-এর উদ্দেশ্য হলাে জানতে পারেনি (মারিয়া) ঐ বস্তু যা তাঁর সাথে খাস ছিলাে, যদিও তাঁর স্বীয় গর্ভের জ্ঞান হয়েছে। মানুষের কাছে কোন বস্তু তার অর্জন ও পরিমাণ থেকে অধিক বিশেষত্ব ও তাৎপর্যমন্ডিত নয়। সুতরাং যখন তার এতদুভয়ের কোন পন্থা নেই, তখন তা ব্যতীত অন্যান্য গুলির পরিচয় ও জ্ঞান লাভ অসম্ভব হবে। আমি বলছি আপনাদের জন্য যথেষ্ট যে, রাসুলে পাক (ﷺ) এ গায়বকে আল্লাহ তায়ালার এ বাণীর স্থানে তাবীর ব্যাখ্যা করেছেন,
(কোন সত্তা কি জানে সে আগামীকাল কি উপর্জন করবে) স্বীয় বাণী --- কেউ কি জানে আগামীকাল কি হবে?)
যেমন বুখারী শরীফের ইস্তিসকা’ অধায়ে বর্ণিত হয়েছে। অথবা তাঁর বাণী আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না আগামীকাল কি হবে যেমন তাফসীরে লুকমানে বর্ণিত হয়েছে।