১০. সন্তান লালন পালন করা স্ত্রীর অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য।


মায়ের কোলই হলো সন্তানের প্রথম বিদ্যালয়। ফল দ্বারা যেমন বৃক্ষের পরিচয় হয় তেমনি সন্তান দ্বারা মায়ের পরিচয় পাওয়া যায়। একদা এক ব্যক্তির হাঁচি আসলে আলহামদুলিল্লাহ’র স্থলে আস্সালামু আলাইকুম বলছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জবাবে বলেছিলেন-وعلى (ﷺ) امك তোমার মায়ের উপর সালাম বর্ষিত হোক। অর্থাৎ কোথায় সালাম বলবে আর কোথায় আলহামদুলিল্লাহ বলবে, কোন হাতে খাবার খাবে, রাস্তার কোন পাশ দিয়ে চলবে , হাই আসলে কী বলবে ইত্যাদি মায়ের কাছ থেকেই সন্তানরা শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। এ কারণে এসব বিষয়ে কোন ব্যতিক্রম ঘটলে বিজ্ঞ লোকেরা বলেন, “মনে হয় তোমার মাতা-পিতা এগুলো শিখায়নি’’। 


হযরত হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন-

 عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم خَيْرُ نِسَاءٍ رَكِبْنَ الإِبِلَ صَالِحُ نِسَاءِ قُرَيْشٍ أَحْنَاهُ عَلَى وَلَدٍ فِى صِغَرِهِ وَأَرْعَاهُ عَلَى زَوْجٍ فِى ذَاتِ يَدِهِ.

উটের উপর আরোহনকারিনী মহিলাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম হলো কুরাইশ মহিলারা। কারণ তারা শিশু সন্তানের প্রতি অধিক যত্নবান-মেহেরবান হয়ে থাকে আর স্বামীর সম্পদের রক্ষণাবেক্ষনকারিনী হয়ে থাকে। ১৩১

১৩১.বুখারী ও মুসলিম, সূত্র মিশকাত; পৃ. ২৬৭

 

নারী জাতির অন্যতম প্রধান কাজ হল সন্তানের লালন পালন করা। কাজের মেয়েদের উপর এর দায়িত্ব অর্পন করা হল চাকর-চাকরানীর আদর্শে আদর্শবান হবে। অনেক ভদ্র ঘরের ছেলেকে অভদ্র আচরণ করতে দেখা যায়। একারণে এতে সন্তান প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। একজন মায়ের অন্তরে সন্তানের প্রতি যে দয়া-ভালোবাসা স্নেহ মমতা থাকবে তা কখনো কোন চাকর-চাকরানীদের মধ্যে থাকবে না। নিজেদের সুযোগ সুবিধার জন্য সন্তানকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা সন্তানের উপর নিশ্চিত যুলম ও অন্যায়। 


হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে এক দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন- হে নারীরা! তোমরা কী এতে সন্তুষ্ট নও? যখন কোন নারী তার স্বামীর দ্বারা তার সম্মতিতে গর্ভবতী হবে তখন সে এত পরিমাণ সওয়াবের অধিকারিনি হবে যে পরিমাণ সওয়াব কোন রোযাদার ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত অবস্থায় রোযা রাখার দ্বারা পেয়ে থাকে। আর যখন তার প্রসব বেদনা আরম্ভ হয় তখন আসমান ও পৃথিবীবাসীরা জানতে পারে না যে, তার চোখের শীতলতার জন্য কি লুকিয়ে রাখা হয়েছে। আর সে সন্তান প্রসব করে তখন তার সন্তান যে দুধ চোষণ করে এবং দুধের প্রতিটি ফোটা ও ঢোকের বিনিময়ে একটি করে নেকী প্রাপ্ত হয়, এবং মা সন্তানের জন্য একটি রাত বিনিদ্রাযাপন করে তবে সে সত্তরজন সুস্থ সবল দাসী আল্লাহর রাস্তায় আযাদ করার সওয়াব পাবে। ১৩২

১৩২.সোলাইমান ইবনে আহমদ তাবরানী, আল মু’জামু, খণ্ড ৪, পৃ. ৩০৭ ও ৩০৮

 

عن أبي أمامة قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : حاملات والدات رحيمات بأولادهن لولا يعصين أزواجهن دخلن الجنة )شعب الإيمان

হযরত আবু উমামা বাহেলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন- গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদানের কষ্টকে সহ্যকারিণী, নিজ সন্তানের প্রতি মহানুভবতাসম্পন্না নারি যদি স্বামীর অবাধ্য না হয়, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ১৩৩

১৩৩.ইবনে বায়হাকী র. (৪৫৮ হি.) শোয়াবুল ঈমান , খণ্ড ৬, পৃ. ৪০৬

 

বর্তমান আধুনিক নারীরা এক দু’বারের বেশী গর্ভবতী হতে চায় না। অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন

- خير نسائكم الولود الودود

তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে তারাই উত্তম যারা অধিক সন্তান জন্মদানকারিনী, অধিক ভালোবাসা প্রধানকারিনী। ১৩৪

১৩৪.আলাউদ্দিন আলী ইবনে হুসসাম উদ্দিন র.(৯৭৫হি.), কানযুল উম্মাল, খণ্ড ১৬, পৃ. ১২৬

 

দ্বিতীয়তঃ তথাকথিত পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুসরণে অনেক মুসলিম নারীরাও শারীরিক পিটনেস নষ্ট হয়ে যাবার ভয়ে সন্তানকে দুধ পান করাতে চায় না। অথচ চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে দুধ পান করানোর দ্বারা মা ও সন্তান উভয়ের স্বাস্থ্য সুস্থ ও ভালো থাকে। 


দুনিয়ায় যত প্রকার খাদ্য আছে, তন্মধ্যে আল্লাহ তা’আলা মায়ের দুধকে সবচেয়ে উপকারী, শক্তিবর্ধক, স্বাস্থ্যসম্মত ও সহজপাচ্য হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। দুগ্ধদানকারি সকল প্রাণির দুধের মধ্যে তাদের বাচ্চার দৈহিক বৃদ্ধি ও গঠনের যাবতীয় উপাদান ও উপকরণ পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদ্যমান থাকে। শিশু মায়ের রক্তের কুদরতি রাসায়নিক পরিবর্তনের ফল। দুধও মায়ের রক্ত থেকে সৃষ্টি হয়। সুতরাং মায়ের সন্তানের জন্য দুধই অধিক উপযোগি। অন্যমহিলার দুধ থেকেও মায়ের দুধ সন্তানের জন্য অতি উত্তম। 


তাছাড়া যখন সন্তান জন্ম হয় কেবল তখনই মায়ের স্তনে দুধ আসে। মায়ের দুধ সন্তানের উপযোগি করে তৈরি করা হয়। প্রথমে দুধ থাকে তরল ও পাতলা যা নবজাতকের জন্য উপযোগি। বাচ্চার বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তার হজমশক্তির ভিত্তিতে দুধও গাঢ় ও ঘন হয়ে উঠে। মায়ের বুকের দুধ বেসী ঠান্ডা নয় যাতে বাচ্চার নিমোনিয়া হয়ে যায় আবার বেশী গরমও নয়, তা লবণাক্তও নয় আবার পানসেও নয়। অধিক মিষ্টিও নয়। সুতরাং শিশুর জন্য খোদাপ্রদত্ত মায়ের দুধের কোন বিকল্প নেই।


বিজ্ঞানিদের গবেষনায় প্রমাণিত হয়েছে যে, মায়ের দুধপানকারী শিশুরা অন্যদের তুলনায় অধিক মেধাবী হয় এবং রোগ ব্যাধি থেকেও তারা মুক্ত থাকে বেশী। মায়ের দুধে এমন কিছু উপাদান থাকে যা শিশুর মেধাশক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি গাভীর দুধে থাকে না। অতএব “শিশু সুস্বাস্থ্যের এবং মেধাশক্তির জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নেই” কথাটি প্রত্যেক মাকে বুঝতে হবে। সন্তানকে দুধপান করানোর দ্বারা মায়ের স্বাস্থ্যও রক্ষা হয়। এর দ্বারা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। সন্তানকে দুধপান না করালে স্তনে ব্যাথা হয় আর এই ব্যাথা উপশমের জন্য ওষুধ সেবন করতে হয় যাতে পার্শপ্রতিক্রিয়া থাকে। সুতরাং নারীর অন্তত নিজের স্বার্থে হলেও সন্তানকে দুধ পান করানো উচিত। 


সন্তান মায়ের দুধের হকদার। বুকের দুধ থেকে সন্তানকে বঞ্চিত করা অন্যায় ও যুলুম। এটা হিংস্র ইতর প্রাণির চেয়েও নিকৃষ্ট কাজ। কারণ বাঘ, ভালুক ও সিংহের ন্যায় হিংস্র প্রাণিরাও নিজের সন্তানকে দুধপান থেকে বঞ্চিত করে না। যারা সন্তানকে দুধপান করাবে না তারা সন্তান নেওয়াও অনুচিত। 

Top