৩০. ফিতনা অধ্যায়,
বাব নং ২২৯. ১.
৩০- كِتَابُ الْفِتَنِ
১- بَابٌ
٤٩٧- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ يَحْيَىٰ، عَنْ حُمَيْدٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ سَلَّ السَّيْفَ عَلَىٰ أُمَّتِيْ، فَإِنَّ لِجَهَنَّمَ سَبْعَةَ أَبْوَابٍ: بَابٌ مِنْهَا لِـمَنْ سَلَّ السَّيْفَ.
৪৯৭. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা ইয়াহিয়া থেকে, তিনি হুমাইদ থেকে, তিনি ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার উম্মতের উপর তরবারী উত্তোলন করে, তাহলে জাহান্নামের সাতটি দরজা থেকে একটি দরজা যে তরবারী উত্তোলন করবে তার জন্য নির্ধারিত থাকবে।
(আল মু’জামুল কবীর, ৭/১৯/৬২৪৯)
ব্যাখ্যা: বুখারী শরীফে ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে মারফু হাদিস বর্ণিত আছে, রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন:من حمل علينا السلاح فليس منا “যে আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র উত্তোলন করবে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়”। ২২৫
➥ ইমাম বুখারী (رحمة الله), (২৫৬ হি), বুখারী শরীফ, খন্ড ৬, ২৫৯১, হাদীস নং ৬৬৫৯
❏পবিত্র কুরআনেও বলা হয়েছে, ولاتنازعوا فتفشلوا وتذهب ريحكم“তোমরা পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হইও না, তাহলে তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের শক্তি ও ক্ষমতা হৃাস পেয়ে যাবে”।
٤٩٨- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنِ الْـحَارِثِ، عَنْ أَبِي الْـجُلَاسِ، قَالَ: كُنْتُ مِمَّنْ سَمِعَ مِنْ عَبْدِ اللهِ السَّبَائِيِّ كَلَامًا عَظِيْمًا، فَأَتَيْنَا بِهِ عَلِيًّا ، وَنَحْنُ نَهُزُّ عُنُقَهُ فِيْ طَرِيْقِهِ، فَوَجَدْنَاهُ فِي الرَّحْبَةِ، مُسْتَلْقِيًا عَلَىٰ ظَهْرِهِ، وَاضِعًا إِحْدَىٰ رِجْلَيْهِ عَلَى الْأُخْرَىٰ، فَسَأَلَهُ عَنِ الْكَلَامِ، فَتَكَلَّمَ بِهِ، فَقَالَ: أَتَرْوِيْهِ عَنِ اللهِ تَعَالَىٰ، أَوْ عَنْ كِتَابِهِ، أَوْ عَنْ رَسُوْلِهِ، فَقَالَ: لَا: فَعَنْ مَا تَرْوِيْ؟ قَالَ: عَنْ نَفْسِيْ، قَالَ: أَمَا إِنَّكَ لَوْ رَوَيْتَ عَنِ اللهِ ، أَوْ عَنْ كِتَابِهِ، أَوْ عَنْ رَسُوْلِهِ ضَرَبْتُ عُنُقَكَ، وَلَوْ رَوَيْتَهُ عَنِّيْ أَوْ جَعْتُكَ عُقُوْبَةً، فَكُنْتَ كَاذِبًا، وَلَكِنِّيْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ، يَقُوْلُ : بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ ثَلَاثُوْنَ كَذَّابًا، وَأَنْتَ مِنْهُمْ.
وَفِيْ رِوَايَةٍ: عَنْ أَبِي الْـجُلَاسِ، قَالَ: كُنْتُ فِيْمَنْ سَمِعَ مِنْ عَبْدِ اللهِ السَّبَائِيِّ كَلَامًا عَظِيْمًا، فَأَتَيْنَا بِهِ عَلِيًّا ، فَوَجَدْنَاهُ فِي الرَّحْبَةِ، مُسْتَلْقِيًا عَلَىٰ ظَهْرِهِ، وَاضِعًا إِحْدَىٰ رِجْلَيْهِ عَلَى الْأُخْرَىٰ، فَسَأَلَهُ عَنِ الْكَلَامِ، فَتَكَلَّمَ، فَقَالَ: أَتَرْوِيْهِ عَنِ اللهِ ، أَوْ عَنْ كِتَابِهِ، أَوْ عَنْ رَسُوْلِهِ؟ قَالَ: لَا، قَالَ: فَعَنْ مَنْ تَرْوِيْهِ؟ قَالَ: عَنْ نَفْسِيْ، قَالَ: أَمَا إِنَّكَ لَوْ رَوَيْتَ عَنِ اللهِ تَعَالَىٰ، أَوْ عَنْ كِتَابِهِ، أَوْ عَنْ رَسُوْلِهِ ضَرَبْتُ عُنُقَكَ، وَلَوْ رَوَيْتَ عَنِّيْ أَوْ جَعْتُكَ عُقُوْبَةً، فَكُنْتَ كَاذِبًا، وَلَكِنِّيْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ، يَقُوْلُ : بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ ثَلَاثُوْنَ كَذَّابًا، فَأَنْتَ مِنْهُمْ.
৪৯৮. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হারিস থেকে, তিনি আবুল জুলাস থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি তাদের মধ্যে একজন ছিলাম যারা আবদুল্লাহ সাবাঈ থেকে মারাত্মক কথা শুনেছি। (অর্থাৎ সে নবী দাবী করল) আমরা তাকে ধরে হযরত আলী (رضي الله عنه)’র নিকট নিয়ে আসি। আর পথে তার গর্দানে আঘাত করেছি। আমরা আলী (رضي الله عنه) কে মসজিদের আঙ্গিনায় এক পায়ের উপর অপর পা দিয়ে চিৎ হয়ে শয়ন অবস্থায় পেয়েছি। তিনি তাকে তার কথা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে সে একই কথা বলল। তখন তিনি বলেন, তুমি কি একথা আল্লাহর পক্ষ থেকে (অহীপ্রাপ্ত হয়ে) বলতেছ, নাকি আল্লাহর কিতাব থেকে, না কি আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ’র পক্ষ থেকে? সে উত্তর দিল, না। তিনি বলেন তাহলে কার পক্ষ থেকে বলতেছ? সে উত্তর দিল, নিজের পক্ষ থেকে। তখন হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন, যদি তুমি একথা আল্লাহর পক্ষ থেকে অথবা আল্লাহর কিতাব থেকে অথবা আল্লাহর রাসূলের পক্ষ থেকে বর্ণনা করতে, তাহলে আমি তোমাকে হত্যা করতাম। আর যদি আমার পক্ষ থেকে বর্ণনা করতে তাহলে আমি তোমাকে কঠোর শাস্তি প্রদান করতাম, আর তুমি হতে মিথ্যাবাদী। কিন্তু আমি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের পূর্বে ত্রিশজন মিথ্যাবাদীর (ভণ্ডনবীর) আবির্ভাব হবে আর তাদের মধ্যে তুমিও একজন।
অপর এক বর্ণনায় আবুল জুলাস থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি ঐ সব লোকদের মধ্যে একজন যারা আবদুল্লাহ সাবাঈ থেকে মারাত্মক কথা শুনেছি। তখন আমরা তাকে হযরত আলী (رضي الله عنه)’র নিকট ধরে নিয়ে আসি। আমরা তাকে মসজিদের আঙ্গিনায় এক পায়ের উপর অন্য পা রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় পেয়েছি। তিনি তার কথা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে তা বলল। তখন তিনি তাকে বললেন, তুমি কি একথা আল্লাহর পক্ষ থেকে বর্ণনা করছ অথবা আল্লাহর কিতাব থেকে অথবা আল্লাহর রাসূলের পক্ষ থেকে? সে বলল, না। তিনি বললেন, তাহলে কার পক্ষ থেকে বলেছ? উত্তরে সে বলল, নিজের পক্ষ থেকে। তখন তিনি বললেন, সাবধান! তুমি যদি তা আল্লাহর পক্ষ থেকে অথবা আল্লাহর কিতাব থেকে কিংবা আল্লাহর রাসূলের পক্ষ থেকে বর্ণনা করতে, তাহলে আমি তোমার গর্দান কেটে ফেলতাম। আর যদি তুমি আমার পক্ষ থেকে বর্ণনা করতে, তাহলে তোমাকে কঠিন শাস্তি প্রদান করতাম এবং তুমি মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হতে। কিন্তু আমি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের পূর্বে ত্রিশজন মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব হবে আর তুমিই তাদের মধ্যে একজন।
ব্যাখ্যা: হাদিসের মধ্যে মিথ্যাবাদীর সংখ্যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ত্রিশ জন উলেখ করা হয়েছে। এরা প্রত্যেকেই নিজেকে নবী দাবী করবে। হযরত সওবান (رضي الله عنه)’র বর্ণনায় পূর্ণ ত্রিশ জনের সংখ্যা এসেছে। তবরানীর রেওয়ায়েতে সত্তর জনের কথা বলা হয়েছে। এর দ্বারা মূলত অধিক সংখ্যক বুঝানো উদ্দেশ্যে কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নয়।
٤٩٩- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ، عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : يَأْتِيْ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يَخْتَلِفُوْنَ إِلَى الْقُبُوْرِ، فَيَضَعُوْنَ بُطُوْنَهُمْ عَلَيْهِ، وَيَقُوْلُوْنَ: وَدِدْنَا لَوْ كُنَّا صَاحِبَ هَذَا الْقَبْرِ، قِيْلَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَكَيْفَ يَكُوْنُ؟ قَالَ : لِشِدَّةِ الزَّمَانِ وَكَثْرَةِ الْبَلَايَا وَالْفِتَنِ.
৪৯৯. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আবদুর রহমান থেকে, তিনি আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, মানুষের উপর এমন এক যুগ আসবে লোক কবরস্থানে অধিকহারে যাতায়াত করবে, কবরের উপর স্বীয় পেট রেখে বলবে, হায়! আমি যদি এ কবরবাসীর স্থানে হতাম। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! এরূপ কেন হবে? উত্তরে তিনি বললেন, যুগের কঠোরতা এবং বালা-মুসিবত ও ফিতনার আধিক্যের কারণে।
ব্যাখ্যা: কিয়ামতের পূর্বে এমন এক যুগ আসবে দুনিয়ার বালা-মুসিবত, দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মানুষ দুনিয়ার পরিবর্তে কবরকে শান্তির নীড় মনে করবে। তখন জীবনের চেয়ে মৃত্যুকে বেশী কামনা করবে এবং মৃত্যুর মধ্যে শান্তি খুঁজতে থাকবে। যেমন অনেকেই বলে যারা মরে গেছে তারা বেঁচে গেছে। যারা কবরে আছে তারাই শান্তিতে আছে ইত্যাদি।