নামাযের বর্ণনা



মাসআলাঃ নামাযরত অবস্থায় দৃষ্টি রাখার বর্ণনা- জানা আবশ্যক যে, নামাযি ব্যক্তি কিয়াম তথা দাঁড়ানো অবস্থায় তার দৃষ্টি রাখবে সিজদার স্থানে। রুকু অবস্থায় পায়ের পাঞ্জা তথা পায়ের পিঠের উপর। আর সিজদার মধ্যে নাকের মাথার দিকে, তাশাহুদের বৈঠকের সময় নিজ ঝোলী তথা দুই রানের মধ্যবর্তী স্থানে দৃষ্টি রাখবে। প্রথম সালামের সময় ডান কাঁধের দিকে আর দ্বিতীয় সালামের সময় বাম কাঁধের দিকে দৃষ্টি রাখবে।


মাসআলাঃ নামাযের মধ্যে পুরুষ ও মহিলাদের করণীয়- উল্লেখ থাকে যে, মেয়েদের নামাযের সঙ্গে পুরুষের নামাযের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। এ সম্পর্কে নীচে বর্ণনা করা হলো-


    তাকবীরে তাহরীমা


পুরুষ: হাত চাদরের ভেতরে থাকলে বের করে নিতে হবে। প্রথম তাকবীর উচ্চারণের সময় পুরুষেরা দুই হাত কান বরাবর তুলে নাভির নীচে হাত বাঁধবে। নামায বিশেষ জোরে বা চুপে চুপে তাকবীর উচ্চারণ করতে পারে। অর্থাৎ যে নামাযে চুপে চুপে তাকবীর বলতে হয় তাতে চুপে চুপে তাকবীর বলবে। আর যে নামাযে উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে হয় তাতে উচ্চস্বরে তাকবীর বলবে।


মহিলা: প্রথম তাকবীর উচ্চারণের সময় মেয়েরা দুই হাত কাঁধ বরাবর তুলবে। কাপড়ের ভিতর থেকে হাত বের করবে না। তাকবীরে তাহরীমার পর বাম হাত বুকের উপর রেখে তার উপর ডান হাত আলতো করে রেখে নামায শুরু করবে দু‘আ ও সূরা ইত্যাদি পুরুষের মতই পড়বে। কিন্তু কোন কিছুই শব্দ করে পড়তে পারবে না।


    পোশাক


পুরুষ: যাতে সতর ঢাকা থাকে এবং শালীনতা বজায় থাকে এরকম পরিচ্ছন্ন পোশাকে পুরুষেরা নামায পড়বে।


মহিলা: মেয়েদের সমস্ত শরীরই সতর মুখমন্ডল এবং উভয় হাত ও পায়ের পাতা ব্যতীত সমস্ত শরীর এমনকি মাথার চুলও নামায পড়ার সময় ঢাকা থাকতে হবে। শাড়ী দিয়ে যদি সমস্ত শরীর ঢাকা না যায় তবে চাদর দিয়ে ঢেকে নিতে হবে। গলা, হাত ও চুলসহ সমস্ত শরীরই ঢেকে রাখতে হবে।


    ক্বেরাত


পুরুষ: পুরুষের নামায বিশেষ উচ্চস্বরে বা নিম্নস্বরে সূরা-ক্বেরাত পড়তে পারবে।


মহিলা: মহিলারা নামাযে কোনো অবস্থাতেই শব্দ করে সূরা, ক্বেরাত পড়তে পারবে না। নামাযে উঠা-বসার সময় তাদের আল্লাহু আকবরও নিম্নস্বরে পড়তে হবে। উচ্চস্বরে পড়তে পারবে না।


    ক্বিয়াম


পুরুষ: ক্বিয়ামের সময় পুরুষেরা দুই পা কমপক্ষে চার আঙ্গুল, বেশীপক্ষে বার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁক রেখে দাঁড়াবে। অথবা শারীরিক গঠন অনুযায়ী উভয় পা ফাঁক করে দাঁড়াবে।


মহিলা: মহিলারা পা ফাঁক রেখে দাঁড়াতে পারবে না। দুই পায়ের পাতা মিলিয়ে দাঁড়াতে হবে। অথবা শারীরিক গঠন অনুযায়ী উভয় পা ফাঁক করে দাঁড়াবে। পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে সকলেই সব ওয়াক্তের ফরয নামায দাঁড়িয়ে পড়তে হবে।



    রুকু


পুরুষ: রুকুর সময় পুরুষেরা হাত, পা ফাঁক রেখে দুই হাত দিয়ে হাঁটু চেপে ধরে রুকু করবে। মাথা, পিঠ ও নিতম্ব সমান্তরাল রাখতে হবে।


মহিলা:  মহিলারা রুকুর সময় দুই হাত শরীরের সঙ্গে লাগিয়ে ঝুঁকে পড়ে হাতের আঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে হাঁটু স্পর্শ করে রুকু করতে হবে। রুকুতে পুরুষদের মত তাদেরও তাসবিহ পড়তে হবে। রুকুতে পুরুষদের মত অত মাথা ঝুকতে হবে না।


    সিজদা


পুরুষ: সিজদার সময় পুরুষেরা সোজাসুজি সিজদায় যাবে এবং সিজদায় সব অঙ্গ পরস্পর থেকে আলাদা রাখবে। শুধু পা দুটো মিলিত থাকবে। হাতের কব্জির উপরের অংশও মাটি থেকে উপরে উঠিয়ে রাখবে।


মহিলা: মহিলারা শরীরের সব অঙ্গ একসাথে মিলিয়ে রেখেই সিজদায় যাবে এবং সিজদা অবস্থাতেও সব অঙ্গ একত্রে মিলিয়ে হাত কনুই পর্যন্ত মাটিতে বিছিয়ে দিয়ে সিজদা করবে।


    বৈঠক


পুরুষ: পুরুষ বসার সময় ডান পায়ের পাতা খাড়া রেখে আঙ্গুলগুলো ভাঁজ করে কেবলামুখী রাখতে হবে।


মহিলা: মহিলারা বসার সময় দুই পা ডান দিকে বের করে দিয়ে নিতম্বরের উপর বসতে হবে। সামান্য ঘাড় ঘুরিয়ে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করতে হবে।


মাসআলাঃ ঘরকে মসজিদ তথা ঘরের মধ্যে কোন স্থানকে সিজদার জন্য নির্দিষ্ট করা কেবলমাত্র নফল ও সুন্নাতের জন্য জায়েয ও দুরস্ত। ফরয সমূহের জন্য নির্দিষ্ট করা শরয়ীভাবে প্রমাণ নাই। ৪৪

➥৪৪. দারুকুতনী ও ফতোয়ায়ে সত্তারীয়া।

 

মাসআলাঃ তাশাহুদের মধ্যে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করা সুন্নাত। কিছু সংখ্যক আলেম উহাকে হারাম বলে থাকেন অথচ রিওয়ায়াত (হাদীস শরীফের বর্ণনা সমূহ) উহা (আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করা) সাব্যস্ত, মুস্তাহাব ও সুন্নাত হওয়ার প্রতি দিক-নির্দেশনা করে।


‘আশ্হাদু আল্ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার সময় তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা হাদীস সমূহের বর্ণনা ও ফিকহ এর উপমা সমূহ দ্বারা প্রমাণিত, এজন্য নামাযের মধ্যে ‘আশহাদু আল্ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার সময় তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা সুন্নাত। যে সব আলেমরা উহাকে বিদআত বলে থাকেন তাদের অভিমত বা ধারণা সুস্পষ্ট হাদীস সমূহের পরিপন্থী। উল্লেখ্য যে, তর্জনী আঙ্গুল হচ্ছে যাকে আমরা শাহাদাত আঙ্গুল বলে থাকি।


হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়র (رضي الله عنه) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- যখন তিনি নামাযের প্রথম বা শেষ বৈঠকে বসতেন তখন তিনি ডান হাতের তালু ডান পায়ের উরুর উপর এবং বাম হাতের তালু বাম-পায়ের উরুর উপর রেখে তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন এবং বৃদ্ধা আঙ্গুলকে মধ্যমা আঙ্গুলের উপর রাখতেন, এবং বাম হাতের তালুকে হাঁটুর উপর রাখতেন।৪৫

➥৪৫. সহীহ মুসলিম, খণ্ড-১ম, পৃষ্ঠা-২১৬, বাবু সিফাতিল জুলূস ফিস্সালাত, সুনানু আবু দাউদ, বাবু রফয়িল ইয়াদাইন, খণ্ড-১ম, পৃষ্ঠা-১০৫।


মাসআলাঃ নামাযের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ চুপ থাকা, অতঃপর ক্বিরাত শুরু করা অর্থাৎ নামাযে ওজর ব্যতীত এতটুকু দীর্ঘ সময় চুপ থাকা, যে সময়ের মধ্যে তিনবার ‘সুবহানাল্লাহ’ পড়া যায়, তা সিজদায়ে সাহুকে ওয়াজিব করে।


আল্লামা হাসকাফী বলেন- জেনে রাখ! যদি ঐ সন্দেহ তাকে মশগুল রাখে অতঃপর সে এক রুকন আদায়ের পরিমাণ চিন্তা-ভাবনা করে এবং সে সন্দেহ অবস্থায় ক্বিরাতে মশগুল না হয় এবং তাসবীহ এর মধ্যে নয়, যাখারা গ্রন্থে ইহা উল্লেখ রয়েছে, তার উপর সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। ৪৬

➥৪৬. রদ্দুল মুহতার, বাবু সুজুদিস্ সাহো, পৃষ্ঠা-৫০৬, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, পৃষ্ঠা-১৩১, খণ্ড-১ম

 

অতঃপর উহার মধ্যে চিন্তা-ভাবনা দীর্ঘ হয় এবং চিন্তা-ভাবনার দরুণ অবস্থা পরিবর্তন হয়ে যায় তাহলে তার উপর ইসতিহসান-এর ভিত্তিতে সিজদায়ে সাহু আবশ্যক হবে। ৪৭

➥৪৭. ফতওয়ায়ে হক্কানিয়া, খণ্ড- ৩য়, পৃষ্ঠা-৩৩১ ।


মাসআলাঃ নামাযের মধ্যে পা নাড়ানো যতক্ষণ পর্যন্ত আমলে কাছীর এর পর্যায়ে না হয় তাহলে উহা দ্বারা নামায ভঙ্গ হয় না। হ্যাঁ! বিনা প্রয়োজনে পা নাড়াচড়া থেকে বিরত থাকা উচিত, তবে উভয় পা নাড়ানো আমলে কাছীর এর পর্যায়ভূক্ত।


যদি মুসল্লী অনবরত এক পা নাড়াচাড়া করে তাহলে তার নামায ভঙ্গ হবে না। আর যদি উভয় পা নাড়াচাড়া করে তাহলে নামায ভঙ্গ হবে এবং মুসল্লী যদি তার উভয় পা অল্প পরিমাণ নাড়াচাড়া করে তাহলে তার নামায ভঙ্গ হবে না। মুহীত গ্রন্থে এরূপ উল্লেখ রয়েছে এবং এ অভিমত সবচেয়ে নিখুঁত এরূপ আল বাহর্রু রায়িক গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। ৪৮

➥৪৮. আল হিন্দিয়া, পৃষ্ঠা-১০৩, খণ্ড-১ম, বাবু মা-ইয়াফসুদুস্ সালাত।


মাসআলাঃ যে গালিচার উপর ক্রশ দন্ডের ছবি থাকে, কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য হওয়ার কারণে উহার উপর নামায পড়া মাকরূহ, এজন্য এরূপ গালিচা বা বড় কার্পেটে নামায পড়া থেকে বিরত থাকা আবশ্যক এবং অমুসলিমদের ধর্মীয় নিদর্শনসমূহের সাথে সাদৃশ্য রাখা মাকরূহ হিসেবে গণ্য। এ জন্য ক্রশদন্ড যেহেতু খৃস্টানদের ধর্মীয় নিদর্শন সেহেতু ক্রশদন্ডের চিহ্ন সম্বলিত গালিচা বা বড় কার্পেটের উপর নামায পড়া কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য হওয়ার কারণে মাকরূহ। হাদীস শরীফে এসেছে- রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেছেন- “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য রাখবে সে তাদের অন্তর্ভূক্ত।” ৪৯

➥৪৯. আবু দাউদ, খণ্ড-২য়, পৃষ্ঠা-৫৫৯, কিতাবুল্ লিবাস, বারুফী লবসিশ শুহরাত।

 

মাসআলাঃ টাই পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহ, টাই (হচ্ছে) ক্রশদন্ডের চিহ্ন যা খৃস্টানদের ধর্মীয় নিদর্শন সমূহের সমর্থন হয় সেহেতু কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য হওয়ার কারণে উহার সাথে (টাই সহকারে) নামায পড়া মাকরূহ। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- ‘যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য রাখে সে তাদের অন্তর্ভূক্ত। ত্বীবী (رحمة الله) বলেন- রাসূল (ﷺ) এর বাণীঃ ‘যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য রাখে’ এটা সৃষ্টি চরিত্র ও নিদর্শনের ক্ষেত্রে ব্যাপক। যদি কোন বস্তু নিদর্শনের অন্তর্ভূক্ত হয় তাহলে তা সাদৃশ্য হওয়ার ক্ষেত্রে অধিক স্পষ্ট হয়। ৫০

➥৫০. যিক্রুন ফী হাজাললুবাব, পৃষ্ঠা-২১৯, খণ্ড-৮, কিতাবুল লিবাস, আল ফসলুচ্ছানী।

 

আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন- ‘যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য রাখে’ অর্থাৎ- যে ব্যক্তি নিজকে সাদৃশ্যনীয় করে রাখে কাফেরদের সাথে উদাহরণ স্বরূপ পোশাক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে অথবা ফাসিক বা বদকার বা সূফী বা নেক্কার-সৎব্যক্তিদের সাথে সে ব্যক্তি তাদের অন্তর্ভূক্ত অর্থাৎ- দলভূক্ত ও কল্যাণের অন্তর্ভূক্ত। ৫১

➥৫১. মিরকাত, আলাল মিশকাত, পৃষ্ঠা-২৫৫, খণ্ড-৮ম

 

মাসআলাঃ ইফতারের কারণে মাগরিবের নামাযে দেরী করা জায়েয আছে কি-না?


মাগরিবের নামাযে দু’রাকাত নামাযের পরিমাণ দেরী করা তো সকলের ঐক্যমতে জায়েয আছে, উহা থেকে বেশী দেরী করা মাকরূহে তানযীহ, তবে রমযানুল মুবারকে যখন খিদে বেশী হবে তখন কিছু সময় দেরী করা জায়েয আছে তবে এ শর্তের ভিত্তিতে যে, এ দেরী করাটা যেন অধিক সংখ্যক তারকা উদ্ভাসিত হওয়া পর্যন্ত না পৌঁছে, এ জন্য যে, খিদে অবস্থায় নামায পড়া মাকরূহ। ৫২

➥৫২. র্দুরুল মুখতার, পৃষ্ঠা-৩৬৯, খণ্ড-১ম, আওক্বাতুস্ সালাত।


আল্লামা আলিম বিন আল্লাদ আনসারী বলেন, লালিমা অদৃশ্য হয়ে যাওয়া পর্যন্ত মাগরিবের নামায দেরী করা মাকরূহ এবং সিরাজিয়া গ্রন্থে উল্লেখ আছে- তবে সফর কিংবা খাবার পরিবেশিত দস্তরখানাতে সে থাকলে ওজর বশত নামায মাকরূহ হবে না।  ৫৩

 ➥৫৩. ফতাওয়ায়ে তাতারখানীয়া, পৃষ্ঠা-৪০৬, খণ্ড-১ম, কিতাবুস্ সালাতিল মাওয়াক্বিত।

 

আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই বেশী অবগত।


মাসআলাঃ মসজিদের ভিতরে জায়গা না হওয়ার দরুন একাকী বা জামাত সহকারে ছাদে নামায পড়া জায়েয আছে। কিন্তু ওজর ব্যতীত এরূপ করা মাকরূহ থেকে খালি নয়, ইমামের অবস্থা তার উপর সন্দেহযুক্ত না হওয়া এবং ইমাম থেকে অগ্রবর্তী না হওয়ার শর্তে ছাদে নামায পড়া জায়েয আছে। ৫৪

➥৫৪. ফতওয়ায়ে শামী, পৃষ্ঠা-৬৫৬, ১ম খণ্ড, আহকামুল মসজিদ।


ফতাওয়ায়ে কাজীখানে উল্লেখ রয়েছে- যদি মসজিদের ছাদে দাঁড়ায় এবং মসজিদের ভিতরে অবস্থানরত ইমামের ইকতিদা করে যদি মসজিদের ভিতরে ছাদের জন্য দরজা থাকে এবং ইমামের অবস্থা তার উপর সন্দেহযুক্ত না হয় তাহলে ইকতিদা শুদ্ধ হবে। আর যদি তার উপর ইমামের অবস্থা সন্দেহযুক্ত হয় তাহলে ইকতিদা শুদ্ধ হবে না। ৫৫

➥৫৫. বাবুল ইমামত, ফতাওয়ায়ে কাজীখান।


মাসআলাঃ 


প্রশ্নঃ এক ব্যক্তি নামায পড়ছেন, তার সামনে অন্য ব্যক্তি আছে, নিজ ওয়াজীফাসমূহ শেষ করে ঐ নামাজীর আগে বসেছেন যিনি নামায পড়ছেন, এখন যদি এ ব্যক্তি যিনি সামনে বসেছেন উঠে চলে যান তাহলে ইহা জায়েয হবে কি-না? আর ইহা নামাজীর সামনে দিয়ে অতিক্রম এর অন্তর্ভূক্ত হবে কি-না? তার উপর কোন গুনাহ হবে কি-না?


উত্তরঃ ফুকাহায়ে কিরামের আনুষঙ্গিক বা খুঁটিনাটি মাসয়ালা থেকে উহা জায়েয হওয়া বুঝা যায় যে, এরূপ করা জায়েয আছে। কিন্তু সতর্কতার দিক হল এরূপ কাজ না করা এবং এরূপ আমলকারীকে তিরিস্কারও করা যাবে না। ৫৬

 ➥৫৬. খায়রুল ফতাওয়া, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৬২।

  

মাসআলাঃ ফতাওয়ায়ে কাজীখানে উল্লেখ রয়েছে যে, মুসল্লীর সামনে বা মাথার উপরে বা ডানে বা বামে বা তার কাপড়ে ছবিসমূহ থাকে তাহলে এমতাবস্থায় নামায পড়া মাকরূহ। যদি বিছানায় ছবিসমূহ থাকে এবং তা যদি সিজদার স্থানে না হয় তাহলে বিশুদ্ধ বর্ণনানুযায়ী মাকরূহ নয়। আর এ বিধান ঐ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যে, ছবি এ পরিমাণ বড় হবে যে, দর্শনকারী তাকাল­ুফ ব্যতীত (বিনা কষ্টে বা কোন কিছুর আশ্রয় বা উপায় ব্যতীত) উহা দেখতে পারবেন। তবে যদি ছবি ছোট হয় বা উহার মাথা কর্তিত হয় তাহলে অসুবিধা নেই।


মাসআলাঃ দুয়ায়ে কুনূত যা বিতির নামাযে পড়া হয়, নামাযে বিতির ছাড়া অন্য কোন নামাযে দুয়ায়ে কুনূত পড়া হানাফীদের মতে জায়েয নয়- তবে ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) এর মতে ফজরের শেষ রাকাতে রুকু এর পরেও কুনূত পড়তে হবে কিন্তু হানাফীদের বক্তব্য হল- শরীয়ত প্রবর্তক হুজুর (ﷺ) এক মাস ফজরের নামাযে কুনূত পড়েছেন কেননা তিনি সে সময় একটি মুশরিক গোত্রের জন্য বদ দোয়া করতেন। এ বিষয়ে ফকীরের (গ্রন্থকারের) একটি স্বতন্ত্র পুস্তিকা “বয়ানাতে আদিলা” তথা কুনুতে নাযেলা পাঠের র্শয়ী বিধান নামক একটি পুস্তিকা প্রকাশিত আছে আগ্রহীদের উচিত উহা পাঠ করা।


মাসআলাঃ ইসলাম ধর্মে সমস্ত বিষয়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল নামায। ৫৭

➥৫৭. তাফহীম, পৃষ্ঠা-৮১৯।

 

মাসআলাঃ  ফজর আবির্ভূত হওয়ার পর ফজরের সুন্নাত সমূহ ব্যতীত নফল পড়া হারাম। 


হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- ‘‘ফজর দুই ভাগে বিভক্ত, একটি ফজর খাবার হারাম করে দেয় এবং সে সময়ে নামায হালাল করে দেয় এবং অপর ফজর নামাযকে হারাম করে দেয়।”


রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, ফজর দু’টি, একটি ফজর রয়েছে যার মধ্যে খাওয়া হারাম হয় এবং ফজরের নামায হালাল হয়। ২য় ফজর যার মধ্যে নামায হারাম হয় এবং খাওয়া হালাল হয়। ইবনে খুযাইমা ও হাকিম (এ হাদিসটি) বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসকে উভয়ে সহী বলেছেন। অর্থাৎ সুবহে সাদিকে ফজরের নামায হালাল হয় এবং সেহরী খাওয়া হারাম হয়ে যায় এবং সুবহে কাযিবে সেহরী খাওয়া হালাল হয়, ফজরের নামায হারাম হয়। (আল্লাহ অধিক জ্ঞাত)


মাসআলাঃ ইমামের সাথে প্রথম বৈঠকে মিলিত হওয়ার ক্ষেত্রে তাশাহুদ পূর্ণ করা ছাড়াও যদি “মাসবোক” ইমামের অনুসরণের দরুণ দাঁড়িয়ে যায় তাহলে মাকরূহ সহকারে নামায আদায় হয়ে যায়। তবে উত্তম হল- তাশাহুদ সম্পূর্ণ পাঠ করে উঠবে। কেননা প্রথম বৈঠকে তাশাহুদ পড়া ওয়াজিব, এ জন্য এক ওয়াজিবের দরুণ অন্য ওয়াজিব বাদ দেয়া অনুচিত, এমন কি “মুদরিক” ও তাশাহুদ পরিপূর্ণ পাঠ করা ব্যতীত উঠবেনা বরং তাশাহুদ পূর্ণ করার পর উঠে ইমামের অনুসরণ করবে যেন উভয় ওয়াজিবের অনুসরণ হয়ে যায়। ৫৮

➥৫৮.  ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া, পৃষ্ঠা-৯০, বাবু বিতাবিয়িল ইমাম, ১ম খণ্ড, শামী, পৃষ্ঠা-৪৭০, ১ম খণ্ড, মাতলুব ফী তাহক্বীকি মুতাবিয়াতিল ইমাম।

 

মাসআলাঃ ইমাম সাহেব আস্সালামু আলাইকুম বলে সালাম ফিরানোর পর ইমামের ইকতিদা সহীহ নয় এ অবস্থায় কোন ব্যক্তি জুমা পড়বেনা। সালাম ফিরানোর পর ইমামের ইকতিদা সহীহ হবে না, নামাযের হুকুম শেষ হওয়ার কারণে। ৫৯

➥৫৯. শামী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪৯০।

 

মাসআলাঃ  কোন ব্যক্তির নিকট কাযা নামায আছে এবং সে ব্যক্তি যদি সাহেবে তারতীবের অন্তর্ভূক্ত হয় তাহলে সে প্রথমে কাযা নামায আদায় করবে অতঃপর জুমা পেলে জুমা পড়বে নতুবা যোহর আদায় করবে।  ৬০

➥৬০. মারাকিউল ফালাহ।


মাসআলাঃ কুষ্ঠরোগীর ইমামত মাকরূহ। ৬১

➥৬১. দুররে মখতার, শামী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৮২।

 

মাসআলাঃ ফজরের নামায বেশি আলোকিত অবস্থায় পড়া উত্তম। রাফি বিন খাদীজ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- “তোমরা ফজরের নামাযকে ফর্সা করে পড় কেননা তা তোমাদের পূণ্যকে অধিক বাড়াবে।” এ হাদীস শরীফকে সিহা-সিত্তার অন্তর্ভূক্ত পাঁচটি হাদীস গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী ও ইবনে হাব্বান উহাকে সহীহ বলেছেন।


হযরত রাফি বিন খাদীজ (رضي الله عنه) বলেছেন- ফজরের নামায বেশি আলোতে পড় তাতে তোমরা অধিক সাওয়াব পাবে। ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন। 


মাসআলাঃ “নামায প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা সর্বোত্তম আমল।” হযরত সায়্যিদিনা ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বলেছেন- রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- “নামায প্রথম ওয়াক্তে আদায় করে নেয়া সর্বোত্তম আমল” ইমাম তিরমিযী ও হাকিম উভয়ে এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন। এ হাদীসের আসল (ভিত্তি) বুখারী ও মুসলিমে বিদ্যমান আছে।


হযরত আবু মাহযূরা (رضي الله عنه) বলেন, রহমতে আলম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন “প্রথম ওয়াক্তে নামায আদায় করা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায় এবং মধ্যবর্তী সময়ে নামায আদায় করা রহমত অবতীর্ণ হওয়ার উপলক্ষ, শেষভাগে নামায আদায় করা আল্লাহর আযাব থেকে নাজাত পাওয়ার উপায়।” দূর্বল সনদে দারুকুত্বনী বর্ণনা করেছেন, তিরমিযী শরীফে এ হাদীসটি ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, উহাতে মধ্যবর্তী সময়ের কথা উল্লেখ নেই, এটাও দূর্বল।


মাসআলাঃ সাত জায়গা ব্যতীত সমস্ত জমীনে নামায পড়া যায় অর্থাৎ সাত জায়গা ব্যতীত সমস্ত জমীন মসজিদ। হযরত সায়্যিদিনা ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) সাত জায়গায় নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। দূর্গন্ধ স্থানে, প্রাণী জবেহ করার স্থানে, কবরস্থানে, রাস্তার মধ্যখানে, গোসলখানায়, উট বাধার স্থানে ও বায়তুল্লাহ এর ছাদে।


রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- কবরের দিকে নামায আদায় করিওনা এবং কবরের উপর বসিও না। ৬২

➥৬২. তিরমিযী ও মুসলিম।


হযরত ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) দূরগন্ধ স্থানে, প্রাণী যবেহ করার স্থানে, কবরস্থানে, রাস্তার মধ্যখানে, গোসলখানায়, উট বাধার স্থানে ও বায়তুল্লাহর ছাদে নামায পড়তে নিষেধ করেছেন।৬৩

 ➥৬৩. তিরমিযী শরীফ।


তোমরা কবরের দিকে নামায পড়িও না এবং কবরের উপর বসিও না।  ৬৪

➥৬৪. মুসলিম শরীফ।

 

মাসআলাঃ যে ব্যক্তি ইমাম হবেন সে সংক্ষিপ্তভাবে নামায পড়াবেন। হযরত জাবির বিন আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- মুয়াজ তার সঙ্গীদেরকে ইশা এর নামায পড়ালেন এবং দীর্ঘ করে ফেললেন তখন নবী করীম (ﷺ) বললেন- হে মুয়াজ তুমি কি ফিতনা সৃষ্টি করতে চাও- যখন তুমি মানুষের ইমামতি করবে তখন তুমি ‘ওয়াস্ শামসী ওয়া দোয়াহাহা’ এবং ‘ওয়া-সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ’লা’ পাঠ করবে এবং ইক্রা বিস্মি রাব্বিকাল আ’লা’ ও ‘ওয়াল লায়লি ইজা ইয়াগ্সা’ পাঠ করবে। ৬৫

➥৬৫. মুসলিম, পৃষ্ঠা ১০৪।


মাসআলাঃ যদি নামাযী ব্যক্তির সামনে দিয়ে গাধা, বা কাল কুকুর বা মাসিক ঋতু সমপন্ন মহিলা অতিক্রম করে যায় তাহলে তার নামায ভঙ্গ হয়ে যায়।


হযরত আবু জর গিফারী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- মুসলমানের নামায যখন তার সামনে উটের পিছনের অংশের সমান সুতরা না হয়, মহিলা, গাধা ও কাল কুকুর নামায নষ্ট করে দেয়, উক্ত হাদীসে মুসলিমের বর্ণনায় শয়তান শব্দ উল্লেখ আছে, হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে অপর বর্ণনায় শতয়তান শব্দ উল্লেখ নেই।


মাসআলাঃ অন্ধ ব্যক্তির ইমামত সহী, হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) অন্ধ উম্মে মাকতুম (رضي الله عنه)কে লোকের ইমামতি করার জন্য (তাঁর) প্রতিনিধি বানিয়েছেন।  ৬৬

➥৬৬. আহমদ, আবু দাউদ।

 

মাসআলাঃ তাহাজ্জুদের জন্য প্রথমে শয়ন করা শর্ত। তাহাজ্জুদের পরেও শয়ন করা সুন্নাত।


মাসআলাঃ কতিপয় ওলামা আযান ও ইক্বামত ব্যতীত তাহাজ্জুদের নামায জামাতে পড়েন। কিন্তু উহার উপর গুরুত্ব না দেয়া চাই, তাহাজ্জুদ একা একা উত্তম এবং জামাতও।


অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইহা হজ্বের সময়ে হাজ্বীদের জন্য হয়ে থাকে।


মাসআলাঃ নামাযে এক হাতের আঙ্গুল সমূহ অন্য হাতের আঙ্গুল সমূহে প্রবেশ করানো মাকরূহে তাহরীমী। ৬৭

➥৬৭.  দুররে মুখতার ইত্যাদি।


মাসআলাঃ নামাযে যাওয়ার সময় এবং নামাযের অপেক্ষার সময়েও এটি মাকরূহ। ৬৮

 ➥৬৮.  কানোনে শরীয়ত।

 

মাসআলাঃ কোমরে হাত রাখা মাকরূহে তাহরীমী, নামায ছাড়াও কোমরে হাত রাখা উচিত নয়। ৬৯

➥৬৯. দুররে মুখতার।


মাসআলাঃ নামাযে এদিক-সেদিক মুখ ফিরে দেখা মাকরূহে তাহরীমী, অল্প মুখ ফিরালেও।


মাসআলাঃ দখলকৃত যমীন বা পুরানো ক্ষেতে যাতে ফসল রয়েছে- এরূপ ক্ষেতে নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমী। ৭০

➥৭০. দুররে মুখতার, আলমগীরী।

 

মাসআলাঃ কাঁধে এভাবে রুমাল ঢালা যে, এক প্রান্ত পেটের উপর অপর প্রান্ত পিটের উপর এরূপ মাকরূহে তাহরীমী। ৭১

➥৭১. কানুনে শরীয়ত।

 

মাসআলাঃ চাদর বা সালের প্রান্ত উভয় ঘাড়ের উপর লটকিয়া রাখা, এটা নিষেধ, মাকরূহে তাহরীমী। হ্যাঁ যদি এক প্রান্ত অপর ঘাড়ের উপর হয় এবং আরেক প্রান্ত লটকিয়ে থাকে তাহলে অসুবিধা নেই। ৭২

➥৭২. কানুনে শরীয়ত, দুররে মুখতার ইত্যাদি গ্রন্থের বরাতে।

 

মাসআলাঃ যে কাপড়ে প্রাণীর ছবি থাকে, উহা পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমী, নামায ছাড়াও এরূপ কাপড় পরিধান করা নাজায়েয।


মাসআলাঃ সিজদা বা রুকুতে তিন তাসবীহ এর কম বলা মাকরূহে তান্যী তবে যদি সময় সংকীর্ণ হয় বা কোন আরোহী চলে যাওয়ার ভয় থাকে, বা অন্য কোন সমস্যা হয় তাহলে অসুবিধা নেই।


মাসআলাঃ কাজ কর্মের কাপড় পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহে তানযী, যদি অন্য কোন কাপড় থাকে নতুবা মাকরূহও নয়।


মাসআলাঃ যদি থলে বা পকেটে ছবি আবৃত থাকে তাহলে নামায মাকরূহ হবেনা।  ৭৩

➥৭৩. দুররে মুখতার।

 

মাসআলাঃ ছবি যুক্ত কাপড় পরিধান করেছে এবং উহার উপর অপর একটি কাপড় পরিধান করেছে যে, ছবি আবৃত হয়ে গেছে, তাহলে নামায মাকরূহ হবেনা।  ৭৪

➥৭৪. রদ্দে মুহতার।

 

মাসআলাঃ উল্টো কাপড় পরিধান করে বা উঠিয়ে নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমী।


মাসআলাঃ শিরওয়ানী ইত্যাদির বোতাম-বটন না লাগানো এবং উহার নীচে কাপড় ইত্যাদি পরিধান না করে খোলা থাকে তাহলে মাকরূহে তাহরীমী। যদি কাপড় ইত্যাদি থাকে তাহলে মাকরূহে তানযী। ৭৫

➥৭৫. কানোনে শরীয়ত, পৃষ্ঠা-১৩৪ ও বাহরে শরীয়ত।

 

মাসআলাঃ জামে মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে মহল্লার মসজিদে নামায পড়া উত্তম যদিও জামাত ছোট হয়।


মাসআলাঃ যদি মহল্লার মসজিদে জামাত না হয় তাহলে একা গিয়ে আযান ও ইক্বামত দিয়ে নামায পড়বে, ইহা জামে মসজিদের জামাতের চেয়ে উত্তম। ৭৬

➥৭৬. সাগীরী ইত্যাদি; কানুনে শরীয়ত, পৃষ্ঠা-১৪০।


মাসআলাঃ ফরয, বিতির ও তারাবীর ক্ষেত্রেও মহিলাদের জামাত মাকরূহ। আল্লাহ্ তায়ালা অধিক জ্ঞাত। 


মাসআলাঃ ইনায়া শরহে হিদায়া ফাতহুল ক্বদীরের পার্শ্বটিকা ১ম খণ্ড, ২৫০ পৃষ্ঠা-এর মধ্যে মহিলাদের জামাত সুন্নাতকে মানসূখ (রহিত) লিখেছেন। তার কাছাকাছি তাবয়ীনুল হাক্বায়িক নাসবুর রায়া, তাহত্বাভী ইত্যাদি গ্রন্থে উল্লেখ আছে। মাকরূহ হওয়ার কারণ বাহার, কাবীরী বাদাইতে উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীস সমূহে উল্লেখ আছে- হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) মহিলাদের ইমামতি করতেন। আর উম্মে ওয়ারকা (رضي الله عنه)কে হুজুর রহমতে আলম (ﷺ) ইমামতির অনুমতি দিয়েছিলেন। এজন্য মাকরূহে তাহরীমী বলা তাহক্বীক এর বিপরীত। ইমাম মুহাম্মদ (رحمة الله) কিতাবুল আছারে লিখেছেন- মহিলা ইমামতি করা আমাদের ভাল মনে হয়না। হানাফীদের নিকট মহিলাদের জামায়াত মুস্তাহাব নয়, মাকরূও নয়।


মাসআলাঃ নামাজের সম্মুখভাগে কুকুর এবং মহিলা অতিক্রম হওয়াতে নামাজ ফাসেদ হবে না।  ৭৭

➥৭৭. ফতোয়ায়ে শামী।


প্রশ্নঃ ইমাম সাহেব নামাজ অবস্থায় সম্পূর্ণভাবে মেহরাবের মধ্যে নামাজের জন্য দন্ডয়মান হওয়া, যাতে ইমামের অবস্থা সম্পর্কে অর্থাৎ ইমামের নিয়ত বাধা, রুকু করা, সিজদা করা ইত্যাদি কর্ম ও আমল সম্পর্কে মুক্তাদীগণের নিকট সম্পূর্ণভাবে লুকায়িত থাকে, মুক্তাদীগণের দৃষ্টিগোচর না হয় এমতাবস্থায় নামাজের কি হুকুম?


উত্তরঃ ইমাম সাহেব মেহরাবের ভিতরে এমনভাবে দন্ডয়মান হওয়া, যাতে ইমাম সাহেবের রুকু, সিজদা ইত্যাদি কর্ম সম্পর্কে মুক্তাদীগণের দৃষ্টিগোচর হয় না, এমতাবস্থায় মাক্রূহ। হ্যাঁ যদি ইমাম এমন অবস্থায় দন্ডায়মান হয় যাতে ইমামের অবস্থা সম্পর্কে মুক্তাদীগণ সম্পূর্ণরূপে জ্ঞাত, তাহলে তা মাকরূহ নয়।


যদি ইমাম সাহেব নির্দিষ্ট জায়গায় ইমামতি করতেছেন, আর মুক্তাদীগণ বারান্দা কিংবা মসজিদের মাঠে, যদিওবা মুক্তাদীগণ ইমামের অবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত, এক্ষেত্রে মাকরূহ ব্যতীত নামাজ জায়েয।৭৮ 

➥৭৮. দুররুল মুখতার আলা রদ্দুল মুহতার, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৬৪৫, অধ্যায়-বাবু মা’বাদুস্ সালাত।

 

প্রশ্নঃ নামাজের মধ্যে হুজুর নবীউল আন্বিয়া বোরহানুত্ তৌহীদ মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর খেয়াল আসাতে নামাজ ফাসেদ হবে? কিংবা কোন প্রকার দোষনীয় হবে কিনা? কোন কোন অনুপযুক্ত ও অজ্ঞ লোকের ধারণা এর দ্বারা নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে।


উত্তরঃ নামাজের মধ্যে শাহাদাতে তৌহিদ (একত্ববাদে স্বাক্ষী) মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ) এর খেয়াল ধারণা আসা এটি একটি রূহানী তথা আত্মা ও ঈমানী খোরাক দ্বারা সম্মানিত হয়ে থাকে। কাজেই কিভাবে নামাজ ফাসেদ হবে? হুজুর আলাইহিস্সালামের খেয়াল মোবারক নামাজে আসাতে নামাজ ফাসেদ হবে না, বরং হুজুর (ﷺ) এর ধ্যান নামাজে আসাটা হচ্ছে নামাজ কবুল ও পরিপূর্ণতার স্তরে পৌঁছা।


কেননা আত্তাহিয়াতু ও দরূদ শরীফের মধ্যে মানুষের অন্তরে হুজুর রাহমাতুল্লিল আলামিনের খেয়াল অবশ্যই আসবে, আর এটিই হচ্ছে ঈমানের চাহিদা, যা সম্মান হিসেবে, ইবাদত হিসেবে নয়। কাজেই রাসূলের খেয়াল আসাতে নামাজ ফাসেদ হবে না। ৭৯

➥৭৯.  সহীহ মুসলিম শরীফ, পৃষ্ঠা-৭৮।

 

মাসআলাঃ মসজিদের ভিতরে জায়গা থাকা সত্ব্ওে মসজিদের ছাদের উপর এককভাবে হউক কিংবা জামাতে হউক নামাজ পড়া জায়েয। তবে ওজর তথা কারণ ব্যতীত এরকম করা মাকরূহ হতে খালি নয়। তবে শর্ত হচ্ছে ইমামের বরাবর কিংবা ইমামের আগে দাঁড়ানো যেন না হয়।  ৮০

➥৮০. ফতোয়ায়ে শামী, ১ম খণ্ড, ৬৫৬পৃষ্ঠা, আহকামুল মসজিদ ও ফতোয়ায়ে কাযীখান।

 

মাসআলাঃ ওলামায়ে আহনাফ ও অধিকাংশ ইমামদের মতে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ নামায পাঁচটি।


প্রথমত, ফযরের দুই রাকাত সুন্নাত, দ্বিতীয়- মাগরীবের ফরয নামাযের পর দুই রাকাত সুন্নাত, তৃতীয়- যোহরের ফরযের নামাযের পর দুই রাকাত সুন্নাত, চতুর্থ- এশার ফরয নামাযের পর দুই রাকাত সুন্নাত, পঞ্চম- যোহরের ফরয নামাযের পূর্বে চার রাকাত সুন্নাত। এই পাঁচটি সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। ৮১

➥৮১. শরহে মুসনাদে ইমাম আযম, পৃষ্ঠা-১৫৮।

 

মাসআলাঃ ফজর ও যোহরের ফরয নামাযের পূর্ব ব্যতীত অন্য কোন ওয়াক্তের ফরজের পূর্বে সুন্নাত পড়া আবশ্যক নয়।


মাসআলাঃ যদি জামাত শুরু তথা আরম্ভ হয়ে গেছে কিংবা জামাত শুরু হচ্ছে এমতাবস্থায় কোন সুন্নাত কিংবা নফল নামায শুরু না করা আবশ্যক। ৮২

➥৮২. ইসলামী ফিকহ্, পৃষ্ঠা-২৪৭।


মাসআলাঃ যেখানে ফরয নামায আদায় করা হয় সেখানে নফল নামায না পড়া উত্তম। হুযূর (ﷺ) এরশাদ ফরমায়েছেন- ইমাম সে স্থানে নফল নামায না পড়বে যেখানে ফরয নামায আদায় করেছে। অর্থাৎ ফরয নামায পড়ার স্থান হতে একটু নড়ে-চড়ে নফল নামায পড়বে।


মাসআলাঃ ফরয ও বিতির নামায ব্যতিত অন্য কোন নামাযের কাযা ওয়াজিব নয়।


মাসআলাঃ সুন্নাত নামায সমূহের কাযা ওয়াজিব নয়। কেবলমাত্র ফজরের সুন্নাত নামায ব্যতিত, ফজরের সুন্নাতের ব্যাপারে হাদিস শরীফে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।


মাসআলাঃ জানা আবশ্যক যে- বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে সুন্নাত নামায সমূহ ফরয নামাযকে পরিপূর্ণকারী।  ৮৩

 ➥৮৩. দুররে মুখতার।

 

মাসআলাঃ অসুস্থ ব্যক্তি যদি নামাযে কেরাত পড়ার শক্তি না থাকে এ ক্ষেত্রে কেরাত ব্যতীত নামায পড়া জায়েয। ৮৪

➥৮৪. ছেরাজিয়া হাশিয়ায়ে ক্বাজী খান, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১১১।


مريض لم يقدر على القرأة فصلى بلا قرأةٍ جازت 


মাসআলাঃ জুমার দিন নাবালেগ ছেলে খুতবা দেয়া জায়েয নাই। ৮৫

 ➥৮৫.  ছেরাজিয়া, হাশিয়ায়ে ক্বাজী খাঁন, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১০০।

 

মাসআলাঃ তারাহবীর নামায ওযর ব্যতিত বসে পড়া জায়েয। যদিওবা ইমাম বসা অবস্থায় আর মুক্তাদী দন্ডায়মান তাও জায়েয। ৮৬

➥৮৬. ছেরাজিয়া হাশিয়ায়ে ক্বাজী খাঁন, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১১৯।

 

التراويح قاعدا بغير عذرجائز لو صلى الامام قاعدا والقوم قائمًا جاز . 



Top