আবদুন নবী, আবদুর রাসুল নামকরণ প্রসঙ্গে আলোচনা
আবদুন নবী, আবদুর রাসুল, আবদুল আলী ইত্যাদি নামকরণ জায়েয। অনুরূপ নিজেকে হুযুর (ﷺ) এর বান্দা বলাও জায়েয। কুরআন হাদীছ ও ফকীহগণের বিভিন্ন উক্তিতে এর প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু কতেক লোক ভিন্নমত পোষণ করে। তাই এ আলোচ্য বিষয়কেও দু’টি অধ্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে এর প্রমাণ এবং দ্বিতীয় অধ্যায়ে এ প্রসঙ্গে আপত্তির জবাব দেয়া হয়েছে।
প্রথম অধ্যায়
আবদুন নবী, আবদুর রাসুল নামকরণের বৈধতার প্রমাণ
✧ কুরআন করীম ইরশাদ ফরমান-
وَأَنْكِحُوا الْأَيَامَى مِنْكُمْ وَالصَّالِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَائِكُمْ
অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত, তাদের বিবাহ সম্পাদন কর এবং তোমাদের উপযুক্ত বান্দা ও বাঁদীদেরও’’ ৪৩০
➥430. সূূরা নূর, আয়াত নং-৩২।
✧ এ আয়াতের عِبَادِ শব্দটাকে كُمْএর সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছে, যার অর্থ- তোমাদের বান্দাগণ। আর এক জায়গায় ইরশাদ ফরমান-
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ
অর্থাৎ হে মাহবুব (ﷺ) বলে দিন- ওহে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না।’’ ৪৩১
➥431. সূূূরা জুমার, আয়াত নং-৫৩।
এ আয়াতে يَا عِبَادِيَ শব্দের দু’টি অর্থ প্রকাশ পায়। এক, আল্লাহ বলেন, ওহে আমার বান্দাগণ; দুই, হুযুর (ﷺ) কে নির্দেশ দেয়া হয়েছ, আপনি বলে দিন ওহে আমার বান্দাগণ। এ দ্বিতীয় অর্থে রসুলুল্লাহর বান্দা বোঝানো হয়েছে অর্থাৎ (ﷺ) এর গোলাম এবং উম্মত। অনেক বুযুর্গানে দ্বীন দ্বিতীয় অর্থটি গ্রহণ করেছেন।
✧ আল্লামা রুমী মসনবী শরীফে বলেছেন-
بنده خود خواند احمد در رشد
جمله عالم را بخواں قل يا عباد
অর্থাৎ সমগ্র জগতবাসীকে হুযুর (ﷺ) স্বীয় বান্দা বলেছেন। কুরআন শরীফে দেখুন يَا عِبَادِيَ (বলে দিন, ওগো আমার বান্দাগণ) বলা হয়েছে।
✧ হাজী ইমাদুল্লাহ সাহেবের রচিত নফহায়ে মক্কিয়ার অনুবাদ শমায়েমে ইমদাদিয়ার ১৩৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে-ইবাদুল্লাহকে ইবাদুর রসুল বলা যায়। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেছেন-
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ
এখানে عِبَادِيَ এর ى সর্বনাম দ্বারা হুযুর (ﷺ) কে বোঝানো হয়েছে। মৌলভী আশরাফ আলী থানবী উক্ত আয়াতের অর্থ করেছেন-"আপনি বলে দিন, ওহে আমার বান্দাগণ।
✧ ازالة الخفاء গ্রন্থে শাহ ওলীউল্লাহ সাহেব আল রেয়াজুন নফরা ইত্যাদি কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে হযরত উমর (رضي الله عنه) মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দিতে গিয়ে বলেছিলেন-
قد كنت مع رسول الله ﷺ فكنت عبده وخادمه
অর্থাৎ আমি হুযুর (ﷺ) এর সাথে ছিলাম। তখন আমি তাঁর (ﷺ) বান্দা ও খাদেম ছিলাম।
✧ মছনবী শরীফে সেই ঘটনাটা উদ্ধৃত করা হয়েছে। যখন হযরত সিদ্দীক আকবর (رضي الله عنه) হযরত বিলালকে ক্রয় করে হুযুর (ﷺ) এর দরবারে আনলেন তখন আরয করলেন-
گفت مادو بندگان كوئے تو
كرد مش آزاد هم برروئے تو
আমরা দু’জন হলাম আপনার দরবারের বান্দা। আমি একে আপনার সামনে আযাদ করছি।
✧ দুর্রুল মুখতারের ভূমিকায় লেখক স্বীয় জ্ঞান অর্জনের বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন-
فَإِنِّي أَرْوِيهِ عَنْ شَيْخِنَا الشَّيْخِ عَبْدِ النَّبِيِّ الْخَلِيلِيِّ
আমি এটা আমার শেখ আবদুন নবী খলীলী থেকে বর্ণনা করছি।’’৪৩২
➥432. ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৯।
এতে বোঝা গেল যে, দুর্রুল মোখতারের লেখকের উস্তাদের নাম আবদুন নবী ছিল।
✧ মৌলভী রশীদ আহমদ গাঙ্গুহীর শোক গাথায় মৌলভী মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী লিখেছেন-
قبوليت اسے كهتے هيں مقبول ايسے هوتے هيں
عبد سود كا ان كے لقب هے يوسف ثانى
এ শে’র এর ভাবার্থ হলো যে মৌলভী রশীদ আহমদের কালো বান্দাও দ্বিতীয় ইউসুফ দাবী করে।
মোট কথা হলো, গায়রুল্লাহর বেলায় বান্দা শব্দের প্রয়োগ কুরআন, হাদীছ, ফকীহগণের উক্তিসমূহ ও বিরোধিতাকারীদের বিভিন্ন বক্তব্য থেকে প্রমাণিত। আরববাসীরা সাধারণভাবে বলে যে عبدى حر (আমার বান্দা আযাদ) জনৈক আরব্য কবি বলেছেন- ع-الواهب المائة الهجان وعبدها
একটি মজার কথাঃ তাকবিয়াতুল ঈমানে আলী বখশ, পীর বখশ, গোলাম আলী, মাদার বখশ, আবদুন নবী ইত্যাদি নাম রাখাকে শিরক বলা হয়েছে। কিন্তু তাযকিরাতুর রশীদের প্রথম খণ্ডের ১৩ পৃষ্ঠায় রশীদ আহমদ সাহেবের বংশগত শাজরায় এরূপ বর্ণিত আছে ‘মৌলানা রশীদ আহমদ, ইবনে মৌলানা হেদায়েত আহমদ, ইবনে কাজী পীর বখশ, ইবনে গোলাম আলী আর মায়ের দিক থেকে বংশ পরিচয় এভাবে লিখা হয়েছে-রশীদ আহমদ ইবনে করিমুন নিসা, বিনতে ফরিদ বখশ ইবনে গোলাম কাদির, ইবনে মোহাম্মদ সালেহ ইবনে গোলাম মুহাম্মদ। বলুন, দেওবন্দীরা, মৌলভী-রশীদ আহমদের পারিবারিক মুরুব্বীগণ মুশরিক মুরতেদ ছিল কিনা? যদি না বলেন, তাহলে কেন? আর যদি হ্যাঁ বলেন, তাহলে ধর্মদ্রোহীর বংশ বৈধ, না অবৈধ?