বিষয় নং- ১৪: আযানের দোয়াতে ‘ওয়াদ দারাজাতার রা‘ফি‘য়াহ’ বলা।
আহলে হাদিস মুযাফফর বিন মুহসিন তার লিখিত গ্রন্থের ১৫৯ পৃষ্ঠায় আযানের দোয়াতে ‘ওয়াদ দারাজাতার রা‘ফি‘য়াহ’ সম্পর্কে লিখেন-‘‘এটাও বানোয়াট ও অতিরিক্ত সংযোজিত (এটির ভিত্তি হল আলবানীর ইরওয়াউল গালীল)।’’
এই জাহেলের কোন পুঁজি থাকলে তো কোন নিজ পুজিতে রিসার্চ করতো।
ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৪৮৬ পৃষ্ঠায় দলিল বিহীন লিখেছে-‘‘আর প্রথম বাক্যটি (ওয়াদ-দারাজাতার রাফী’আহ) একেবারেই ভিত্তিহীন ও মিথ্যা হাদীস নির্ভর।’’
❏ দেওবন্দী আলেম মাওলানা আনোওয়ার শাহ কাশ্মীরী তার এক গ্রন্থে লিখেন- فليس لها أصل -‘‘এ দোয়া পড়ার কোনো ভিত্তি নেই।’’
(কাশ্মীরী, আরফুয সাযী, ১/২২৩ পৃ.)
এবার আমরা দেখবো, এটি সনদসহ কোনো কিতাবে বর্ণিত হয়েছে কিনা, বা ভিত্তি আছে কিনা।
❏ বিখ্যাত ইমাম ইবনে সুন্নী (رحمة الله) [ওফাত ৩৬৪ হিজরী] তদীয় কিতাবে সহীহ্ রেওয়াত উল্লেখ করেন:-
حَدَّثَنَا أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَخْبَرَنَا عَمْرُو بْنُ مَنْصُورٍ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَيَّاشٍ، حَدَّثَنَا شُعَيْبٌ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ: اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَالدَّرَجَةَ الرَّفِيعَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ، حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
-“হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: আযান শুনার পরে যে ব্যক্তি বলবে: ‘আল্লাহুম্মা রাব্বা হাজিহীদ দাওয়াতীত তাম্মাত ওয়াছ ছালাতীল কায়িমা আতি মুহাম্মাদাল ওয়াছিলাতা ওয়াল ফাদ্বিলাহ ওয়াদ দ্বারাজাতুর রাফিয়া ওয়া বায়াছহু মাকামান মাহমুদা আল্লাজি ওয়াদতাহু’ ঐ ব্যক্তির জন্য আমার শুপারিশ আবশ্যক হয়ে যাবে।”
(ইবনে সুন্নী: ‘আমালু ইয়ামু ওয়াল লাইলাতি, হাদিস নং ৯৫; ইবনে হাজার আসকালানী: তালখিছুল হুবাইর, ১ম খণ্ড, ৫১৮ পৃ:) এর সনদ সহীহ্।
❏ এই হাদিসের বর্ণনাকারী مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ ‘মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির’ বিশিষ্ঠ বিশ্বস্ত তাবেঈ ও বুখারী-মুসলীমের রাবী। বর্ণনাকারী شُعَيْبٌ ‘শুয়াইব’ বুখারী-মুসলীমের রাবী। عَلِيُّ بْنُ عَيَّاشٍ ‘আলী ইবনে আইয়াশ’ সহীহ্ বুখারীর রাবী ও বিশ্বস্ত। عمرو بن منصور، أبو سعيد النسائي ‘আমর ইবনে মানছুর আবু সাঈদ নাসাঈ’ বিশ্বস্ত রাবী।
❏ ইমাম যাহাবী বলেন তিনি হাফেযুল হাদিস ছিলেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন-ইমাম নাসাঈ (رحمة الله) তার ব্যাপারে বলেছেন: ثقة مأمون ثَبْت -“তিনি ছিলেন বিশ্বস্ত, নিরাপদ, দৃঢ় বর্ণনাকারী।”
(যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৫/১১৯৯ পৃ. রাবী নং ৩৫৫)
آتِ محمدا الوسيلة والفضيلة والدرجة الرفيعة -“হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে দান কর ‘অছিলাহ’ ও ‘ফাদ্বিলাহ’ এবং সর্বোচ্চ মর্যাদার স্থান। এ বিষয়ে আল্লামা ইসমাঈল হাক্বী হানাফী (رحمة الله) তদীয় কিতাবে বলেন,
ويقول بعد الاذان اللهم رب هذه الدعوة التامة والصلاة القائمة آت محمدا الوسيلة والفضيلة والدرجة الرفيعة وابعثه المقام المحمود الذي وعدته
-আল্লাহর হাবীব (ﷺ) বলেছেন: (আযানের দোয়া) ‘আল্লাহুম্মা রাব্বা হাজিহীদ দাওয়াতীত তাম্মাত ওয়াছ ছালাতীল কায়িমা আতি মুহাম্মাদাল ওয়াছিলাতা ওয়াল ফাদ্বিলাহ ওয়াদ দ্বারাজাতুর রাফিয়াওয়া বায়াছহু মাকামান মাহমুদা আল্লাজি ওয়াদতাহু’।
(ইসমাঈল হাক্কী, তাফছিরে রুহুল বায়ান, ৭ম খণ্ড, ২৬৩ পৃ:)
তাই এই দোয়াকে বিদ‘আত ভিত্তিহীন বলার কোন সুযোগ নেই।