নারী সৃষ্টি
হযরত আদম (عليه السلام) কে বর্তমান কা’বা শরীফের অবস্থান স্থলে জুমার দিন সৃষ্টি করা হয়। এরপর তিনি পৃথিবীতে একাকী চলাফেরা করতেন আর পৃথিবীর প্রত্যেক প্রাণীকে ভিন্ন জাতি দেখে ভয় পেয়ে যেতেন। এবং আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করতেন- যদি স্বজাতি থাকতো তবে তাদের সাথে সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব হতো। পরবর্তী জুমার দিন তিনি ঘুমাচ্ছিলেন। এ সময় ফেরেশতাগণ তাঁর বাম পাঁজর কেটে তা থেকে মুহুর্তের মধ্যে অত্যন্ত সুশ্রী নারী হযরত হওয়া (عليه السلام) কে সৃষ্টি করেন। তবে এতে হযরত আদম (عليه السلام) অনুভবও করতে পারেন নি। অতঃপর তাঁর কাটা স্থান জোড়া লাগিয়ে দেয়া হলো। তিনি জাগ্রত হয়ে হাওয়া (عليه السلام) কে জিজ্ঞাসা করলেন- তুমি কে? উত্তর আসল, ইনি আমার বন্দিনী। তোমার ভীতি দূরীভূত করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। ১
১.আব্দুল আযিয মুহাদ্দিস দেহলভী র. (১২২৫ হি.), তাফসীরে আযিযী, সূত্র. মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী র. (১৩৯১ হি.) তাফসীরে নঈমী, উর্দূ, পৃ. ২৭৭
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এবং আরো কয়েকজন সাহাবী থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত আদম (عليه السلام) একাকী ছিলেন। কোন বন্ধু কিংবা সুখ-দুঃখের কোন সাথী ছিলনা। আল্লাহ তা‘আলাতাকে ঘুমিয়ে রাখলেন। অতঃপর তাঁর বাম পাঁজর থেকে মাংস নিয়ে হযরত হওয়া (عليه السلام) কে সৃষ্টি করলেন। তাঁর উক্ত স্থানে সাথে সাথে মাংস জন্মে গেল। হযরত আদম (عليه السلام) জাগ্রত হলে হওয়া (عليه السلام) কে তাঁর মাথার পাশে দণ্ডায়মান দেখেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন- তুমি কে? তিনি বললেন-আমি আওরাত তথা নারী। হযরত আদম (عليه السلام) জিজ্ঞাসা করলেন- তোমাকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী? উত্তরে তিনি বললেন, আপনি যেন আমা থেকে শান্তি লাভ করতে পারেন। ফেরেশতারা হযরত আদম (عليه السلام)’র জ্ঞানের পরিধি পরিমাপের উদ্দেশ্যে আদম (عليه السلام) কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইনি কে? উত্তরে তিনি বললেন- ইনি ‘ইমরাতুন’ অর্থাৎ নারী। ফেরেশতারা জিজ্ঞাসা করলেন- এর নাম ‘ইমরাতুন’ কেন রাখা হলো? উত্তরে হযরত আদম (عليه السلام) বলেন, কেননা তার সৃষ্টি ‘ইমরুন’তথা পুরুষ থেকে হয়েছে। ফেরেশতারা জিজ্ঞাসা করলেন- এর নাম কী? উত্তরে তিনি বললেন- হাওয়া। ফেরেশতারা জিজ্ঞাসা করলেন- এর নাম হাওয়া হলো কেন? উত্তরে তিনি বললেন, যেহেতু ইনি জীবন্ত বস্তু থেকে সৃষ্টি হয়েছে, তাই এর নাম হয়েছে হাওয়া।
অতঃপর আদম (عليه السلام) হাওয়া (عليه السلام)’র দিকে হাত বাড়াতে চাইলে আদেশ হলো- হে আদম! আগে তার মাহর আদায় কর তারপর হাত লাগাবে। আদম (عليه السلام) আরয করলেন, হে আমার প্রতিপালক! এর মাহর কী? বলা হলো আমার শেষ নবী মুহাম্মদ (ﷺ)র উপর দশবার দুরূদ শরীফ পাঠ কর। এভাবে ফেরেশতাদের সাক্ষ্যের মাধ্যমে হযরত আদম (عليه السلام)’র সাথে হযরত হাওয়া (عليه السلام)’র বিবাহ সম্পন্ন হয়।
হযরত আদম (عليه السلام)’র সৃষ্টি সর্বসম্মতিক্রমে পৃথিবীতে মক্কা শরীফে হয়েছে। তবে হযরত হাওয়া (عليه السلام)’র সৃষ্টির স্থান নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)’র মতে হযরত হাওয়া (عليه السلام) জান্নাতে সৃষ্টি হয়েছেন। কিন্তু হযরত ওমর (رضي الله عنه) ও অন্যান্য সাহাবায়ে কিরামের মতে- ফেরেশতা হযরত আদম (عليه السلام) ও হাওয়া (عليه السلام) কে নূরানী তখতে বসায়ে হযরত আদম (عليه السلام) কে নূরানী পোশাক ও মাথায় তাজ পরায়ে এবং হযরত হাওয়া (عليه السلام) কে স্বর্ণের পোশাকে সুসজ্জিত করে ফেরেশতাদের অভ্যর্থনার মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হযরত হাওয়া (عليه السلام) জান্নাতে প্রবেশের পূর্বে পৃথিবীতেই সৃষ্টি হয়েছেন।পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-
يَاآدَمُ اسْكُنْ أَنْتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ
হে আদম! তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতে অবস্থান কর। ২
২.সূরা বাকারা, আয়াত: ৩০
আল্লাহ তা‘আলা হযরত আদম (عليه السلام) ও হাওয়া (عليه السلام) উভয়কে সসম্মানে সমমর্যাদায় জান্নাতে নি’য়ামতরাজী ভোগ করার অধিকার দিয়েছেন কেবল নিষিদ্ধ বৃক্ষের কাছে যেতে এবং তার ফল খেতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু শয়তানের প্ররোচনায় এবং হযরত হাওয়া (عليه السلام)’র প্রেরণায় সর্বোপরি আল্লাহর ইচ্ছায় তারা নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খেয়ে জান্নাত থেকে বহিষ্কৃত হলেন এবং পৃথিবীতে অবতরণ করলেন।
উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তা‘আলা হযরত আদম (عليه السلام) কে সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীতে আল্লাহর খলীফা তথা প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً
আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টিকারী। ৩
৩.সূরা বাকারা, আয়াত: ৩৫
আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে জান্নাতে স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্যে দেননি বরং তাদের উদ্দিষ্ট বাসস্থানে প্রেরণের একটি উপলক্ষ সৃষ্টির জন্য অবস্থান করতে দিয়েছিলেন। তাদের নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়াটা গুনাহ নয় বরং আল্লাহর উদ্দেশ্য পূরণের সহায়ক। যদিও বা বাহ্যিক দৃষ্টিকোণে আল্লাহর আদেশ অমান্য করার কারণে ইজতিহাদী ভুল বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এজন্যে হযরত আদম (عليه السلام)কে যেমন দোষারোপ করা যাবেনা অনুরূপ হযরত হাওয়া (عليه السلام) কেও দোষারোপ করা ঠিক হবে না।