★আল্লাহর অলিগন ওফাতের পর জীবত নাকি মৃত?______
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
﴿وَلَا تَقُولُوا لِمَن يُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ وَلَـٰكِن لَّا تَشْعُرُونَ﴾
অনুবাদ: “এবং যারা আল্লাহ্র পথে নিহত হয় তাদেরকে মৃত বলো না; বরং তারা জীবিত; হাঁ, তোমাদের খবর নেই। ”
[সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৫৪]
আরেকটি আয়াতে আল্লাহ পাক বলেনঃ
﴿وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ﴾
অনুবাদ: "এবং যারা আল্লাহ্র পথে নিহত হয়েছে, কখনো তাদেরকে মৃত বলে ধারণা করো না, বরং তারা নিজ রবের নিকট জীবিত রয়েছে, তারা জীবিকা পায়। ”
[সূরা আলে ইমরানঃ ১৬৯]
এখন অনেকেই বলতে পারেন, “উক্ত আয়াত দুটিতো শহীদদের সম্পর্কে। আর শহীদ বলা হয় যারা যুদ্ধে নিহত হয়। ”না ভাই! যারা যুদ্ধে নিহত শুধু তারাই শহীদ এমন নয়। আল্লাহ পাক সূরা হাদীদে বলেনঃ
﴿وَالَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ أُولَـٰئِكَ هُمُ الصِّدِّيقُونَ ۖ وَالشُّهَدَاءُ عِندَ رَبِّهِمْ لَهُمْ أَجْرُهُمْ وَنُورُهُمْ ۖ وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ﴾
অনুবাদঃ “যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ইমান আনে তারাই তাদের পালনকর্তার কাছে সিদ্দীক ও শহীদ বলে বিবেচিত। তাদের জন্যে রয়েছে পুরস্কার ও জ্যোতি এবং যারা কাফের ও আমার নিদর্শন অস্বীকারকারী, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী হবে।”
[সূরা হাদীদঃ ১৯]
✅লক্ষ্য করুন আয়াতে পূর্নাঙ্গ ইমানদারকেও শহীদ বলা হয়েছে।
আসুন এইবার হাদীসে দেখি অলিরা কীভাবে শহীদঃ
হযরত আবূ হুরাইরা (رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন রাসুল (ﷺ) বললেনঃ “ তোমরা তোমাদের মধ্যকার কাদেরকে শহীদ বলে গণ্য কর? ” তারা বললেন, “হে আল্লাহর রসূল! যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জীবন দেয় সে তো শহীদ। ” তিঁনি বললেনঃ “ তা আঁমার উম্মাতের শহীদের সংখ্যা অতি অল্প! তখন তারা বললেনঃ “ قَالُوا فَمَنْ هُمْ يَا رَسُولَ অর্থাৎ “ তাহলে তারা কারা হে আল্লাহর রসূল! ” তখন তিনি ﷺ বললেনঃ
” مَنْ قُتِلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَهُوَ شَهِيدٌ وَمَنْ مَاتَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَهُوَ شَهِيدٌ “
অর্থাৎ: “ যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে (জিহাদে) নিহত হয় সেও শহীদ। আবার যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে (আত্মউতসর্গ করে) স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ সেও শহীদ। ”
[সহীহ মুসলিমঃ হা/৪৮৩৫]
[ইবনে মাযাহঃ হা/২৮০৪]
এ বিষয়ে আরেক বর্ণনায়ঃ
হযরত আবূ মালিক আল আশ’আরী (رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) বলতে শুনেছিঃ “ আল্লাহর ইচ্ছার উপর নিজেকে উৎস্বর্গিত করে বিছানায় মৃত্যুবরণ করলেও সে শহীদের মর্যাদা পাবে এবং তার জন্য জান্নাত অবধারিত। ”
[সুনানে আবু দাউদঃ হা/২৪৯৯]
[সুনান আল কুবরাঃ হা/১৭৯৭১]
অলি-আল্লাহগন জীবিত ও তাদের শরীর জমিন ভক্ষন করেনা, আরও কিছু দলিলঃ
(১) সহীহ বুখারীতে আছে:
হযরত উরওয়া বিন যুবাইর (رَضِیَ اللہُ عَنۡہُمَا) থেকে বর্ণিতঃ খলিফা ওলীদ বিন আবদুল মালিক।এর শাসনামলে যখন রাসূল (ﷺ) এর রওযার দেওয়াল ধ্বসে গেল তখন লোকেরা (৮৭ হিজরীতে) সেটা তৈরী করতে লাগল। (ভিত্তি খননের সময়) একটি পা প্রকাশ পেল তখন সব লোক ভয় পেল এবং লোকেরা ধারণা করল যে, এটা রাসুলে পাক (ﷺ) এর কদম মোবারক আর এমন কোন ব্যক্তি পাওয়া যায় নি যে সেটা চিনতে পারে। তখন হযরত উরওয়া বিন যুবাইর (رَضِیَ اللہُ عَنۡہُمَا) বললেনঃ
” لاَ وَاللهِ مَا هِيَ قَدَمُ النَّبِيُّ (ﷺ) مَا هِيَ إِلاَّ قَدَمُ عُمَرَ “
অর্থাৎ: আল্লাহর শপথ! এটা নবী করিম (ﷺ) এর কদম মোবারক নয় বরং এটা হযরত ওমর (رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ) এর পা মোবারক। ”
[সহীহ বুখারী: ১/৪৬৯, হা/১৩৯০]
লক্ষ্য করুন, ঘটনাটি ৮৭ হিজরীর আর ওমর (رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ) এর ওফাত হয় ২৪ হিজরীতে ওফাতের প্রায় ৬৩ বছর পরও হযরত ওমর ফারুক (رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ) এর শরীর মোবারক অক্ষত ছিলো এবং তাতে কোন পরিবর্তন সাধিত হয়নি।
(২) তিরমিযী শরীফে বর্ণিতঃ
হযরত ইবনে আব্বাস (رَضِیَ اللہُ عَنۡہُمَا) বলেন: “ একজন সাহাবী (رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ) একটি কবরের উপর নিজ তাবু গাড়লেন। কিন্তু তিনি জানতেন না যে, এখানে কবর আছে। হঠাৎ জানতে পারলেন যে, সেখানে কোন এক ব্যাক্তির কবর আছে, যিনি সূরা মুলক পাঠ করছেন, আর সে সম্পূর্ণ সূরা সমাপ্ত করলো। সেই সাহাবী (رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ) রাসুল (ﷺ) এর কাছে উপস্থিত হয়ে আরয করলেন: “ ইয়া রাসুলুল্লাহ (ﷺ)! আমি একটি কবরের উপর তাবু খাটাই কিন্তু আমি জানতাম না যে, সেখানে কবর রয়েছে। হঠাৎ বুঝতে পারি যে, সেখানে একটি লোক সূরা মুলক পাঠ করছে আর তা সমাপ্ত করেছে। ” তখন রাসুল (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “ এটা (সূরা মূলক) বাধা প্রধানকারী সূরা, এটা মুক্তিদাতা, যেটা তাকে কবরের আযাব থেকে মুক্তি দান করেছে। ”
[সুনানে তিরমিযী: ৪/৪৭০ পৃষ্ঠা, হা/২৮৯৯]
[মিসকাতুল মাসাবিহ: হা/২১৫৪]
উক্ত হাদিসটি লক্ষ্য করুন কীভাবে আল্লাহ পাক তার প্রিয় বান্দাকে কবরে জীবিত রেখেছেন এবং তাকে কুরআন তেলাওয়াত করার ক্ষমতা দিয়েছেন।
(৩) রাসুল (ﷺ) বলেছেনঃ “ যখন কোন ব্যক্তি পবিত্র আত্মার অধিকারী হয়, তখন তার দেহ জমিন কখনো ভক্ষণ করে না। ”
[তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৩য় খন্ড, ৬২৭ পৃষ্ঠা]
(৪) হযরত আনাস (رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ) বর্নণা করেছেনঃ রাসুল (ﷺ) বলেছেন: “ নিশ্চয়ই সমস্ত (পূর্ণাঙ্গ) মুমিন ব্যক্তি তাঁদের কবরে জীবিত এবং তারা রিজিক প্রাপ্ত। ”
[মুসনাদে আবী নুয়াইম: ২য় খন্ড, ৪৪ পৃষ্ঠা]
[মিশকাত: ১০/৫৫৩ পৃষ্ঠা]
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ইমামগনের মতেঃ
(১) হযরত আল্লামা মােল্লা আলী কারী (رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ) বলেনঃ
” لا فرق لهم في الحالين ولذا قيل أولياء الله لايموتون ولكن ينتقلون من دار الى دار “
অর্থাৎ “ আল্লাহর ওলীগণের উভয় অবস্থায় (জীবন-মরণ) কোন পার্থক্য নেই। সে কারণে বলা হয়েছে, তাঁরা মরেন না, বরং এক ধরনের আবাস থেকে অন্য ধরনের আবাসে স্থানান্তরিত হন মাত্র। ”
[মিরকাতুল মাফাতীহ: ৩য় খন্ড, ৪৫৯ পৃষ্ঠা]
(২) শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ) বলেনঃ “ আল্লাহর ওলীগণ এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবী থেকে অনন্ত চিরস্থায়ী আবাসের দিকে স্থানান্তরিত হয়ে যান এবং নিজ প্রতিপালকের নিকট জীবিত রয়েছেন। তাঁদেরকে রিযিক দান করা হয়ে থাকে । তারা সেখানে আনন্দে রয়েছেন । কিন্তু মানুষ তা বুঝতে পারে না। ”
[আশিয়াতুল লুমআত: ৩য় খন্ড, ৪২৩ পৃষ্ঠা]
(৩)শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ) আর এক জায়গায় লিখেন: হযরত সায়্যিদুনা আহমদ বিন মারশূক (رضى الله عنه) বর্ণনা করেনঃ “ এক দিন শায়খ আবুল আব্বাস হাজরমী (رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ) আমার কাছে জিজ্ঞাসা করলেন, জীবিতদের সাহায্য বেশি শক্তি রাখে কি মৃতদের? আমি বললাম, কিছু কিছু লােক বলে থাকে, জীবিতদের সাহায্য বেশি শক্তি রাখে। আর আমি বলি যে, মৃতদের সাহায্য বেশি শক্তি রাখে। শায়খ বললেন , হ্যাঁ , এ কথাই বিশুদ্ধ। কেন, ওফাতপ্রাপ্ত বুজর্গরা আল্লাহর দরবারে তারই সাথে হয়ে থাকেন। ”
[আশিয়াতুল লুমআত: ১ম খন্ড, ৭৬২ পৃষ্ঠা]
(৪) “ শরহুস সূদুর ” এ রয়েছে:
হযরত সাইয়েদুনা আবু আলী (رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ) বলেন: “ এক ফকীরকে কবরে দিলাম, যখন কাফন খুললাম, তাঁর মাথাটি মাটিতেই রাখা ছিল, যাতে আল্লাহ তায়ালার তার অভাবের উপর দয়া করেন, তখন তিনি তাঁর চক্ষুদ্বয় খুলে ফেললেন। আর আমাকে বললেন, হে আবু আলী (رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ)! যিনি আমাকে নিয়ে গর্ব করেন আমাকে কি তাঁর সামনে লজ্জিত করছেন? আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, হুজুর মৃত্যুর পরেও জীবন রয়েছে? তিনি (رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ) বললেনঃ “ بَلَى أَنَا حَیُّ ْوَكُلُّ مُحِبُّ اللّٰہ حَیُّ ” অর্থাৎঃ“ হ্যাঁ, আমি জীবিত। আর আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা সবাই জীবিত। ”
[শরহুস সুদুরঃ পৃষ্ঠা: ২০৮]
(৫) শ্রেষ্ঠ মুহাক্কিক ইমাম মোল্লা আলী কারী বলেন (رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ) বলেন: “ যখন পবিত্র আত্মা শারীরিক বন্ধন হতে মুক্ত হন,তখন তাঁরা উর্দ্ধজগতের ফেরেশ্তাদের সাথে মিশে যান এবং স্বীয় ইচ্ছা অনুযায়ী আসমান ও যমীনের সর্বত্র বিচরণ করেন এবং জীবিত ব্যক্তিদের ন্যায় চাক্ষুষ সবকিছু দেখতে পানও শুনতে পান।”
[মোল্লা আলী কারী'র মীরকাত: ২য় খন্ড, ৭ পৃষ্টা]
সুতরাং পবিত্র কুরআন-হাদীস ও পূর্ববর্তী মুজতাহিদ ইমামগনের আলোচনা অনুযায়ী সুস্পষ্ট প্রমানিত যে, আল্লাহ তায়ালার অলীগন তাদের কবরে জীবিত। তাদের শরীর অক্ষত রয়েছে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা রিযিক প্রাপ্ত।