দাঁড়িয়ে পানি পান
------------------------
আমার একটা বদ স্বভাব হলো, প্রচলিত বিশ্বাসের বাহিরেও যে একটা জগৎ আছে তা দেখানো। কয়েনের এক সাইড দেখে আমরা যারা মানুষকে জাজ করা শুরু করি, তার বিপরীত দিকটা দেখানো। এর জন্য আমি প্রচুর সমালোচনার মুখে পড়ি। আমার সেলিব্রেটি ইমেইজ কখনো গড়ে ওঠে নাই এবং ওঠবেও না। আমি এতে ১% ও দু:খিত না। আলহামদুলিল্লাহ। আমার রিজিকের ব্যবস্থা আল্লাহ পাক করেন। ওয়াজের দাওয়াত কমে যাওয়ার ভয়ে আমি ভীত নই। ফ্যান ফলোয়িং কমে যাওয়ার ভয়ে আমি ভীত নই৷ কোনো দল মত সংস্থা আমার রিজিকের ব্যবস্থা করে না। কাজেই কেউ রাগ করলেও আমার কিছু যায় আসে না।  আলহামদুলিল্লাহ। আমি কেন এই প্রচলিত মতের ও স্রোতের বিরুদ্ধে কথা বলি? কারণ আমাদের সমাজে বিরুদ্ধ মতকে তাচ্ছিল্য করা হয় ও ইলমি ইখতিলাফ বা জ্ঞানগত মতপার্থক্যকে একদম সহ্য করা হয় না। এজন্য আমাদের প্রচলিত মতের বিরুদ্ধেও যে আরেকটা বিপরীত মত থাকতে পারে তা দেখিয়ে দেয়া জরুরী। 

আজ তেমনি একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করব ইন শা আল্লাহ। 
وروى البخاري (5615) عن عَلِيّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أنه شَرِبَ قَائِمًا ثم قَالَ : إِنَّ نَاسًا يَكْرَهُ أَحَدُهُمْ أَنْ يَشْرَبَ وَهُوَ قَائِمٌ ، وَإِنِّي رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَعَلَ كَمَا رَأَيْتُمُونِي فَعَلْتُ .
নায্‌যাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (কুফা মসজিদের ফটকে) ‘আলী (রাঃ)-এর নিকট পানি আনা হলে তিনি দাঁড়িয়ে তা পান করলেন। এরপর তিনি বললেনঃ লোকজনের মধ্যে কেউ কেউ দাঁড়িয়ে পান করাকে মাকরূহ মনে করে, অথচ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি, তোমরা আমাকে যেমনভাবে পান করতে দেখলে তিনিও তেমনি করেছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১০০)

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৬১৫

وروى أحمد (797) أَنَّ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ شَرِبَ قَائِمًا ، فَنَظَرَ إِلَيْهِ النَّاسُ كَأَنَّهُمْ أَنْكَرُوهُ فَقَالَ : مَا تَنْظُرُونَ ! إِنْ أَشْرَبْ قَائِمًا فَقَدْ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَشْرَبُ قَائِمًا ، وَإِنْ أَشْرَبْ قَاعِدًا فَقَدْ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَشْرَبُ قَاعِدًا . قال أحمد شاكر في تحقيق المسند : إسناده صحيح اهـ .
নিশ্চয়ই আলি ইবনে আবি তালিব রা. দাঁড়িয়ে পানি পান করলেন (কুফাতে), তখন মানুষ এমনভাবে তাকাল যেন তারা তা অপছন্দ করল। অত:পর আলি ইবনে আবি তালিব রা. বললেন, তোমরা কী দেখ? আমি যদি দাঁড়িয়ে পানি পান করি তাহলে হুজুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও দাঁড়িয়ে পানি পান করতে দেখেছি, আমি যদি বসে পানি পান করি তবে হুজুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও বসে পানি পান করতে দেখেছি। 
আহমদ শাকির এই হাদিসের তাহকিকে বলেন, এর সনদ সহিহ। (মুসনাদ আহমদ ইবনে হাম্বল, হাদিস নং- ৭৯৭)

وروى الترمذي (1881) عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُما قَالَ : كُنَّا نَأْكُلُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ نَمْشِي ، وَنَشْرَبُ وَنَحْنُ قِيَامٌ . 
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যামানায় আমরা হাঁটতে হাঁটতে খাবার খেতাম এবং দাঁড়িয়ে থাকাবস্থায় পানি পান করতাম।
সহীহ্‌, মিশকাত (৪২৭৫)।
ফুটনোটঃ
আবূ ঈসা তিরমিজি রাহ. বলেন, এ হাদীসটি সহীহ্‌ এবং উবাইদুল্লাহ ইবনু উমার-নাফি হতে, তিনি ইবনু উমার (রাঃ)-এর সূত্রে গারীব। এ হাদীসটি ইমরান ইবনু হুদাইর আবুল বাযারীর বরাতে ইবনু উমার হতে বর্ণনা করেছেন। আবুল বাযারীর নাম ইয়াযীদ, পিতা উতারিদ। 
জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৮৮০
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

 তিনখানা সহিহ হাদিস পেয়েছি বুখারি, তিরমিজি ও মুসনাদ আহমদ ইবনে হাম্বল থেকে। একখানা মাওলা আলির আ. যা রহিত বা মানসুখ হওয়া অসম্ভব, কারণ মাওলা আলি কুফার মানুষকে বললেন তোমরা দাঁড়িয়ে পানি পান করাকে হারাম মনে কর। আমি হুজুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দাঁড়িয়ে পানি পান করতে দেখেছি। বলে তিনি পানি পান করলেন দাঁড়িয়ে। আর জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করার আলাদা কয়েকখানা হাদিস আছে, সেগুলো আমি আনিই নাই। 

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ১ বারও করে থাকলে তাকে অনুত্তম আমি বলতে পারি না, যা রহিত হয় নাই। 

হ্যাঁ, আমি অবশ্যই মানছি বসে পানি পান নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার বেশিরভাগ সময়ের সুন্নাহ, বেশিরভাগ হাদিসে তাই এসেছে। কিন্তু মাঝেমধ্যে দাঁড়িয়ে পানি পান করলে কোনো ক্ষতি নেই৷ অথচ কেউ দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তার তাকওয়া পরহেজগারি নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলি। কে কত পরহেজগার তা মাপি দাঁড়িয়ে পানি পান ও বসে পানি পানের উপর৷ যা গর্হিত কাজ। 

একই বিষয় পুরুষের টাকনু গিড়ার নিচে কাপড় পরিধান করার বিষয়টি নিয়ে (আমার বিস্তারিত লেখা আছে এই সংক্রান্ত কমেন্ট বক্সে লিংক দিলাম)।  হাদিস কিন্তু এখানে একটা না অনেকগুলো, সবই সহিহ বুখারির।  সবগুলোই বলছে অহংকার বশত: এই কাজ করলে হারাম, এছাড়া আরো যত হাদিসের কথা বলছেন সেগুলোও অহংকার বশত: শব্দটা আছে।  আর  মাজহাবের ৪ জন বড় বড় ইমামের মতামত সহ দিয়েছি, তারাও একই কথা বলছেন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার যুগ উত্তম যুগ, অত:পর এর পরে যারা আসবে অত:পর এর পর যারা আসবে (সহিহ বুখারি, হাদিস নং 6695)। মাজহাবের ইমাম গণ কিন্তু সেই উত্তম যুগের মুসলমান। তারা আমাদের চাইতে লাখগুণ ভালো ইসলাম বুঝতেন। হ্যাঁ, টাকনু গিড়ার উপর কাপড় পড়া সুন্নাহ। করলে ভাল সওয়াব হবে। না করলে গোনাহ হবে না, যদি অন্তরে অহংকার না থাকে। আগের যুগে রাজা বাদশাহ ধনী আমির ওমরাহ এরা কাপড় ঝুলিয়ে চলত অহংকার প্রদর্শন হিসেবে, ৩ জন পেছনে কাপড়ে ধরে ধরে হাটত।  এজন্য এটা হারাম বলা হয়েছে, কারণ এটা অপচয়ও। অহংকার ই মূল কারণ।  অহংকার না থাকলে অসুবিধা নেই। 

উল্লেখ্য: আমি বসে পানি পান করি, পাজামা প্যান্টও আলহামদুলিল্লাহ টাকনু গিড়ার উপরেই রাখি। কিন্তু ভিন্নমতকে সম্মান করুন আল্লাহর ওয়াস্তে। দুনিয়া সমাজ বসবাসের উপযোগী থাকবে৷ যেইকোনো বিষয়ে। যে কাজকে যেই তাকে রাখ উচিত সেখানে রাখুন। উপরেও না নিচেও না। 

দাঁড়িয়ে পানি পান ও পুরুষের টাকনু গিড়ার নিচে কাপড় পড়াকে আমরা মদ জুয়া জিনা ব্যভিচারের মতো অকাট্য কবিরা গোনাহগুলোর মতো যেন না বানিয়ে দিই। এসব জুলুম৷ 

আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক অবগত।

কৃত: সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া আজহারী
Top