প্রিয় নবী ﷺ ইরশাদ করেন: জল ও স্থল, নদীতে, ভূমিতে, সমুদ্রে যে সম্পদ নষ্ট হয়, তা যাকাত না দেয়ার কারণেই নষ্ট হয়ে থাকে। (মজমুয যাওয়ায়িদ, ৩/২০০, হাদীস ৪৩৩৫)

অপর এক জায়গায় ইরশাদ করেন: যাকাতের সম্পদ যার সম্পদে মিশে যাবে, তা নষ্ট ও ধ্বংস করে দিবে।

(শুয়াবুল ঈমান, ৩/২৪৩, হাদীস: ৩৫২২)

প্রশ্নঃ যাকাত কখন ফরয হয়ে থাকে?

উত্তর: যদি কারে নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত, যেমন; থাকার জন্য বাসস্থান, চড়ার জন্য বাহন, কারিগড়ের জন্য যন্ত্র ইত্যাদি থেকে অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমান মালে নামি এসে যায় (এবং অন্যান্য শর্তাবলীও পাওয়া যায়) তবে তার উপর যাকাত ফরয হয়ে যায়।

তাছাড়া যাকাত তিনটি জিনিসের উপর ফরয হয়। প্রথমটি হলো, মালে আসলী অর্থাৎ সোনা, রূপা এবং নগদ মুদ্রা। যদি তা মৌলিক প্রয়োজনিয়তার বেশি হয় তবে এর উপর যাকাত ফরয হবে।

দ্বিতীয়টি হলো, ব্যবসার মাল এবং তৃতীয়টি হলো গবাদি পশু, যাকে ফিকাহের পরিভাষায় "সায়িমা” বলা হয়। (বাদাউস সানাউ, ২/৭৫। ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/১৭৪)

যদিও এই পশুর সাথে প্রত্যেকের সম্পর্ক থাকে নাম, কিন্তু ফিকাহ শাস্ত্রে এর জন্যও পূর্ণ একটি অধ্যায় রয়েছে। ব্যবসায়ীবৃন্দ বা ঐ সকল মহিলা, যাদের নিকট সোনা রূপার অলঙ্কার রয়েছে এবং সম্পদ নিসাব পরিমাণ হয়ে যায় তবে যাকাত ফরয হবে। যদি কারো নিকট শুধু সোনা রয়েছে, তবে সাড়ে সাত তোলা সোনার উপর যাকাত ফরয হবে আর যদি কিছু সোনা আছে আর কিছু রূপা আছে এবং কিছু মুদ্রাও রয়েছে যদিও তা এক টাকাও হোক না কেন তবে এই সবকিছু মিলিয়ে দাম নির্ধারন করা হলো, যদি এই দাম সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমান হয়ে যায় এবং তা পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হয়ে যায় তবে যাকাত ফরয হয়ে যাবে।

যাকাতের পরিমাণ সম্পূর্ণ মালের শতকরা আড়াই ভাগ অর্থাৎ একশত টাকায় আড়াই টাকা যাকাত আসবে। (আমীরে আহলে সুন্নাতের বাণীসমগ্র, ৬/২০৯)

সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরীকা হযরত আল্লামা মুফতী আমজাদ আলী আযমী, যাকাত ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলীর আলোচনা করে বলেন: যাকাত ওয়াজিব হওয়ার ১০টি শর্ত রয়েছে:

(১) মুসলমান হওয়া
(২) প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া
(৩) সজ্ঞান হওয়া
(৪) স্বাধীন হওয়া
(৫) নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া, যদি নিসাবের কম হয় তবে যাকাত ওয়াজিব হবে না
(৬) সম্পূর্ণরূপে এর মালিক হওয়া অর্থাৎ এর উপর নিয়ন্ত্রনও থাকা
(৭) নিসাব দেনা থেকে আলাদা হওয়া
(৮) নিসাব মৌলিক প্রয়োজনিয়তা থেকে আলাদা হওয়া
(৯) মালে নামি হওয়া অর্থাৎ বর্ধনশীল মাল মূলত হোক বা হুকমী হোক
(১০) বছর অতিবাহিত হওয়া, বছর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো চান্দ্র বছর অর্থাৎ চাঁদের মাসের বারো মাস।

(বাহারে শরীয়ত, ১/৮৭৫, ৫ম অংশ)
Top