বংশের পরিচয়—
*************
একদা বুজুর্গ বাদশাহ সুলতান মাহমূদ গজনভী (رحمه الله عليه)’র রাজদরবারের সভায় সুলতান বললেন– তোমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছ, যে আমাকে হযরত খিজির (عليه السلام) এর সন্ধান দেবে??
মন্ত্রীপরিষদবর্গের সকলে চুপচাপ। প্রশাসনের কর্মকর্তারাও চুপচাপ। অনেক পেছন থেকে এক লোক দাঁড়িয়ে বলছে— হুযুর আমি পারব। তবে একটি শর্ত আছে।
সুলতান বললেন– তোমার শর্ত কি??
লোকটি বললো– ৬ মাস দরিয়ার কিনারে বসে আমার ধ্যান করতে হবে। কিন্তু আমি তো গরীব লোক, আমার পরিবারের ভরণপোষণ আপনাকে বহন করতে হবে। বাদশাহ তার শর্ত পূরণ করে দিলেন।
ঐ লোক ৬ মাসের চিল্লা শেষে হযরত খিজির (عليه السلام) এর সাথে সাক্ষাত করানোর ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিলেন।
যেতে যেতে ৬ মাস পার হল। সুলতানের রাজসভার আয়োজন হল। লোকটিকে ডেকে আনা হল।
সুলতান, জিজ্ঞেস করল কি ব্যাপার?? তুমি আমাকে খিজির (عليه السلام) এর সাক্ষাত দিতে পারবে তো??
লোকটি কান্না বিজড়িত কন্ঠে বললেন– সুলতান আমি আসলে অনেক গরীব লোক। পরিবারের খরচ মেঠাতে আপনার সাথে মিথ্যা বলেছি। আমি কোন চিল্লা করি নি।
একথা শুনেই সুলতান রাগান্বিত হয়ে গেলেন। মন্ত্রীপরিষদকে জিজ্ঞেস করলেন– তোমরা বল এই প্রতারকের জন্য কি শাস্তি প্রযোজ্য??
একজন মন্ত্রী বলে— বাদশাহ সালামত!! এই লোক আপনার সাথে প্রতারণা করেছে। প্রথমে ফাঁসি দিন তারপর গলা কাটা হোক।
দরবারে আগন্তুক নূরানী সূরতের মেহমান দরবেশ বলেন– হ্যাঁ বাদশাহ সালামত ওজীর সাহেব ঠিক বলেছেন।
অতঃপর আরেকজন মন্ত্রী বলে– হুযুর এই প্রতারকের শাস্তি এমনভাবে দিন তার মাথা কেটে কুকুরকে খাওয়ানো হোক।
আবারও আগন্তুক নূরানী সূরতের মেহমান দরবেশ বলেন– হ্যাঁ বাদশাহ। এই ওজীর সাহেব ও ঠিক বলেছেন।
অতঃপর বাদশাহর একনিষ্ট খাদেম আয়াজকে জিজ্ঞেস করলেন– হে আমার আয়াজ!! তুমি বল এই প্রতারকের শাস্তি কি হতে পারে??
তখন ‘আয়াজ’ বললেন– হুজুর!! লোকটি প্রতারণা করেছেন সত্য। সেই লোকটি গরীব। তাকে শাস্তি দিয়ে মেরে ফেললে তার পরিবার আরো কষ্ট পাবে। তার প্রতারণার শাস্তি আল্লাহর রাহে ছেড়ে দিন। আপনার খাজানার তো কমতি নেই। তাকে মাফ করে দিন।
অতঃপর আগন্তুক নূরানী সূরতের মেহমান দরবেশ এবার ও বলেন– হ্যাঁ বাদশাহ সালামত!! আয়াজ ঠিক বলেছেন।
এবার সুলতান মাহমূদ গজনভী বললেন– হে দরবেশ তুমি প্রত্যেকের রায়কে ঠিক বলেছ। এর রহস্য কি??
তখন দরবেশ ছাহেব বললেন– বাদশাহ সালামত!! ওদের কী দোষ?? ওরা প্রত্যেকে স্বীয় বংশের পরিচয় দিয়েছে। আপনি আপনার রাজসভায় একজনকে মন্ত্রী বানিয়েছেন যার পূর্বসূরী সকলেই জল্লাদের কাজ করত। মানুষকে ফাঁসি দিত। তাই সে ও আপনাকে ঐ অপরাধীর শাস্তি ফাঁসি দিতে বলেছেন।
আরেকজনকে মন্ত্রী বানিয়েছেন যার পূর্বপুরুষ রাজদরবারের কুকুরের দেখাশোনা করত। তাই সে ও অপরাধীর কাটা মাথা দিয়ে ককুরের আপ্যায়নের কথা বলেছে।
আর আয়াজ হল নবী করীম (ﷺ) এর বংশের শাহজাদা সৈয়্যদ বংশের সন্তান। তাঁর খান্দান সর্বদা অপরাধীকে ক্ষমা করে মহত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তাই সে ও আপনাকে ক্ষমার জন্য সুপারিশ করেছেন।
একথা শুনেই সুলতান মাহমূদ গজনভী কেঁদে দাঁড়িয়ে গেলেন আউলাদে রাসূলের সম্মানে। আর বললেন– হে আমার নবী পরিবারের শাহজাদা আয়াজ!! কেন আমাকে বল নি যে, তুমি সৈয়্যদ পরিবারের সন্তান??
তখন আয়াজ বললেন– বাদশাহ সালামত!! আজ এই দরবেশ ছাহেব আমার গোপনীয়তা প্রকাশ করে দিয়েছেন। তাই আমিও উনার গোপনীয়তা প্রকাশ করতে চায়। আপনি যুগ যুগ ধরে যেই খিজির (عليه السلام) এর সন্ধান করছিলেন, ইনিই সেই খিজির (عليه السلام)।
এই ঘটনা বর্ণনা করে হযরত মাখদূমে পাক সুলতান সৈয়্যদ আশরাফ জাহাঙ্গীর সিমনানী (رضي الله عنه) বলেছিলেন— আমাদের খান্দানের খুসূসিয়্যত কি জান?? ফকীরীর বেশে বাদশাহদের ওপর বাদশাহী করা, সুলতান মাহমূদের মত বাদশাহ আমাদের খান্দানের প্রেমে পড়ে ঈমান মজবূত করেছেন।