জমজমাট বাজার। সেখানে রেশমী কাপড়ের একটি দোকান। দোকানের কর্মচারী আল্লাহর কাছে দোয়া করে কিছু একটা চাইছে। যেমন-তেমন কিছু নয়; এ তো সাহসিকতার চাওয়া। সে জান্নাত চেয়ে নিচ্ছে।

দোকানের মালিক শুনলেন। তিনিও সাধারণ কেউ নয়। জ্ঞানী, বুদ্ধিমান, দূরদর্শী। কর্মচারীর দোয়া শুনে হৃদয় যেন তাঁর কোমল থেকে কোমল হতে লাগল। চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু ঝরে পরছে। কান, কাঁধ কাপতে শুরু করেছে। হৃদয়টা যেন অনুতপ্ততার ঝড়ে দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে!

নিজের অস্বাভাবিক এই অবস্থা সহ্য করতে না পেরে তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করার আদেশ দিলেন। মাথার ওপর এক কাপড় মুড়িয়ে দোকান থেকে বের হয়ে গেলেন। আর নিজেকেই বলতে লাগলেন: আফসোস! কতই ভয়হীন হয়ে গেছি আল্লাহর প্রতি আমরা। আমাদের মধ্যে কেবল একজন নিজের মন থেকে আল্লাহর কাছে জান্নাত চেয়ে নিচ্ছে! আমাদের কি উচিত নয়– নিজের গুণাহ থেকে তওবা করে নেয়া?

আহ! সেই দোকানের মালিক এর খোদা ভীতির প্রতি কুরবান। যখন তিনি নামাজে দাঁড়াতেন তখন চোখ থেকে টপটপ করে অশ্রু গড়িয়ে পরত তাঁর। আওয়াজ শোনা যেত। এমন কান্না করতেন– আশেপাশের মানুষগুলোর মনে তার জন্য দয়া সৃষ্টি হয়ে যেত। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকেও এমন তাঁর ভয়ে কম্পমান হৃদয় দান করুন।

আসুন জানি কে ছিলেন সেই দোকানের মালিক যার আলোচনা এতক্ষণ ধরে পড়ে যাচ্ছেন। তিনি সাধারণ কেউ নয়। তিনি ছিলেন কোটি কোটি হানাফীদের ইমাম, সিরাজুল উম্মাহ, কাশেফুল গুম্মাহ, ইমামে আযম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আবু হানীফা নোমান বিন সাবিত রাহিমাহুল্লাহ। [১]

না কিউ কারে নায আহলে সুন্নাত
কে তুমসে চামকা নাসীবে উম্মাত
সিরাজে উম্মাত মিলা তুম ছা
ইমামে আযম আবু হানীফা

কেন নায করবে না অনুসারী তাঁর? যাকে স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুন্নাত পুনর্জীবিত করার সুসংবাদ ফরমান। [২] দোয়ায় মগ্ন থাকা অবস্থায় যার কানে বায়তুল্লাহ'র এক কোণা থেকে আওয়াজ আসে– তুমি ভালোভাবে আমার মারেফত অর্জন করতে পেরেছ আর অতন্ত্য ইখলাসের সাথে আমার খেদমত করেছ। আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম আর কিয়ামত পর্যন্ত তোমার মাজহাবের ওপর অটল যারা থাকবে তাদেরকেও মাফ করে দিলাম। [৩]

হানাফী হিসেবে আল্লাহ তায়ালা আমার মৃত্যুকে কবুল করুন।

Reference:
[১] আল খায়রাতুল হিসান লিল হায়তামী হতে সংক্ষিপ্ত।
[২] তাজকিরাতুল আউলিয়া, ১৮৬ পৃষ্ঠা।
[৩] দুররে মুখতার, ১ম খন্ড।

~স্বাধীন আহমেদ আত্তারী
Top