কুফার পথে ইমাম হোসাইন (রা.)

<div style="text-align: justify;"><a class="dtl-news-img" href="https://www.jugantor.com/assets/news_photos/2020/09/01/image-340383-1598969945.jpg" target="_blank" style="box-sizing: border-box; color: rgb(0, 86, 179); background-color: rgb(255, 255, 255); font-family: SolaimanLipi; font-size: 16px; text-align: left;"><img alt="কুফার পথে ইমাম হোসাইন (রা.)" class="figure-img img-fluid rounded-0" loading="lazy" src="https://www.jugantor.com/assets/news_photos/2020/09/01/image-340383-1598969945.jpg" style="box-sizing: border-box; vertical-align: middle; max-width: 100%; margin-bottom: 0.5rem; line-height: 1; opacity: 0.9; border-radius: 0px !important;"></a><figcaption class="figure-caption text-center text-body border-bottom pb-2" style="box-sizing: border-box; font-size: 14.4px; color: rgb(33, 37, 41); font-family: SolaimanLipi; background-color: rgb(255, 255, 255); border-bottom: 1px solid rgb(222, 226, 230) !important; padding-bottom: 0.5rem !important; text-align: center !important;">কারবালায় ইমাম হোসাইনের (রা.) মাজারের উপর থেকে দৃশ্য।</figcaption></div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">কুফার পথে ইমাম হোসাইন (রা.)</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">হজরত হোসাইন ইবন আলী (রা.) পরিবার-পরিজনসহ কুফা থেকে আগত ৬০ জন মানুষের ক্ষুদ্র কাফেলা নিয়ে কুফার পথে যাত্রা শুরু করলেন। </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">তার কুফা যাত্রার কথা শুনে মানুষ উদ্বিগ্ন ও বিচলিত হয়ে পড়লো। হিতাকাঙ্ক্ষীরা তাকে কুফায় না যাওয়ার জোর পরামর্শ দিলেন। </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">ইবন আব্বাস (রা.) বললেন, ‘কুফাবাসী হলো বিশ্বাসঘাতকের জাত। সুতরাং তাদের কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে আপনি এখানেই অবস্থান করতে থাকুন, তারা যখন তাদের শত্রুকে শহর ছাড়া করবে তখন আপনি যাবেন।’</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">ইবন উমর (রা.) একইভাবে তাকে নিষেধ করলেন। কিন্তু তিনি ফিরে আসতে অসম্মতির কথা জানান। এ সময় ইবন উমর তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। আব্দুল্লাহ ইবন যোবায়েরও ইমাম হোসাইনকে নিষেধ করলেন। </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">আবু সাঈদ খুদরী, জাবির ইবন আব্দুল্লাহ এবং সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিবও তাকে নিষেধ করলেন। পথে কবি ফারাযদাকের সঙ্গে দেখা হলে তিনি তাকে মানুষের মনোভাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। </div><div style="text-align: justify;">ফারাযদাক বললেন, ‘হে রাসূল তনয়! </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">হৃদয়তো আপনার সঙ্গে কিন্তু তলোয়ার আপনার বিরুদ্ধে।  তবে বিজয়ের ফয়সালা আসমানে।’ (আলী মিয়া নদভী, হজরত আলী রা: জীবনও খিলাফত, ই. ফা.বা. অনূদিত, পৃ২৫১)</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">পথিমধ্যে মুসলিম ইবন আকীল এবং হানী ইবন উরওয়ার শাহাদাতের সংবাদ পেয়ে বারবার তিনি ‘ইন্না লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়তে লাগলেন। সবাই তাকে নিজেকে রক্ষা করতে বিনীত অনুরোধ জানালেন। </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">হোসাইন (রা.) বললেন, ‘এ দুজনের শাহাদাতের পর বেঁচে থাকায় আর কোন কল্যাণ নাই।’</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">হাজির অঞ্চলে পৌঁছে তিনি বললেন, আমাদের সমর্থকরা আমাদের ত্যাগ করেছে সুতরাং তোমরা যারা ফিরে যেতে চাও নিঃসংকোচে যেতে পারো। কারো উপর আমাদের পক্ষ হতে আনুগত্যের দায়বদ্ধতা নেই। </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">এ ঘোষণার পর পথে যারা তার সঙ্গে যোগ দিয়েছিল তারা সবাই কেটে পড়লো। শুধু মক্কা থেকে যারা এসেছিল তারাই রয়ে গেলো। হুর ইবন ইয়াজিদ রায়াহী সহযোগীদের নিয়ে ইমাম হোসাইন থেকে পৃথক হয়ে গেলো। (ইবন কাসীর,আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খ-৮,পৃ-১৬৭)</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">ওবায়দুল্লাহ ইবন জিয়াদ উমর ইবন সাআদ ইবন আবি ওয়াককাসকে হোসাইনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে পাঠালো। </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">বিনিময়ে ইবন জিয়াদ তাকে ইরাকের রাঈ প্রদেশের গভর্নর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। মুগিরা ইবন শু’বার (রা.) ছেলে হামযাহ উমর ইবন সাআদকে হুসাইনের বিরুদ্ধে লড়াই না করার অনুরোধ করেছিল এবং ভৎসনাও করেছিল। </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">সে কর্ণপাত না করে চার হাজার যোদ্ধা নিয়ে কারবালার প্রান্তরে হোসাইন (রা.) ও তার সঙ্গিদের মুখোমুখি হলো।(ইবন আসাকির, তারিখু মদীনাতা দিমাস্ক, খ-৪৫,পৃ-৪৮)</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">হোসাইন (রা.) তাকে বললেন, ‘হে উমর! আমার তিনটি প্রস্তাবের যে কোন একটি গ্রহণ করো। হয় আমাকে যেভাবে এসেছি সেভাবে ফিরে যেতে দাও। আর তা না হলে আমাকে ইয়াজিদের কাছে পাঠিয়ে দাও। আমি তার হাতে বাইয়াত  হবো। তাও যদি গ্রহণযোগ্য না মনে করো তাহলে আমাকে তুর্কী দেশে পাঠিয়ে দাও। মৃত্যু পর্যন্ত আমি তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবো।’</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">প্রস্তাবগুলো ইবন জিয়াদের বিবেচনার জন্য পাঠিয়ে দেয়া হলো, সে তখন হোসাইনকে (রা.) ইয়াজিদের কাছে পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছিল, তখন নরাধম শিমার ইবন যিল জাওশান বাধা দিয়ে বলল, আপনার কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করা ছাড়া আর কিছু গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">ইবন জিয়াদ হোসাইনকে (রা.) এ কথা জানিয়ে দিলে তিনি বললেন, ‘আল্লাহর শপথ এটা আমি করবো না।’</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">উমর ইবন সাআদের সঙ্গে কুফার ৩০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিল। তারা তাকে বললো,নবী-কন্যার পূত্র তোমাদের সামনে তিনটি প্রস্তাব পেশ করেছেন আর তোমরা একটিও গ্রহণ করবে না! </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">একথা বলে তারা হোসাইনের (রা.) সঙ্গে যোগ দিলেন। (ইবন কাসীর, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,খ-৮,পৃ-১৭০)</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">ইবন জিয়াদ শিমার ইবন যিল জাওশানকে এই নির্দেশ দিয়ে পাঠালো উমর যদি লড়াই করতে অনীহা প্রকাশ করে, তুমি তাকে হত্যা করে তার স্থান গ্রহণ করবে। </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">আরো নির্দেশ দিলো, হোসাইন ও তার সঙ্গীদল তরবারি সমর্পণ না করা পর্যন্ত পানি অবরোধ করে রাখবে, যেন তারা ফোরাত হতে এক ফোঁটা পানিও সংগ্রহ করতে না পারে। </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">পক্ষান্তরে হোসাইন (রা.) সঙ্গীদের নির্দেশ দিলেন, ‘ফোরাতের পানি সংগ্রহ করে নিজেরা পিপাসা নিবারণ করবে, নিজেদের ঘোড়াগুলোর সঙ্গে শত্রুদের ঘোড়াগুলোকেও পানি পান করতে দেবে।’</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">৯ মুহররম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তারা হোসাইন (রা.) ও তার সঙ্গীদলের দিকে অগ্রসর হলো। সেই রাত্রে হোসাইন (রা.) তার পরিবার-পরিজনকে প্রয়োজনীয় অছিয়ত করলেন এবং সাথীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রদান করলেন। </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">শুক্রবার সকালে হজরত হোসাইন (রা.) ফজরের নামাজ আদায় করলেন। সেদিন ছিলো আশুরার দিন। তার সঙ্গীদের মধ্যে ছিল ৩২ জন যোদ্ধা আর ৪০ জন পুরুষ। </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">ইমাম হোসাইন ঘোড়ায় আরোহন করলেন এবং একখন্ড কোরআন নিজের সামনে রাখলেন। তার পুত্র আলী ইবন হোসাইনও ঘোড়ায় আরোহন করলেন। তিনি তখন খুব দুর্বল ও অসুস্থ ছিলেন। </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">হজরত হোসাইন (রা.) লোকদের সামনে আপন উচ্চ বংশ মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করে তাদের ধর্মানুভূতি জাগানোর চেষ্টা করে বললেন, তোমরা নিজ নিজ বিবেকের মুখোমুখি হয়ে আত্মজিজ্ঞাসা করো। আমি তো তোমাদের নবীকন্যার পুত্র। </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">আমার মতো মানুষের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ কি তোমাদের শোভা পায়? এরপর হুর ইবন ইয়াজিদ তার সঙ্গে যোগ দিলেন এবং লড়াই করতে করতে শহীদ হয়ে গেলেন।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">শিমার সর্বপ্রথম আক্রমণ শুরু করে আর হোসাইনের (রা.) সঙ্গিরা দু’জন দু’জন এবং একজন একজন করে তাদের প্রিয় ইমামের সামনে লড়াই করতে থাকে। </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">আর তিনি তাদের এই বলে দোয়া দিতে থাকেন, ‘আল্লাহ্ তোমাদেরকে শ্রেষ্ঠ মুত্তাকীদের শ্রেষ্ঠ প্রতিদান দান করুন।’ এভাবে লড়াই করতে করতে তারা শহিদ হয়ে গেলেন। (আবুল হাসান আলী নদভী,আলী মুরতাযা রা.,পৃ-২৫৪)</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">মূলত ইবন জিয়াদের বাহিনী হোসাইনের (রা.) চারপাশে আক্রমণ করছিল, কিন্তু তার ওপর আক্রমণ করার কেউ সাহস করছিল না। </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">শিমার তার যোদ্ধাদের হোসাইনের (রা.) ওপর আক্রমণ করার জন্য উত্তেজিত করে বলল, তাকে হত্যা করতে তোমাদের আর বাধা কোথায়? </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">তখন নরাধম যুরআ ইবন শরীক তামীমী আগে বেড়ে তার কাধে তরবারি দ্বারা আঘাত করলো, আতঃপর সিনান ইবন আনাস ইবন আমর নাখয়ী তাকে বর্শাঘাত করলো এবং ঘোড়া থেকে নেমে ইমাম হোসাইনের মাথা কেটে নিলো। আর তা খাওলার হাতে অর্পন করলো। (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন) </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">জাফর ইবন মুহাম্মদ বলেন, নিহত হওয়ার সময় আমরা হোসাইনের শরীরে ৩৩ টি বর্শাঘাত এবং ৩৪ টি তরবারির আঘাত দেখতে পেয়েছি। </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">কারবালার যুদ্ধে হোসাইনের পক্ষে ৭২ জন শাহাদাতবরণ করেন। মুহাম্মাদ ইবন হানাফিয়া বলেন, হোসাইনের (রা.) সঙ্গে এমন ১৭ জন শহীদ হোন যারা সকলেই ছিলেন হজরত ফাতেমার (রা.) বংশধর।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">ইমাম হোসাইন (রা.) ৬১ হিজরীর ১০ মুহররম, শুক্রবার শহীদ হোন। তখন তার বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর ৬ মাস ১৫ দিন।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">হজরত হোসাইনের (রা.) বিরুদ্ধে যারাই অস্ত্র ধারণ করেছে এবং তার হত্যায় যাদের ভূমিকা ছিল পরবর্তীতে তাদের সকলে নির্মমভাবে নিহত হয়েছিল। </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">আল মুখতার পথভ্রষ্ট হওয়া সত্ত্বেও হোসাইনের (রা.) ঘাতকদের খুঁজে খুঁজে বের করে হত্যা করে।  অবশ্যই আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী। (ইবন কাসীর,আল বিদায় ওয়ান নিহায়া, খ-৯,পৃ-১৮৮) </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">হোসাইনের (রা.) বিরুদ্ধে যারাই অস্ত্র ধারণ করেছে তাদের সকলেই জঘন্যভাবে নিহত হয়েছে, কেউ পাগল হয়ে গিয়েছে। </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">তাদের সবার আলোচনা ইবন কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়ার ৮ম খন্ডে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। </div><div style="text-align: justify;">ইবন জিয়াদ তাওয়াবিন নামে একটি দলের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়, তার মাথাও ছিন্ন করা হয় এবং হত্যার পর তার মাথার মধ্যে শাপ ঢুকে যায়। উমর ইবন সাআদও নিহত হয়।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">ইবন হিশামের বর্ণনা মতে, হোসাইনের (রা.) ছিন্ন মস্তক যখন ইয়াজিদের দরবারে হাজির করা হলো তখন ইয়াজিদের দু’চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠেছিল। সে বলেছিলো, হোসাইনকে হত্যা করা ছাড়াও তোমাদের আনুগত্যে আমি সন্তুষ্ট হতাম। (প্রাগুক্ত,পৃ-১৯১)</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">মুয়াবিয়ার (রা.) জনৈক মুক্ত দাস বর্ণনা করেন, ইয়াজিদের সামনে যখন হোসাইনের ছিন্ন মস্তক রাখা হলো তখন আমি তাকে কাঁদতে দেখেছি এবং বলতে শুনেছি,ইবন জিয়াদ আর হোসাইনের মাঝে রক্তসম্পর্ক থাকলে সে এটা কখনো করতে পারতো না। (প্রাগুক্ত, পৃ১৭১)</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">বন্দিদেরকে ইয়াজিদের সামনে আনা হলে প্রথমে সে তাদের প্রতি রুক্ষ আচরণ করে। পরে আবার কোমল আচরণ প্রদর্শন করে তাদের নিজ হেরেমে পাঠিয়ে দেয়। অতঃপর তাদেরকে সসম্মানে মদীনা শরীফে পাঠিয়ে দেয়া হয়।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">ইয়াজিদ ওবায়দুল্লাহ ইবন জিয়াদকে তার কৃতকর্মের জন্য বরখাস্ত, সাজা বা কোনো তিরস্কারও করে নি। পক্ষান্তরে আনন্দ-উল্লাসের এমন কিছু বর্ণনা এসেছে যা কোন মুসলিমের পক্ষে শোভনীয় নয়। (আবুল হাসান আলী নদভী, আলী মুরতাযা রা.,পৃ-২৫৫)</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">রাজত্বভোগ করতে ইয়াজিদ মাত্র চার বছরের বেশী বেঁচে ছিল না। ৩৪ হিজরীতে কারবালা ও হাররার মর্মন্তুদ ঘটনার দায়ভার নিয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হয়। </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">তার মৃত্যুর দ্বারা আবু সুফিয়ানের পরিবারের রাজত্বের অবসান হয়। সকল রাজত্বের একচ্ছত্র মালিক একমাত্র আল্লাহ, তিনি যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করেন।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;"> </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">লেখক: শিক্ষক,মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ</div>

কুফার পথে ইমাম হোসাইন (রা.)

কারবালায় ইমাম হোসাইনের (রা.) মাজারের উপর থেকে দৃশ্য। কুফার পথে ইমাম হোসাইন (রা.) হজরত হোসাইন ইবন আলী (রা.) পরিবার-পরিজনসহ কুফা থেকে আগত ৬০ জ...

Read more »

রাসূল (ﷺ)'র পিতা-মাতা মু'মিন ছিলেন

<div style="text-align: justify;">----------------<br></div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">ইউটিউবে প্রবেশ করলে এমন হাজারো ভিডিও হরহামেশাই দেখতে পাই, যে ভিডিওগুলোর বিষয়বস্তু হচ্ছে, "রাসূল ﷺ'র পিতা-মাতা কি মু'মিন ছিলেন ?" আশ্চর্যজনক হলেও সত্য মুসলমান দাবিদার মানুষের মুখে মুখে আজ হরহামেশাই শোনা যায় এমন উদ্ভট প্রশ্ন। আজকাল প্রায় মানুষের বিশ্বাস রাসূল ﷺ'র পিতা-মাতা মু'মিন ছিলেন না। নাউজুবিল্লাহ! ঈমান গোরস্থানে আর বিবেক বুদ্ধি আইসিইউতে ভর্তি থাকলে যা হয় আর কি!</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">সমগ্র জাহানের মুক্তির দূত রাসূলে খোদা ﷺ পৃথিবীতে এসেছেন মানবজাতিকে রক্ষা করবার জন্য এবং প্রত্যেক মুসলমান এমনকি যারা বলছেন, "রাসূল ﷺ'র পিতা-মাতা মু'মিন ছিলেন না" তারাও একথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন যে, তিনি ﷺ মানবজাতির মুক্তির জন্য এই ধরাধামে এসেছেন। নির্বোধ প্রজাতির সেই সব কথিত মুসলমানদের দুমুখো কথা শুনে নাস্তিকরাও বলবে, যাঁর নিজের পরিবার তথা পিতা-মাতা জাহান্নাম থেকে মুক্ত নয়, তিনি কিভাবে মানবজাতির মুক্তির দূত হতে পারেন ? ইসলাম কে প্রশ্নবিদ্ধ করবার সকল পথ আপনারা উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। আপনাদের একেকটি ঈমান বিধ্বংসী আক্বিদা বেঈমান নাস্তিকদের কাছে ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করার হাতিয়ার।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">পবিত্র কোরআনে নামাজের কথা উল্লেখ আছে কিন্তু কত রাকাত এবং কখন, কিভাবে পড়তে হবে তা উল্লেখ নেই। নামাজের রাকাত, সময় এবং কিভাবে পড়তে হবে তা জানতে হলে হাদিস শরীফের দিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে। আক্বিদার বিষয়ও তার ব্যতিক্রম নয়।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">প্রিয় রাসূল ﷺ'র শ্রদ্ধেয় পিতা-মাতা সহ পূর্বপুরুষ সকলেই মু'মিন ছিলেন এবং তাঁরা জান্নাতী। একথা কোরআন, হাদিস এবং বিশ্ব বিখ্যাত ইমামগণের বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন, মুশরিকদের চেয়ে মু'মিন বান্দাই উত্তম।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: সূরা: বাকারা, আয়াত নং ২২১]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন, আদম সন্তানের প্রজন্ম পরম্পরায় আমি উত্তম প্রজন্মেই প্রেরিত হয়েছি। সেই ধারায় আমি বর্তমান এই প্রজন্মে এসে উপনীত হয়েছি।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: সহীহ বুখারী: হা নং ৩৪৫৭]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">সূরা বাকারার ২২১ নং আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পেরেছি, মু'মিনরা উত্তম আর মুশরিকরা নিকৃষ্ট। আর রাসূলে খোদা ﷺ ইরশাদ করেছেন, আদম সন্তানের প্রজন্ম পরম্পরায় আমি উত্তম প্রজন্মেই প্রেরিত হয়েছি। অর্থাৎ রাসূল ﷺ স্বয়ং নিজেই তাঁর পূর্বপুরুষগণর মু'মিন হওয়ার কথা বর্ণনা করেছেন।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে হাবীব! আমি আপনাকে সিজদাকারীদের (নামাজীদের) মধ্যে আপনার স্থানান্তর করান।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: সূরা: আশ-শূরা, আয়াত নং ২১৮-২১৯]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">এবার এই আয়াতের ব্যাখ্যায় যুগশ্রেষ্ঠ তাফসিরের ইমামগণ কি বলেছেন তা নিম্নে দেওয়া হলো।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">১. বিশ্ব বিখ্যাত মুফাসসির ও হাফিজুল হাদিস, ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতী (রা.) (৯১১ হি.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন, উক্ত আয়াতের অর্থ হচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ'র নূর মোবারক নামাজী থেকে নামাজী অর্থাৎ ঈমানদারদের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছে। এই সূত্রমতে উক্ত আয়াতে কোরআনী দালালত করে যে, আখেরী নবী ﷺ'র বংশীয় সকল পূর্ব পুরুষগণ মুসলমান ছিলেন। ইমাম কাসতাল্লানী (রা.)-ও অনুরূপ ব্যাখ্যা করেছেন।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: ইমাম সুয়ূতী: আল-হাভীলিল ফাতওয়া, ২/২৫৪ পৃ:, ইমাম কাসতাল্লানী: আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ, ১/১০৪ পৃ:]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">২. ইমাম আবু হাইয়্যান আন্দুলসী (রা.) তাঁর তাফসিরে বলেন, এ বিষয়ে রাসূল ﷺ'র পিতা-মাতা এবং তাঁর পূর্বপুরুষগণ যে ঈমানদার এ আয়াত তার দলিল।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: ইমাম আবু হাইয়্যান আন্দুলসী: তাফসিরে বাহারুল মুহিত, ৮/১৯৮ পৃ:]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">৩. ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী (৪৩০:হি.) ও ইমাম আবু সাঈদ বিন আরাবী (৩৪০ হি.) উল্লেখ করেন, হযরত আব্বাস (রা.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, নবীদের মাধ্যমে তাঁর স্থান্তরিত হয়ে, পিতা-মাতা পৌঁছে পর্যন্ত সকলেই সিজদাকারী ছিলেন।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী: দালায়েলুল নবুয়ত, ১/৫৮ পৃ:, হা নং ১৭, ইমাম আবু সাঈদ: মু'জামে ইবনে আরাবী, ২/৮৪৯ পৃ:, হা নং ১৭৫০]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">৪. ইমাম ইবনে যুযাজ (রা.) (৩১১ হি.) তাঁর তাফসিরে বলেন, সিজদাকারীদের মধ্যে আপনার বিবর্তন অর্থাৎ নামাজীদের মধ্যে আপনার আগমন।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: ইমাম ইবনে যুযাজ: মা'নীল কোরআন, ৪/১০৪ পৃ:]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">৫. ইমাম সমরকান্দী (রা.) (৩৭৩ হি.) বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)'র ছাত্র তাবেঈ ইমাম ইকরামা (রা.) বলেন, সিজদাকারীদের মাধ্যমে আপনার বিবর্তন অর্থাৎ আপনার পিতৃপুরুষদের পৃষ্ঠদেশ ও মাতাদের মাধ্যমে হযরত আদম (আ.) থেকে নূহ (আ.) ও ইব্রাহিম (আ.) এবং তাঁর পরবর্তীদের মাধ্যমে আগমন আল্লাহ তাঁদের সকলের উপর শান্তি বর্ষিত করুন।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: তাফসিরে বাহরুল মুহিত, ২/৫৭০ পৃ:]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">৬. ইমাম কুরতুবী (রা.) (৬৭১ হি.) বলেন, সিজদাকারীদের মাধ্যমে আপনার আগমন এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাবেঈ ইমাম কাতাদা (রা.) এবং ইমাম মুজাহিদ (রা.) বলেন, নামাজিদের মাধ্যমে আপনার আগমন। সাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) তিনি এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, তিনি সিজদাকারী পিতাসমূহের পৃষ্ঠদেশের মাধ্যমে তাঁর আগমন।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: তাফসিরে কুরতুবী: ১৩/১৪৪ পৃ:]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">৭. ইমাম নিযামুদ্দিন নিশাপুরী (রা.) (৮৫০ হি.) বলেন, সিজদাকারীদের মাধ্যমে আপনার বিবর্তন অর্থাৎ তাঁর স্থানান্তর এক সিজদাকারী হতে আরেক সিজদাকারীর মধ্যে, যেমনিভাবে রাসূল ﷺ থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি ইরশাদ করেন, সর্বদা পাক পবিত্র পিতাদের থেকে পবিত্র মাতাদের নিকট আমি স্থানান্তরিত হয়েছি।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: তাফসিরে নিশাপুরী: ৩/১০৩ পৃ:]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন, সর্বদা পাক পবিত্র পিতাদের থেকে পবিত্র মাতাদের নিকট আমি স্থানান্তরিত হয়েছি।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: ইমাম সুয়ূতী: আল-হাভীলিল ফাতওয়া, ২/২৫৪ পৃ:, আবু নুয়াইম ইস্পাহানী: হুলিয়াতুল আউলিয়ার সূত্রে, এছাড়া হাদিসটি পাওয়া যায়। ইমাম রাজি: তাফসিরে কাবীর, ১৩/৩৩-৩৪ পৃ:, ২৪/৫৩৭ পৃ:, আবু হাইয়্যান আন্দুলসী: তাফসিরে বাহারুল মুহিত, ৮/১৯৮ পৃ:, আবু হাফস দামেস্কী, তাফসিরে আল-লুবাব ফি উলূমিল কিতাব, ৮/২৩৩-২৩৪ পৃ:, ইসমাঈল হাক্কী: তাফসিরে রুহুল বয়ান, ৩/৫৪ পৃ:, ৬/৩১৩ পৃ:, জুহাইলী: তাফসিরুল মুনীর, ১৯/৩৩৯ পৃ:]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">ইমাম ইবনে জারীর (রা.) ও ইমাম ইবনে আবি হাতেম (রা.) উভয়েই তাঁদের তাফসিরে লিখেছেন, তাবেঈ ইমাম কাতাদা (রা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা ততক্ষণ পর্যন্ত কাউকে শাস্তি প্রদান করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁর নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন সংবাদ বা কোন প্রমাণ না পৌঁছবে।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: ইমাম সুয়ূতী: আল-হাভীলিল ফাতওয়া, ২/২৪৫ পৃ:]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">যেমন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, রাসূল প্রেরণ না করা পর্যন্ত আমি শাস্তি প্রদান করি না।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: সূরা: বনী ইসরাঈল, আয়াত নং ১৫]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">তাই রাসূল ﷺ'র পিতা-মাতার সময়ে কোন নবী কিংবা রাসূল ছিলেন না, বরং বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, তাঁরা উভয়েই হযরত ইব্রাহিম (আ.)'র দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন তথা মহান আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী ছিলেন।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">হযরত আলী (রা.) বলেন, নিশ্চয় রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন, অবৈধ সম্পর্ক থেকে নয়, বৈবাহিক সম্বন্ধ থেকেই আমি নির্গত হয়েছি। হযরত আদম (আ.) থেকে আমার পিতা-মাতা আমাকে জন্ম দেয়া পর্যন্ত আমার বংশ ধারায় এ পবিত্রতা অব্যাহত ছিল। আমার জন্মে জাহিলিয়াতের কোন অপকর্ম আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: ইবনে কাসির: বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ২/৩১৪ পৃ:] হাদিসটির সনদ হাসান।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">হাদিস শরীফের আলোচনায় আমরা বুঝতে পারলাম যে, আদম (আ.) থেকে রাসূল ﷺ পর্যন্ত তাঁর সকল পূর্বপুরুষগণই পুতঃপবিত্র তথা ঈমানদার ছিলেন। কেননা আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, মুশরিকরা হচ্ছে, অপবিত্র।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: সূরা: তাওবা, আয়াত নং ১২৮]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">ইমাম সুয়ূতী (রা.) সংকলন করেন, ইমাম ইবনে শাহীন (রা.) তাঁর "নাসেখ ওয়াল মানছুখ" গ্ৰন্থে ইমাম খতিবে বাগদাদী (রা.) তাঁর "সাবেক ওয়াল লাওয়াহেক" ইমাম দারাকুতনী এবং ইমাম ইবনে আসাকির (রা.) তাঁর "তারীখে দামেস্কে", কিছুটা দুর্বল সনদে হযরত মা আয়েশা (রা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, বিদায় হজ্বের সময়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ বেদনার্ত ছিলেন। এসময় তিনি ﷺ আনন্দচিত্তে আমার নিকট আগমন করেন। আমি কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি ﷺ বলেন, আমি আমার মা আমেনা (রা.)'র কবরের নিকট গমন করি এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করি তাঁকে জীবিত করতে। তখন আল্লাহ তাঁকে জীবিত করেন, তিনি আমার উপর ঈমান আনয়ন করেন, অতঃপর আল্লাহ তাঁকে ফিরিয়ে নেন। কোনো কোনো বর্ণনায় পিতা-মাতা উভয়ের কথা বলা হয়েছে।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: ইমাম সুয়ূতী: আল-হাভীলিল ফাতওয়া, ২/২৭৮ পৃ:, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত লেবানন, প্রকাশ. ১৪২৪ হি., ইমাম কুরতুবী: তাযকিরাহ, ১৫ পৃ:, ইমাম কাসতাল্লানী: মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ, ১/১০৩ পৃ:, ইবনে সালেহ শামী: সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ২/১২২ পৃ:, দিয়ার বাকারী: তারিখুল খামিস, ১/২৩০ পৃ:] আরো অসংখ্য কিতাবে হাদিসটি উল্লেখ আছে।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">ইমাম কাসতাল্লানী (রা.) সংকলন করেন, ইমাম তাবারী (রা.) হযরত মা আয়েশা (রা.) হতে সনদ সহকারে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বিষন্ন ও চিন্তিত অবস্থায় হাজ্জুন নামক কবরস্থানে আল্লাহর মর্জি মুতাবেক অবতরণ বা অবস্থান করলেন। অতঃপর আনন্দিত হয়ে দাঁড়ালেন বা উঠলেন। কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি ﷺ বললেন, আমি আমার রবের কাছে প্রার্থনা করেছি যে, আমার মাকে জীবিত করে দেয়ার জন্য অতঃপর আল্লাহ তাঁকে জীবিত করে দিলেন। অতঃপর তিনি আমার উপর ঈমান আনলেন। তারপর তাঁকে কবরে ফিরিয়ে দেন।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: ইমাম কাসতাল্লানী: মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ, ১/১০৩ পৃ:]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">ইমাম সুয়ূতী (রা.) সংকলন করেন, ইমাম সুহাইলী (রা.) তাঁর "রাওজুল উনূক" গ্ৰন্থে তিনি বলেছেন, সনদে অজ্ঞাত রাবীদ্বয় রয়েছে, হযরত মা আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল ﷺ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, তিনি যেন তাঁর পিতা-মাতা কে জীবিত করে দেন। তখন আল্লাহ তাঁদেরকে জীবিত করে দেন। অতঃপর তাঁরা রাসূল ﷺ'র প্রতি ঈমান আনয়ন করলেন। অতঃপর তাঁরা মৃত্যুবরণ করলেন।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: ইমাম সুহাইলী: রওজুল উনূক, ২/১২১ পৃ:, দারু ইহইয়াউত তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন প্রকাশ. ১৪২১হি. ইমাম সুয়ূতী: আল-হাভীলিল ফাতওয়া, ২/২৭৮ পৃ:, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ. ১৪২৪হি.]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">ইমাম সুহাইলী (রা.) সনদটি সংকলন করেন, মুআওজ ইবনু দাউদ (রা.) তিনি আব্দুর রহমান বিন আবি যানাদ (রা.) তিনি হিশাম বিন উরওয়া থেকে তিনি তাঁর পিতা থেকে তিনি হযরত মা আয়েশা (রা.) হতে।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: ইমাম সুহাইলী: রওজুল উনূক, ২/১২১ পৃ:, দারু ইহইয়াউত তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন প্রকাশ. ১৪২১হি.]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">হাদিসটি একাধিক সনদে বর্ণিত হওয়াতে সব মিলিয়ে হাদিসটির সনদের মান "হাসান" পর্যায়ের, যা দ্বারা দলিল গ্ৰহণ করা সম্পূর্ণ বৈধ।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যাদের ধারণা, রাসূল ﷺ'র পিতা-মাতা মুশরিক তথা বেঈমান অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। অতঃপর রাসূল ﷺ তাঁদের জীবিত করে কলেমা পড়িয়ে ঈমানদার করেছেন। এটা সম্পূর্ণ গলদ কথা, আগেই বলেছি রাসূল ﷺ'র পিতা-মাতা উভয়েই হযরত ইব্রাহিম (আ.)'র দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন তথা মহান আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী ছিলেন। ঈমানদার ছিলেন। কিন্তু যেহেতু তাঁরা রাসূল ﷺ'র নবুয়ত মানব সমাজে প্রকাশের আগেই ইন্তেকাল করেছেন তাই তাঁদের রাসূল ﷺ'র উম্মত হওয়ার সেই পরম সৌভাগ্য নসিব হয়নি। আল্লাহর হুকুমে রাসূল ﷺ তাঁদের উভয়কেই জীবিত করেন, তাঁরা রাসূল ﷺ'র প্রতি ঈমান আনেন এবং তাঁর উম্মত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে ৭ জন মুজতাহিদ ফকিহদের অন্যতম, আহলে বাইতের সদস্য হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)'র আক্বিদা ছিল রাসূল ﷺ'র উর্দ্ধতন সকল পূর্বপুরুষ ঈমানদার ছিলেন। ইমাম তাবরানী (রা.) সংকলন করেন, ইমাম ইকরামা (রা.) তিনি হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণনা করেন, মহান রবের বাণী সিজদাকারীদের মাধ্যমে আপনার বিবর্তন এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, নবী থেকে নবী শেষ পর্যন্ত আমি নবী হয়েই প্রেরিত হয়েছি।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: ইমাম তাবরানী: মু'জামুল কবীর, ১১/৩৬২ পৃ:, হা নং ১২০২১, ইমাম হাইছামী: মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৭/৮৬ পৃ:, হা নং ১১২৪৭]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">ইমাম হাইছামী (রা.) সংকলন করেন, এই হাদিসটি ইমাম বাযযার, তাবরানী (রা.) সংকলন করেন, আর সনদের সমস্ত বর্ণনাকারীই সহীহ বুখারীর শুধু "সাবিব ইবনে বিশর" ছাড়া, কিন্তু তিনিও সিকাহ বা বিশ্বস্ত।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: ইমাম হাইছামী: মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৭/৮৬ পৃ:, হা নং ১১২৪৭]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">আহলে হাদিসের কথিত ইমাম নাসিরউদ্দিন আলবানী (লা.) সাবিব ইবনে বিশর কে দুর্বল প্রকাশ করেও তার সহীহ হাদিসের গ্ৰন্থে উল্লেখ করেন, আমি বলি, এই সনদটি "হাসান" সমস্ত বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত, সাবিবের বিষয়ে আপত্তি গ্ৰহণযোগ্য নয়।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: সিলসিলাতুল আহাদিসুস সহীহা, ১/৬৮৯ পৃ:, হা নং ৩৫৪]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">অর্থাৎ আলবানীও স্বীকার করে নিয়েছে যে, রাসূল ﷺ'র পূর্বপুরুষগণ ঈমানদার ছিলেন।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন, আমি বনি আদমের সর্বোত্তম যুগে আবির্ভূত হয়েছি। যুগের পর যুগ অতিবাহিত হয়ে আমি সেই যুগেই এসেছি যে যুগ আমার জন্য নির্দিষ্ট ছিল।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: সহীহ বুখারী: ৪/১৮৯ পৃ:, হা নং ৩৫৫৭]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">অর্থাৎ আমি যখনই যাঁর কাছে ছিলাম সেই যুগের সর্বোত্তম মানুষের কাছেই ছিলাম, তাঁরা ছিলেন সেই যুগের শ্রেষ্ঠ ঈমানদার।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">রাসূল ﷺ'র পরিবার পরিজনের সকলেই রাসূল ﷺ'র শাফায়াত লাভ করবে, আর তাঁর শাফায়াত লাভ করার অর্থ হচ্ছে নিশ্চিত জান্নাতী।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">ইমাম তাবরানী (রা.) সংকলন করেন, হযরত আব্দুর রাহমান বিন রা'ফে (রা.) তিনি উম্মে হানী (রা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,... অতঃপর রাসূল ﷺ'র ইরশাদ করেন, সে সমস্ত সম্প্রদায়ের কি হয়েছে যারা ধারণা করে আমার পরিবারবর্গ আমার শাফায়াত লাভ করবে না। নিশ্চয় আমার শাফায়াত "হা" ও "হুকুম" গোত্রদ্বয় পর্যন্ত লাভ করবে। বর্ণনাকারী বলেন, "হা" ও "হুকুম" হলো দুটি গোত্র।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: ইমাম তাবারানী: মু'জামুল কবীর, ২৪/৪৩৪ পৃ:, হা নং ১০৬০, ইমাম সুয়ূতী: আল-হাভীলিল ফাতওয়া, ২/২৫১ পৃ:, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ. ১৪২৪ হি., হাইছামী: মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৯/২৫৭ পৃ:, হা নং ১৫৪০১] সনদ সহীহ।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">হযরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন, সে সম্প্রদায়ের কি হয়েছে যারা ধারণা করে যে, আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক কোন উপকার করবে না। কিন্তু না, অবশ্যই উপকার করবে। এমনকি "হুকুম" সম্প্রদায় পর্যন্ত উপকৃত হবে। "হুকুম" হলো ইয়েমেনের একটি গোত্র। আমি শাফায়াত করবো এবং যার জন্য শাফায়াত করবো তা গ্ৰহণ করা হবে। শেষ পর্যন্ত ইবলিশও শাফায়াতের আবেদন করবে।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: ইমাম সুয়ূতী: আল-হাভীলিল ফাতওয়া, ২/২৫১ পৃ:, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ. ১৪২৪ হি.]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">উপরোক্ত দুটি হাদিসে পাক থেকে বুঝা যায় যে, রাসূল ﷺ'র পরিবারের সকলে রাসূল ﷺ'র শাফায়াত লাভ করবেন।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">রাসূল ﷺ'র পূর্বপুরুষগণের সম্পর্কে যুগশ্রেষ্ঠ ইমামদের আক্বিদা কেমন ছিল ?</div><div style="text-align: justify;">------------------------------</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">১. ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতী (রা.) বলেন, রাসূল ﷺ'র পিতা-মাতা সমন্ধে শরয়ী হুকুম হলো তাঁরা উভয়েই নাজাতপ্রাপ্ত এবং তাঁরা জাহান্নামী নয়। অনেক উলামায়ে কেরামগণ এ ব্যাপারটি সুস্পষ্টভাবে আলোচনা করেছেন।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: ইমাম সুয়ূতী: আল-হাভীলিল ফাতওয়া, ২/২৪৪ পৃ:]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">২. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রা.) প্রাথমিক জীবনে রাসূল ﷺ'র পিতা-মাতা জাহান্নামী ও কাফের হওয়ার উপরে অভিমত পেশ করেন। ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতীর কিতাব অধ্যায়নের পরে তাঁর ভুল ভেঙ্গে যায় এবং ইতোপূর্বের আক্বিদা ঠিক করে নেন। যেমন তিনি তাঁর শেষের দিকের গ্ৰন্থে তিনি লিখেছেন, বিশুদ্ধ অভিমত হলো, রাসূল ﷺ'র পিতা-মাতা উভয়ই ইসলাম গ্ৰহণ করেছিলেন, এ বিষয়ে উম্মতের মর্যাদাপূর্ণ ইমামগণ একমত পোষণ করেছেন। যেমনটি ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতী (রা.) তাঁর তিনটি রিসালায় উল্লেখ করেছেন।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: মোল্লা আলী ক্বারী: শরহে শিফা, ১/৬০৫ পৃ:, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">৩. বিখ্যাত মুহাদ্দিস এবং সকলের মান্যবর ইমাম হাজার আসকালানী (রা.) লিখেন, নিশ্চয় রাসূলে পাক ﷺ'র পিতা-মাতা সমন্ধে যে ধারণা করা যায় যে, তাঁরা প্রত্যেকেই কিয়ামতের দিন পরীক্ষায় আনুগত্যশীল হবেন।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: ইমাম সুয়ূতী: আল-হাভীলিল ফাতওয়া, ২/২৫১ পৃ:]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">৪. ইমাম ইবনে সালেহ শামী (রা.) উল্লেখ করেন, রাসূল ﷺ'র পিতা-মাতা শিরক করেছেন তা প্রমাণিত নয়, বরং তাঁরা তাঁদের দাদা ইব্রাহিম (আ.)'র দ্বীনে বনী হানাফিয়্যার উপরে বিশ্বাসী ছিলেন। যেমন আরবে জাহিলী যুগে এমন ঈমানদার যায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফাইলসহ আরো অনেকে ছিল। এ মসলকের উপরে রয়েছেন ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী। সেখানে তিনি আরো অতিরিক্ত বলেছেন, রাসূল ﷺ'র পিতা-মাতা থেকে বাবা আদম (আ.) পর্যন্ত সকলেই তাওহিদ বা একত্ববাদের উপরে বিশ্বাসী ছিলেন।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: ইমাম ইবনে সালেহ শামী: সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/২৫৫ পৃ:, ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী: তাফসিরে কাবীর, ৪/৭৭ পৃ:]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">৫. ইমাম কুরতুবী (রা.) বলেন, পুনর্জীবন সংক্রান্ত হাদিস ও ইস্তেগফার নিষেধ এর মধ্যে কোন বিরোধ নেই। কারণ পুনর্জীবন সংক্রান্ত ঘটনা ইস্তেগফার সংক্রান্ত ঘটনার অনেক পরে হয়েছে। যেমন মা আয়েশা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস তার প্রমাণ। তিনি বলেছেন, পুনর্জীবন এর ঘটনা বিদায় হজ্বের সময় ঘটেছিল। এজন্য ইবনে শাহীন (রা.) এ হাদিসকে অন্যান্য হাদিসের নাসিখ ও বা রহিতকারী নির্ধারণ করেছেন।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: ইমাম কুরতুবী: তাযকিরা, ১৩৮ পৃ:, ইমাম সুয়ূতী: আল-হাভীলিল ফাতওয়া, ২/২৭৮ পৃ:, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ. ১৪২৪হি.]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">৬. আহলে হাদিসদের শ্রদ্ধাভাজন ইমাম, ইমাম ইবনে কাসির (রা.) উল্লেখ করেন, হিশাম বিন মুহাম্মদ কালবী (রা.) তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আমি রাসূল ﷺ'র মায়ের বংশধারার ৫০০ মহিলার তালিকা সংকলন করেছি। তাঁদের কোন একজনকে না ব্যাভিচারী পেয়েছি, না জাহিলী যুগের কোন অনাচারের (মুশরিকী কর্মকাণ্ড) সম্পৃক্ততা পেয়েছি।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: ইবনে কাসির: বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ২/৩১৪ পৃ:]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">বিরুদ্ধবাদীরা সহীহ মুসলিম শরীফের একটি হাদিস শরীফ তাদের পক্ষে দলিল হিসেবে উত্থাপন করে থাকেন। যা তাদের অজ্ঞতার প্রমাণ বহন করে।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (মক্কা বিজয়ের সময়) রাসূল ﷺ তাঁর মাতার কবর জিয়ারত করেন। তখন তিনি এমনভাবে ক্রন্দন করেন যে তাঁর সাথীগণও ক্রন্দন করতে থাকেন। রাসূল ﷺ বলেন, আমি আমার রবের নিকট আমার মায়ের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনার অনুমতি চাইলাম কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হলো না। তারপর আমি তাঁর কবর জিয়ারতের অনুমতি চাইলাম। তখন আমাকে অনুমতি দেয়া হলো। তোমরা কবর জিয়ারত করবে, কারণ তা মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: সহীহ মুসলিম: ২/৬৭১ পৃ:, হা নং ৯৭৬]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">হাদিস শরীফটি সহজে অনুধাবনের জন্য আমি পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত নিম্নে উল্লেখ করছি।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আপনি কখনো তাদের (মুনাফিক) কারোর উপর (জানাযার) নামাজ পড়বেন না এবং তাদের কবরের নিকট (জিয়ারতের জন্য) দাঁড়াবেন না।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: সূরা: তাওবাহ, আয়াত নং ৮৪]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">উক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা রাসূল ﷺ-কে মুনাফিক তথা বেঈমানদের জানাযা পড়তে এবং কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু মুসলিম শরীফের হাদিসে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে, আল্লাহ তায়ালা রাসূল ﷺ-কে মা আমেনা (রা.)'র কবর জিয়ারতের অনুমতি দিয়েছেন। অর্থাৎ মা আমেনা (রা.) ঈমানদার ছিলেন। উক্ত হাদিস শরীফও রাসূল ﷺ'র পিতা-মাতা মু'মিন হওয়ার প্রমাণ বহন করে। এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে আল্লাহ তায়ালা কেন রাসূল ﷺ-কে মাগফেরাতের অনুমতি দেননি ? উত্তরটা খুবই সহজ, মাগফেরাত করা হয়ে থাকে গুনাহগার বান্দার জন্য কিন্তু মা আমেনা (রা.)'র তো কোন গুনাহ ছিল না। তাই আল্লাহ তায়ালা রাসূল ﷺ-কে মাগফেরাতের অনুমতি দেননি বরং কবর জিয়ারতের অনুমতি দিয়েছেন, যেহেতু নেককার, বদকার সকলেরই কবর জিয়ারত করা যায়।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">রাসূল ﷺ'র পিতা-মাতাকে কেউ জাহান্নামী বললে, রাসূল ﷺ অবশ্যই কষ্ট পাবেন। সব বিষয় বুঝতে কোরআন হাদিসের দলিলের প্রয়োজন পড়ে না, নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন, নিজেকে দিয়ে বিচার করুন, খুব সহজেই উত্তর পেয়ে যাবেন।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">রাসূল ﷺ-কে কষ্টদানকারী পাপিষ্ঠদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, যারা আল্লাহকে ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ অব্যশই তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে লা'নত করেন এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">[রেফারেন্স: সূরা আহযাব, আয়াত ৫৭]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">আল্লাহ তায়ালা রাসূল ﷺ'র সম্পর্কিত অনেক আক্বিদার বিষয় সরাসরি কোরআনে কিংবা হাদিসে উল্লেখ করেননি। তার কারণ হচ্ছে, সবকিছু যদি সরাসরি মানার জন্য নির্দেশনাই থাকে, তাহলে মুনকির-নকিরের ৩ নাম্বার প্রশ্ন, "ইনার (রাসূল ﷺ) প্রতি তুমি দুনিয়াতে কি ধারণা পোষণ করতে" এই প্রশ্ন অর্থহীন হয়ে যেতো।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">✍🏻 M.S.R</div>

রাসূল (ﷺ)'র পিতা-মাতা মু'মিন ছিলেন

---------------- ইউটিউবে প্রবেশ করলে এমন হাজারো ভিডিও হরহামেশাই দেখতে পাই, যে ভিডিওগুলোর বিষয়বস্তু হচ্ছে, "রাসূল ﷺ'র পিতা-মাতা কি ...

Read more »

কিয়ামুল লাইল!

<div style="text-align: justify;">'প্রকৃতপক্ষে রাতের বেলা জেগে-ওঠা প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক বেশি কার্যকর এবং যথাযথভাবে কুরআন পড়ার জন্য উপযুক্ত।' [সূরা মুযযাম্মিল, আয়াত- ৬]</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">রাসূলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন— মুমিনের সম্মান হলো তাহাজ্জুদ। সায়্যিদুনা হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহ বলেন— 'যারা আল্লাহর সাথে নির্জনে সময় কাটায়, আল্লাহ তাদেরকে তাঁর নূর দ্বারা আচ্ছাদিত করে নেন।'</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">সেই নূর তাহাজ্জুদ আদায়কারীদের চেহারায় ফুটে ওঠে। নফসকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি কোরআনি পদ্ধতি হলো— কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ। তাহাজ্জুদ আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা পাওয়ার একটি মাধ্যমও বটে। তবে এই প্রশান্তিদায়ক সালাত আদায়ের সৌভাগ্য সবার হয় না। সায়্যিদুনা ইবরাহীম বিন আদহাম রাহিমাহুল্লাহ'র কাছে এক ব্যক্তি এসে বলতে লাগল— আমি অনেক চেষ্টা করি কিয়ামুল লাইল আদায় করতে। তবে এত চেষ্টা স্বত্বেও আমি রাতে জাগতে পারি না। তখন সায়্যিদুনা ইবরাহীম বিন আদহাম রাহিমাহুল্লাহ বলেন— 'দিনে করা তোমার পাপসমূহ তোমাকে জাগতে দেয় না।'</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">অর্থাৎ বুঝা যায়, যারা সারাদিন পাপাচারে লিপ্ত থাকে তারা এই সালাত আদায়ের সৌভাগ্য পায় না। এই প্রশান্তিদায়ক সালাতের সৌভাগ্য তারাই পায় যারা পাপাচার থেকে বিরত থাকে। যারা নেকি করাতে মগ্ন থাকে। যাদেরকে আমার রব পছন্দ করেন। স্বয়ং রব তাদেরকে রাতে জাগিয়ে দেন। এজন্যই হয়তো এই সালাতকে মুমিনের সম্মান বলা হয়েছে। </div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে কিয়ামুল লাইল আদায়ের তৌফিক দিন।</div><div style="text-align: justify;"><br></div><div style="text-align: justify;">~স্বাধীন আহমেদ </div>

কিয়ামুল লাইল!

'প্রকৃতপক্ষে রাতের বেলা জেগে-ওঠা প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক বেশি কার্যকর এবং যথাযথভাবে কুরআন পড়ার জন্য উপযুক্ত।' [সূরা মুযযাম্ম...

Read more »