يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ
دَرَسْتُ الْعِلْمَ حَتَّى صِرْتُ قُطْباً
هو الغوث الأكبر والقطب الأشهر أحد أركان الطريق وأئمة العارفين
بيني وبينكم وبين الخلق كلهم بعد ما بين السماء والأرض فلا تقيسوني على أحد ولا تقيسوا أحدا علي
এবার আসি মূল আলোচনায়। আরবিতে একখানা কথা আছে,'মান লাহুল মাওলা ফালাহুল কুল', যার এক অর্থ হতে পারে,যে খোদা তাআলাকে রাজি করলো সমগ্র সৃষ্টি তার অনুগত হয়ে গেল।এর একটা জলন্ত প্রমাণ দেখি ইমাম আব্দিল ক্বাদির এবং আল্লামা ইবন তায়মিয়ার মাঝে।
সূফিয়ায়ে কেরামের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ কারি,বহু মাস'আলায় ইজমায়ে উম্মতের বিরোধিতাকারি এবং বিদ'আতি আক্বিদা পোষণকারি আল্লামা ইবনে তায়মিয়ার লেখনীতে দেখা গেছে যখনই উনার সামনে সমগ্র সৃষ্টিজগৎের গাউস মুহিউদ্দিন আব্দিল ক্বাদির এর নাম আসে তখন যেন তিনি একটু দূর্বল হয়ে পড়েন।আল্লামা ইবনে তায়মিয়াহ গাউসুল আযম মুহিউদ্দিন আব্দিল ক্বাদির জিলানি কুদ্দিসাল্লহু সিররুহুর প্রতি সদা মস্তকাবনত ছিলেন।
এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল, উনি শায়খ আব্দিল ক্বাদির এর 'ফুতুহুল গায়ব' বা 'মাফাতিহুল গায়ব' এর ব্যাখ্যা লিখেছেন।ফুতুহুল গায়ব এর অর্থ অদৃশ্যের সংবাদ সমূহের উদঘাটন।আজ-কালকার মোল্লা হলে ফতোয়া লাগিয়ে দিতো,এই নামটাই কুফুরি আকিদা সম্পন্ন।আর অন্যদিকে হাফিয ইবনুল কাইয়্যিম 'মাদারিজুস সালিকিন' এ উল্লেখ এটাও উল্লেখ করেন যে,আল্লামা ইবনে তায়মিয়া লওহে মাহফুজ দেখে ভবিষ্যতে ঘটবে এমন সংবাদ বলে দিতে পারতেন।
আউলিয়া কিরামদের দোয়ার বরকতে আল্লাহ ভাগ্য পরিবর্তন করে থাকেন।এ কনসেপ্টের ব্যাখ্যায় ইবনে তায়মিয়া যা উল্লেখ করেছেন তা অন্য কেউ বললে তারা কাফের-মুশরিক বানিয়ে দিতেন।ইবন তায়মিয়া লিখেন—
كَثِيرٌ مِنْ الرِّجَالِ إذَا وَصَلُوا إلَى الْقَضَاءِ وَالْقَدَرِ أَمْسَكُوا وَأَنَا انْفَتَحَتْ لِي فِيهِ رَوْزَنَةٌ فَنَازَعْتُ أَقْدَارَ الْحَقِّ بِالْحَقِّ لِلْحَقِّ وَالرَّجُلُ مَنْ يَكُونُ مُنَازِعًا لِقَدَرِ لَا مُوَافِقًا لَهُ وَهُوَ - رضي الله عنه - كَانَ يُعَظِّمُ الْأَمْرَ وَالنَّهْيَ وَيُوصِي بِاتِّبَاعِ ذَلِكَ وَيَنْهَى عَنْ الِاحْتِجَاجِ بِالْقَدَرِ
❝আশ-শাইখ আব্দিল ক্বাদির বলেন,'স্পষ্টতই কিছু যুবক (তাসাউফ চর্চা করতে করতে) অদৃশ্যের সংবাদ এবং ভাগ্যলিপি (দেখার) দেখার মর্যাদা পেয়ে যায়।কিন্তু তারা চুপ থাকে।কিন্তু,আমি বাদে (মানে আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই)।কিন্তু ভাগ্যলিপি এবং আমার মাঝে একটা বাতায়ন রয়েছে,এর দ্বারা আমি হক্বের উপর দাঁড়িয়ে হক্বের জন্য ভাগ্যলিপির সাথে প্রতিযোগিতা করতে থাকি (অর্থাৎ লোকেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য)।আমি সে ব্যক্তি যে (মানুষের উপকারের জন্য) ভাগ্যলিপির সহিত দ্বন্দ্বে লিপ্ত,ভাগ্যের পরিণতি অনুসারে চুপ হয়ে মেনে নেয়ার পাত্র আমি নই!'[আল্লাহু আকবর]❞
ইবনে তায়মিয়াহ বলেন,
والذي ذكره الشيخ رحمه الله هو الذي أمر الله به ورسوله
—❝এখানে শায়খ আব্দিল ক্বাদির যা বলেছেন তা মূলত: আল্লাহর হুকুমে এবং তার ﷻ রাসুলের হুকুমেই ﷺ বলেছেন।❞
রেফারেন্স:
➤ফতোয়ায়ে কুবরা,৫/১৬১-১৬২পৃ.,দারুল কুতুব ইলমিয়াহ হতে প্রকাশিত।
➤কিতাবুল উবুদিয়াত,৯পৃষ্ঠা,দারুল কুতুব ইলমিয়াহ
➤মাজমুআ ফাতাওয়া,৬/৮৯,দারুল কুতুব ইলমিয়াহ
'আল ইস্তিক্বামাহ' এর ৮৬পৃষ্ঠায় ইবন তায়মিয়া গাউসে পাক কে 'ক্বুতবুল আরিফিন' উপাধিতে সম্বোধন করে একটা ঘটনা উল্লেখ করেন যেখানে উনাকে প্রশ্ন করা হয় যে, ❝হে সাইয়্যিদি!ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল রা. এর আক্বিদার ওপর অটল ব্যতীত কেউ কি আউলিয়া হতে পারে?❞ উনি নঞার্থক জবাব দিলেন!
ইমামের আক্বিদাগুলোকে গ্রন্থিত করেছেন হুযুর গাউসুল আযমেরই শাগরিদ শায়খুল ইসলাম মুওয়াফফাক্ব উদ্দিন ইবনু ক্বুদামা আল-মাক্বদিসি আল-হাম্বলি (৬২০হি.)।আর আল্লামা ইবন তায়মিয়ার বিভিন্ন বক্তব্য প্রমাণ করে,উনি নিজেই বিভিন্ন বিষয়ে ইমাম আহমদের আক্বিদা হতে সরে গিয়েছেন।
হুযুর গাউসুল আজমের কাশফ সম্পর্কে ইবন তায়মিয়া একটা ঘটনা উল্লেখ করেন।একবার ইমাম শায়খ শিহাবউদ্দিন সোহরাওয়ার্দী উনার মামার সাথে হুযুর গাউসুল আযম রা. এর পবিত্র বারগাহে উপস্থিত হলেন।ইমাম সোহরাওয়ার্দী বলেন,"আমি 'কালাম' শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি লাভের জন্য কি অধ্যয়ন করবো,ইমামুল হারামাইনের 'ইরশাদ' নাকি ইমাম শিহরিস্তানির 'নিহায়াতুল ইক্বদাম',নাকি উনার নিকটই বসে কিছু লিখবো,তা শায়খুল ইসলাম মুহিউদ্দিন আব্দিল ক্বাদির এর নিকট জানতে চাওয়ার মানসিকতা নিয়ে উপস্থিত হলাম।উনি আমাকে দেখেই বলে উঠলেন,❝বৎস উমর!ক্ববরে এগুলা কি কাজে আসবে?ক্ববরে এগুলা কি কাজে আসবে?❞এটা বলে উনি আমার ক্বালবের উপর অন্তঃর্দৃষ্টি/কাশফ নিক্ষেপ করলেন।আমার সমস্ত জ্ঞান আমি ভুলে গেলাম।"
[আল ইস্তিক্বামাহ লি ইবনু তায়মিয়া,১/৭৮]
'আর ফুরকান বাইনাল আওলিয়াইর রাহমানি ওয়াশ শাইত্বান' এ স্থানে স্থানে উনি গাউসুল আযম কে কামিল ওলি হিসেবে ঘোষণা করেন আর উনার কারামাত সমূহকে মুতাওয়াতির বলে ঘোষণা দেন।
ইবন তায়মিয়া কাদেরিয়া ত্বরিকার মুরিদ ছিলেন।'বাদউল উলক্বা বিলাবসিল খিরক্বাহ' নামক ছোট পুস্তিকায় আল্লামা জামালউদ্দিন আব্দুল হাদি আল-হাম্বলি রহ. একটা সিলসিলার কথা উল্লেখ করেন,এটা নিম্নরূপ:
মহান গাউসুল আযম আবু মুহাম্মাদ আব্দিল ক্বাদির
↓
শাইখ আবু উমর ইবন ক্বুদামা
↓
শায়খুল ইসলাম মুওয়াফফাক উদ্দিন ইবনু ক্বুদামা
↓
ইবন আলি ইবন ক্বুদামা
↓
আল্লামা হাফিয ইবন তায়মিয়াহ!
মান লাহুল মাওলা ফালাহুল কুল।