আমরা সবাই সম্মানের প্রত্যাশী। তবে চিন্তা-ধারা কিছুটা এরকম- অনেক বড় কিছু হয়ে যাব, আর মানুষ আমার পিছু-ছুটবে। মানুষ আমাকে দেখলে রাস্তা ছাড়তে শুরু করবে। সাক্ষাতের জন্য মরিয়া হয়ে থাকবে।

হ্যা, মানুষ সম্মান করে। তবে মানুষকে কম, তার পজিশনকে বেশি! ওনি একজন শিক্ষক তাই ওনাকে এতো সম্মান করি। ওনার পরনে পাঞ্জাবি-পাগড়ী তাই ওনাকে দেখলেই সম্মান করি। ডাক্তারকে সম্মান করি ডাক্তার হিসেবে, ইঞ্জিনিয়ার সাহেবকে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। মূলত আমরা সম্মান মানুষটাকে নয় বরং তার পজিশন বা পোশাককে করছি!

কেউ পরিচয় জিজ্ঞেস করলে বড় বড় লকবগুলো দিয়ে পরিচয় দিতে আমরা সাচ্ছন্দ্য বোধ করি। কারণ- মানুষ সম্মান করবে। তবে মনে রাখতে হবে, এই পজিশন আর পোশাকের সম্মানটা খুবই সীমিত। এটা মানুষের অন্তরে স্থায়ী নয়। যতদিন পজিশন আছে, ততদিন সম্মান। খুব বেশি হলে, যতদিন বেঁচে আছি ততদিন!

তবে মানুষ হিসেবে যদি সম্মানিত হতে পারেন, তবে সেটা হবে চিরস্থায়ী। দুনিয়া এবং আখিরাতে। আমরা কি মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করি? না। কারণ ওইরকম মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরী করতে আমি ব্যর্থ, যাকে মানুষ হিসেবে লোকে সম্মান করবে। কোনো লকবের জন্য নয়। আমার হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়ত প্রকাশ করার পূর্বে চল্লিশ বছর মানুষ হিসেবে, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। মানুষ তাঁকে সম্মান করতো তাঁর উত্তম চরিত্রের প্রতি মুগ্ধ হয়ে। তাঁর বিশ্বস্ততা, সত্যবাদীতা, আমানতদারীতার মতো সুন্দর গুণগুলো দেখে।

তাই যখন তিনি নবুয়ত প্রকাশ করলেন, বিনা দ্বিধায় অনেকেই তাঁকে মেনে নিয়েছিল। কারণ- ওনার পেছনের জীবন সত্যতা আর বিশ্বস্ততায় ভরপুর ছিল।

আসুন নিজের পরিচয় মানুষ হিসেবে আগে প্রতিষ্ঠিত করি। এমন মানুষ হিসেবে, যেন আমার অনুপস্থিততেও মানুষ আমার চর্চা করে। প্রিয় আক্বার সীরাতের আলোকে গঠন করি আমাদের পার্সোনালিটি। যেন কোনো পদ বা পজিশন অথবা খুব দামী পোশাক না থাকলেও, মানুষ আমাকে মানুষ হিসেবে সম্মানের স্থানে রাখে। মৃত্যুর পরও মানুষের দোয়ায় রাখে, তাদের অন্তরে বাঁচিয়ে রাখে অনন্তকাল।
Top