ভাই বিনয়ের সাথে বলতে চাই ইমাম মানার কথা আল্লাহ কোরআনেই বলেছেন, আল্লাহ পাক এরশাদ করেন,
يٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنوا أَطيعُوا اللَّهَ وَأَطيعُوا الرَّسولَ وَأُولِى الأَمرِ مِنكُم
"হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর ও তাঁর রসুলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের মধ্যে যারা আদেশ প্রদানকারী(মুজতাহিদ ফকিহ) রয়েছেন তাদের আনুগত্য কর।"( সূরা নিসা: আয়াত নং-৫৯)

আয়াতের সারমর্মঃ এ আয়াতে মহান রব তা'আলা যাদের আনুগত্যের আদেশ করেছেন তারা হলেন-----
  ১)আল্লাহর(কোরআনের) আনুগত্য
  ২)রাসূলের(সুন্নাতের) আনুগত্য
  ৩)আদেশ দাতাগণের অর্থাৎ ফিকহবিদ মুজতাহিদ আলিমগণের আনুগত্য।

লক্ষণীয় যে,উক্ত আয়াতে আতীউ শব্দটি দুবার ব্যবহৃত হয়েছে-- আল্লাহর জন্য একবার এবং রাসূলে পাক ﷺও আদেশ প্রদারকারী মুজতাহি ফকিহগণের জন্য একবার।এর রহস্য হল আল্লাহ যা হুকুম করবেন,শুধু তাই পালন করা হবে,তার কর্ম কিংবা নীরবতার ক্ষেত্রে আনুগত্য করা যাবে না।তিনি কাফিরদেরকে আহার দেন,কখনও কখনও তাদেরকে বাহ্যিকভাবে যুদ্ধে জয়ী করান।তারা কুফরী করলেও সাথে সাথে শাস্তি দেন না।এসব ব্যাপার আমরা আল্লাহকে অনুসরণ করতে পারি না।কেননা এতে কাফিরদেরকে সাহায্য করা হয়।কিন্তু নবী করীম ﷺ ও মুজতাহিদ ইমামের প্রত্যকটা হুকুমে,প্রত্যেকটি কাজে, এমন কি যে সমস্ত ক্ষেত্রে তাঁরা নীরবতা অবলম্বন করেন,সে সমস্ত ক্ষেত্রেও তাঁদের আনুগত্য করা যায়।এ পার্থক্যের জন্য আতীউ শব্দটি দুবার ব্যবহৃত হয়েছে।

যদি কেউ বলে "উলীল আমর " দ্বারা ইসলামী শাসনকর্তাকে বোঝানো হয়েছে,এতে উপরোক্ত বক্তব্যে কোনরুপ তারতম্য ঘটবে না।কেননা শুধু শরীয়তসম্মত নির্দেশাবলীতেই শাসনকর্তার আনুগত্য করা হবে,শরীয়ত বিরোধী নির্দেশাবলীর ক্ষেত্রে আনুগত্য করা যাবে না।ইসলামী শাসনকর্তা হচ্ছেন কেবল হুকুম প্রয়োগকারী।তাকে শরীয়তের যাবতীয় আহকাম মুজতাজিদ আলিমগণের নিকট থেকে জেনে নিতে হবে।দেখা যাচ্ছে আসল আদেশ প্রদানকারী হচ্ছে ফিকহবিদগণ।

উদাহরণ:
-------------
এ আয়াতে এ বিষয়ের প্রতিও পরোক্ষ ইঙ্গিত রয়েছে যে,অনুশাসন তিন রকমের আছে।

১) কতগুলো অনুশাসন সরাসরি কোরআন থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।যেমন: অন্তঃসত্তা নয় এমন মহিলার স্বামী মারা গেলে,তাকে ৪মাস ১০ দিন ইদ্তত পালন করতে হয়।এদের প্রতি আল্লাহর নির্দেশ 'আতীউল্লাহ' থেকে অনুশাসন গৃহীত হয়েছে।
২) আর কতগুলো অনুশাসন সরাসরি হাদিস থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত।যেমনঃসোনারুপা নির্মিত অলংকার ব্যবহার পুরুষের জন্য হারাম।এ ধরনের অনুশাসন মেনে চলার জন্য 'আতীউর রসুল' বলা হয়েছে।

৩)আর কতগুলো অনুশাসন আছে যেগুলো স্পষ্টভাবে কোরআন বা হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয় না।যেমনঃস্ত্রীর সঙ্গে পায়ুকামে লিপ্ত হবার ব্যাপারটি অকাট্যভাবে হারাম হওয়ার বিধান।এ ধরনের অনুশাসন মেনে চলার জন্য 'উলীল আমরে মিনকুম' তথা মুজতাহিদদের আনুগত্যের কথা বলা হয়েছে।

✍এই আয়াত নিয়ে সাহাবীদের তাফসীরঃ
-----------------------------------------------------------
ইমাম হাকেম নিশাপুরী(ওফাত ৪০৫হিজরী) বর্ণনা করেন,  " বিশিষ্ট সাহাবী হযরতজাবের বিন আবদুল্লাহ(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,(কোরআন সুন্নাহের পর)উত্তম মুজতাজিদ ফকিহগণের আনুগত্য কর।"
(আল মুস্তাদরাক: ১/২১১পৃঃ,হাদিস নং-৪২২)
✍ইমাম হাকেম ও ইমাম যাহাবী সনদটিকে সহীহ বলেছেন।

✍লক্ষণীয় যে,সাহাবীদের কোরআনের তাফসীর মারফু হাদিসের ন্যায়।ইমাম হাকেম নিশাপুরী বলেন,"ইমাম বোখারী মুসলিমের নিকট সাহাবীদের তাফসীর মারফু হাদিসের ন্যায়"।(আল মুস্তাদরাক: ১/২১১পৃঃ,হাদিস নং-৪২২)

ইমাম নববী আশ শাফেয়ী (ওফাত ৬৭৬হিজরী) বলেন,"সাহাবীদের কোরআনের কোন ব্যাখ্যা মারফু হাদিসের ন্যায়"।(আল তাক্ববীর ওয়াল তাইসীরঃ৩৪ পৃঃ)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় রঈসুল মুফাসসির হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)হতে একটি ব্যখ্যা সংকলন করে ইমাম হাকেম---
"হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,এ আয়াতে (উলীল আমরে মিনকুম) আদেশ দাতা হল দ্বীনের মুজতাজিদ ফকিহগণ।"(হাকেম: মুস্তাদরাক,১/২১১পৃঃ,হাদিস নং-৪২৩)

✍আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় যে,আল্লাহর নবীর পরে সাহাবীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী যিনি কোরআন বুঝেছেন তিনি হলে সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)।কেননা তার জন্য রসুলে পাকﷺ দোআ করেছেন।ইমাম বোখারী বর্ণনা করেন---
"তাবেয়ী হযরত ইকরামা(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,সাহাবী ইবনে আব্বাস(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,রাসূলে পাক ﷺ তাঁর বক্ষের সাথে আমাকে লাগিয়ে দোয়া করেছেন, হে আল্লাহ! তাকে তুমি কিতাবের(কোরআনের) জ্ঞান দান কর।"
(বোখারী: ১/২৬ পৃঃ,হাদিসঃ৭৫)।

এবার আসুন রাসুলে করীম ﷺ হাদিসে পাকে ইমাম মানার ব্যাপারে কিছু বলেছেন কিনা?

2371- حَدَّثَنَا صَالِحُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ التِّرْمِذِيُّ حَدَّثَنَا الْفَرَجُ بْنُ فَضَالَةَ أَبُو فَضَالَةَ الشَّامِيُّ عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ عَلِيٍّ عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ((إِذَا فَعَلَتْ أُمَّتِي خَمْسَ عَشْرَةَ خَصْلَةً حَلَّ بِهَا الْبَلاَءُ)). فَقِيلَ وَمَا هُنَّ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: ((إِذَا كَانَ الْمَغْنَمُ دُوَلاً وَالأَمَانَةُ مَغْنَمًا وَالزَّكَاةُ مَغْرَمًا وَأَطَاعَ الرَّجُلُ زَوْجَتَهُ وَعَقَّ أُمَّهُ وَبَرَّ صَدِيقَهُ وَجَفَا أَبَاهُ وَارْتَفَعَتِ الأَصْوَاتُ فِي الْمَسَاجِدِ وَكَانَ زَعِيمُ الْقَوْمِ أَرْذَلَهُمْ وَأُكْرِمَ الرَّجُلُ مَخَافَةَ شَرِّهِ وَشُرِبَتِ الْخُمُورُ وَلُبِسَ الْحَرِيرُ وَاتُّخِذَتِ الْقَيْنَاتُ وَالْمَعَازِفُ وَلَعَنَ آخِرُ هَذِهِ الأُمَّةِ أَوَّلَهَا فَلْيَرْتَقِبُوا عِنْدَ ذَلِكَ رِيحًا حَمْرَاءَ أَوْ خَسْفًا وَمَسْخًا)).
قَالَ أَبُو عِيسَى: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ مِنْ حَدِيثِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ وَلاَ نَعْلَمُ أَحَدًا رَوَاهُ عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ الأَنْصَارِيِّ غَيْرَ الْفَرَجِ بْنِ فَضَالَةَ. وَالْفَرَجُ بْنُ فَضَالَةَ قَدْ تَكَلَّمَ فِيهِ بَعْضُ أَهْلِ الْحَدِيثِ وَضَعَّفَهُ مِنْ قِبَلِ حِفْظِهِ وَقَدْ رَوَاهُ عَنْهُ وَكِيعٌ وَغَيْرُ وَاحِدٍ مِنَ الأَئِمَّةِ.
সালিহ ইবন আবদুল্লাহ (রহঃ) ...... আলী ইবন আবূ তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মত যখন এ পনেরটি বিষয়ে লিপ্ত হবে তখন তাদের উপর মুসিবত নিপতিত হবে। জিজ্ঞাসা করা হল, সেগুলো কি ইয়া রাসূলাল্লাহ?

তিনি বললেন, যখন গনীমত পরিণত হবে ব্যক্তিগত সম্পদে, আমানত পরিণত হবে লুটের মালরূপে, যাকাত গণ্য হবে জরিমানারূপে, পুরুষরা তাদের স্ত্রীদের অনুগত হবে আর মা‘দের হবে অবাধ্য, বন্ধুদের সাথে তো সদাচারণ করবে অথচ পিতার সঙ্গে করবে দুর্ব্যবহার, মসজিদে শোরগোল করা হবে, নিকৃষ্টতম চরিত্রের লোকটি হবে তার সম্প্রদায়ের নেতা, কেবল অনিষ্টের ভয়ে কোন ব্যক্তিকে সম্মান করা হবে, মদপান করা হবে, রেশম বস্ত্র পরিধান করা হবে, গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের রেওয়াজ চলবে, উম্মতের শেষ যুগের লোকেরা প্রথম যুগের লোকদের অভিসম্পাত করবে তখন তোমরা অপেক্ষা করবে অগ্নিবায়ু বা ভূমিধ্বস বা চেহারা বিকৃতির আযাবের। 
এ হাদীসটি গারীব। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর রিওয়ায়াত হিসাবে এ সূত্র ছাড়া এটি সম্পর্কে আমাদের কিছু জানা নাই। ফারাজ ইবন ফাযালা ছাড়া আর কেউ এ হাদীসটি ইয়াহইয়া ইবন সাঈদ আনসারী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন বলেও আমরা জানিনা, কোন কোন হাদীস বিশেষজ্ঞ ফারাজ ইবন ফাযালার সমালোচনা করেছেন এবং স্মরণশক্তির দিক দিয়ে তাকে যঈফ বলেছেন ওয়াকী এবং আরো কতিপয় ইমাম তার বরাতে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।(ইমাম তিরমিজি: তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং-২৩৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন হাদিস নং-২২১৪)



আরেকটি রেওয়ায়েত দেখুন,
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَزِيدَ الْوَاسِطِيُّ عَنِ الْمُسْتَلِمِ بْنِ سَعِيدٍ عَنْ رُمَيْحٍ الْجُذَامِيِّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ((إِذَا اتُّخِذَ الْفَيْءُ دُوَلاً وَالأَمَانَةُ مَغْنَمًا وَالزَّكَاةُ مَغْرَمًا وَتُعُلِّمَ لِغَيْرِ الدِّينِ وَأَطَاعَ الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ وَعَقَّ أُمَّهُ وَأَدْنَى صَدِيقَهُ وَأَقْصَى أَبَاهُ وَظَهَرَتِ الأَصْوَاتُ فِي الْمَسَاجِدِ وَسَادَ الْقَبِيلَةَ فَاسِقُهُمْ وَكَانَ زَعِيمُ الْقَوْمِ أَرْذَلَهُمْ وَأُكْرِمَ الرَّجُلُ مَخَافَةَ شَرِّهِ وَظَهَرَتِ الْقَيْنَاتُ وَالْمَعَازِفُ وَشُرِبَتِ الْخُمُورُ وَلَعَنَ آخِرُ هَذِهِ الأُمَّةِ أَوَّلَهَا فَلْيَرْتَقِبُوا عِنْدَ ذَلِكَ رِيحًا حَمْرَاءَ وَزَلْزَلَةً وَخَسْفًا وَمَسْخًا وَقَذْفًا وَآيَاتٍ تَتَابَعُ كَنِظَامٍ بَالٍ قُطِعَ سِلْكُهُ فَتَتَابَعَ)).
قَالَ أَبُو عِيسَى: وَفِي الْبَابِ عَنْ عَلِيٍّ. وَهَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ.
আলী ইবন হুজর (রহঃ) ..... আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গনীমত সম্পদ যখন ব্যক্তিগত সম্পদ বলে গণ্য করা হবে, যাকাত হবে জরিমানা বলে, দ্বীনী উদ্দেশ্য ছাড়া ইলম অর্জন করা হবে, পুরুষরা স্ত্রীদের আনুগত্য করবে, এবং মা‘দের অবাধ্য হবে, বন্ধূদের নিকট করবে আর পিতাকে করবে দূর, মসজিদে শোরগোল করবে, পাপাচারীরা গোত্রের নেতা হয়ে বসবে, নিকৃষ্ট লোকেরা সমাজ নেতা হবে, অনিষ্টের আশংকায় একজনকে সম্মান করা হবে, গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের বিস্তার ঘটবে, মদ্যপান দেখা দিবে, উম্মতের শেষ যুগের লোকেরা প্রথম যুগের লোকদেরকে অভিসম্পাত করবে তখন তোমরা অপেক্ষা করবে অগ্নিবায়ু, ভূমিকম্প, চেহারা বিকৃতি, পাথর বর্ষণের আযাবের এবং আরো আলামতের যা পরপর নিপতিত হতে থাকবে, যেমন একটি পুরান হারের সূতা ছিড়ে গেলে একটার পর একটা দানা পড়তে থাকে।

(আবু ঈসা বলেন) এ বিষয়ে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি গারীব। এ সূত্র ছাড়া এটি সম্পর্কে আমাদের কিছু জানা নাই।(ইমাম তিরমিজি: তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং-২৩৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন হাদিস নং-২২১৩)

উপরোক্ত হাদিস ২টিতে আছে,"উম্মতের শেষ যুগের লোকেরা প্রথম যুগের লোকদেরকে অভিসম্পাত করবে "...... আপনি তো ৯২৩ হিজরীতে যার ওফাত তাকেই মানতে চাচ্ছেন না? এখন ১৪৪৩ হিজরী,অর্থাৎ আজকে থেকে ৫২০ বছর আগের ইমামকে মানেন না! ওনার কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু। ওনি কত বড় মাফের মুহাদ্দিস এগুলো আমি পরে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

আসুন, আর কয়েকটি হাদিস দেখি,
حدثنا عبيد الله بن معاذ العنبري، حدثنا ابي،حدثنا عصم وهو ابن محمد بن زيد،عن زيد بن محمد ،عن مافع،عن ابن عمر قال قال رسول الله ﷺ.......ومن مات وليس في عنقه بيعة، مات ميتة جهلية.
"হযরত ইবনে উমর(রাঃ) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন,রাসুলে কারীম ﷺ বলেছেন, যারা মারা গেল অথচ বায়াতের রশি তার গলায় জুলাল না,তার মৃত্যু যেন জাহেলিয়াতের মত হল"।(সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদিস নং- ১৮৫১,মিশকাত শরীফ,৩২০ পৃঃ,হাদিস নং- ৩৬৭৪। এছাড়া অনেক ইমাম এই হাদিস বর্ণনা করেছেন।আহলে লা মাযহাবীদের ইমাম, আলবানী তার সিলসিলায়ে সহীহা,হাদিস নং- ৯৮৪।

এই হাদিস আরো স্পষ্ট হয় নিচের হাদিস দ্বারা-
حدثنا ابرهيم بن محمد بن عريق الحمصي،ثان عبد الوهاب بن الضحاك،ثان اسمعيل بن عياس،عن ضمضم بن زرعة،عن سريح بن عبيد،عن معاوتة قال: قال رسول الله ﷺ من مات بعير امام مات ميتة جهلية.
" হযরত মুয়াবিয়া(রাঃ) হতে বর্ণিত ,তিনি বলেন,রাসুল ﷺ বলেছেন : যে ব্যক্তি ইমাম ব্যতীত মারা যাবে সে জাহেলীদের মত মারা যাবে"।
(ইমাম তাবরানী: মু'জামুল করীর,হাদিস নং- ৯১০, ইমাম হায়সামী: মজমুয়ায়ে জাওয়াইদ,হাদিস নং- ৯১০২,মুসনাদে আহমদ,হাদিস নং-১৬৮৭৬।
হাদিসের ভাষ্য অনুসারে আপনাকে বিবেচনা করুন!

এখন চলুন, "আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ বিল মিনাহিল মুহাম্মাদিয়্যাহ" এই সিরাতের কিতাব সম্পর্কে মুহাক্কিক ওলামাকেরাম কি বলছেন!
আল মাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যাহ সম্পর্কে ওলামাগণের বক্তব্যঃ
আল্লামা শায়খ ইবনে ঈমাদ হাম্বলী(ওফাত. ১০৮৯ হিজরী) এ কিতাবের প্রশংসা করে লিখেন-
وهو كتاب جليل المقدار، عظيم الوقع كثير النفع، ليس له نظير في بابه
অর্থাৎ, আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ একটি মহামান্বিত বড়ো ধরনের প্রভাব বিস্তারকারী ও বহু উপকারী গ্রন্থ।হুজুর ﷺ এর সিরাত বিষয়ে এ গ্রন্থের সমকক্ষ বিরল।"(আল্লামা ইবনে ঈমাদ, শাজারাতুয যাহাব,১০/১৭০ পৃঃ, দারু ইবনে কাসির,দামেস্ক,বৈয়রুত,প্রথম প্রকাশ. ১৪০৬ হি.)
এ গ্রন্থের প্রশংসায় আল্লামা হাজী খলিফা(ওফাত. ১০৬৭ হি.) লিখেন,
وهو: كتاب جليل القدر،كاثير النفع.ليس له نظير في بابه.
অর্থাৎ, এটি(আল- মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ) উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন কিতাব,অধিক উপকারী, এ বিষয়ক গ্রন্থ সমুহের মধ্যে এটির তুলনা হয় না।"(আল্লামা হাজী খলিফা,কাশফুল যুনুন,২/১৮৯৬ পৃঃ)।
এ গ্রন্থের ব্যাখ্যাকার আল্লামা যুরকানী(ওফাত.১১২২ হি.) লিখেন,
وله عدة مؤلفت اعظمها هذه المواهب اللدنية، التي اشرقت من سطورها انوار الا بهة والجلالة،وقطرت من اديمها الفاظ النبوة والرسالة،احسن فيها ترتيبا وصنعا، وكاساه الله فيها رداء القبول،ففاقت علا كاثير مما سواها عند ذوي العقول.
"তাঁর(ইমাম কাসতালানী) এর রয়েছে অসংখ্য গ্রন্থ,তন্মধ্যে 'আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ ' উৎকৃষ্ট।যার প্রতিটি পংক্তি থেকে যেন বিচ্ছুরিত হচ্ছে প্রভারক আলো এবং মহত্বের আলোকরশ্মি। সুচিকরণ অত্যন্ত মার্জিত ও চমৎকার। এর গুঢ় রহস্যাবলী রত্নখচিত।আর এর প্রতিটি পৃষ্ঠার মধ্যে নবুয়ত ও রিসালাতের শব্দগুলো এভাবে গাঁথা হয়েছে,যেন গোলাপের পাতায় শিশিরের ফোঁটা টপকে পড়ছে।তারপর তিনি কবিতা লিখেন-
" আল্লাহ তাঁর এ কাজেকে করুনার চাদর দিয়ে কবুল করুক,
আমার চোখে গত হওয়া অসংখ্য বিদ্বানের মধ্যে তিনি এক অভিনব'।
(আল্লামা যুরকানী, শরহুল মাওয়াহেব,১/১০ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বৈরুত,লেবানন, প্রকাশ. ১৪১৭ হি.)

এছাড়া আল্লামা ইমাম আহমদ বিন মুহাম্মদ শাহাবুদ্দিন কাসতালানী(রহঃ) বোখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ লিখেছেন, যা নাম (ارشد السرح في سرح صحيح البخري) ইরশাদুস সারি ফি শরহে সহিহুল বোখারী (এটি ১০ খন্ডে বিভক্ত)।  এছাড়া তিনি আরো বহু কিতাব রচনা করেছেন।ইমাম কাসতালানীর জন্ম মিশরে। বোখারী শরীফের প্রসিদ্ধ কয়েকটি ব্যাখ্যাগ্রন্থ এর মধ্যে অন্যতম।যিনি হাদিস বুঝেন তাকেই তো মানা উচিৎ তাই না? উনার কিতাব মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ এর ব্যাপারে কেউ বিরুপ মন্তব্য করেছেন এমন কাউকে আপনি দেখাতে পারবেন না! উনার এই কিতাব এর উপর ব্যাখ্যাগ্রন্থের সংখ্যাও কম নয়, যা কিতাবের গ্রহণযোগ্যতাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এই কিতাবের বিখ্যাত  একটি ব্যাখ্যাগ্রন্থের নাম হল 'যুরকানী আলাল মাওয়াহেব' যা ইমামা যুরকানী মালেকী রচনা করেছেন।

✪ এখন আসেন,  ইমাম কাসতালানীর কিতাব মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ থেকে নকল করেছেন, প্রাচ্যের বোখারী, শায়খুল মুহাক্কিক,হাফিজুল হাদিস, শায়খ আবদুল হক মোহাদ্দেস দেহলভী আল বোখারী (রহঃ)  উনার কিতাব "মা ছাবাতি বিস সুন্নাহ ফি আইয়্যামিস সুন্নাহ" এ।

আপনার প্রশ্ন হতে পারে ওনাকে কেন মানব?
উত্তর: ওনার ওফাত হল ১০৫২ হিজরীতে। আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগের। সবচেয়ে মজার কথা হল ওনার হাদিসের সনদের উপরই পাক ভারত উপমহাদেশে সবাই হাদিস পড়াই। ওনাকে বাদ দিলে আর হাদিস পড়া লাগবে না।কারণ সনদ ছাড়া হাদিসের কোন মূল্য নেই।  আলীয়া,কওমী,দেওবন্দী, সুন্নী,ওহাবী ইত্যাদি যত ফেরকা আছে সবাকেই ওনার সনদের উপর হাদিস পড়াতে হয়।এই উপমহাদেশে ইসলাম এসেছে আজ থেকে ৬০০/৭০০ বছর আগে কিন্তু হাদিসের কিতাব তখনো ছিল না।ওনিই প্রথম জাহাজে করে হাদিসের কিতাব নিয়ে এসেছেন। মাদ্রাসায় প্রথমে হাদিস পড়ানো হয় মিশকাত শরীফ।এই মিশকাত শরীফের মুকাদ্দিমা লিখেছেন ওনি। মিশকাত পড়ার আগে এটা পড়তে হয়!

বোখারী শরীফের প্রথম হাদিস দেখেনঃ
‌حدثنا الحميدي قال حدثنا سفيان قال حدثنا يحيي بن سعيد الانصاري قال اخبرني محمد بن ابراهيم التيمي انه سمع علقمة بن وقص الليثي يقول سمعت عمر بن الخطاب رضي الله عنه عال المنبر يقول سمعت رسول اللل ﷺ...............................

حميدي
|
سفيان
|
     يحيي بن سعيد الانصاري
|
     محمد بن ابراهيم التيمي
|
         علقمة بن وقص الليثي
|
عمر بن الخطاب رضي الله عنه
|
                رسول اللهﷺ
এই হাদিসে ইমাম বোখারী ও রসুলে কারীম ﷺ এর মাঝখানে ৬ জন রাবী আছে। যাকে সনদ বলে। এভাবে ইমাম বোখারী থেকে আবদুল হক মোহাদ্দেস দেহলভী পর্যন্ত হাদিস পৌছেছে।আর উনার থেকে আমাদের পাক ভারত উপমহাদেশে হাদিসের সনদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়ে আজ আমরা হাদিস পড়তে পারছি।সনদ ছাড়া কিভাবে আপনি ১২০০/১৪০০ বছর আগে চলে যাচ্ছেন?  আপনি কি ইমাম বোখারী, মুসলিম ওনাদেরকে দেখেছেন, না ওনাদের জমানায় ছিলেন? ইমাম আহমদ বিন মুহাম্মদ শাহাবুদ্দিন কাসতালানী(রহঃ) ও শাহ আবদুল হক মোহাদ্দেস দেহলভী রহঃ এটা বোখারী শরীফ বলেছেন, আমরা মেনে নিয়েছি।তারপর ওনাদের থেকে আমাদের আ'কাবিররা হাদিসের সনদ পাওয়ার কারণে আমরা এটা বোখারী শরীফ চিনতে পেরেছি, পড়ছি এবং বুঝে আমল করার চেষ্টা করছি।

তাই আমরা হাদিসের ইমামের কথা মানব।কারণ ওনাদেরকে না মেনে যদি হাদিস পড়ি বা পড়ায় তাহলে নিজের বাবাকে মানলাম কিন্তু দাদাকে মানি না।দাদাকে যদি না মানেন বা ওনাকে কুফুরী,বিদয়াতী ফতোয়া দেন তাহলে আপনার বাবার জন্মই ঠিক হয়নি।কারণ আপনার দাদা যদি বিদায়াতী বা কাফির হয় তাহলে আপনার বাবা হারামজাদা হবে।

✔✔উম্মতের শেষ যুগের লোকেরা প্রথম যুগের লোকদেরকে অভিসম্পাত করবে।  যা আগেই হাদিস উপস্থাপন করেছি।যা কেয়ামতের লক্ষণ। আল্লাহ হেফাজত করুক।

সর্বশেষ একটা হাদিস বলে শেষ করব-
দ্বীন কার থেকে শিখছো জেনে নাও
وعن ابن سيريين قال ان هذا العلم دين فانظروا عمن تاخذون دينكم- رواه مسلم
অর্থঃ "হযরত মুহাম্মদ ইবনে সীরীন(র.) হতে বর্ণিত।তইনি বলেন- নিশ্চয়ই এ( কিতাব ও সুন্নাতের) ইলম হচ্ছে দ্বীন।সুতরাং তোমরা লক্ষ্য কর যে, তোমাদের এ দ্বীন  কার নিকট থেকে গ্রহণ করে।"
☞সহিহ মুসলিম শরীফ, ১/ ১৪পৃঃ
☞মিশকাত শরীফঃ কিতাবুল ইলম, হাদিস নংঃ ২৫৪।













Top