আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন।ওয়াসসালাতু আসসালামু আলা রাসুলিহিন নাবিয়্যিন আমিনিল হামিমিল কারিমির রাউফির রাহিম,মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলিহী ওয়া আসহাবিহি আজমাইন।আম্মাবা’আদ…..
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জাম’আর মূল আক্বিদার একটা অন্যতম বিষয় হল ‘তারতিবে আফযালিয়াতে সাহাবা’ বা ‘সাহাবিদের মর্যাদার ক্রমবিন্যাস’।বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ মর্যাদাসম্পন্নতা থাকলেও সার্বিক অঙ্গনে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জাম’আর আক্বিদা হলো, নবিদের পর মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা আফযল বা মর্যাদাবান হলেন হযরত আবু বকর সিদ্দিক رضي الله تعالى عنه . কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর সুফিজমের নাম দিয়ে শিয়াইজম প্রচারে যথেষ্ঠ তৎপর হয়েছে ‘তাফজিলি’ রা,এরা হযরত আলি كَـرَّم اَلـلَّـهُ تَبَـارَكْ وَتـَعٰالى وَجْهَـهُ الْكَـرِيْـمُ বা ইমাম হাসান ও হুসাইন رضي الله تعالى عنهما দ্বয়কে সার্বিকভাবে হযরত আবু বকর رضي الله تعالى عنه এর চেয়ে অধিক মর্যাদাবান হিসেবে উপস্থাপন করে।
অথচ উম্মতে মুহাম্মাদীর এব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে হযরত আবুবকর رضي الله تعالى عنه ই সব সাহাবি অপেক্ষা মর্যাদাবান।
আমি এখানে যুগশ্রেষ্ঠ এবং যুগবিদগ্ধ চল্লিশ জন ইমামের ক্বওল/অভিমত একত্রিত করেছি।এখানে কোনো হাদিস/আছার আমি আনিনি কারণ আমার আক্বিদা এটা যে,হাদিস/আছারগুলো ইমামগণ আমাদের চেয়ে অধিক ধারণ করে স্বচ্ছ ধারণা আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন।
অভিমত ১.
ইমাম নববী (৬৭৬হি.ওফাত) উনার ‘শরহে মুসলিম’ এর ১৫/১৪৮ পৃষ্ঠায় লিখেন—
واتفق أهل السنة على أن أفضلهم أبو بكر ثم عمر، قال جمهورهم ثم عثمان ثم علي، وقال بعض أهل السنة من أهل الكوفة بتقديم علي على عثمان، والصحيح المشهور تقديم عثمان
—❝আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামআহ এই বিষয়ের উপর ঐকমত্য হয়েছে যে,হযরত আবু বকর رضي الله تعالى عنه সর্বাপেক্ষা মর্যাদাবান,এরপর হযরত উমর ,অতঃপর হযরত উসমান এবং এরপর হযরত আলী।আবার আহলে সুন্নতের কিছু ইমাম হযরত আলী রাঃ কে হযরত উসমান রাঃ অপেক্ষা মর্যাদাবান বলেন। আর প্রসিদ্ধ এবং বিশুদ্ধ মত হলো হযরত উসমান রাঃ অধিক মর্যাদাবান।❞ رضي الله تعالى عنهم
অভিমত ২.
ইমাম শিহাবুদ্দীন কাস্তাল্লানী (৯২৩ হি.) বিখ্যাত ‘মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ ফি মিনাহিল মুহাম্মাদিয়াহ’ গ্রন্থের ২/৭০১ পৃষ্ঠায় লিখেন
إن أفضلهم على الإطلاق عند أهل السنة إجماعا أبو بكر ثم عمر- رضى الله عنهما
আহলে সুন্নাতের এই ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে যে,হযরত আবু বকর رضي الله تعالى عنه ই সর্বাধিক মর্যাদাবান। অত:পর হযরত উমর رضي الله تعالى عنه
অভিমত ৩.
আল্লামা হাফেয ইবনু কাসীর (৭৭৪হি.) স্বীয় ‘আল বা’য়িছুল হাছিছ ইলা ইখতিসারু উলুমিল হাদিছ’ গ্রন্থের ১/১৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন
وأفضل الصحابة، بل أفضل الخلق بعد الأنبياء عليهم االسلام: أبو بكر عبد الله بن عثمان "أبي قحافة" التيمي، خليفة رسول الله صلى الله عليه وسلم وسمي الصديق
সাহাবিদের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাবান বরং আম্বিয়ায়ে কিরাম আলাইহিমুস সালাম এঁর পর সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে মর্যাদাবান হলেন আবু বকর আব্দুল্লাহ ইবনে উছমান আবি কুহাফা আত-তায়মী।যিনি হলেন রাসুল ﷺ এর খলিফাহ এবং উনার পরিচিতি ‘সিদ্দিক’ নামে।
অভিমত ৪.
ইমাম ইবনুস সালাহ(৬৪৩হি.) স্বীয় জগৎবিখ্যাত উসুলুল হাদিস এর কিতাব ‘আল মুকাদ্দিমা’ এর ১/২৯৮ পৃষ্ঠায় লিখেন—
أَفْضَلُهُمْ عَلَى الْإِطْلَاقِ أَبُو بَكْرٍ، ثُمَّ عُمَرُ، ثُمَّ إِنَّ جُمْهُورَ السَّلَفِ عَلَى تَقْدِيمِ عُثْمَانَ عَلَى عَلِيٍّ رضي الله عنهم
আহলে সুন্নতের ইমামরা এব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছেন যে হযরত আবু বকর রা. সব সাহাবিদের উপর মর্যাদাবান,অত:পর উমর রা. এবং অধিকতরো পূর্বসূরি ইমামগণ হযরত উসমান রা. কে হযরত আলি রা. এর আগে রেখেছেন।
অভিমত ৫.
“মানাকিবিশ শাফিঈ’য়ি” গ্রন্থের ১/৪৩৩ পৃষ্ঠায় ইমাম বায়হাকি রহ.(৪৫৮ হি.) উল্লেখ করেন—
عن الشافعي أنه قال: أفضل الناس بعد رسول الله ﷺ أبو بكر، ثم عمر، ثم عثمان، ثم علي، رضوان الله عليهم.
ইমাম শাফিঈ’ বলেন,রাসুল ﷺ এর পর সবচেয়ে মর্যাদাবান হলেন হযরত আবুবকর রা. এরপর হযরত উমর রা. এরপর হযরত উসমান রা. এবং এরপর হযরত আলি রা.
অভিমত ৬.
‘আল মাদখাল ইলা মাযহাবিল ইমাম আহমাদ’ গ্রন্থের ৫৬ পৃষ্ঠায় আল্লামা আব্দুল ক্বাদির আল বাদরান হাম্বলি (১৩৪৬ হি.) উল্লেখ করেন—
قَالَ أَحْمد كُنَّا نقُول أَبُو بكر وَعمر وَعُثْمَان ونسكت عَن عَليّ حَتَّى صَحَّ لنا حَدِيث ابْن عمر بالتفضيل
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. বলেন,আমরা এরূপ বলতাম (যে, মর্যাদার ব্যাপারে অগ্রগণ্য) আবুবকর, উমর অত:পর উসমান।(এবং উসমানের আগে) আলির নাম বলতে চুপ থাকতাম যার পেছনে ইবনে উমর রা: এর বিশুদ্ধ হাদিস আমাদের নিকট পৌঁছেছে।رضي الله تعالى عنهم
অভিমত ৭.
শায়খুল ইসলাম ইমামুল মুহাদ্দিসীন ইমাম ইবন হাজার আসকালানী রহ. (৮৫২ হি.) ‘ফতহুল বারি’ (দারুল মা’আরিফাহ) গ্রন্থের ৭/১৭ তে উল্লেখ করেন—
وَنَقَلَ الْبَيْهَقِيُّ فِي الِاعْتِقَادِ بِسَنَدِهِ إِلَى أَبِي ثَوْرٍ عَنِ الشَّافِعِيِّ أَنَّهُ قَالَ أَجْمَعَ الصَّحَابَةُ وَأَتْبَاعُهُمْ عَلَى أَفْضَلِيَّةِ أَبِي بَكْرٍ ثُمَّ عُمَرَ ثُمَّ عُثْمَانَ ثُمَّ عَليّ كَـرَّمَ اَلـلَّـهُ تَبَـارَكْ وَتـَعٰالى وَجْهَـهُ الْكَـرِيْـمُ
ইমাম বায়হাকি রহ. ‘আল-ই’তিক্বাদ’ (৩৬৯ পৃষ্ঠার) গ্রন্থে সনদ সহকারে আবি ছাওর হয়ে ইমাম শাফিঈ’ হতে বর্ণনা করেন,তিনি বলেন, সাহাবি এবং তাবেয়িদের ইজমা হলো, হযরত আবু বকর রা. হলে সর্বাপেক্ষা মর্যাদাবান।এরপর হযরত উমর,হযরত উসমান রা. এবং হযরত আলি كَـرَّم اَلـلَّـهُ تَبَـارَكْ وَتـَعٰالى وَجْهَـهُ الْكَـرِيْـمُ
অভিমত ৯.
ইমাম বুখারী রহ. (২৫৬হি.) স্বীয় ‘সহিহ বুখারি’ তে ‘কিতাবু ফাযায়েলুস সাহাবা’ অধ্যায়ে স্বতন্ত্র পরিচ্ছদ রচনা করেছেন এই নামে
بَابُ فَضْلِ أَبِيْ بَكْرٍ بَعْدَ النَّبِيِّ ﷺ
বাব: নবি ﷺ এর পরই হযরত আবু বকর রা: এর মর্যাদা।
অভিমত ১০.
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জাম’আর আক্বিদার ইমাম হযরত আবুল মানসুর আল মাতুরিদী (৩৩৩হি.) দশম শতাব্দির মুজাদ্দিদ ইমাম মুল্লা আলি ক্বারি রহ., এই দুই ইমামদ্বয় ইমাম আবু হানিফার আক্বিদার দিকে নিসবত কারী গ্রন্থ ‘ফিকহুল আকবর’ এর স্ব-স্ব ব্যাখ্যা গ্রন্থে উল্লেখ করেন—
وأفضل الناس بعد رسول الله ﷺ أبو بكر الصديق رضي الله تعالى عنه
নবি ﷺ এর পর শ্রেষ্ঠ মানুষ হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা:
অভিমত ১১.
হানাফি মাযহাবের বিখ্যাত আকিদার গ্রন্থ আকায়েদে নাসাফি এর ব্যাখ্যা ‘নিবরাস শরহে শরহুল আক্বায়িদ আন-নাসাফিয়াহ’ তএ ৬৪১-৬৪২ পৃষ্ঠায় (মাক্তাবা ইয়াসিন,ইস্তাম্বুল তুরস্ক) আল্লামা ফারহারি রহ. (১২৩৯ হি.) উল্লেখ করেছেন —
وأفضل البشر بعد النبينا عليهم الصلوات والسلام أبو بكر الصديق رضي الله تعالى عنه
নবিদের পর সবচেয়ে আফযল হলেন হযরত আবু বকর সিদ্দিক رضي الله تعالى عنه
অভিমত ১২.
আল্লামা শায়খ ইউসুফ বিন ইসমাঈল নাবাহানি রহ. (১৩৫০হি.) উনার ‘আল-আসালিবুল বাদি’আহ ফি ফাসলিস সাহাবা ওয়া ইক্বনাইশ শি’আহ’ গ্রন্থের ১/১৬ তে লিখেন—
قد إجمعوا على تقديم ابي بكر
অবশ্যই এব্যাপারে পূর্বসুরী ইমামদের মধ্যে ইজমা হয়েছে যে,হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা: (মর্যাদার দিক দিয়ে) প্রথম।
অভিমত ১৩.
সানিয়ে নুমান বিন সাবিত, আল্লামা যাইনুল আবিদিন ইবনে নুজাইম মিসরি আল-হানাফি রহ.(৯৭০হি.) ‘বাহরুর রায়িক্ব শরহে কানযুদ দাক্বায়িক্ব’ গ্রন্থের ১/২৮৮ গ্রন্থে উল্লেখ করেন—
روي ان ابا حنيفة سئل عن مذهب اهل السنة والجمعة. فقال هو تفضل الشيخين وتحب الختنين... الخ
—ইমাম আযম আবু হানিফা রহ. কে আহলে সুন্নত ওয়াল জাম’আত এর আকিদার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন,আহলে সুন্নতের অনুসারীরা শায়খাইন রা. কে অধিক মর্যাদা দিবে (বাকিদের তুলনায়) এবং নবিজীর ﷺ দুই জামাতাকে ভালোবাসবে।
অভিমত ১৪,১৫,১৬.
‘বাহরুর রায়েক্ব’ এর বক্তব্য আরো যে যে ইমাম তাদের কিতাবে এনেছেন
★আল্লামা ফকিহ আব্দুর রাহমান আল কালয়ূবী (১০৭৮হি.),মাজমাউল আনহুর,১/৬৮
★ইমাম আলাউদ্দিন আল-কাসানি (৫৮৭হি.), আল-বাদায়ি ওয়াস-সানায়ি’,১/৮
★আল্লামা ইব্রাহিম হালবি (৯৫৬হি.),গুনিয়াতুল মুতামাল্লি শরহে মুনিয়াতুল মুসাল্লি,১/২০৩
অভিমত ১৮.
ইমাম ক্বুরতুবী (৬৫৬ হিজরী) উনার ‘মুলহিম শরহে মুসলিম’ ৩/১০৬৯ গ্রন্থে উল্লেখ করেন —
المقطوع بفضله وافضليته بعد رسول الله ﷺ عند اهل السنة وهو الذي يقطع به من الكتاب والسنة ابو بكر الصديق. ولم يختلف في ذلك احد من ائمۃ السلف ولا الخلف
আহলে সুন্নত ওয়াল জাম’আতের নিকট রাসুল ﷺ এর পর কে সবচেয়ে আফজল/মর্যাদা সম্পন্ন সে ব্যাপারটা অকাট্য ভাবে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।আর তা হল হযরত আবু বকর রা. এর মর্যাদা যা কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা সাব্যস্ত।সালাফ এবং খালাফ এর কোনো ইমামই এর বিরোধিতা করেন নি।
অভিমত ১৯.
ইমাম যাইনুদ্দিন ইরাক্বী রহ.(৮০৬ হি.) ‘শরহে তাবসিরাতে ওয়াত তাযকিরাত’ গ্রন্থের ২/১৩৭ পৃ উল্লেখ করেন—
اجمع اهل السنة على ان افضل الصحابة بعد النبی ﷺ على الاطلاق ابو بكر ثم عمر
নবি ﷺ এর পর সাহাবিদের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাবান হলেন হযরত আবু বকর রা. অতঃপর হযরত উমর রা.। এ বিষয়টাই আহলে সুন্নত ওয়াল জাম’আত এর ইজমা এবং এতে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত।
অভিমত ২০.
‘তারিখুল খুলাফা’ গ্রন্থের ৩৮ পৃষ্ঠায় ইমাম জালালউদ্দিন আব্দুর রহমান সুয়ুতি রহ. উল্লেখ করেন—
إجمع اهل السنة ان افضل الناس بعد رسول الله ﷺ ابو بكر
আহলে সুন্নতের ইজমা হল নবি ﷺ এর পর সবচেয়ে মর্যাদাবান হলেন হযরত আবুবকর সিদ্দিক রা.
অভিমত ২১.
‘আস-সাওয়ায়েকুল মুহরিকাহ’ গ্রন্থে ইমাম ইবন হাজার হায়তামি মক্কি শাফেঈ’ আলাদা অধ্যায় রচনা করেছেন যার নাম —
في أفضلية أبي بكر على سائر هذه الأمة ثم عمر ثم عثمان ثم علي رضي الله تعالى عنهم
সমস্ত উম্মতের মধ্যে সবচাইতে বেশি ফজিলত হযরত আবু বকর রা. এর,এরপর হযরত উমর রা. এর, এরপর হযরত উসমান রা. এবং মাওলা আলি রা.
অভিমত ২২.
একহাজার বছরের মুজাদ্দিদ ইমাম মুজাদ্দিদে আলফে সানি শায়খ আহমদ সিরহিন্দী রহ. উনার ‘মাকতুবাত শরিফ’ এর মধ্যে এব্যাপারে বিশদ আলোচনা করেছেন।২৫১ নং মাকতুবে বিশেষভাবে হযরত আবু বকর রা. এর আফযালিয়তের বর্ণনা রয়েছে।
অভিমত ২৩.
আল্লামা ইমাম সাফারিনী (১১৮৮হি.) উনার ‘লাওয়ামিয়ুল আনওয়ারিল বাহিয়াহ’ গ্রন্থের ২/৩১২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন —
فقد اجمع اهل السنة والجمعة على ان أفضل الصحابة الناس بعد الانبياء عليهم السلام ابو بكر
নিশ্চয়ই এব্যাপারে আহলে সুন্নতের মধ্যে ইজমা হয়েছে যে,নবিদের পর হযরত আবুবকর রা. সকল সাহাবি এবং মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মর্যাদাবান
অভিমত ২৪.
ইমাম আব্দির রাযযাক সান’আনি রহ. (২১১ হি.) যিনি ইমাম বুখারীর উস্তাদ,তিনি বলেন—
بل كان يحب عليا رضي الله عنه ، وكان يقول : والله ما انشرح صدري قط أن أفضل عليا على أبي بكر وعمر
আমি হযরত আলি রা. কে ভালোবাসি।কিন্তু আমার বুকে এখনো এতো শক্তি হয়নি যে,আমি হযরত আলি রা. কে হযরত আবুবকর রা. এবং হযরত উমর রা. অপেক্ষা মর্যাদাবান বলবো।
[ইমাম যাহাবী,তাযকিরাতুল হুফফাজ,১/৩৩৪]
অভিমত ২৫.
হুযুর গাউসুল আযম দস্তগীর রা. উনার ‘আল গুনিয়াতুত ত্বালিবীন’ গ্রন্থের ১/১৫৭,১৫৮ পৃষ্ঠায় (দারুল কুতুব ইলমিয়াহ) উল্লেখ করেন—
وأفضل الاربعة ابو بكر ثم عمر ثم عثمان ثم علي رضي الله عنهم
চারজন খলিফার মধ্যে সর্বাধিক মর্যাদাবান হলেন হযরত আবু বকর রা. অতঃপর হযরত উমর রা. এরপর হযরত উসমান রা এবং হযরত আলী রা.
অভিমত ২৬.
‘কাশফুল মাহজুব’ গ্রন্থে শায়খ সৈয়্যদ আবুল হাসান আলী হাযওয়ীরী দাতা গাঞ্জে বখশ লাহোরী রহ.(৪৬৫হি.) লিখেন—
❝সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে সুফিদের সর্বশ্রেষ্ঠ ইমাম হলেন আমিরুল মুমিনীন হযরত আবু বকর সিদ্দিক رضي الله تعالى عنه.❞
অভিমত ২৭.
‘আক্বিদাতু হাফিয আব্দুল গণি আল মাক্বদিসী (৬০০হি.)’ গ্রন্থের ৯৯ পৃষ্ঠায় ইমাম আব্দুল গণির আক্বিদা সম্পর্কে উল্লেখ আছে—
ونعتقد أن خير هذه الأمة وافضلها بعد رسول الله صاحبه الأخص وأخوه في الإسلام ورفيقه في الهجرة والغار (أبو بكر الصديق )
আর আমাদের আক্বিদা হলো নবি ﷺ এর পর এই উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম এবং মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তি হলেন নবিজিরই সাহাবি,উনার মুসলিম ভাই,হিজরতকালের সঙ্গী এবং গুহার সাথি যিনি অর্থাৎ আবুবকর সিদ্দিক রা:।
অভিমত ২৮.
‘তাবয়িনুল কাযিব আল মুফতারি’ গ্রন্থের ৩০৬ পৃষ্ঠায় ইমাম ইবনু আসাকির (৫৭১ হি.) লিখেন
وان يعتقد فضل الصحابة وترتيبهم وان افضل الناس بعد رسول الله ﷺ ابو بكر ثم عمر ثم عثمان ثم علي رضي الله عنهم
আর আমাদের আক্বিদা হলো, নবি ﷺ এঁর পর সাহাবিদের ফজিলত এবং সঠিক ক্রমানুসরণ হলো হযরত আবু বকর রা:, হযরত উমর রা:, হযরত উসমান রা: এবং হযরত আলি কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু।
অভিমত ২৯ এবং ৩০.
ইমাম কাস্তাল্লানীর শায়খ,ইমাম সৈয়্যদ আহমদ যাররূক আল ফাসী আল মালিকি (৮৯৯হি.) উনার ‘ইগতিনামুল ফাওয়াইদ’ গ্রন্থের ২০৪ পৃষ্ঠায় (দারু ইমাম ইবনে আরাফাহ,তিউনিসিয়া) হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযযালি রহ. এর আকিদা বয়ান করতে গিয়ে লিখেন—
وأنّ أفضل النّاس بعد رسول الله ﷺ أبو بكر، ثم عمر، ثم عثمان، ثم علي، رضي الله عنهم
নিশ্চয়ই রাসুলে করিম ﷺ এঁর পর সমগ্র মানবকূলের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হলেন হযরত আবু বকর রা., এরপরে হযরত উমর রা.,এরপর হযরত উসমান রা. এবং এরপর আলি ইবনে আবি তালিব রা.
এরপর শায়খ যাররূখ নিজের আক্বিদা সম্পর্কে বলেন—
يعني أن الصحابة على مراتب في الفضل، فأفضلهم أبو بكر عبد الله بن عثمان أبي قحافة خليفة النبي ﷺ في حياته وبعد موته،
অর্থাৎ সাহাবিদের মধ্যে পরস্পরের মর্যাদা ক্রমবিন্যস্ত অবস্থায় আছে।এবং অবশ্যই সবার উপর হযরত আবু বকর ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উসমান আবি কুহাফা রা. এর মর্যাদা,যিনি নবি ﷺ হায়াত এবং মাওত উভয় অবস্থারই খালিফাহ।
অভিমত ৩১.
ইমাম আবু জাফর ত্বাহাবি রহ. (৩২১হি.) উনার ‘আল-আক্বিদাহ আত-ত্বাহাবিয়াহ’ তে উল্লেখ করেন—
ونثبت الخلافة بعد رسول الله ﷺ أولا لأبي بكر الصديق رضي الله عنه تفضيلا له وتقديماً على جميع الأمة
এটা প্রমাণিত যে,রাসুলে আরাবি ﷺ এর খালিফাহ হলেন হযরত আবু বকর রা.। আমরা তাকে সকল উম্মতের উপরে মর্যাদা দিই এবং সবার শীর্ষে রাখি।
অভিমত ৩২.
ইমাম যাহাবি রহ. (৭৪৮হি.) ‘তাযকিরাতুল হুফফায’ এর প্রথম পৃষ্ঠায় হযরত আবু বকর রা: এর বর্ণনায় লেখেন —
افضل الامة وخليفة رسول الله صلى الله عليه و آلـه و سلم و مؤنسه في الغار، وصديقه الأكبر، و صديقه الاشفق، و وزيره الاحزم عبد الله ابن ابي قحافة عثمان القرشي التيمى
সকল উম্মতের মধ্যে আফজল/সর্বোত্তম,নবি আকরাম ﷺ এর খালিফাহ এবং সাওর পর্বতেরর গুহার সঙ্গি,সিদ্দিকে আকবর,সিদ্দিকে আশফাক্ব, নবিজির সার্বক্ষণিক উযির আব্দুল্লাহ ইবনে আবি কুহাফা উসমান আল কুরাইশি আত-তায়মি।
অভিমত ৩৩.
‘মাত্বালিউল মুসাররাত বি জিলা ই দালাইলুল খায়রাত’ গ্রন্থের ১৪৭ পৃষ্ঠায় (মাক্তাবা নূর,ফয়সালাবাদ পাকিস্তান) গ্রন্থে আল্লামা শায়খ মাহদী ইবনে আহমদ আল ফাসী (১০৫২হি.) লিখেন—
والاجماع على أفضلية على سائر الصحابة
—এ ব্যাপারে আহলে সুন্নত ওয়াল জাম’আতের মধ্যে ইজমা হয়েছে যে হযরত আবু বকর রা. এর মর্যাদা সব সাহাবির উর্ধ্বে।
অভিমত ৩৪.
শায়খুল ইসলাম আল ফকিহ আবু লাইস আস-সামারকান্দি রহ. (৩৭৫হি.) উনার ‘বুস্তানুল আরিফিন’ গ্রন্থের ২৬তম পরিচ্ছদ,১২৯ পৃষ্ঠায় (দারুল কুতুব ইলমিয়াহ) উল্লেখ আছে—
قال محمد بن الفضل اجمعوا على ان خير هذه الامة بعد النبي ﷺ ابو بکر ثم عمر...الخ
ইমাম মুহাম্মাদ বিন আল-ফযল বলেন,এব্যাপারে ইজমা হয়েছে যে,নিশ্চয়ই নবি ﷺ এরপর উম্মতের মধ্যে সর্বাপেক্ষা মর্যাদাবান হলেন হযরত আবুবকর রা., এরপর হযরত উমর রা.।
অভিমত ৩৫.
আল্লামা শায়খ সৈয়্যদ মীর আব্দুল ওয়াহেদ বিলগিরামি আল হুসাইনি রহ. (১০১৭হিজরী) ‘সাবা’আ সানাবিল’ গ্রন্থের ৭ম পৃষ্ঠায় (জামেউন নিযামিয়াতুর রাযভিয়াহ,লাহোর হতে প্রকাশিত) লিখেন—
❝এবং এর উপর ইজমা হয়েছে যে,আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম এর পর সব মানুষের মধ্যে আফজল হলেন হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা:।❞
অভিমত ৩৬.
দশম শতাব্দীর অন্যতর মুজাদ্দিদ ইমাম মুল্লা আলি ক্বারি হানাফি রহ. অন্যত্র ‘মিরক্বাতুল মাফাতিহ’ গ্রন্থের ১১/৩৪৪ পৃষ্ঠায় (মাক্তাবা ইমদাদিয়াহ, মুলতান,পাকিস্তান),কিতাবুল মানাকিব,ফাসলে সানি তে উল্লেখ করেন—
وعـنـه قـال اجتمع المهاجرون والأنصار على أن خير هذه الأمة بعد نبيها عليـه السلام ابو بـكـر وعـمـر وعـثـمـان
মুহাজিরিন এবং আনসার সাহাবিগণের মধ্যে এব্যাপারে ইজমা ছিল যে,নবিগণের পর এই উম্মতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হলেন হযরত আবু বকর রা.,এরপর হযরত উমর এবং হযরত উসমান রা.
অভিমত ৩৭.
ইমাম ফারাজ ইবনুল জওযী রহ. (৫৯৮ হি.) বলেন—
وانه افضل بقية الأمة
হযরত আবু বকর রা: হলেন বাকি সব উম্মতের চেয়ে আফযল।
[ইমাম ইবন হাজার মক্কি,আস-সাওয়ায়িক আল মুহরিকা,ফাসলে সানি,ফাযায়িলু আবি বাকার,৯২ পৃষ্ঠা]
অভিমত ৩৮.
বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম আবদুল ওয়াহহাব শা’রানি রহ. (৯৭২ হি.) ‘আল ইয়াওয়াক্বিত ওয়াল জাওয়াহির’ গ্রন্থের ৪৩ নং বিষয়ে লিখতে গিয়ে ৩২৮ পৃষ্ঠায় লিখেন (দারুল কুতুব ইলমিয়াহ)
ان افضل الاولياء المحمديين بعد الانبياء والمرسلين ابو بكر ثم عمر ثم عثمان ثم على رضى الله عنهم اجمعين . وهذا التـرتيـب بيـن هؤلاء الاربعة الخلفاء قطعى عند الشيخ ابی الحسن الاشعرى
—নবি-রাসুলদের পর উম্মতে মুহাম্মদীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ আউলিয়া হলেন হযরত আবু বকর, এরপর হযরত উমর, এরপর হযরত উসমান ও হযরত আলি রিদওয়ানুল্লাহি তায়ালা আজমাইন।খুলাফা রাশিদিনের পরস্পর মর্যাদার ক্রমবিন্যাসটি (আমাদের আক্বিদার) ইমাম শায়খ আবুল হাসান আশ’আরি রহ. এর নিকট অকাট্য।
অভিমত ৩৯.
ইমাম আবু বকর ইবনে ইসহাক্ব আল কালাবাযি (৩৮০হি.) উনার গ্রন্থ ‘আত-তা’আররুফ লিবায়ানিল মাযহাব আত-তাসাওউফ’ গ্রন্থের ৬২ পৃষ্ঠায় (দারুল কুতুব ইলমিয়াহ) লিখেন —
اجمعت الصوفية على تقديم ابى بكر ثم عمر ثم عثمان ثم علي رضي الله تعالى عنهم
এ ব্যাপারে সুফিয়ায়ে কেরামের মধ্যেই ইজমা হয়েছে যে,সর্বপ্রথম মর্যাদাবান হলেন হযরত আবু বকর রা., এরপর হযরত উমর,এরপর হযরত উসমান এবং এরপর হযরত আলি রা.
অভিমত নং ৪০:
ইমাম আবু নুআইম ইস্পাহানি রহ.(৪৩০হি.) উনার জগৎবিখ্যাত ‘আল ইমামাহ ওয়াররাদ্দে আলার রাফিদ্বাহ’ গ্রন্থের ১/২০৬ পৃষ্ঠায় লিখেন,
❝নবি ﷺ এর পর সর্বোত্তম এবং সর্বোপরি যোগ্য ব্যক্তিত্ব হলেন হযরত আবু বকর এবং এরপর হযরত উমর رضي الله تعالى عنهم.
ইজমার বিরোধিতা করার হুকুম:
নবিজির ﷻ ফরমান,
لن يجتمع أمتي على الضلالة أبدا
আমার উম্মত কখনো ভ্রষ্টতার উপর একমত হবেনা।
(মুজামুল কাবির,১১/৭৮, ইমাম তাবারানি)
আর আল্লাহ কুরআনে বলেন,
وَ یَتَّبِعۡ غَیۡرَ سَبِیۡلِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ
—❝আর যে ব্যক্তি মুসলমানদের পথ থেকে আলাদা চলে,আমি তাকে তার অবস্থার উপর ছেড়ে দিবো।❞
আল্লাহ আমাদের হক্ব বুঝার তাওফিক দিন।আমিন!
✍️:AR RAFFEHAAN
https://www.facebook.com/raffehaan