হাসান ও হোসাইনের বংশধারা
❏ ১০. রাসূলে করীম (ﷺ) ইরশাদ করেন-
إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ جَعَلَ ذُرِّيَّةَ كُلِّ نَبِيٍّ فِي صُلْبِهِ، وَإِنَّ اللهَ تَعَالَى جَعَلَ ذُرِّيَّتِي فِي صُلْبِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ
অর্থাৎঃ “নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সকল নবীর বংশধর তাঁদের ঔরশজাত পুত্র সন্তানের মাধ্যমে বিদ্যমান রেখেছিলেন আর আঁমার বংশধারা হযরত আলী ইবনে আবী তালেব (رضي الله عنه)’র ঔরশজাত সন্তানের মাধ্যমে জারী রাখবেন। ”
[সূত্রঃ ইমাম তাবারানি, আল-মু’জামুল কবীর, মাকতাবাতু ইবনে তাইমিয়া, কায়রো, ২য় সংস্করণ, ৩য় খন্ড, পৃঃ ৪৩, হা/২৬৩০]
❏ ১১.অন্য হাদিসে রাসূলে করীম (ﷺ) ইরশাদ করেন-
كُلُّ بَنِي أُنْثَى فَإِنَّ عَصَبَتَهُمْ لِأَبِيهِمْ، مَا خَلَا وَلَدَ فَاطِمَةَ فَإِنِّي أَنَا عَصَبَتَهُمْ وَأَنَا أَبُوهُمْ
অর্থাৎঃ “প্রত্যেক সন্তানের বংশ জারী হয় প্রত্যেকের পিতার দিক থেকে; তবে হযরত মা ফাতেমা (رضي الله عنه)’র সন্তানগণ এর ব্যতিক্রম; কেননা আঁমিই (নবী করীম) তাঁদের পিতৃবংশীয় নিকট আত্মীয় এবং আমিই তাঁদের পিতা (পূর্বপুরুষ)। ”
[সূত্রঃ প্রাগুক্ত, ৩য় খন্ড, পৃঃ ৪৪, হা/২৬৩১]
❏ ১২.এভাবেও বলা যেতে পারেঃ
أخرج الطبراني عن عمر رضي الله عنه قال:قال رسول اللهﷺ كل بني أنثى فإن عصبتهم لأبيهم، ما خلاولد فاطمة فإنی عصبتهم، فأناأبوهم;
ইমাম তাবরানী হযরত ওমর (رضي الله عنه) এ সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক নারীর ঔরসজাত সন্তানদের বংশ পরিচয় নির্ণয় হয় তাদের পিতার দিক থেকে। শুধু (আঁমার কন্যা) ফাতেমার (رضي الله عنه)’র সন্তানগণ ব্যতিত। কেননা, আঁমিই তাদের ‘আসাবা’ এবং আঁমিই তাদের পিতার স্থলাভিষিক্ত (অভিভাবক হিসেবে)। ”
তথ্যসূত্রঃ
(ক.) আল-মু’জামুল কবীরঃ ৩:৪৪, ২৬৩১
(খ.);মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ইমাম হাইছামীঃ ৪:২২৪
❏ ১৩.আরেক বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলে করীম (ﷺ) ইরশাদ করেন-
كُلُّ بَنِي أُمٍّ يَنْتَمُونَ إِلَى عَصَبَةٍ إِلَّا وَلَدَ فَاطِمَةَ، فَأَنَا وَلِيُّهُمْ وَأَنَا عَصَبَتُهُمْ
অর্থাৎঃ “প্রত্যেক মায়ের সন্তানদের বংশ নিসবত হয়, তাদের পিতৃকুলের দিকে; তবে হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه)’র সন্তানগণ ছাড়া। কেননা আঁমিই তাঁদের অভিভাবক এবং আঁমিই তাঁদের পিতৃবংশীয় নিকট আত্মীয়। ”
[সূত্রঃ প্রাগুক্ত, হাদিস নং ২৬৩২]
❏ ১৪.হাদিস শরীফে এভাবেও এবারত এসেছে
أخرج الطبراني عن فاطمة الزهراء رضی الله عنها قالت: قال رسول اللهﷺ كل بني أم ينتمون إلى عصبتهم، إلا ولدی فاطمة، فأنا وليهما وعصبتهما ؛
ইমাম তাবরানী হযরত ফাতেমাতুজ জাহরা (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক মায়ের সন্তানেরই বংশীয় সম্পর্ক নির্ণীত হয় তাদের পিতার দিক দিয়ে। কিন্তু ফাতেমার সন্তানদের ব্যতিত। কেননা, আঁমিই তাদের অভিভাবক এবং তাদের বংশীয় উর্ধতন পুরুষ। তাই আঁমার দিকেই তাদের বংশীয় সম্পর্ক নির্ণীত হবে। ”
তথ্যসূত্রঃ
(ক.)আল মু’জামুল কাবীরঃ ৩:৪৪ (২৬৩২)
(খ.) আবু ইয়াআলাঃ ৬:১৬১ (৬৭০৯)
(গ.) তারীখু বাগদাদ আল খতীব আল বাগদাদীঃ ১১:২৮৫
(ঘ.) আল মাকাসিদুল হাসানা, ইমাম সাখাভীঃ পৃষ্ঠা ৩৮১
❏ ১৫. প্রখ্যাত মুহাদ্দিস মুহাম্মদ বিন ইসমাইল সানআনি আলাইহির রাহমাহ বলেন-
فأولاد علي من فاطمة رضي الله عنها أولاده – صلى الله عليه وسلم – حقيقة خاصة من الله له وقد عدها أهل الفقه والحديث من خواصه – صلى الله عليه وسلم – وهم أولاد علي أيضًا فإنهم عصبتان حينئذ وهذه فضيلة لعلي وفاطمة لا تغادر قدرها
অর্থাৎঃ “হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه) এঁর সূত্রে মাওলা আলী (رضي الله عنه) এঁর সন্তানগণ রাসূলে করীম (ﷺ) এঁর প্রকৃত আওলাদ, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর জন্য খাস। এটাকে ফকীহ ও মুহাদ্দিসগণ রাসূলে করীম (ﷺ) এর বৈশিষ্ঠ্য হিসেবে গণ্য করেছেন। আর তাঁরা হযরত আলী (رضي الله عنه)’রও সন্তান। কেননা তাঁরা রাসূলে করীম (ﷺ) ও মাওলা আলী (رضي الله عنه) উভয়ের উত্তর পুরুষ। এটি হল হযরত মা ফাতেমা (رضي الله عنه) ও মাওলা আলী (رضي الله عنه) এঁর মর্যাদা, যা তাঁদের জন্যই নির্ধারিত। ”
[সূত্রঃ মুহাম্মদ বিন ইসমাইল সানআনি, আত-তায়সীর শরহুল জামিইস সগীর, মাকতাবাতু দারিস সালাম, রিয়াদ, ১ম সংস্করণ, ১৪৩২ হিঃ, ৩য় খন্ড, পৃঃ ২৯৩, হা/নং ১৭১১]
❏ ১৬. আরেক বর্ণনায় রয়েছে
أخرج الطبراني عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: قال رسول اللهﷺ كل سبب ونسب منقطع يوم القيامة، إلا سببی ونسبی۔
ইমাম তাবরানী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)র সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “কিয়ামতের দিন প্রত্যেক উপায় ও বংশীয় সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, শুধু আমার উপায় (উসিলা) ও বংশীয় সম্পর্ক ব্যতিত”।
তথ্যসূত্রঃ
১.মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ইমাম হাইছামীঃ ৯:১৭৩
২.আল মু’জামুল কাবীর, ইমাম তাবরানীঃ ২:২৭ (৩৩) (মসুরা ইবনে মাখমা এর সূত্রে)।
৩. আল মু’জামুল আওসাতঃ ৬:২৮২ (৫৬০২)।
৪. আস সুনানুল বায়হাক্বীঃ ৭:১০২ (২৩২৯৪)/ ১৮৫ (১৩৬৬০)।
❏ ১৭. অপর বর্ণনায় রয়েছে
أخرج ابن عساكر في تاريخه عن ابن عمر رضي الله عنهما قال: قال رسول اللهﷺ كل نسب وصهر منقطع يوم القيامة، إلا نسبی وصهری؛
ইবনে আসাকির তার ‘তারীখ’ এ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক বংশীয় ও বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়তা কিয়ামতের দিন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, শুধু আমার বংশীয় ও বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়তা ব্যতিত। অর্থাৎ, কিয়ামতের দিন আমার কোন আত্মীয়তাই নষ্ট হবেনা। ”
তথ্যসূত্রঃ
১.আল মু’জামুল কাবীর, তাবরানীঃ ৩:৪৫ (২৬৩৪)।
২. আল ফাওয়ায়েদ, তাম্মাম রাজী, ২:৩৩৩ (১৬০৩)।
৩. আস সুনানুল কুবরাঃ ৭:১০২ (১৩৩৯৫/১৩৩৯৬) মােসাওয়ার ইবনে মাখরামা (رضي الله عنه) এর হাদিস থেকে।
❏ ১৮. অন্য বর্ননাতে এসেছে। প্রিয় নবীজি থেকে: হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলে আকরাম (ﷺ) কে বলতে শুনেছি: কিয়ামত দিবসে আঁমার বংশধারা ব্যতীত সকল বংশীয় সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। প্রত্যেক সন্তান তার পিতার দিকে সম্পর্কিত হবে কিন্তু ফাতিমার সন্তানেরা ছাড়া। কেননা, তাদের পিতাও আঁমি আর তাদের বংশধারাও আমি।
[হায়ছমি, মাজমাউজ জাওয়ায়েদঃ ৪:২২৪, তাররাণি, আল মুজামুল কবিরঃ ৩:৪৪, হা/নং ২৬৩১। শাওকানি, নাইলুল আওতার, ৬:১৩৯]
❏ ১৯. হযরত জাবের (رضي الله عنه) আনাস বিন মালেককে বললেন, “একদিন রাসুলে খোদা ﷺ কিছু সাহাবাদের নিয়ে মসজিদে উপবিষ্ট ছিলেন। তখন রাসুলে খোদা ﷺ আমাকে বললেনঃ হে জাবের যাও হাসান ও হোসাইনকে আঁমার নিকট নিয়ে আস। জাবের বললেনঃ পয়গাম্বার ﷺ ঐ দু’জনকে খুব ভালবাসেন, আমিও গিয়েছিলাম ঐ দু’জনকে আনতে। পথিমধ্যে কখনও একজনকে কখনও অন্যজনকে কোলে করে পয়গাম্বার ﷺ এঁর নিকট পৌঁছালাম। পয়গাম্বার ﷺ ওদের দু’জনের প্রতি আমার ভালবাসা ও মমতা দেখতে পেয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন হে জাবের! ঐ দু’জনকে তুমি ভালবাস কি?
আমি বললামঃ আমার বাবা ও মা আঁপনার জন্য উৎসর্গ হোক। কেন ওদেরকে ভালবাসব না? আঁপনার নিকট তাঁদের মর্যাদা সম্পর্কে আমি অবগত। অতঃপর পয়গাম্বার ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন (আঃ) এঁর ফজিলত ও মহত্ত্ব সম্পর্কে বক্তব্য দেন এবং পরিশেষে ইমাম মেহেদী (আঃ) এঁর পবিত্র আগমন ইমাম হোসাইন (আঃ) এর বংশ থেকে ঘটবে তা উল্লেখ করেন।
রাসুলে খোদা ﷺ তাঁর অব্যাহত বক্তৃতায় বলেনঃ তাঁদের ফজিলত সম্পর্কে কি তোমাকে বলবো? আমি বললামঃ হ্যাঁ, আমার পিতা ও মাতা আঁপনার জন্য উৎসর্গ হোক। পয়গাম্বার ﷺ বললেনঃ মহান আল্লাহ তায়ালা আঁমাকে সৃষ্টি করতে যখন মনস্থ করলেন; আঁমাকে একটি শুভ্র রঙ্গের শুক্রের আকৃতিতে সৃষ্টি করলেন এবং আঁমার আদি পিতা আদম (আঃ) এর অস্থির মধ্য তার প্রবেশ ঘটালেন; এমনিভাবে আঁমাকে পবিত্র অস্থি থেকে পবিত্র গর্ভে স্থানান্তরিত করতেন, তার ধারাবাহিকতা হিসেবে হযরত নুহ, হযরত ইব্রাহীম ও হযরত আব্দুল মোতালেব এর নিকট স্থানান্তরিত হল। কখনও অজ্ঞতার কলুষতা আমার নিকট পৌঁছাইনি সর্বশেষ ঐ শ্বেত শুক্র দুইভাগে বিভক্ত হলো। এক ভাগ আঁমার বাবা আব্দুল্লাহ ও অন্য ভাগ আঁমার চাচা আবু তালেবর অভ্যন্তরে প্রবেশ ঘটলো। আব্দুল্লাহ ঐ পবিত্র ও নুরানী শুক্র থেকে আঁমাকে জন্ম দিয়েছেন। আর আঁমি হলাম আঁমার খোদার সর্বশেষ প্রেরিত রাসুল, আর নবুওয়াত আঁমার ঊপর সমাপ্ত হয়েছে। আর আবু তালেব থেকে আলীর জন্ম হয়। যিঁনি সর্বশেষ পয়গাম্বরের ওসী বা ঊত্তরসূরী। আঁমার ও আলীর শুক্রের সংমিশ্রনের মাধ্যমে দু’জন সুন্দর ফুটফুটে সন্তান হাসান ও হোসাইনের আগমন ঘটে। যারা আল্লহর পয়গাম্বারের সর্বশেষ বংশধর আর আল্লাহ তায়ালা আঁমার বংশধর ঐ দু’জন থেকে অব্যাহত রেখেছে।
অতঃপর পয়গাম্বার ﷺ হোসাইন (আঃ) এর দিকে ইঙ্গিত করে বললেনঃ আঁমার সর্বশেষ উত্তরসূরী যিনি পূর্ণ বিজয়ের মাধ্যমে কাফেরদের সকল শহর জয় করবেন এবং অন্যায় ও অত্যাচারে ভরপূর জমিনকে ন্যায় ও ইনসাফে পরিপূর্ণ করবেন। তিনি হবেন তাঁর বংশ হতে। আঁমার এই দু’সন্তান হাসানাইন পাক পবিত্র ও বেহেস্তের যুবকদের সর্দার। সৌভাগ্যবান তারাই যারা এ দুজন ও তাঁদের পিতামাতাদেরকে ভালবাসবে। আর দুর্ভাগ্য তাদের যারা এদুজন ও তাদের পিতা মাতাদের সাথে শত্রুতা করবে।
[সুত্রঃ ভিজেগীহয়ে পয়গাম্বার আযম (ﷺ) আল খাসায়েসুন নাবুওয়াহ) অনুবাদঃ মোঃ শহীদুল হক]
❏ ২০. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ
أَنَا وَ عَلِيٌّ مِنْ شَجَرَةٍ وَاحِدَةٍ، وَ النَّاسُ مِنْ أشْجَارٍ شَتَّي.
আঁমি আর আলী (رضي الله عنه) একই বৃক্ষ থেকে, আর অন্যেরা (মানুষ) বিভিন্ন বৃক্ষ থেকে।
তথ্যসূত্রঃ
(ক.) আল মানাকিব-ইবনে মাগাযেলী:৪০০/৫৩
(খ.) কানযুল উম্মালঃ ১১:৬০৮/৩২৯৪৩
(গ.) আল ফেরদৌসঃ ১:৪৪/১০৯
(ঘ.) মাজমাউয যাওয়ায়েদঃ ৯:১০০
❏ ২১. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ
لِكُلِّ نَبِيٍّ وَصِيٌّ وَ وَارِثٌ، وَ إَِنَّ عَلِيّاً وَصِيِّي وَ وَارِثِي.
প্রত্যেক নবীর ওয়াসী এবং উত্তরসূরি থাকে। আর আঁমার ওয়াসী এবং উত্তরসূরি হলো আলী (رضي الله عنه)।
তথ্যসূত্রঃ
(ক.) আর রিয়াদুন নাদরাহঃ ৩:১৩৮
(খ.) আল ফেরদৌসঃ ৩:৩৩৬/৫০০৯
(গ.) ইমাম আলী (رضي الله عنه)-ইবনে আসাকিরঃ ৩: ৫/১০৩০-১০৩১
❏ ২২. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হযরত ফাতিমাকে বলেনঃ
وَصِيِّي خَيْرُ الْأَوْصِيَاءِ، وَ أَحَبُّهُمْ إِلَي اللهِ عَزَّ وَجَلَّ وَ هُوَ بَعْلُكَ.
ওয়াসিগণের মধ্যে আঁমার ওয়াসীই সর্বোত্তম এবং আল্লাহর নিকটে তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয়তম। আর সে হলো তোমার স্বামী।
তথ্যসূত্রঃ
(ক.) মাজমাউয যাওয়ায়েদঃ ৯:১৬৫
(খ.) যাখায়িরুল উকবাঃ ১৩৬
❏ ২৩. একবার নবীজী (ﷺ) ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইনের পিতা হযরত আলী (رضي الله عنه) কে বললেন, হে আলী (رضي الله عنه), তোমার মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট আছে, যা অন্য কারো মধ্যে নেই, এমনকি আঁমার মধ্যেও নেই। হযরত আলী (رضي الله عنه) বললেন, হে আল্লার রাসুল (ﷺ), এ আঁপনি কি বলছেন! এও কি সম্ভব, আঁপনি হলেন, সাইয়্যেদুল মুরসালীন। “নবীজী (ﷺ) মৃদু হেসে তখন বললেন, তোমার বৈশিষ্টগুলি হচ্ছে যেমন তোমার জন্ম পবিত্র কাবা ঘরের অভ্যন্তরে হয়েছে, আঁমার হয়নি। তোমার শ্বশুর সাইয়্যেদুল মুরসালীন, আঁমার নয়। তোমার শ্বাশুড়ী হযরত খাদীজাতুল কোবরা সিদ্দীকা, আঁমার নয়। তোমার স্ত্রী হলেন জান্নাতের সম্রাজ্ঞী, আঁমার নয়। তোমার দুই পুত্র, ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেন জান্নাতের যুবকদের সর্দার, আঁমার নয়। তাই তুমি কত ভাগ্যবান ও মর্যাদাবান। তবে তোমরা সবাই আঁমার হতে আর আমি তোমাদের থেকে। “
তথ্যসূত্রঃ
(ক.) নবীর (ﷺ) বংশধর (আঞ্জুমানে কাদেরীয়া, চট্রগ্রাম), পৃ-২২।
(খ.) আরজাহুল মাতালেবঃ পৃ-৪১২
(গ.) ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দাতঃ পৃ-৪৬
(ঘ.) শাওয়াহেদুত তানযিলঃ ১ম খন্ড, পৃঃ ৪১৪
(ঙ.) নুরুল আবসারঃ পৃ-১০২
(চ.) আর রিয়াদুন নাদরাহঃ ৩য় খন্ড, পৃঃ ১৭২।
❏ ২৪. হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) সর্বোত্তম বংশের অধিকারী: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন: হে লোকেরা আঁমি কি তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে অবহিত করবো না যারা নানা-নানীর দিক দিয়ে সকলের চেয়ে উত্তম? আঁমি কি তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে বলবো না, যারা চাচা ও ফুফুর দিক দিয়ে সকলের চেয়ে উত্তম? আঁমি কি তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে বলবো না, যারা পিতা-মাতার দিক দিয়ে সকলের চেয়ে উত্তম? তারা হলো, হাসান ও হোসাইন। তাদের নানা আল্লাহর রাসূল, তাদের নানী খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ। তাদের মাতা আল্লাহর রাসূলের কন্যা ফাতিমা। তাদের পিতা আলী ইবনু আবি তালিব। তাদের মামা আল্লাহর রাসূলের পুত্র কাসিম এবং তাদের খালা রাসূলুল্লাহ’র কন্যাগণ যয়নব, রোকেয়া ও উম্মে কুলসুম। তাদের নানা, পিতা, মাতা, চাচা, ফুফু, মামা ও খালা সকলেই জান্নাতে থাকবে এবং এরা দুই জনও থাকবে জান্নাতে।
[তাবরাণি, আল মুজামুল কবিরঃ ৩:৬৬, হা/ নং ২৬৮২, ইবনে আসাকির, তারিখে দামিশ্কিল কবিরঃ ১৩:২২৯, হায়ছমি, মাজমাউজ জাওয়ায়েদঃ ৯:১৮৪]
❏ ড: আল্লামা ইকবাল রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, ‘‘সিরের ইবরাহীম ইসমাঈল বুয়দ ইয়া’নি ইসমাঈল রা তাফসীলে বুয়দ। ’’
অর্থাৎ ইবরাহীম আলায়হিস্ সালাম এবং হযরত ইসমাঈল আলায়হিস্ সালাম-এঁর সেই কোরবানির ঘটনা ছিল এক গূঢ় রহস্য, আর তার প্রাকটিক্যাল নমুনা হলো কারবালার যমীনে ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه)'র শাহাদাত। হুযূর (ﷺ)-এঁর ওফাত শরীফের পর শেরে খোদা হযরত আলী ও নবী দুলালী মা ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এঁর বংশ অব্যাহত থাকে। সেই শাহাদাত সংঘটিত হওয়ার সময় যাকে যবেহ ইসমাঈল প্রতিপাদ্য করা হয়েছে। অর্থাৎ কারবালার ময়দানের ঘটনা নবী করিম (ﷺ)-এঁর পরিবারের পবিত্র রক্তে রঞ্জিত এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
আর আহলে বাইত তথা আউলাদে রাসূলগণকে আল্লাহ্ তা‘আলা যে মর্যাদা দান করেছেন তা সাধারণ মুমিন মুসলমানদের দেয়া হয়নি। কারণ তাঁরা আল্লাহর রাসূলের বংশধর। ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه)কে আল্লাহর রাসূল নিঁজের পুত্রের মত ভালোবাসতেন।
❏ ২৫. হাদীসে পাকে এসেছে- হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাস‘ঊদ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি দেখেছি, নবী করিম (ﷺ) ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইনের হাত ধরে বলেছেন-এঁরা আঁমার সন্তান।
[দায়লামী আল্ ফিরদাউস বিমা’ সূরিল খিতাব- ৪/৩৩৬, হাদীস ৫৯৭৩]
হাসান ও হোসাইন আহলে বাইত:
❏ ২৬. হযরত উম্মে সালামা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম (ﷺ) ফাতিমা, হাসান ও হোসাইনকে একত্রিত করে তাদেরকে স্বীয় চাদরের ভেতরে ঢুকিয়ে বললেন: হে আল্লাহ! এরা আঁমার আহলে বাইত।
তথ্যসূত্রঃ
(ক.) হাকেম, আল মুস্তাদরাকঃ ৩:১৮০, হা/নং ৪৭০৫
(খ.) তাররাণি, আল মুজামুল কবিরঃ
৩:৫৩, হা/নং ২৬৬৩
(গ.) তাবারি, জামেউল কুরআন ফি তাফসিরুল কুরআনঃ ২২:৮
(ঘ.) ইবনে কাসির, তাফসিরুল কুরআনিল আজিমঃ ৪:৪৮৬
❏ ২৭. রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র পালিত হযরত ওমর ইবনে আবু সালাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন হযরত উম্মে সালমা (رضي الله عنه)র ঘরে নবীজির উপর এ আয়াত….নাজিল হলো তখন তিনি ফাতিমা ও হাসনাইন করিমাইনকে ডাকলেন এবং তাদেরকে একটি চাদরের মধ্যে জড়িয়ে নিলেন। হযরত আলী তাঁর পেছনে ছিলেন। তিনি তাকেও চাদরে জড়িয়ে নিলেন। অতঃপর বললেন, হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বাইত। সুতরাং তাদের থেকে সকল প্রকার অপবিত্রতা দূর করো এবং তাদেরকে পূত-পবিত্র করো।
[তিরমিযি, ৫:৩৫১, জামেউল বয়ান, ২২:৮। ]
হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) প্রিয় নবীর বৈশিষ্ট্যসমূহের ওয়ারিছ:
❏ ২৮. হযরত সৈয়দা ফাতিমা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিঁনি স্বীয় পিতা রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র বেসালপূর্ব অসুস্থাবস্থায় হাসান ও হোসাইনকে তার কাছে নিয়ে আসলেন। অতঃপর তিুনি আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এদের দু’জনকে আঁপনার উত্তরাধিকার থেকে কিছু দান করুন। তিঁনি ইরশাদ করেন: হাসান আঁমার ভীতিসঞ্চারক ও নেতৃত্ব এ দুটির ওয়ারিশ; আর হোসাইন আঁমার ধৈর্য ও দানশীলতা এ দুটির ওয়ারিশ।
[আল মুজামুল কবিরঃ ২২:৪২৩, আল আহাদ ওয়াল মাসানিঃ ১:২৯৯]
❏ ২৯. প্রিয় নবী (ﷺ) নিজেই তাঁদের নাম রেখেছেন: হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিঁনি বলেন, যখন হযরত ফাতিমার ঘরে হাসানের জন্ম হলো তখন রাসূলে আকরাম (ﷺ) আগমন করলেন অতঃপর বললেন: আঁমাকে আঁমার সন্তান আঁমাকে দেখাও; তোঁমরা তাঁর কি নাম রেখেছো? আঁমি বললাম, আঁমি তার নাম রেখেছি হারব। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: না; বরং সে হবে হাসান। অতঃপর যখন হোসাইনের জন্ম হলো তখন প্রিয় নবী আগমন করলেন আর বললেন: আঁমাকে আঁমার সন্তান আঁমাকে দেখাও; তোমরা তার কি নাম রেখেছো? আমি বললাম, আমি তার নাম রেখেছি হারব। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: না; বরং সে হবে হোসাইন। অতঃপর তৃতীয় সন্তান জন্মগ্রহণ করলো তখন তখন প্রিয় নবী আগমন করলেন আর বললেন: আমাকে আমার সন্তান আমাকে দেখাও; তোমরা তার কি নাম রেখেছো? আমি বললাম, আমি তার নাম রেখেছি হারব। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: না; বরং তার নাম মুহসিন। অতঃপর ইরশাদ করলেন: আমি তাদের নাম হারুন আলায়হিস সালামের সন্তান শাব্বার, শাব্বির ও মুশাব্বার-এর নামের ওপর রেখেছি। আরবি ভাষায় এ তিনটি নাম হলো-হাসান, হোসাইন ও মুহসিন।
[হাকেম, আল মুস্তাদরাকঃ ৩:১৮০, হা/নং ৪৭৭৩, আহমদ বিন হাম্বল, আল মুসনাদ, ১:১১৮, হা/নং ৯৩৫]
❏ ৩০. হযরত উম্মুল ফযল বিনতে হারেস (رضي الله عنه) হতে বর্ণীত, একদা তিনি রাসুল ﷺ এঁর নিকট গিয়ে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! ﷺ আজ রাতে আমি একটি খারাপ স্বপ্ন দেখেছি। তিনি বললেন, সে স্বপ্ন টা কি ? উম্মুল ফযল বললেন, আমি দেখেছি, আঁপনার দেহ মোবারক হতে যেন এক টুকরা গোশত কর্তন করা হয়েছে এবং উহা আমার কোলে রাখা হয়েছে। তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ তুমি খুব উত্তম এবং চমৎকার স্বপ্নই দেখেছ। ইন্ শা আল্লাহ্ আঁমার কন্যা ফাতেমা একটি ছেলে সন্তান প্রসব করবে, যা তোমার কোলেই রাখা হবে। সুতরাং কিছুদিন পর ফাতেমার গর্ভে হোসাইন (আঃ) এঁর জন্ম গ্রহন করলেন এবং তাকে আমার কোলেই রাখা হলো, যেমনটি রাসুল ﷺ বলেছিলেন।
[মেশকাত, হাদিস নং ৫৯২০]
হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) জান্নাতি নাম সমূহের দু’টি নাম:
❏ ৩১. হযরত ইমরান বিন সুলাইমান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাসান ও হোসাইন জান্নাতিদের নামসমূহের দুটি নাম। যে দুটি নাম জাহেলি যুগে কারো নাম হিসেবে রাখা হয় নি।
[ইবনে হাজর মক্কি, আস সাওয়ায়েকুল মুহরাকাঃ ১৯২, ইবনে আসির, উসদুল গাবা ফি মারিফাতিস সাহাবাঃ ২: ২৫]
❏ ৩২. নবীজি হাসান ও হোসাইনের কানে আযান দিয়েছেন: হযরত আবু রাফে (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন হাসান ও হোসাইন জম্মগ্রহণ করলেন তখন রাসূলে আকরাম (ﷺ) স্বয়ং তাদের উভয়ের কানে আযান দিয়েছেন।
[তাবরানী, আল মুজামুল কবির-১:৩১৫, হা/নং ৯৩১, হায়ছমি, মাজমাউজ জাওয়ায়েদঃ ৪:৬০]
❏ ৩৩. প্রিয় নবীজি (ﷺ) হাসান ও হোসাইনের (رضي الله عنه) আকিকা করেছেন: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম (ﷺ) হাসান ও হোসাইনের পক্ষ থেকে আকিকার মধ্যে প্রত্যেকের জন্য দুটি করে দুম্বা যবেহ করেছেন।
[নাসাই, হা/নং ৪২১৯, শরহে মুয়াত্তা:৩:১৩০]
❏ ৩৪. হাসান ও হোসাইন প্রিয় নবী (ﷺ) এঁর সন্তান: হযরত ফাতিমা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম (ﷺ) আঁমার ঘরে আগমন করলেন আর বললেন, আমার সন্তানরা কোথায়? আমি বললাম, আলী তাদেরকে সাথে নিয়ে গেছেন। নবীজি তাদের সন্ধানে বের হলেন। আর তাদেরকে পানি পান করার একটি স্থানে খেলারত অবস্থায় পেলেন। আর তাদের সম্মুখে কিছু অবশিষ্ট খেজুর দেখতে পেলেন। অতঃপর তিঁনি বললেন: আলী খেয়াল রেখো! আঁমার সন্তানদেরকে গরম শুরু হওয়ার আগেই ফিরিয়ে নিয়ে এসো।
[হাকেম, আল মুস্তাদরাকঃ ৩:১৮০, হা/নং ৪৭৭৪, দুলাবি, আয যুররিয়্যাতুত তাহিরা: ১:১০৪, হা/নং ১৯৩]
❏ ৩৫. আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল আঁপনার আহলে বায়েত (পরিবারের) এর মধ্যে আঁপনার নিকট সবচেয়ে প্রিয় কে? তিনি বলেন: হাসান ও হুসাইন। আনাস (رضي الله عنه) বলেন : তিনি ফাতিমা (رضي الله عنه) কে বলতেন আঁমার দু’সন্তানকে ডাক। এরপর তিনি তাঁদের উভয়কে নাকে শুকতেন ও বুকে চেপে ধরতেন।
[তিরমিজি শরীফ, ষষ্ঠ খণ্ড, হাদিস নং ৩৭৭২]