১০ই মুহাররাম, ১৪৪৩ হিজরি
শুক্রবার
✍️:Raffehaan

কারবালার ঘটনা স্মরণে আসলে আমার কেনো জানি উনার কথা বেশি স্মরণে আসে।সব আওলাদে রসুল ﷺ এর শাহাদাত অবশ্যই আমার মাথার উপরে স্থাপিত,হযরত হুসাইন عليه السلام সহ উনার বাহাত্তর জন সবার!কিন্তু আমার উপর বিশেষ একজন ব্যক্তির প্রভাব/তাছির কেনো জানি বেশি কাজ করে!

তাবুতে হযরত সাকিনা এবং হযরত আলী আসগার মাসুমে কারবালা ( সিবতুন্নাবিয়্যী صلوات الله عليه وآله عليهم السلام ) তৃষাতুর কন্ঠে আর্তনাদ করছিলেন, পানির জন্য।কারবালা এমন পরীক্ষার ভূমি,যার ওপর বা যার সমান কখনো কাউকে যাচাই করা হয়নি এবং হবেও না।হযরত কাসিম,জাফর, আব্দুল্লাহ প্রমুখ সবাই একে একে ’কাউসার' পান করে ফেলেছেন ইতোমধ্যে।তাবুতে মাত্র তিন 'শের' বাকী।'শের' নয় বরং একেকজন যেনো 'হায়দারে কাররার'/উপর্যুপরি আক্রমণকারী সিংহ!ইমাম পাক হুসাইন,উনার পুত্র ইমাম আলী আল-আকবার এবং তিনি!

হযরত আব্বাস ইবনে আলী রাঃ এর যিকর করছিলাম।সেই আব্বাস আলাম-বারদারে কারবালা যিনি 'ওয়াফাদারি'/আস্থার এবং নিষ্ঠার সর্বোচ্চ পরিচয় দিয়েছিলেন।'উমদাতুল মাত্বালিব ফি আনসাবে আলে আবি ত্বালিব' গ্রন্থে উল্লেখ আছে যখন কারবালা দিবসের যুদ্ধ আরম্ভ হলো,একরাতে মওলা হুসাইন عليه السلام এর হত্যাকারী,শিমার বিন যিলজুওশিন ইমাম ঘাটিতে চুপে চুপে আসে। তার সাথে আব্বাস রাঃ এর মাতার দিক দিয়ে কোনোভাবে আত্মীয় ছিলো। সে বললো,❝তোমার এবং তোমার ভাইদের [মুহাম্মাদ,আবুবকর,উমর ও উসমান ইবনে আলী রাঃ ] জন্য যিয়াদের কাছ থেকে নিরাপত্তাপত্র নিয়ে এসেছি।তোমরা কারবালা ছেড়ে পালিয়ে যাও,পত্রটি সাথে রাখো।❞তখন ইমাম আব্বাস সাক্বী বললেন,
ما جئت به أنترك سيدنا وأخانا ونخرج إلى أمانك؟.
—❝তুমি কি সৈয়্যদুনা মাওলা হুসাইন পাক এবং অন্যান্যদের জন্যেও আমান/নিরাপত্তা নিয়ে এসেছো?❞

শিমার না বোধক উত্তর দিলে হযরত আব্বাস তাকে দূর হয়ে যেতে বললেন।

➤নামঃ আব্বাস ইবনে আলী ইবনে আবি ত্বালিব
➤কুনিয়াত: আবুল ফদ্বল,আবুল কাসিম
➤সম্মানিত পিতাঃ হযরত আলী আলাইহিস
➤সম্মানিত মাতাঃ ফাতেমা উম্মুল বানিন ফাতিমা বিনতে হেযাম আলা কুল্লাবিয়্যাহ
➤জন্মঃ ৪ঠা শাবান, ২৬ হিজরী
➤শাহাদাতঃ ১০ই মহররম,৬১ হিজরী
উপাধিঃ
★আলাম-এ-বরদার-এ-দাস্ত-এ-কারবালা
বা,কারবালার নিশান বরদার/নিশানধারী/পতাকাধারী
★সাক্বিয়ে কারবালা বা,কারবালার পানি ব্যবস্থাকারী.
(ইমাম ত্বাবারী,তারিখে ত্বাবারী,৫/৪১২-৪১৩)
➤বৈমাত্রের ভাইঃ ইমাম হাসনাইন কারীমাইন رضي الله تعالى عنهم

তো শিশুদের ক্রন্দন আর সহ্য না হলে উনি মওলা হোসাইনের নিকট অনুমতি চান।এবং সাথে সাথেই বীরকেশরীর ন্যায় একটি মশক(পানি নেয়ার জন্য চামড়ার থলে) নিয়ে অগ্রসর হন।অনন্য একজন অশ্বারোহীর ন্যায় চলতে চলতে শত্রুর ব্যূহ একা এমন ভাবে ভেদকরতে লাগলেন যেরকম হীরকের ধারে কাঁচ দ্বিখন্ডিত হয়ে যায়।হযরত আব্বাস আলাম-বরদার একেবারে ফুরাতের কাছে পৌছেঁ যান এবং ঘোড়াসহ পানিতে নেমে যান।বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ আছে তিনি অঞ্জলি ভরে পানি নিয়ে মুখ পর্যন্ত তুলে নেন।এমন সময় শিবিরের শিশুদের কথা স্মরণে আসে এবং পানি ফেলে দেন।তার পরিবর্তে মশকভর্তি করেন।বাম হাতে মশক নিয়ে ফেরত আসার সময় শত্রুসৈন্য তাকে ঘিরে ধরে।উনি বাম হাতে মশক এবং অন্যহাতে তরবারি নিয়ে মুকাবেলা করতে করতে এগুতে থাকেন। হঠাৎ 'যারারা' নামক জাহান্নামী তার বাম হাত কেটে দেয়।তখন তিনি মশক ডান হাতে ধারণ করেন,তরবারি ফেলে দেন।এরপর 'নাফেল বিন আরযাক' নামক আরেক নাপাকী উনার ডান হাত কেটে দেয়।তখন উনি দাঁত দিয়ে মশকটি কামড়ে প্রাণপনে অশ্বচালনা করতে থাকেন।আরেক ব্যক্তি বড় একটি হাতুড়ি দিয়ে উনার মাথায় আঘাত করলে।উনি ঘোড়া হতে পড়ে যান।এমন সময় আর্তনাদ করে উঠেন,❝ইয়া মাওলা!হে আমার ভাই,আমাকে ধরুন।❞ এর আগেই শত্রুর তীর উনার বুকসমেত মশকটি ছিদ্র করে দেয়।সব পানি মাটিরে গড়িয়ে যায়।
ইমাম হুসাইন عليه السلام বিদ্যুৎবেগে এগিয়ে এলে উনার কাছে আসলেন,বললেন,
الآن انكسر ظهري
—❝হায়!আমার পিঠ ভেঙ্গে গেলো!❞

উনার মাজার কারবালা শরীফে ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম এর মাজার হতে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে।মূল কবর শরিফটি মাটি হতে  কিছুটা নিচে অবস্থিত,যার চারপাশে প্রায় ১৪০০ বছর জুড়ে একটি পানির নহর জারি হয়, যা আজো বিদ্যমান।এ নহরের পানিগুলো প্রবাহমান এবং স্বচ্ছ।বিশেষ পদ্ধতিতে কেউ কেউ তাবারুক হিসেবেও পান করে থাকে।
Top