###কুরবানীর দিন সহ প্রতিদিন রান্নাঘরে মহিলারা আমলটি করুন আর যাদুকরি রেজাল্ট দেখুন###
========================================
ইমাম শাফঈ (রহঃ) কে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) দাওয়াত দিলেন, ইমাম আহমদ মেয়েদেরকে ডেকে বললেন আমার উস্তাদ আসবে, উনাকে দাওয়াত দিয়েছি, উনার ২টি কোয়ালিটি (১) তাহাজ্জুদ গুজার (২) খাবার খুবই অল্প খান।
আজকাল আমরা কাউকে দাওয়াত দিলে মেহমানের কি কোয়ালিটি বলি? উনি খাবার একটু বেশী খান।
আর হাদীস কি বলে? পেট ভরে খাওয়া ইসলাম সমর্থন করে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যে ব্যক্তি পেট ভরে খাবার খায় তার ঐ পেট (আল্লাহর কাছে) একটি নিকৃষ্ট পাত্র।
(তিরমিযী)
সুন্নাত হল পাকস্থলির তিন ভাগের একভাগ খাবার খাবে, আর তিনভাগের একভাগ পানি পান করবে। বাকী এক তৃতীয়াংশ শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য খালী রেখে দিবে।
[তিরমিযী]
অনেকে আছে খাবার খাওয়ার সময় বাদশা বনে যায়, বলে পেট ভর্তি করে খাও, পেটের তিন অংশ খাবার দিয়ে ভর্তি করে ফেল পানি ডানে বামে এসেই যাবে। এভাবে খাওয়ার বাদশা হবেন না।
বেশী খাবার মানুষকে অসুস্থ বানিয়ে দেয়। বেশী খেতে পারাটা গুন নয়। যদি আল্লাহ মানুষকে খাওয়ার জন্য পয়দা করত তাহলে গাভির মত একটা পেটও দিত। কিন্তু আল্লাহ আমাদেরকে গাভির মত পেট দেননি। সুতরাং যা আল্লাহ লাগাননি কেহ যদি তার পেটকে খেয়ে খেয়ে গাভির পেটের মত বানাতে চায়, সেটা মানুষের গুণ হতে পারে না বরং এটা মানুষের দোষ।
যাক - ইমাম আহমদের ঘরে ইমাম শাফেয়ী এসে গেলেন, আরবীদের অভ্যাস মেহমান আসলে উনার সামনে ঘরে যত প্রকার খাবার সব পেশ করা, উনার সামনেও সব খাবার পেশ করা হল, আরবের লোকেরা মেহমানদারী করাকে সৌভাগ্য মনে করত।
আর আমাদের অভ্যাস হল মেহমান আসলে আমরা বিরক্ত হই, চেহেরা ফিরিয়ে নিই। ইমাম শাফেয়ী খেতে বসে নিয়ম থেকে বেশী খেয়ে ফেললেন। আর সকালে দেখলেন তাহাজ্জুদের জন্য উঠলে অজু করার জন্য যে পানি রেখেছিল সেটাও তেমনি পরে রইল। ব্যবহার করেননি। মেয়েরা বাবাকে প্রশ্ন করল আপনি বলেছেন আপনার উস্তাদ তাহাজ্জুদ গুজার, খাবার কম খায়, এখনতো দেখছি পুরাটা উল্টা।
মেয়েদের প্রশ্ন শুনে পিতা পেরেশান, তিনি যখন উস্তাদের কাছে গেলেন উস্তাদ ইমাম শাফেয়ী সাগরিদের চেহেরা দেখে বুঝে নিলেন যে সাগরিদ কোন পেরেশানিতে আছে, সাগরিদকে প্রশ্ন করল তোমার কি পেরেশানি? সাগরিদ বলল আমি ১টি প্রশ্ন করতে চাই, বললেন কি প্রশ্ন? তখন ইমাম আহমদ সব কথা খুলে বললেন,
এবার ইমাম শাফেয়ী বললেন আমাকে বল গতরাতে খাবার যে দিয়েছ তা কে রান্না করেছে? ইমাম আহমদ বললেন আমার মেয়ে,
সেকি হাফেজে কুরআন? বলল জি তাঁর রান্নার নিয়ম হল সে যখন রান্না করে অজুর সাথে কুরআন পাঠ শুরু করে রান্না শেষ হতে হতে ৫ পারা পড়ে নেয়।
ইমাম শাফেয়ী বললেন- সে জন্য সে খাবারে এতই বরকত আমি পেয়েছি, আমি প্রথমে এক লোকমা নিলাম এতই মজা লাগল আরো ১ লোকমা নিলাম আরো মজা লাগল, এভাবে করতে করতে আমি আমার অভ্যাস থেকে কিছু বেশী খেয়ে নিলাম।
আমি এশার নামাজ পড়ে শুয়ে গেলাম, আর (এয়া আবা উমাইর, মা ফাআলান নুগাইর) এই হাদীসটির উপর চিন্তা করতে লাগলাম আর আল্লাহ আমার জেহেনেও এত বরকত দান করলেন যে আমি ৯০ টি মাসায়ালা এই একটি হাদীস থেকেই শুয়ে শুয়ে সমাধান করে ফেললাম। সারা রাত ঘুমাইনি, ফলে অজু ভঙ্গ হয়নি তাই আমি তাহাজ্জুদের জন্য যখন উঠি তখন অজুর প্রয়োজনও হয়নি।
হে প্রিয় বোনেরা-
এখন চিন্তা করুন, আপনিও যদি অজুর সাথে কুরআন পড়তে পড়তে, কুরআনের যতটুকু আপনার মুখস্থ আছে তা পড়তে পড়তে, আল্লাহর জিকির সমুহ করতে করতে কিংবা দরুদ শরীফ পাঠ করতে করতে রান্না করেন। আর যদি নাপাক হয়ে থাকেন, তাহলে দরুদ শরীফ পড়তে পড়তে রান্না করেন। তাহলে আপনার স্বামী ছেলে মেয়েরাও এবাদতে আগ্রহি হবে, তাঁদের জ্ঞানে বরকত হবে, শুধু তারা নয় যারাই আপনার রান্না খাবে তাঁদেরও শারিরিক ও মানসিক প্রশান্তি বজায় থাকবে, ঘরে বরকত থাকবে।
আজকাল যারা রিমোট হাতে নিয়ে কিংবা মিউজিক শুনে শুনে রান্না করেন সে রান্নাতে কিভাবে বরকত আসবে? আরো আফসোসের বিষয় আজকাল তালাক হওয়াটা অতি মামুলি একটা বিষয় হয়ে গেছে, এর একটা কারন এটাও যে বরকত হিন খাবার।
মনে রাখবেন বাজারের খাবার খাওয়া জায়েজ, এতে কোন সন্দেহ নাই, কিন্তু সালফে সালেহিনগন বলেন যে ঘরে খাবার রান্না হয় সে ঘরে ঝগড়া হয়না, আজকাল ঘরে রান্না না হলে স্বামী বলে সমস্যা কি? আমি হোটেল গিয়ে খেয়ে নিব, এই যে অভ্যাস হোটেলে গিয়ে খেয়ে নিব এর ফলে স্বামীর কাছে স্ত্রীর গুরুত্ব কমেন যায়। সে মনে মনে চিন্তা করে আমার খাবারেরতো সমস্যা নাই আমি হোটেল থেকে খেতে পারি। এটা সংসার ভাঙ্গতে ভুমিকা রাখে। তাই স্ত্রীদের যখন তখন বাহিরের খাবার বাজারের খাবার ঘরে ঢুকতে দেয়া উচিত নয়। আগেকার মহিলারা ঘরের লোকদের রান্না করে খাওয়ানোকে এইজন্য সৌভাগ্য মনে করত,
কারন তাদের বিশ্বাস সারাদিন কষ্ট করে যে রান্না করেছে সে রান্না খেয়ে শক্তি সঞ্চয় করে তাঁর ঘরের লোকগুলি যে নামাজ পড়ে এবাদত করে জিকির করে কুরান পড়ে এসব কিছুর ছাওয়াবের একাংশ রান্নাকারীর আমলনামায় যোগ হয়।
রাসুলুল্লাহ (দঃ) যখন গারে হেরায় ধ্যান মগ্ন থাকতেন, যে পাহাড়ে উঠা কতযে কষ্টকর শুধু উঠতেই লাগে ২ /৩ ঘন্টা, কিন্তু প্রতিদিন হযরত খদিজা (রাঃ) নিজ স্বামীর জন্য রান্না করে নিয়ে যেতেন, একদিন যখন প্রচন্ড গরমে খাবার নিয়ে যাচ্ছেন হযরত জিবরাইল এসে বলেন (এয়া রাসুলাল্লাহ ইন্না হাজিহি খদিজা, বিয়াদিহা ইনাউন ফিহি তাআমুন আউ শারাবুন আউ ইজামুন) খদিজা আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসছেন, পাহাড়ে উঠলে তাঁর মাথা ব্যথাও করবে, মাথা চক্করও দিবে। (ফাইজা আতাতকা) যখন আসবে (ফাকরা আলাইহাস সালাম মিন রাব্বিহা) তাঁকে বলবেন খদিজা তোমার রব তোমাকে সালাম পাঠিয়েছেন। (ওয়া মিন্নি) আমি ফেরেশতাদের সরদার আমার পক্ষ থেকেও খদিজাকে সালাম বলবেন (ওয়া বাশ্বিরহা বি বাইতিন ফিল জান্নাহ) আর তাকে এই সু সংবাদও বলে দিবেন যে জান্নাতে আল্লাহ তার জন্য ঘর বানিয়ে দিয়েছেন। যেখানে কখনো ক্লান্তিও আসবে না মাথাও ব্যথা করবে না।
অতএব সম্পূণ আলোচনার সারসংক্ষেপ হল
কম খাবেন, কম খাওয়া সুন্নত। নারীরা অজুর সাথে বিসমিল্লাহ বলে রান্নার কাজ শুরু করবেন, রান্না করার সময় গান বাজনা থেকে বেঁচে থাকবেন, কুরআন তেলাওয়াত ও দোয়া দরুদ ও জিকির করবেন, হোটেলের খাবারের উপর নির্ভরতা কমিয়ে নিবেন, নিজে রান্না করে খাওয়ানোটাকে সৌভাগ্য মনে করবেন, এই রান্না খেয়ে আপনার ঘরের মানুষ গুলি যত এবাদত করবে তার নেকির একটি ভাগও আপনি পাবেন। এ রান্না খেলে ঘরে ঝগড়া হবে না, এবাদতে মজা আসবে, সন্তানদের পড়ালেখায় অগ্রগতি হবে, আল্লাহর খাস রহমত নেমে আসবে এবং বরকত হবে।