শুধুই নিজের জন্য
মেয়েদের জীবনে বন্ধু শব্দটা অনেকটা মরীচিকার মতো। স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদের সাথে প্রতিদিন দেখা হয়, যাদের সাথে মনের সব কথা না বলা পর্যন্ত ভাত হজম হয় না বড় হয়ে নিজ নিজ সংসারে ঢুকে যাওয়ার পর মাস, বছর গড়িয়ে গেলেও অনেক সময় আর তাদের সাথেই দেখা করার ফুরসত হয় না। এখনকার অনলাইনের যুগে অবশ্য একেবারে হারিয়ে যাওয়া হয় না, ইচ্ছা থাকলে যোগাযোগ রাখা যায় ঠিকই। তারপরও সেটা মানসিক দূরত্ব ঘোচানোর জন্য যথেষ্ট না। যে বন্ধুরা একসময় জীবনের অক্সিজেনের মতো ছিল তারাই একসময় একেকটা ‘নাম’ হয়ে থাকে শুধু।
মেয়েরা তখন নিজেকে ব্যস্ত রাখতে শুরু করে প্রথমে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ি নিয়ে, কিছুদিন পর থেকে এসবের সাথে যোগ হয় সন্তান-সন্ততি। এরপর স্বামী একসময় আয়-রোজগারের চিন্তায় ব্যস্ত হয়ে পরে। অবসর নেয়ার পর যখন সময় হয় ততদিনে শরীরে বাসা বাঁধে নানা রোগ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্ত্রীকে একা করে স্বামীই আগে চলে যান। সন্তানরা? ২৪/৭ যে মাকে ছাড়া একটা দুধের শিশু চলে না সেই মাকে দেয়ার মতো এক ঘণ্টা সময় বের করতে না পারার মতো বয়সে চলে যেতে সেই সন্তানদেরও বেশিদিন লাগে না। সবাই নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে যাবে। আর শ্বশুরবাড়ির লোকজন? সেটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লৌকিকতা পেরিয়ে মনের গভীরে স্থান করে নেয় না।
আপনার রান্নার শখ থাকতে পারে, কিন্তু একটা বয়সের পর আয়োজন করে রান্না করতে আর শরীরে কুলাবে না। আপনার সাজগোজের প্রতি আকর্ষণ থাকতে পারে। একটা সময় পর এসবও অর্থহীন হয়ে পড়বে। আপনার শৌখিন জিনিস ভালো লাগে। অনলাইন শপগুলোতে ঘুরে বেড়ান সারাদিন। এসবও একদিন মূল্যহীন হয়ে যাবে। থাকবে শুধু আপনার তিলে তিলে গড়ে তোলা একটা সুঅভ্যাস।
ফজরের একটু আগে উঠলেন, দু’আ করার আদব বজায় রেখে আল্লাহর সুন্দর নামগুলো ধরে ডেকে অন্তর নিঙড়ে উনার সাথে কথা বললেন। যে প্রশান্তি অনুভব করবেন তা দুনিয়াবী জিনিস থেকে কখনো পাবেন না। সকালের নাস্তার পর্ব শেষ করে একটু অবসর হলে দুহার সালাত পড়লেন তারপর কিছু মাসনূন দু’আ পড়তে পারেন। মাসনূন দু’আগুলো আল্লাহর রাসূল ﷺ এমনভাবে বলেছেন যে পড়লে আপনার মনে হবে আপনারই মনের কথা।
আপনার সময়, মেধা, শ্রম যেটা পারেন ভালো কিছু করার জন্য দিন। এবং সেটা অভ্যাসে পরিণত করুন। জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ করে নিন সেটাকে। ব্যস্ততার অজুহাত দেবেন না। কারণ ব্যস্ততাও একসময় আপনাকে একা করে দিয়ে চলে যাবে। সেই সাথে দুনিয়াবী কাজগুলোকে, অর্থ্যাৎ আয়-রোজগার করা, সন্তান প্রতিপালন করা ইত্যাদিকে আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য করতে চেষ্টা করুন। দেখবেন, একঘেমেয়ি মাথাচাড়া দিয়ে উঠলেও আপনাকে তা গ্রাস করতে পারবে না।
আজ যা আমাদের বলে জানি তার সবকিছুই কোন না কোন সময় আমাদের ছেড়ে চলে যাবে। থাকবে শুধু সুঅভ্যাস গড়ে তোলার জন্য আমার আজকে নেয়া একটা ভালো উদ্যোগ। কেননা এই বরকতের মাস থেকেই এই উদ্যোগটা নেই।