রাতে দেরি করে ঘুমানো। এই অভ্যাস টা মোটামুটি আমাদের সকলের মধ্যেই আছে।
বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে এটা আমাদের নিত্যদিনকার শিডিউলে পরিণত হয়েছে। তবে আমাদের জানা উচিত বেশি রাত জাগা এবং সকালে দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা আমাদের জন্য ক্ষতিকর।
আল্লাহ তায়ালা রাতকে বিশ্রামের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন— 'আমি তোমাদের বিশ্রামের জন্য নিদ্রা দিয়েছি, তোমাদের জন্য রাত্রিকে করেছি আবরণস্বরূপ আর দিনকে বানিয়েছি তোমাদের কাজের জন্য।' [১]
সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে কোষগুলো পুনর্গঠন করতে ঘুমের বিকল্প নেই। রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম— এশার নামাজ এক-তৃতীয়াংশ রাত পরিমাণ দেরি করে পড়া পছন্দ করতেন, আর এশার আগে ঘুমানো এবং এশার পর না ঘুমিয়ে গল্পগুজব করা অপছন্দ করতেন। [২] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকেও এশার পর পর ঘুমিয়ে পরার আদেশ দিতেন।
তদ্রূপ তিনি আমাদেরকে ভোরবেলায় ঘুম থেকে ওঠতে অনুপ্রাণিত করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম — ভোরবেলার কাজের জন্য বরকতের দোয়া করেছেন।
প্রিয় আক্বা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দোয়া করেছেন, 'হে আল্লাহ! আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরুকে বরকতময় করুন।' এ জন্যই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো যুদ্ধ অভিযানে বাহিনী পাঠানোর সময় দিনের শুরুতে পাঠাতেন। হাদীসটির বর্ণনাকারী বলেন— সখর রাযিআল্লাহু আনহুও তার ব্যবসায়ী কার্যক্রম ভোরবেলা শুরু করতেন। এতে তাঁর ব্যবসায় অনেক উন্নতি হয়। তিনি সীমাহীন প্রাচুর্য লাভ করেন। [৩]
সকালে দেরিতে উঠা রিযিকে বরকত শূণ্যতা আর সফলতা থেকে বঞ্চিত হওয়ার একটি বড় কারণ। সফল ব্যক্তিদের অভ্যাসগুলোর মধ্যে ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠাও অন্যতম একটি অভ্যাস। আর আমার রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই এর উত্তম নমুনা। তাঁর জীবনই আমাদের জন্য রোল মডেল।
একদিন ফাতেমা রাযিআল্লাহু আনহা ভোরবেলায় ঘুমিয়ে ছিলেন। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওনাকে দেখে পা মোবারক দিয়ে নাড়া দিলেন। বললেন— মা ওঠো! তোমার রবের দেয়া রিযক গ্রহণ করো। অলসদের দলভুক্ত হয়ো না। কেননা— রব তায়ালা সুবহে সাদিক এর সময় থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত বান্দাদের মধ্যে রিযক বন্টন করেন। [৪]
আমার রাসূল যে কাজ গুলোর প্রতি উৎসাহীত করেছেন, নিঃসন্দেহে সেগুলোর মধ্যে কল্যাণ নিহিত। আর নিষিদ্ধ কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে— ক্ষতি। রাতে দেরি করে ঘুমানো এবং সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠার— বিষয়ে বিজ্ঞানও নানান রকম তথ্য দিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যান্সারবিষয়ক গবেষণা বিভাগ ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সারের তথ্য মতে, যখন সূর্যের আলো থাকে না তখন শরীরকে কাজ করতে বাধ্য করা বা জাগিয়ে রাখা শরীরে মেলাটনিন হরমোন তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে।
আর এই মেলাটনিনই মানুষের দেহে টিউমারের বৃদ্ধিকে রোধ করে। ফলে তাদের ধারণা, রাত জাগা মানুষদের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। যুক্তরাজ্যের এক দল গবেষকের মতে, যারা দেরিতে ঘুমায় ও দেরিতে ঘুম থেকে ওঠে, তাদের অকাল মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়। যুক্তরাজ্যের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. পিরেঞ্জ লেভি বলেন— রাত জাগার বদ-অভ্যাস যারা গড়ে তুলেছে, তাদের ৯০ শতাংশই মানসিক রোগের শিকার। ৩০ শতাংশে থাকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। এছাড়া স্নায়বিক সমস্যা থেকে শুরু করে অন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।
তাছাড়া রাতে দেরিতে ঘুমানোর কারণে— খিটখিটে স্বভাব, বিষণ্ণতা, হঠাৎ ভীষণ রেগে যাওয়ার মতো অসুবিধের পাশাপাশি রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, হার্টের সমস্যার মতো গুরুতর শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি থাকে।
সকালে দেরিতে ঘুম থেকে উঠার অপকারিতা সম্পর্কে— যুক্তরাজ্যের সুবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রোনোলজি বিভাগের অধ্যাপক জন রিচার্ডসন বলেন— আমরা দেখেছি, যারা দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে তারা নানা ধরনের মানসিক ও শারীরিক জটিলতায় ভোগে। তাদের গড় আয়ু নিয়মিত সকালে উঠা মানুষের চেয়ে সাড়ে ছয় বছর কম।
খুব ভোরে উঠা মানুষগুলো সবার থেকে আলাদা ও কর্মদক্ষ হয়ে থাকে। গবেষণায় দেখা যায়— যারা খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠে কিংবা রাতে কম ঘুমায়, অন্যদের তুলনায় তাদের আইকিউ ভালো হয়।
টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিক্ষার্থী ভোরবেলায়ই জাগতে পারে, তারা দেরিতে জাগ্রতদের চেয়ে বেশি নম্বর পায়। তাদের জিপিএ অন্যদের তুলনায় বেশি হয়। এই সাফল্যের পেছনে তারা বাড়তি উৎপাদনশীলতা এবং ভালো ঘুম হওয়াকেই কারণ হিসেবে উল্লেখ করে।
যদি উপরোক্ত বদ অভ্যাস গুলো আমাদের মধ্যে পাওয়া যায় তাহলে আসুন আজই পরিবর্তন করি। এবল রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ মতো জীবন পরিচালনা করি।
Reference:
[১] সুরা নাবা, আয়াত: ৯-১১।
[২] সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৯।
[৩] আবু দাউদ, হাদিস: ২৬০৬।
[৪] আত-তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস: ২৬১৬।
[৫] উল্লিখিত বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো গুগল থেকে সংগৃহীত।