রঊ'ফুর রহীম (رَءُوفٌ رَّحِيمٌ) ﷺ
----
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ আমার বহু নাম রয়েছে। আমি মুহাম্মাদ (প্রশংসিত), আমি আহমাদ (অত্যাধিক প্রশংসাকারী), আমি আল-মাহী (বিলুপ্তকারী), এমন ব্যক্তি যে, আমার মাধ্যমে কুফরকে বিলুপ্ত করা হবে। আমি আল-হাশির (একত্রকারী) এমন ব্যক্তি যে, আমার পেছনে লোকদের সমবেত করা হবে। আমি আল-আকিব (সর্বশেষ), আর আল-আকীব ঐ ব্যক্তি, যার পর কোন নাবী নেই এবং আল্লাহ তাঁর নাম রেখেছেন রঊফ ও রহীম (رَءُوفًا رَحِيمًا, করুণাশীল ও অতি দয়ালু)। (সহিহ মুসলিম ৬০০০)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেন,
"অবশ্যই তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য হতেই একজন রাসূল এসেছেন, তোমাদের যে দুঃখ-কষ্ট হয়ে থাকে তা তার জন্য বড়ই বেদনাদায়ক। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি তিনি করুণাশীল ও অতি দয়ালু (رَءُوفٌ رَّحِيمٌ)।" (সূরা তাওবাহ, আয়াত ১২৮)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা সত্ত্বাগতভাবে রউফ এবং রহিম। আর আল্লাহ নবীজিকে 'রউফ' এবং 'রহিম' গুণ দুটি প্রদান করেছেন (যেমনঃ আল্লাহ ক্ষমাশীল, আবার মানুষকেও ক্ষমাশীলতার গুণ দান করেছেন)। সমগ্র সৃষ্টি জগতে নবীজীর মত কোনো রউফ ও রহিম নেই।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ আমার হায়াত তোমাদের জন্য উত্তম বা রহমত। কেননা আমি তোমাদের সাথে কথা বলি তোমরাও আমার সাথে কথা বলতে পারছ। এমনকি আমার ওফাতও তোমাদের জন্য উত্তম বা নেয়ামত। কেননা তোমাদের আমল আমার নিকট পেশ করা হবে এবং আমি তা দেখবো। যদি তোমাদের কোন ভালো আমল দেখি তাহলে আমি আল্লাহর নিকট প্রশংসা করবো, আর তোমাদের মন্দ কাজ দেখলে আল্লাহর কাছে তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবো। (ইমাম বাযযার রহঃ আল-মুসনাদঃ ৫/৩০৮ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ১৯২৫, জালালুদ্দিন সুয়ূতি রহঃ জামিউস সগীরঃ ১/২৮২ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৩৭৭০-৭১, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৪/২৫৭ পৃষ্ঠা,...)
আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলতেনঃ আল্লাহর কসম! যিনি ব্যতীত কোন মাবূদ নেই। আমি ক্ষুধার তাড়নায় উপুড় হয়ে পড়ে থাকতাম। আর কখনও পেটে পাথর বেঁধে রাখতাম। (আবূ হুরাইরা রাঃ বলেন) একদিন আমি (ক্ষুধার যন্ত্রণায় বাধ্য হয়ে) নবী ﷺ ও সাহাবীগণের রাস্তায় বসে থাকলাম। আবূ বকর (রাঃ) যাচ্ছিলেন। আমি কুরআনের একটা আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। আমি তাঁকে প্রশ্ন করলাম এই উদ্দেশে যে, তিনি আমাকে পরিতৃপ্ত করে খাওয়াবেন। কিন্তু তিনি কিছু করলেন না। অতঃপর ‘উমার (রাঃ) যাচ্ছিলেন। আমি তাঁকে কুরআনের একটি আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। আমি প্রশ্ন করলাম এ উদ্দেশে যে, তিনি আমাকে পরিতৃপ্ত করে খাওয়াবেন। কিন্তু তিনি চলে গেলেন। কিছু করলেন না।
(আবূ হুরায়রা রাঃ বলছেন) অতঃপর আবুল কাসিম (বন্টনকারী) ﷺ যাচ্ছিলেন। তিনি ﷺ আমাকে দেখেই মুচকি হাসলেন এবং আমার প্রাণের এবং আমার চেহারার অবস্থা কী তিনি তা অাঁচ করতে পারলেন। (সুবহানাল্লাহ)
[প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আবূ হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ তোমরা কি মনে কর যে, আমার দৃষ্টি (কেবল) ক্বিবলার দিকে? আল্লাহর কসম! আমার নিকট তোমাদের খুশু’ (বিনয়) ও রুকূ’ কিছুই গোপন থাকে না। অবশ্যই আমি আমার পেছন হতেও তোমাদের দেখতে পাই। (সহীহ বুখারী ৪১৮)]
পূর্বের হাদিসে পাকে আসা যাক,
(বুঝে ফেলার পর) অতঃপর বললেন, হে আবূ হির (আবূ হুরাইরা রা.)! (আবূ হুরাইরা রাঃ বলেন) আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! আমি হাযির, তিনি বললেনঃ তুমি আমার সঙ্গে চল। এ বলে তিনি চললেন, আমিও তাঁর অনুসরণ করলাম। তিনি ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন এবং আমাকে প্রবেশের অনুমতি দিলেন। তারপর তিনি ﷺ ঘরে প্রবেশ করে একটি পেয়ালায় কিছু দুধ পেলেন। তিনি ﷺ বললেনঃ এ দুধ কোথা হতে এসেছে? তাঁরা বললেন, এটা আপনাকে অমুক পুরুষ বা অমুক মহিলা হাদিয়া দিয়েছেন। তিনি ﷺ বললেনঃ হে আবূ হির! আমি বললাম, আমি হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! তুমি সুফফাবাসীদের কাছে যাও এবং তাদেরকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো।
রাবী বলেন, সুফফাবাসীরা ছিলেন ইসলামের মেহমান। তাদের ছিল না কোন পরিবার, ছিল না কোন সম্পদ এবং কারো উপর ভরসা করার মত তাদের কেউ ছিল না। যখন তাঁর কাছে কোন সাদকা আসত তখন তিনি ﷺ তা তাদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। তিনি ﷺ এর থেকে কিছুই গ্রহণ করতেন না। আর যখন কোন হাদিয়া আসত, তখন তার কিছু অংশ তাদেরকে দিয়ে দিতেন এবং নিজের জন্য কিছু রাখতেন। এর মধ্যে তাদেরকে শরীক করতেন। এ আদেশ শুনে আমি (আবূ হুরাইরা রাঃ) নিরাশ হয়ে গেলাম। মনে মনে ভাবলাম যে, এ সামান্য দুধ দ্বারা সুফফাবাসীদের কী হবে? এ সামান্য দুধ আমার জন্যই যথেষ্ট হতো। এটা পান করে আমার শরীরে শক্তি আসত।
যখন তাঁরা এসে গেলেন, তখন তিনি আমাকে আদেশ দিলেন, আমিই যেন তা তাঁদেরকে দেই। আর আমার আশা রইল না যে, এ দুধ থেকে আমি কিছু পাব। কিন্তু আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ না মেনে কোন উপায় নেই। তাই তাঁদের কাছে গিয়ে তাঁদেরকে ডেকে আনলাম। তাঁরা এসে ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলে তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন। তাঁরা এসে ঘরে আসন গ্রহণ করলেন। তিনি ﷺ বললেনঃ হে আবূ হির! আমি বললাম, আমি হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! তিনি ﷺ বললেন, তুমি পেয়ালাটি নাও আর তাদেরকে দাও। আমি পেয়ালা নিয়ে একজনকে দিলাম। তিনি তা তৃপ্ত হয়ে পান করে পেয়ালাটি আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। আমি আরেকজনকে পেয়ালাটি দিলাম। তিনিও তৃপ্ত হয়ে পান করে পেয়ালাটি আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। এমন কি আমি এভাবে দিতে দিতে শেষতক নবী ﷺ পর্যন্ত পৌঁছলাম। তাঁরা সবাই তৃপ্ত হলেন।
তারপর নবী ﷺ পেয়ালাটি নিজ হাতে নিয়ে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন। আর বললেনঃ হে আবূ হির! আমি বললাম, আমি হাযির, ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! তিনি ﷺ বললেনঃ এখন তো আমি আছি আর তুমি আছ। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! আপনি ঠিক বলছেন। তিনি ﷺ বললেন, এখন তুমি বস এবং পান কর। তখন আমি বসে পান করলাম। তিনি বললেন, তুমি আরও পান কর। আমি আরও পান করলাম। তিনি আমাকে পান করার নির্দেশ দিতেই থাকলেন। এমন কি আমি বললাম যে, আর না। যে সত্তা আপনাকে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম। আমার পেটে আর জায়গা পাচ্ছি না। তিনি ﷺ বললেন, তাহলে আমাকে দাও। আমি পেয়ালাটি তাঁকে দিলাম। তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন ও বিসমিল্লাহ্ বলে বাকীটুকু পান করলেন। (সহীহ বুখারী ৬৪৫২)