আমিরে মু'য়াবিয়া (রাঃ) এর সমালোচনার জবাব
কৃতঃ ড. সৈয়দ ইরশাদ আহমদ আল বুখারী

রাসুলে কারীম রাউফুর রাহীম ﷺ আমিরে মু'য়াবিয়া (রাঃ) এঁর জন্য দু'আ করেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি তাকে পথপ্রদর্শক ও হেদায়াতপ্রাপ্ত বানাও এবং তার মাধ্যমে (মানুষকে) সৎপথ দেখাও।" (তিরমিজী ৩৮৪২)।

৪১ হিজরিতে ইসলামের পঞ্চম খলিফা, জান্নাতী যুবকদের সর্দার ইমাম হাসান রাঃ যখন ছয় মাস খিলাফতের মসনদে থাকার পর মুসলমানদের মধ্যে বিবাদ সামলানোর জন্য মসনদ ছেড়ে দিয়ে আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ এঁর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন তখনই রাসূলুল্লাহ ﷺ কর্তৃক ভবিষ্যদ্বাণীকৃত খিলাফতের ৩০ বছর পূর্ণ হয় (হায়! আমরা এই মহান খলিফাকে খুব কমই স্মরণ করি, অল্প সংখ্যক মানুষই তাঁকে খলিফাতুল মুসলিমীন হিসেবে চিনি, অথচ অন্যদিকে তিনি পবিত্র আহলে বাইতেরও অন্যতম সদস্য)। দুনিয়া থেকে পর্দা করার পূর্বে আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতায় প্রিয় নবী ﷺ এই ঘটনার কথাও ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছিলেন।

আবূ বাকরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। (তিনি বলেন) আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে মিম্বরের উপর বলতে শুনেছি, ঐ সময় হাসান (রাঃ) তাঁর পার্শ্বে ছিলেন। তিনি একবার উপস্থিত লোকদের দিকে আবার হাসান (রাঃ)-এঁর দিকে তাকালেন এবং বললেন, আমার এ সন্তান (নাতি) হচ্ছে সাইয়্যিদ (সর্দার)। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর মাধ্যমে বিবাদমান দু’দল মুসলমানের মধ্যে সমঝোতা করিয়ে দিবেন। (সহীহ বুখারী ৩৭৪৬, ৩৬২৯, ২৭০৪)

স্বয়ং নবীজি ﷺ যাঁর জন্য দু'আ করেছেন, যাঁর ঈমানের সার্টিফিকেট দিয়েছেন, ইমাম হাসান রাঃ যার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন, ঐ পথভ্রষ্টরা আহলে বাইতপ্রেমিক দাবী করেও সেই আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ কে মুনাফিক-কাফের ডাকে, গালমন্দ করে (নাউজুবিল্লাহ)। ইমাম হাসান আঃ কি তাহলে একজন অযোগ্য ব্যক্তির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন!! তাহলে এটা তো ইমাম হাসান রাঃ এঁর নামে অপবাদও হয়ে যাবে। আমার আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেন,

"ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা (কোন বিষয়ে) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে অগ্রণী হয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শুনেন ও জানেন।" (সূরা হুজরাতঃ ১)

ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ কে ফকীহ্ হিসেবে সম্বোধন করেছেন এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর সাহচর্য লাভ করার কারণে উনাকে কিছু বলতেও নিষেধ করেছেন। (সহিহ বুখারী ৩৭৬৪, ৩৭৬৫)

হ্যা, এটাও সত্য যে, ইয়াজিদ একজন লম্পট, জালেম, ফাসেক, মদ্যপ ছিল। এমনকি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহঃ ইয়াজিদকে কাফের বলে ফতেয়া দিয়েছেন। কিন্তু কোন ঈমাম আমিরে মুয়াবিয়া রাঃ কে গালমন্দ করেছেন!! হাদিস গ্রন্থগুলোতে উনার নামের পরে কি রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ব্যবহৃত হয়নি!! এই শিয়াদের বই পড়া নব্য ফিৎনাবাজরা কতবড় মুজতাহিদ হয়ে গেছে যে, উনাকে কাফের মুনাফিক ফতোয়া দিচ্ছেন!!

অবশ্য এই ব্যাপারে ফয়সালা তো জান্নাতী যুবকদের সর্দারদ্বয়ও করে গেছেন। পঞ্চম খলিফা ইমাম হাসান আঃ, আল্লাহর বাণীঃ "আর যদি মুমিনদের দু’দল লড়াইয়ে লিপ্ত হয়, তাহলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও" এর উপর আমল করতঃ আমিরে মুয়াবিয়া রাঃ কে যোগ্য মুমিন মনে করেই তো উনার কাঁধে শাসনভার তুলে দিতে রাজি হয়েছিলেন। আর অন্যদিকে ইমাম হুসাইন আঃ, আল্লাহর বাণীঃ "আর তোমরা জালিমদের/ সীমালঙ্ঘন-কারীদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না" এর উপর আমল করতঃ পাপিষ্ঠ জালিম ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত নেননি কারণ সে ছিল অযোগ্য।

ঈমামে আহলে সুন্নাত আলা হাযরাত রাঃ বলেন: মাওলা আলী রাঃ আমাদের মাথার তাজ, আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ সহ সকল সাহাবায়ে কেরামই আমাদের সরদার। আ'লা হাযরাত রাঃ বলেছেনঃ আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী জাহান্নামের কুকুর।

রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন -“আমার কোন সাহাবীকে মন্দ বলনা। তোমাদের কেউ যদি উহুদ পর্বততূল্য স্বর্ণও দান করে, তবুও তাঁদের সোয়া সের যব দান করার সমানও হতে পারেনা; বরং এর অর্ধেকেরও বরাবর হতে পারেনা।” [বুখারীঃ১ম খন্ড-৫১৮ পৃষ্ঠা, তিরমিযীঃ২য় খন্ড-২২৫ পৃষ্ঠা]

রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেনঃ “আমার সাহাবীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর, তাঁদেরকে ভৎর্সনা ও বিদ্রূপের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত কর না। যে আমার সাহাবীকে মোহাব্বত করলো, সে আমার মোহাব্বতে তাঁদেরকে মোহাব্বত করল এবং যে তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করল, সে আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণের কারনে তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করল”। [তিরমিযি শরীফ, ২য়-২২৫]

Har Sahabiye Nabi Jannati Jannati
Har Sahabiye Nabi Jannati Jannati
Aamire Muabiya Ra Jannati Jannati
Abu Sufian Ra Jannati Jannati
Top