রোজা রমজানের মাসে এসব নিয়ে লেখার কথা না, কিন্তু কিছু করার নেই, মেসেঞ্জারে এক ভাইয়ের দেয়া আরিফ আজাদ সাহেবের বইয়ের এমন লেখা দেখে, ঈমানের দাবিতে, প্রেমাস্পদের প্রতি ভালবাসার খাতিরে, সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে এই বিষয়ে অবগত করতে লিখতেই হল।
আরিফ আজাদ সাহেব "নবি-জীবনের গল্প" বইয়ের ২৫ পৃষ্ঠায় লিখল, আলি রাযিয়াল্লাহু আনহুর ভালােবাসা আর বিশ্বাসের শক্তিটুকু অনুধাবন করতে পারলেন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (নবীজি আদেশ দেয়া সত্ত্বেও হযরত আলী রাঃ আদব রক্ষার্থে চুক্তিপত্র থেকে নবীজির নাম মুছে দিতে অস্বীকৃতি জানালে)। তিনি মৃদু হেসে বললেন, "এই শব্দগুলো কোথায় লেখা আছে আমাকে একটু দেখাও। আমি নিজ হাতে তা মুছে দিচ্ছি।" যেহেতু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লেখা পড়তে জানতেন না, সুতরাং সন্ধিনামা থেকে নিজের নাম মুছতে হলে কেউ একজনকে তা দেখিয়ে দিতে হবে। আলি রাযিয়াল্লাহু আনহু নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শব্দদ্বয় দেখিয়ে দিলে তিনি নিজ হাতে তা মুছে দেন।
কোথায় পেলেন এমন রেওয়ায়েত!! সহিহ বুখারীতে বর্ণিত উক্ত ঘটনার কোন অংশেই তো এমন কোন লেখা পেলাম না, বরং "তিনি লিখলেন" বলা আছে, তাহলে কি তিনি পড়তে পারতেন না, কিন্তু লিখতে পারতেন, বিষয়টা কি এমন!! কোন হৃদয়বান ব্যক্তি যদি পেয়ে থাকেন, জানায়েন। হায়! এরা কি জানে না যে, সালামাহ ইবনু আক্ওয়া‘ (রাঃ) বলেনঃ আমি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আমার উপর এমন কথা আরোপ করে যা আমি বলিনি, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।’ (সহীহ বুখারী ১০৯)!!
উক্ত ঘটনা প্রসঙ্গে সহিহ বুখারীর রেওয়ায়েত,
যিলকদ মাসে নবী ﷺ উমরাহ্'র উদ্দেশ্যে বের হলেন। কিন্তু মক্কাবাসীরা তাঁকে মক্কা প্রবেশের জন্য ছেড়ে দিতে অস্বীকার করল। অবশেষে এই শর্তে তাদের সঙ্গে ফয়সালা করলেন যে, তিনদিন সেখানে অবস্থান করবেন। সন্ধিপত্র লিখতে গিয়ে মুসলিমরা (মাওলা আলী রাঃ) লিখলেন, এ সন্ধিপত্র সম্পাদন করেছেন, ‘আল্লাহ্র রসূল মুহাম্মাদ' ﷺ। তারা (মুশরিকরা) বলল, ‘আমরা তাঁর রিসালাত স্বীকার করি না। আমরা যদি জানতাম যে, আপনি আল্লাহ্র রসূল তাহলে আপনাকে বাধা দিতাম না। তবে আপনি হলেন, ‘আবদুল্লাহ্র পুত্র মুহাম্মদ।’ তিনি বললেন, ‘আমি আল্লাহ্র রসূল এবং ‘আবদুল্লাহ্র পুত্র মুহাম্মদ।’
অতঃপর তিনি আলী (রাঃ)–কে বললেন, আল্লাহ্র রসূল (রাসূলুল্লাহ) শব্দটি মুছে দাও। তিনি (আলী রা.) বললেন, ‘না। আল্লাহ্র কসম, আমি আপনাকে কখনো মুছব না।’
রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন চুক্তিপত্রটি নিলেন (এবং নিজ হাতে তা মুছে দিলেন [১]) এবং #লিখলেন, ‘এ সন্ধিপত্র মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ সম্পন্ন করেন- খাপবদ্ধ অস্ত্র ব্যতীত আর কিছু নিয়ে তিনি মক্কায় প্রবেশ করবেন না। মক্কাবাসীদের কেউ তাঁর সঙ্গে যেতে চাইলে তিনি বের করে দিবেন না। আর তাঁর সঙ্গীদের কেউ মক্কায় থাকতে চাইলে তাঁকে বাধা দিবেন না।’[২]
[১] সহিহ বুখারী ২৬৯৮, [২] সহিহ বুখারী ২৬৯৯
আহ! সাহাবায়ে কেরামের আদব কেমন ছিল দয়াল নবীজির প্রতি...! কিন্তু বড়ই আফসোসের বিষয়, ঐ নবীর এমন উম্মতও আছে যারা তাঁকে নিরক্ষর, লিখতে পড়তে জানেন না- প্রমাণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, এমনকি বছরখানেক আগে এক জনপ্রিয় বেয়াদব তো বলে ফেলল, লিখিত কোন জিনিস নাকি প্রিয় নবী ﷺ এঁর কাছে রহস্যের মত ছিল (নাউজুবিল্লাহ)। হায়! ওরা যদি বুখারীটা হলেও ভাল করে পড়ত। জনৈক কবির ভাষায় বলবো,
"Bina ishq e nabi jo padte hai bukhaari
Aata hai bukhaar unko aati nahi bukhaari"
অর্থঃ নবীজির ভালবাসা ছাড়া যারা বুখারী পড়ে,তারা জ্বরে (বুখার) আক্রান্ত হয়ে যায় আর বুখারী বুঝতে পারে না।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা পবিত্র কুরআনুল কারীমের সূরা হুজরাতে প্রিয় নবীজির শানে বেয়াদবী করলে তার শাস্তি কেমন হবে তা উল্লেখ করে সতর্ক করে দিয়েছেন। শাস্তিটা এমন যে, শানে রিসালাতে যারা বেয়াদবী করে তাদের সকল আমল যে বরবাদ (নষ্ট) হয়ে যাবে তারা টেরও পাবে না (কুফরের কারণে সমস্ত আমল নষ্ট হয়)। আল্লাহ তায়ালা আমাদের ঈমান ও আমলকে ঐসব বেয়াদবদের কাছ থেকে হেফাজত করুক।
ইমাম আহমদ রেজা খান রহঃ লিখেন, (অনুবাদ)
শূন্য জঙ্গল রাত অন্ধকার মেঘ কালিতে ভরা
ঘুমন্তরা দাও পাহারা চোর করে ঘোরাফেরা।
চোখেরও কাজল করে চুরি চোর এমন হতচ্ছাড়া
তোর সম্পদ নয় নিরাপদ আর তুই ঘুমে হুশহারা।
যে তোকে আদরে ডাকে সে তো ডাকাত-লুটেরা
সুকৌশলে বাঁধবে শিকলে, হোস না পথিক পথহারা।
মুকাশাফাতুল কুলুবে রয়েছে যে, মাওলা আলী রাঃ বলেন, যে ব্যক্তির মাঝে ৬টি অভ্যাস পাওয়া যায় সে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত ও জান্নাতের অধিকারী।
১. যে আল্লাহকে চিনে তাঁর ইবাদত করলাে।
২. যে শয়তানকে চিনে তাঁর বিরােধিতা করলাে। (মানুষরুপী শয়তানও কিন্তু থাকে)
৩. যে বাতিল (ভ্রান্ত) কে চিনে তা বর্জন করলাে।
৪. যে হক্ব (সত্য) কে চিনে তার অনুসরণ করলাে।
৫. যে আখিরাতকে চিনে তার কামনায় ছিলাে।
৬. যে দুনিয়াকে চিনে একে পরিহার করলাে।
-
©Muhammad Rakib Attari