'সুফিবাদী ইসলাম প্রকৃত ইসলাম নয়। এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগের ৬০০ বছর পর আবিষ্কৃত হয়েছে। এটা বেদাত।'

আমার কোনো এক পোস্টে এক ভাইয়ের কমেন্ট। কথাগুলো আমার কাছে খুবই অযৌক্তিক মনে হলো। যিনি লিখেছেন হয়তো তিনি সুফিজম সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন না। অথবা সুফিজমের বিরোধিতাকারী কোনো ব্যক্তির লেকচার শুনেছেন/তাদের লেখা বই পড়েছেন। অথবা বর্তমানে সুফিবাদের নাম দিয়ে বাজার খুলে বসা ভন্ডদেরকেই তিনি সুফিজম মনে করছেন। তাই সুফিজম আসলে কি তা জানতে পারলে ওনার মন্তব্যটি কতটুকু যৌক্তিক তা বুঝতে পারবেন।

আজকাল সুফির অভাব নেই। সুফিজমের দোকান খুলে বসা হয়। মানুষ আজ জট লাগা চুল ওয়ালাকে সুফি মানছে। উলঙ্গ, অপরিচ্ছন্ন, শরীয়তে ইসলামীয়'র ধারে-কাছেও নেই এমন বাবাকে সুফি লকব দিচ্ছে।

মনে রাখবেন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শরীয়ত পরিপন্থী কাজ করে কেউ যদি বলে আমাদের বাবা অনেক উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, তাহলে বুঝে নিন সে শয়তানের কাছে পৌঁছে গেছে। ভিন্ন ডিজাইনের পাগড়ী, টুপি পরার নাম সুফিজম নয়। নানান রকমের লেবাস এর নাম সুফিজম নয়। বিভিন্ন আন্দাজে সাহিত্যক ভাষায় কথা বলার নামও সুফিজম নয়।

হযরত গঞ্জে বকশ দাতা হাযবেরী আলাইহির রাহমা বলেন 'তাসাউফ হলো উত্তম চরিত্রের নাম।' মানুষের সাথে উত্তম ব্যবহারের নাম। নফসের চাহিদাকে তরক করার নাম সুফিজম। আল্লাহর প্রেমে বিলীন হয়ে যাওয়ার নাম সুফিজম। শরীয়তে ইসলামীয়া'র পাবন্দির নাম সুফিজম। হযরতে শায়খ শিবলি আলাইহির রাহমা বলেন, 'সুফি ব্যক্তি এই দুনিয়াতে আল্লাহ ছাড়া আর কিছু দেখতে পায় না।'

যে ব্যক্তি 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' এর ঝাড়ু লাগিয়েছে তার অন্তরে কি আর কোনো ময়লা থাকতে পারে? তার সকল চাহিদাকে সে দমিয়ে দেয়। তার একমাত্র চাহিদা হয় রবের সন্তুষ্টি। আর সে ব্যক্তিই প্রকৃত সুফি।

শেখ সাদী আলাইহির রাহমা বলেন, 'তুমি আগে আল্লাহর বান্দা হও, তারপর যে পোশাক ইচ্ছে পর।' কিন্তু আমরা আজ ভিন্ন রঙের, ভিন্ন ডিজাইনের পোশাককে সুফিজম নাম দিয়েছি। যে ব্যক্তি আল্লাহর অনুগত হয়ে যায় সে যদি বাদশার পোশাকও পরে, কোনো সমস্যা নেই। আর নিজের খায়েসাতের ঝুলি মাথায় নিয়ে যতই ফকির সাজো কোনো লাভ নেই। তাই এক কথায় সুফিজম মানে অন্তরের পরিশুদ্ধি, অন্তরের পবিত্রতা।

যারা সুফিবাদ বিরোধী মন্তব্য করেন তারা যদি প্রকৃত সুফিবাদ সম্পর্কে ধারণা পান তাহলে তাদের এই মন্তব্যগুলো খুবই অযৌক্তিক মনে হবে।


Top