সহীহ বুখারীর জানাজা অধ্যায়ের শেষ অংশে একটি ঘটনার কথা এভাবে উল্লেখিত হয়েছে,

উরওয়াহ (রাঃ) বলেন, ওয়ালীদ ইবনু আবদুল মালিক-এর শাসনামলে যখন (রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এঁর রওজার) বেষ্টনী দেয়াল ধসে পড়ে, তখন তাঁরা সংস্কার করতে আরম্ভ করলে একটি পা প্রকাশ পায়, তা রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এঁর পা মুবারক বলে ধারণা করার কারণে লোকেরা খুব ঘাবড়ে যায়। সনাক্ত করার মত কাউকে তারা পায়নি। অবশেষে ‘উরওয়াহ (রাঃ) তাদের বললেন, আল্লাহ্‌র কসম এটা নবী ﷺ এঁর পা নয় বরং এটা তো ‘উমার (রাঃ)-এঁর পা।

মিশকাতের জানাজা অধ্যায়ের কবর জিয়ারত অনুচ্ছেদে একটি ঘটনার উল্লেখ রয়েছে যে,

রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং আবূ বকর (রাঃ) এঁর ওফাতের পর, উমর রাঃ এঁর ওফাতের আগে, আম্মাজান আয়িশাহ (রাঃ) সাধারণ কাপড় পরিধান করেই তাঁদের রওজা মোবারকে যেতেন। কারণ- "আয়িশাহ (রা.) মনে মনে বলতেন, তিনি ﷺ তো আমার স্বামী, আর অপরজনও আমার পিতা। (আয়িশাহ রাঃ বলেন) কিন্তু যখন ‘উমার (রাঃ) কে এখানে তাঁদের সাথে দাফন করা হলো, আল্লাহর কসম, তখন থেকে আমি যখনই ঐ ঘরে (রওজায়) প্রবেশ করেছি, ‘উমরের কারণে লজ্জায় শরীরে চাদর (অতিরিক্ত পর্দা সহকারে) পেঁচিয়ে রেখেছি। (আল্লাহু আকবার)
মিশকাতের এই হাদিসের ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী ক্বারী রহঃ লিখেন- ইমাম তিব্বী রহঃ বলেন, (এ হাদিস থেকে বুঝা গেল) ওফাত হওয়ার পরে তেমনই তা‘যিম করতে হবে যেমনটি জীবিত অবস্থায় (জাহিরী হায়াতে) করা হতো।

সহীহ মুসলিম শরীফের ফজিলত অধ্যায়ে মুসা আলায়হিস সালাম এঁর ফজিলত (মর্যাদা) পরিচ্ছেদে রয়েছে,

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ যে রাত্রে আমার মি‘রাজ হয়েছিল সে রাত্রে আমি মূসা (‘আঃ)-এঁর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি লাল বালুকা স্তুপের নিকট তাঁর রওজায় দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন।

ইমাম দারেমী রহঃ উনার সূনানের ভূমিকা অধ্যায়ের "ওফাতের পর নবী ﷺ কে আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক সম্মান দেয়া" পরিচ্ছেদে উল্লেখ করেন,

সাঈদ ইবনে আব্দুল আযীয রহঃ বলেন, ‘আইয়ামুল হাররা’য় (যে সময়ে কুখ্যাত ইয়াজিদ মদীনা শরীফের উপর অত্যাচার চালিয়ে ছিল) মসজিদে নববী ﷺ-এ তিন দিন পর্যন্ত আযান ও জামা’আতে নামাজ অনুষ্ঠিত হয়নি। সে সময় সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যেব (রহঃ) মসজিদেই আটকা পড়েছিলেন। কিন্তু নামাজের ওয়াক্ত নির্ধারণ করতে পারতেন না, তবে (নামাজের ওয়াক্ত হলে) তিনি নবী ﷺ এঁর রওজা হতে গুণগুণ শব্দ শুনতে পেতেন। (সুবহান আল্লাহ)

শায়খুল ইসলাম ইবনে হাজর আসকালানী রহঃ সহীহ বুখারীর প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে আবূ বকর রাঃ এঁর ফযীলত অধ্যায়ে উল্লেখ করেন,

নবী ﷺ (মৃত্যুর স্বাদ করে আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতায়) কবরে জীবিত থাকাকে যারা অস্বীকার করে তারা হযরত আবূ বকর রা. এঁর এ বক্তব্য দিয়ে দলিল পেশ করতে চায়- ‘আল্লাহ আপনাকে দুইবার মৃত্যু দিবেন না’। আর আহলুস সুন্নাহ- যারা নবীর কবরে জীবিত থাকায় বিশ্বাস রাখেন, এদের পক্ষ থেকে এর জবাব দেয়া হয়েছে যে, হযরত আবূ বকর রা. এঁর বক্তব্যের উদ্দেশ্য ছিল উমর রা. এঁর ভুল ধারণার খণ্ডন করা। উমর রা. বলেছিলেন, ‘আল্লাহ তাআলা নবীজীকে আবার দুনিয়াতে জীবিত করবেন ...’। এ কথার মধ্যে বারযাখে কী হবে এ বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। অবশ্য হযরত আবূ বকর রা. এঁর এ কথার সর্বোত্তম ব্যাখ্যা হল, কবরে নবীজী ﷺ যে জীবন পেয়েছেন তারপর আর কোনো মৃত্যু আসবে না। বরং তিনি বরাবরই কবরে জীবিত থাকবেন, আর নবীগণ কবরে জীবিত।

বিখ্যাত ফকিহ ও হাদিস বিশারদ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী রহঃ মিশকাতের ব্যাখ্যাগ্রন্থ মেরকাতের ৩য় খন্ডে উল্লেখ করেন,

আউলিয়াদের ইহকালীন জীবনের অবস্থা এবং পরকালীন জীবনের অবস্থার মাঝে কোন পার্থক্য নাই, এজন্য বলা হয় আল্লাহর ওলীগণ (প্রিয় বান্দাগণ, সাধারণদের মতো) মৃত্যুবরণ করেন না বরং (মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করে দুনিয়া হতে পর্দা করে) তারা এক ঘর থেকে আরেক ঘরে বা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবর্তন হন মাত্র। তিনি আরো উল্লেখ করেন, ইমাম বায়হাকী রহঃ বলেন, নবীগণ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশিত হতে পারেন এটা আকল দ্বারাও বৈধ, যেমনিভাবে হাদিস দ্বারাও প্রমাণিত।

আলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা রহঃ লিখলেন,

তু জিন্দা হ্যায় ওয়াল্লাহ, তু জিন্দা হ্যায় ওয়াল্লাহ,
মেরে চশমে আলম ছে ছুপ জানে ওয়ালে

বঙ্গানুবাদঃ-

আল্লাহর কসম! হে নবীﷺ! আপনি জিন্দা।
কিন্তু আপনি আমার চোখের আড়াল হয়ে আছেন।
Top