২২ শে জমাদিউল আখির। নবীগণের পর যাঁর শ্রেষ্ঠত্ব, ফানাফির রাসূলের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, আহলে-বাইত প্রেমীদের জন্য উত্তম আদর্শ, উভয় জাহানে দোজাহানের বাদশাহ'র সাথী, সিদ্দিকে আকবর হযরত আবূ বকর রাঃ এঁর ওফাত দিবস। 

তাঁর ফানাফির রাসূলের দৃষ্টান্ত এরূপ যে, 

(একদিন) রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ আবূ বকরের ধন-সম্পদ আমার যতটুকু উপকারে এসেছে অন্য কারো ধন-সম্পদ আমার তত উপকারে আসেনি। রাবী বলেন, এ কথায় আবূ বকর রাঃ কেঁদে ফেলেন এবং বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! আমি ও আমার ধন-সম্পদ আপনারই।(সুনানে ইবনে মাজাহ ৯৪)

যাইদ ইবনে আসলাম (র.) কর্তৃক তার পিতা হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, "উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-কে আমি বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ ﷺ (তাবুকের যুদ্ধের প্রাক্কালে) আমাদেরকে দান-খাইরাত করার হুকুম করেন। সৌভাগ্যক্রমে ঐ সময় আমার সম্পদও ছিল। আমি (মনে মনে) বললাম, যদি আমি কোন দিন আবূ বকর (রা.)-কে ডিঙ্গাতে পারি তাহলে আজই সেই সুযোগ। উমর (রা.) বলেন, আমি আমার অর্ধেক সম্পদ নিয়ে এলাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ তোমার পরিবার -পরিজনদের জন্য তুমি কি বাকি রেখে এসেছ? আমি বললাম, এর সমপরিমাণ (অর্থাৎ বাকি অর্ধেক)। আর আবূ বকর (রা.) তার সমস্ত সম্পদ নিয়ে আসলেন। তিনি ﷺ বললেনঃ হে আবূ বকর! আপনার পরিবার পরিজনদের জন্য আপনি কি বাকি রেখে এসেছেন? তিনি বললেন, তাদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকেই রেখে এসেছি। আমি [উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)] (মনে মনে) বললাম, কখনও আমি কোন প্রসঙ্গে আবূ বকর (রা.)-কে ডিঙ্গাতে পারব না। (সূনান আত তিরমিজী ৩৬৭৫, মিশকাত ৬০২১) 

আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ একদা সাহাবীদের উদ্দেশ্যে খুৎবার কালে বললেন, আল্লাহ্ তাঁর এক প্রিয় বান্দাকে পার্থিব ভোগ বিলাস এবং তাঁর নিকট রক্ষিত নি’মাতসমূহ এ দু’য়ের মধ্যে যে কোন একটি বেছে নেয়ার স্বাধীনতা দান করেছেন এবং ঐ বান্দা আল্লাহ্‌র নিকট রক্ষিত নিয়ামতসমূহ বেছে নিয়েছে। রাবী বলেন তখন আবূ বকর (রাঃ) কাঁদতে লাগলেন। তাঁর কান্না দেখে আমরা আশ্চর্যান্বিত হলাম। নবী ﷺ এক বান্দার খবর দিচ্ছেন যাকে এভাবে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে (তাতে কান্নার কী কারণ থাকতে পারে?) কিন্তু পরে আমরা বুঝতে পারলাম, ঐ বান্দা স্বয়ং আল্লাহর রাসূল ﷺ ছিলেন এবং আবূ বকর (রাঃ) আমাদের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী ছিলেন। [সূনান আত তিরমিজিতে (৩৬৬০) রয়েছে  তখন আবূ বকর (রা) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! আপনার জন্য আমাদের বাবা-মা উৎসর্গিত হোক। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা (তার কথায়) বিস্মিত হলাম এবং লোকেরা বলল, ইনার প্রতি খেয়াল কর, রাসূলুল্লাহ ﷺ এক বান্দা প্রসঙ্গে সংবাদ দিচ্ছেন যে, তাকে আল্লাহ তা'আলা এখতিয়ার দিয়েছেন যে, তিনি ইচ্ছা করলে আল্লাহ তা'আলা তাকে দুনিয়ার ভোগ সামগ্ৰীও দান করতে পারেন কিংবা তিনি ইচ্ছা করলে আল্লাহ তা'আলার নিকট তাকে রক্ষিত ভোগসামগ্ৰীও দান করতে পারেন। অথচ ইনি বলছেন, আপনার জন্য আমাদের বাবা-মাকে উৎসর্গ করলাম!] নবী ﷺ বললেন, যে ব্যক্তি তার ধন-সম্পদ দিয়ে, তার সঙ্গ দিয়ে আমার উপর সর্বাধিক ইহসান করেছে সে ব্যক্তি হল আবূ বকর (রাঃ)। আমি যদি আমার রব ছাড়া অন্য কাউকে আন্তরিক বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম, তাহলে অবশ্যই আবূ বকরকে করতাম। তবে তাঁর সঙ্গে আমার দ্বীনি ভ্রাতৃত্ব, আন্তরিক ভালোবাসা আছে। মসজিদের দিকে আবূ বকরের দরজা ছাড়া অন্য কোন দরজা খোলা রাখা যাবে না। (সহিহ বুখারী ৩৬৫৪)

আহলে বাইতপ্রেমীদের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্তঃ

আমিরুল মুমিনীন হযরত আবূ বকর (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমার আত্মীয়দের সঙ্গে উত্তম আচরণ করার চেয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর আত্মীয়দের সঙ্গে উত্তম আচরণ করা আমি অধিক পছন্দ করি। (সহীহ বুখারী ৩৭১২)

আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) হুকুম করেন, মুহাম্মাদ ﷺ এঁর পরিবার পরিজনের (আহলে বাইত) প্রতি তোমরা অধিক সম্মান প্রদর্শন করবে। (সহীহ বুখারী ৩৭১৩)

শুধু তা-ই নই, তিনি আরো বলেন, মুহাম্মাদ ﷺ এঁর সন্তুষ্টি, তাঁর পরিবারবর্গের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে অর্জন কর। (সহীহ বুখারী ৩৭৫১)

একদিন আবূ বকর (রাঃ) আসরের নামাজ শেষে বের হয়ে চলতে লাগলেন। (পথিমধ্যে তিনি) হাসান (রাঃ) কে ছেলেদের সঙ্গে খেলা করতে দেখলেন। তখন তিনি তাঁকে কাঁধে তুলে নিলেন এবং বললেন, (আপনার উপর) আমার পিতা কুরবান হোন! ইনি তো (দেখতে) নবী ﷺ এঁর মত, আলী রা. এঁর মত নয়। তখন ‘আলী (রাঃ) হাসছিলেন। (সহীহ বুখারী ৩৫৪২)

হযরত আলী (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর সাথে ছিলাম। সে সময় আবূ বকর (রা.) ও উমর (রা.) আবির্ভূত হন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ এরা দু'জন জান্নাতে নবী-রাসূলগণ ছাড়া পূর্বাপর (সৰ্বকালের) পূর্ণ বয়স্কদের নেতা হবেন। হে ‘আলী! (তাঁদের জীবদ্দশায়) এটা তাদেরকে জানাবে না। (সূনান আত তিরমিজী ৩৬৬৫, ৩৬৬৬, সূনান ইবনে মাজাহ ৯৫)

হায়দারে কাররার মাওলা আলী আঃ এঁর ছেলে মুহাম্মাদ ইবনু হানাফীয়া (রাঃ) বলেন, আমি আমার পিতা ‘আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী ﷺ এঁর পর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ কে? তিনি বললেন, আবূ বকর (রাঃ)। আমি বললাম, অতঃপর কে? তিনি বললেন, ‘উমার (রাঃ)।.. (সহীহ বুখারী ৩৬৭১)

আল্লাহ তায়ালা আমাদের অন্তরকেও আবূ বকর সিদ্দিক (রা.) এঁর মত প্রেম দিয়ে ভরপুর করে দিক, উনার রুহানী ফয়েজ আমাদের উপর জারী করে দিক, উনার উসিলায় আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিক।
Top