সূরা আনআমের ৫০ নং আয়াত বা অন্য কোথাও কি আল্লাহ প্রদত্ত ইলমে গায়েবকে অস্বীকার করা হয়েছে..!
----
আরোগ্যতা দান করা, মৃতকে জীবিত করা, দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেয়া, গায়েবের খবর জানা এগুলো আল্লাহ'র সত্ত্বাগত ক্ষমতা বা গুণ। আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করলে তাঁর মনোনীত বান্দাদেরকেও এসব ক্ষমতা দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে সেগুলো তাঁর বান্দাদের জন্য সত্ত্বাগত নয়, আতায়ী বা আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা। যেমনঃ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেন,

"তিনি (ঈসা আলায়হিস সালাম) বলবেন, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে নিদর্শনসহ তোমাদের নিকট এসেছি, আমি তোমাদের জন্য মাটি দিয়ে পাখির আকৃতি বানিয়ে তাতে ফুঁক দেব, আল্লাহর হুকুমে পাখি হয়ে যাবে, আল্লাহ'র হুকুমে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগী আরোগ্য করবো এবং মৃতকে জীবিত করবো এবং আমি তোমাদেরকে বলে দেব তোমাদের গৃহে তোমরা যা আহার কর এবং সঞ্চয় করে রাখ; নিশ্চয়ই এ কাজে তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যদি তোমরা মু’মিন হও।" (সূরা আলে ইমরান ৪৯)

তিনি আরো বলেন,

"কাফেলা যখন (মিশর থেকে ইউসুফ আ. এঁর জামা নিয়ে) বেরিয়ে পড়ল, এমন সময়ে তাদের পিতা (ইয়াকুব আ., বাড়ীর লোকজনকে) বললেন, ‘তোমরা আমাকে বয়োবৃদ্ধ দিশেহারা মনে না করলে (তোমরা জেনে রাখ) আমি অবশ্যই ইউসুফের ঘ্রাণ পাচ্ছি।’ উপস্থিত ব্যক্তিরা বলল, ‘আল্লাহর কসম! আপনি তো আপনার সেই পুরানো বিভ্রান্তিতেই (পুত্রস্নেহের মধ্যে বিভোর) আছেন দেখছি।’ (অতঃপর) সুসংবাদদাতা যখন (ইউসুফ আ. এঁর জামা নিয়ে) এসে হাযির হল, তখন সে জামাটি ইয়াকুব (আঃ) এঁর মুখমন্ডলের উপর রাখল, তাতে তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলেন। তিনি (ইয়াকুব আ.) বললেন, ‘আমি কি তোমাদের বলিনি যে, আমি আল্লাহর নিকট হতে যা জানি তা তোমরা জান না।" (সূরা ইউসুফঃ ৯৪-৯৬)

কুরআনের আয়াত নাজিলের প্রেক্ষাপট না জেনে, অন্যান্য আয়াত কিংবা হাদিসের সাথে সামঞ্জস্য বা মেলবন্ধন স্থাপন না করে শুধুমাত্র একটি আয়াত দিয়েই কোন রায় বা মত দিয়ে দেয়া যায় না। কুরআন এবং হাদিসের যেসব জায়গায় আল্লাহ তায়ালা-ই ইলমে গায়েবের জ্ঞান রাখেন বলা হয়েছে সেটা হচ্ছে সত্ত্বাগত ইলমে গায়েব। আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র (সত্ত্বাগত) ইলমে গায়েবের অধিকারী (আলিমুল গায়েব) কিন্তু তিনি তাঁর মনোনীত রাসূলদের গায়েবের খবর জানিয়েছেন। ফলে এর অর্থ দাঁড়ায় যে, অদৃশ্যের বিষয় সম্পর্কে আল্লাহর নবীগণ অবহিত আছেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা জানানোর কারণে, ইনারা নিজেরা সত্ত্বাগতভাবে ইলমে গায়েব সম্পর্কে জানেন না। এখন কেউ যদি যেসব আয়াতে রাসূলগণও যে, আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতায় ইলমে গায়েব জানেন বলা হয়েছে সেগুলোকে অবিশ্বাস করে তাহলে কি তারা ঈমানদার হতে পারবে!!

আল্লাহ তাআ'লা বলেন, "(হে সর্বসাধারণ!) আল্লাহর শান এ নয় যে, তোমাদেরকে অদৃশ্যের জ্ঞান দিয়ে দেবেন। তবে আল্লাহ নির্বাচিত করে নেন তার রাসূলগণের মধ্য থেকে যাঁকে চান। সুতরাং ঈমান আনো আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের উপর এবং যদি তোমরা ঈমান আনো এবং পরহেযগারী অবলম্বন করো, তবে তোমাদের জন্য মহা প্রতিদান রয়েছে।" (সূরা আলে ইমরানঃ ১৭৯)

"তিনি (আল্লাহ) অদৃশ্যের জ্ঞানী, আর তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারো কাছে প্রকাশ করেন না, (কিন্তু) রাসূলের মধ্যে যাঁকে তিনি মনোনয়ন করেছেন তাঁকে ব্যতীত। (সূরা জ্বীনঃ ২৬-২৭)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাঁর হাবিবকে অদৃশ্যের খবর সম্পর্কে জানিয়ে বলছেন, "তিনি (ﷺ) অদৃশ্য (গায়েবী) বিষয় বলতে কৃপণতা করেন না।"(সূরা তাকভীরঃ ২৪)

অন্যত্র বলছেন,

"এবং (হে মাহবূব!) যদি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ ও দয়া আপনার উপর না থাকতো তবে তাদের একদল আপনাকে পথভ্রষ্ট করতে বদ্ধপরিকর ছিল। আর তারা নিজেদেরকে ছাড়া কাউকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না এবং তারা আপনার কোনই ক্ষতি করতে পারে না। আর আল্লাহ্‌ আপনার উপর কিতাব ও হিকমত অবতীর্ণ করেছেন আর আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা কিছু আপনি জানতেন না এবং আপনার উপর আল্লাহ্‌র মহা অনুগ্রহ রয়েছে। (সূরা নিসাঃ ১১৩)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ আমি যা দেখি তোমরা তা দেখ না, আর আমি যা শুনতে পাই তোমরা তা শুনতে পাও না। (সূনান আত তিরমিজী ২৩১২)

তাহলে কি আপনারা কুরআনের এসব আয়াতকে অস্বীকার করছেন!!

"তাহলে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশকে বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখ্যান কর? অতএব তোমাদের যারা এমন করে তাদের পার্থিব জগতে লাঞ্ছনা ও অবমাননা ছাড়া আর কী প্রতিদান হতে পারে?" এবং কিয়ামতের দিন তারা কঠিন শাস্তির মধ্যে নিক্ষিপ্ত হবে, আর তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ গাফেল নন। (সূরা বাকারাহঃ ৮৫)

এছাড়াও কুরআনের অনেক আয়াত এবং অনেক হাদিস শরীফ এমন রয়েছে যেগুলোর শুধু শাব্দিক অর্থ নিয়ে বিশ্বাস করলে ঈমান থাকবে না। যেমনঃ

সকল ক্ষমতার মালিক আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলছেন,

"যে ব্যক্তি আমার কোন অলি বা বন্ধুর সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব। আমি যা কিছু আমার বান্দার উপর ফরয করেছি, তা দ্বারাই কেউ আমার নৈকট্য লাভ করবে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ‘ইবাদাত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে। এমন কি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নেই যে, আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কোন কিছু চায়, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি কোন কাজ করতে চাইলে তা করতে কোন দ্বিধা করি-না, যতটা দ্বিধা করি মু’মিন বান্দার প্রাণ নিতে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার বেঁচে থাকাকে অপছন্দ করি।" (সহীহ বুখারী ৬৫০২)

এর দ্বারা কি এটা বুঝব যে, আল্লাহ ও আল্লাহর অলি এক হয়ে গিয়েছে (নাউজুবিল্লাহ)!! নিশ্চয়ই নয়।

তাই এক্ষেত্রে শাব্দিক অর্থ নেয়া যাবে না। যেহেতু তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে সকল কাজ-কর্ম আল্লাহ তাআলারই সন্তুষ্টি মোতাবেক প্রকাশ পায় এজন্যে একথা বলা হয়েছে যে, আঁমিই যেন তার চোখ, কান, হাতও পা হয়ে যাই।

আহলুস সুন্নাহ এর আকীদা হল আল্লাহ তায়ালা আকার আকৃতি থেকে পবিত্র। কুরআন হাদিসের কয়েক জায়গায় আল্লাহ'র হাত-পা শব্দগুলো এসেছে। সেই শব্দগুলো দ্বারা আল্লাহ যা বুঝিয়েছেন আমরা তার উপর ঈমান এনেছি। ইমাম তাহাভী (রহঃ) বলেন,

“যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'য়ালাকে মানবীয় গুণাবলী হতে কোন গুণের দ্বারা গুণান্বিত করবে সে কাফির ।” (ইমাম তাহবী, আকিদাতুত তাহাভী, ৪১ পৃষ্ঠা, আকিদা নং ৩৪)

তিনি আরো বলেন,

‘‘আল্লাহ তা‘য়ালার গুণে সৃষ্টি জগতের কেহ নেই। তিনি সীমা, পরিধি, অঙ্গপ্রতঙ্গ এবং উপাদান উপকরণের ঊর্ধ্বে। সৃষ্টি জগতের ন্যায় ছয় দিকের কোন দিক তাকে বেষ্টন করতে পারে না।’’ (ইমাম তাহাভী, আকিদাতুত তাহাভী, ৪৪ পৃষ্ঠা, ক্রমিক: ৩৮)

ইমাম বায়হাকী রহঃ বলেন, “নিশ্চয় আমাদের ও সকল মুসলমানের জানা অত্যাবশ্যক যে, আমাদের প্রভু আকৃতি ও অবয়ব বিশিষ্ট নন। কেননা, "আকৃতি'', কেমন এর চাহিদা রাখে। অথচ কেমন প্রশ্নটি আল্লাহ ও তাঁর গুণাবলীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কোনো ক্ষেত্রে যদি আকৃতি প্রকাশের কথা আসে তা হবে তাঁর সিফাত বা গুণাবলী।” (কিতাবুল আসমা ওয়াল সিফাত)]

আল্লাহ তায়ালা বলেন, "তাঁর কোন দৃষ্টান্ত তথা উপমা নেই, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্ৰষ্টা।" (সূরা আশ-শুরাঃ ১১) আল্লাহ তায়ালা কোন কিছুর মুখাপেক্ষী নন। তিনি সবকিছু দেখেন, শুনেন, হুকুম করেন। এসবের জন্য তিনি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মুখাপেক্ষী নন। তিনি তখনো ছিলেন যখন আরশ কুরসি কোন কিছুই ছিল না। আল্লাহ আরশের নিয়ন্ত্রণকারী। তিনি স্থান থেকে পবিত্র।

এবার আসি, সূরা আনআমে। সূরা আনআমের ৫০ নং আয়াতের তাফসীরে তাফসীরকারকগণ বলেছেন, এ আয়াতটিতে সত্ত্বাগত ইলমে গায়বের অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা হয়েছে (যা একমাত্র আল্লাহর জন্য), কেউ কেউ বলেছেন বিনয় ও নম্রতা প্রকাশের জন্য এ রকম বলা হয়েছে।

তাফসীরে খাযেনে এ আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে, ‘‘হুযুর ﷺ নিজের পবিত্র সত্ত্বা সম্পর্কে এ সকল বিষয়ের অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছেন। এটা এজন্য যে, এতে আল্লাহর নিকট তাঁর অনুনয়- বিনয় ও স্বীয় বন্দেগীর স্বীকারোক্তি প্রকাশ পায়। অর্থাৎ রাসূল ﷺ বলেছেনঃ আমি ওসব ব্যাপারে কিছু বলছি না এবং কোন কিছুর দাবীও করছি না।’’ {ইমাম খাযেনঃ লুবাবুত তা’ভীলঃ ২/১৮০ পৃ.}

‘তাফসীরে বায়যাবী’তে এ আয়াতের ব্যাখ্যা এভাবে করা হয়েছে- ‘‘আমি গায়েব জানিনা, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমার প্রতি ওহী নাযিল হয়, বা এ ব্যাপারে কোন দলীল প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয়।’’ {কাজী নাসিরুদ্ধীন বায়যাভীঃ তাফসীরে বায়যাভীঃ ২/৪১০ পৃ.}

‘তাফসীরে কবীরে’ একই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- ‘‘আমি আল্লাহর জ্ঞানে গুণান্বিত হওয়ার দাবী করি না। আয়াতের দু’অংশকে একত্রিত করলে সারমর্ম হয়, হুযুর আলাইহিস সালাম খোদা হওয়ার দাবী করেন না।’’ {ইমাম ফখরুদ্দীন রাজীঃ তাফসীরে কবীরঃ ৪/৫৩৮ পৃ.}

এছাড়াও আমরা যদি শুধুমাত্র ঐ আয়াতের শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করেই রায় বা মত দিয়ে দিই, তাহলে কি আমরা আল কুরআনের অন্যান্য আয়াত এবং বুখারী মুসলিমের সেসব হাদিস যেখানে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলছেন "আমাকে পৃথিবীর ভান্ডারসমূহের চাবি দেয়া হয়েছে", সেসব হাদিস যেখানে তিনি সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, পূর্বে কি হয়েছে, কিয়ামতের পূর্বে কি কি হবে সব বলে দিয়েছেন সেগুলোকে অস্বীকার করব?? আর আমাদের নবীকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করব!! (নাউজুবিল্লাহ) (আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ধোঁকাবাজ এবং অপব্যাখ্যাকারীদের থেকে হেফাজত করুক)

না, বরং আমরা সবকিছুর মধ্যে সামঞ্জস্য স্থাপন করব, প্রেক্ষাপট বিবেচনা করব। আল্লাহ তায়ালা-কে আলিমুল গায়েব এবং সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা মানবো এবং আল্লাহ তায়ালা অনুগ্রহ করে তাঁর প্রিয় হাবিবকে ইলমে গায়েব সম্পর্কে অবহিত করেছেন এবং পৃথিবীর ভান্ডারসমূহের চাবিকাঠি দিয়েছেন এটাও মানবো।

একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ মিম্বরে উঠে বললেন, আমি তোমাদের জন্য অগ্রগামী ব্যক্তি, আমি তোমাদের হয়ে আল্লাহ'র নিকটে সাক্ষ্য দিব। আল্লাহ'র কসম, আমি এখানে বসে থেকেই আমার হাউযে কাওসার দেখতে পাচ্ছি। পৃথিবীর ধন-ভান্ডারের চাবি (অন্য বর্ণনায় রয়েছে পৃথিবীর চাবিগুচ্ছ) আমার হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ'র কসম! আমার ওফাতের পর তোমরা মুশরিক হয়ে যাবে এ আশঙ্কা আমি করি না। তবে আমি তোমাদের ব্যাপারে এ আশঙ্কা করি যে, দুনিয়ার ধন-সম্পদের মোহে তোমরা আত্মকলহে লিপ্ত হয়ে পড়বে। (সহীহ বুখারী ৩৫৯৬, ১৩৪৪, ৪০৪২, ৪০৮৫, ৬৪২৬, ৬৫৯০)

হুমায়দ ইবনু ‘আবদুর রহমান (র.) বলেনঃ আমি মু‘আবিয়া (রা.)-কে খুৎবায় বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ -কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ্ যার মঙ্গল চান, তাকে দ্বীনের ‘ইলম দান করেন। আল্লাহ্ দান করেন (দাতা) আর আমি বন্টন করি (বন্টনকারী)। এ উম্মত সর্বদা তাদের প্রতিপক্ষের উপর বিজয়ী থাকবে, আল্লাহর আদেশ (কিয়ামত) আসা পর্যন্ত আর তারা থাকবে বিজয়ী।’ (সহীহ বুখারী ৩১১৬)




একদিন প্রিয় নবী ﷺ মিম্বরে আরোহণ করে ঘোষণা করলেন, তোমরা আমাকে যা-ই প্রশ্ন করবে, আমি তারই উত্তর প্রদান করব। অতঃপর এমন এক ব্যক্তি, যাকে পারস্পরিক বাকবিতণ্ডার সময় অন্য এক ব্যক্তির (যে প্রকৃতপক্ষে তার পিতা নয়) সন্তান বলে সম্বোধন করা হতো, (তিনি) উঠে তার পিতার নাম জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি ﷺ উত্তর দিলেন, তোমার পিতা হুযাফা।
(সহীহ বুখারী ৭০৮৯)

তারপর তিনি বার বার বলতে লাগলেনঃ তোমরা আমার কাছে প্রশ্ন কর, আমার কাছে প্রশ্ন কর। এতে হযরত উমর (রাঃ) হাঁটু গেড়ে বসে গেলেন এবং বললেন, আমরা আল্লাহ্কে রব হিসাবে মেনে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করে এবং মুহাম্মাদ ﷺ কে রাসূল হিসেবে বিশ্বাস করে সন্তুষ্ট আছি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ ﷺ থামলেন।
(সহীহ বুখারী ৭২৯৪)

রাসূলুল্লাহ ﷺ ফজর হতে মাগরিব পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে নামাজসমূহ আদায়ের পরপর মিম্বরে আরোহণ করে খুতবা (বর্ণনা) দিতে থাকেন। এতে তিনি পূর্বে যা ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে যা ঘটবে সব জানিয়ে দেন। (সহীহ মুসলিম ৭১৫৯) তিনি ﷺ সৃষ্টির সূচনা সম্পর্কে জ্ঞাত করলেন। অবশেষে তিনি জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীর নিজ নিজ নির্দিষ্ট স্থানে প্রবেশ করার কথাও উল্লেখ করেন। যাদের স্মরণশক্তি ভাল ছিল, তারা এগুলো স্মরণ রাখতে পেরেছেন। (সহীহ বুখারী ৩১৯২) তিনি ﷺ কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে বলে জানান সেসবের কিছু ঘটলেই সাহাবায়ে কেরাম তা স্মরণ করতে পারতেন যেভাবে কেউ তার পরিচিত লোকের অনুপস্থিতিতে তার চেহারা স্মরণ রাখে। অতঃপর তাকে দেখা মাত্র চিনে ফেলে। (সুনান আবূ দাউদ ৪২৪০) হুযায়ফা (রাঃ) আল্লাহ্‌র কসম করে বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কিয়ামত পর্যন্ত ফিতনা সৃষ্টিকারী কোন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করতে বাদ দেননি, যাদের সংখ্যা হবে তিনশ’রও বেশী। তিনি তাদের নাম, তাদের পিতার নাম এবং তাদের গোত্রের নামও উল্লেখ করেন। (সূনান আবু দাউদ ৪২৪১) এছাড়াও রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, দাজ্জালের সংবাদ সংগ্রাহক দলের প্রতিটি ব্যক্তির নাম, তাদের বাপ-দাদার নাম এবং তাদের ঘোড়ার রং সম্পর্কেও তিনি অবগত আছেন। (সহীহ মুসলিম ৭১৭)

আচ্ছা, তিনি কি করে এত কম সময়ে এতসব বর্ণনা করতে পেরেছেন!!

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ আমি ‘জাওয়ামিউল কালিম (ব্যাপক অর্থবহ সংক্ষিপ্ত কথা) সহ প্রেরিত হয়েছি এবং আমাকে (ঐশী) প্রভাব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে। একবার আমি ঘুমের অবস্থায় দেখলাম, পৃথিবীর ভান্ডারগুলোর চাবি আমাকে দেয়া হয়েছে এবং তা আমার হাতে রেখে দেয়া হয়েছে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ﷺ ওফাত বরণ করে (পর্দা করে) গেছেন। আর তোমরা তা ব্যবহার (ভোগ) করছ কিংবা বলেছিলেন তোমরা তা থেকে উপকার লাভ করছ কিংবা তিনি এরকমই কোন কথা বলেছিলেন। (অন্য বর্ণনায়, আর তোমরা ঐ ভান্ডারগুলো সংগ্রহ করে চলেছ) (সহীহ বুখারী ৭২৭৩, ২৯৭৭, সুনানে আন-নাসায়ী ৩০৮৭)

সুতরাং আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা আর আল্লাহর সত্ত্বাগত ক্ষমতা কখনোই এক হতে পারে না, তাই "প্রিয় নবী ﷺ আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতায় গায়েবের খবর জানেন" এ আকীদা পোষণ করা কখনোই কুফরী হতে পারে না বরং এর বিপরীত আকীদা পোষণ করায় কুফরী। আরো মনে রাখা উচিৎ, আল্লাহ'র জ্ঞান অসীম। আল্লাহ পাক মহা অনুগ্রহ করে তাঁর রাসূলকে যা যা দরকার সবই জানিয়ে দিয়েছেন। কতটুকু জানিয়েছেন তার সীমা নির্ধারণ করার অধিকার আমাদের নেই, সেটা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ ই ভালো জানেন। কিন্তু আমাদের জ্ঞান আল্লাহ'র রাসূলের জ্ঞানের তুলনায় অতি নগন্য।
Top