নফল/মুস্তাহাব আমলকে হারাম/মন্দ বিদআত বলার অধিকার কে দিল?
-----


আবু সালামাহ (র.) বর্ণনা করেন যে, নবী ﷺ কে নতুন উদ্ভাবিত কোন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো, যা আল্লাহ'র কিতাবেও নেই, (নবী ﷺ এঁর) সুন্নাতেও নেই (তখন কি করবে এ বিষয়ে)। তখন তিনি বললেন: ‘মু’মিনদের মধ্যকার আবিদগণ (ইবাদতগুজার মুত্তাকী) সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করবে।’ (সুনান আদ-দারেমী ১১৯)

মুসায়্যেব ইবনে রাফি’ (র.) বলেন, যখন তাদের নিকট এমন কোন বিষয় আসত, যে বিষয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর কোন হাদীসে নেই, তখন সেজন্য তারা (সাহাবীগণ) একত্রে সমবেত হতেন এবং তারা সবাই মিলে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। ফলে তারা যে মত পোষণ করতো, তাদের সেই সমবেত মতেই হক (সত্য) নিহিত থাকত, তাদের সেই সমবেত মতেই হক (সত্য) নিহিত থাকত। (সুনান আদ-দারেমী ১১৬)

আ’মাশ (র.) বলেন, আমি ইবরাহীম (আন নাখঈ’)-কে কখনো বলতে শুনিনি, ‘এটি হালাল’ আর, ‘এটি হারাম’। বরং তিনি বলতেন:লোকেরা তা মাকরূহ (অপছন্দনীয়) মনে করে, আর লোকেরা তা ‘মুস্তাহাব’ (পছন্দনীয়) মনে করে। (সুনান আদ-দারেমী ১৯০)

সরাসরি নবীজির সুন্নাহ'তে না থাকলেই যদি কোন আমল বাতিল হয়ে যেত, মন্দ বিদআত হয়ে যেত তাহলে তিনি ﷺ কেন বললেন-

"কেউ ভালো কাজের কিংবা প্রথার প্রচলন করলে এবং তার অনুসরণ করা হলে সে তার নিজের সাওয়াবও পাবে এবং তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে, তবে তাদের সাওয়াব থেকে একটুও কমানো হবে না। আবার কেউ মন্দ কাজের প্রচলন করলে এবং তার অনুসরণ করা হলে তার উপর নিজের গুনাহ্ বর্তাবে উপরন্তু তার অনুসারীদের সম-পরিমাণ গুনাহর অংশীদারীও হবে, কিন্তু তাতে অনুসরণকারীদের গুনাহর পরিমাণ একটুও কমানো হবে না।"

[সহীহ মুসলিম ৬৬৯৩, ইফাঃ ৬৫৫৬, তিরমিযী ২৬৭৫, 
সুনানে ইবনে মাজাহ ২০৩, নাসায়ী ২৫৫৪, দারিমী ৫১২
মুসনাদে আহমাদ ১৮৬৭৫, ১৮৬৯৩, ১৮৭০১]

তিনি কি বলেননি -

"আল্লাহ তা'আলা তার গ্রন্থে যা বৈধ করেছেন তা-ই বৈধ এবং আল্লাহ তা'আলা তার গ্রন্থে যা অবৈধ করেছেন তা-ই অবৈধ। আর তিনি যে সকল বিষয়ে নীরব থেকেছেন (বৈধ বা অবৈধ বিষয়ে কিছুই বলেননি) তা তাঁর ক্ষমা ও উদারতার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। 

(সূনান আত তিরমিজী ১৭২৬)

আপনার ইচ্ছা হয় তো আপনি মুস্তাহাবের উপর আমল করুন, আর না হয় ছেড়ে দেন, কেন ভ্রান্ত ফতোয়াগিরি করে হারাম ঘোষণা করছেন...! এমন কি কখনও বলা হয়েছে যে, এটা না করলে গুনাহ হবে...! কেন সহজ সরল ইসলামটাকে কঠিন বানিয়ে ফেলছেন...!

নবী করীম ﷺ ইরশাদ করেনঃ নিশ্চয়ই দ্বীন সহজ-সরল। দ্বীন নিয়ে যে বাড়াবাড়ি করে দ্বীন তার উপর বিজয়ী হয়। কাজেই তোমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন কর এবং (মধ্যপন্থার) নিকটবর্তী থাক, আশান্বিত থাক এবং সকাল-সন্ধ্যায় ও রাতের কিছু অংশে (ইবাদতের মাধ্যমে) আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর। 

(সহীহ বুখারী ৩৮)

সাবধান!

"ওহে যারা ঈমান এনেছ! ভালো বিষয়গুলো যা আল্লাহ্ তোমাদের জন্য বৈধ করেছেন সে-সব তোমরা নিষিদ্ধ করো না, আবার বাড়াবাড়িও (সীমালঙ্ঘন) করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ ভালোবাসেন না সীমালঙ্ঘন কারীদের।" (সূরা আল মায়িদাহঃ ৮৭)

"তোমাদের জিহবা থেকে মিথ্যে কথা বেরোয় বলেই তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করার জন্য এমন কথা বলো না যে, এটা হালাল, আর এটা হারাম। যারা আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যে উদ্ভাবন করে, তারা কক্ষনো কল্যাণ লাভ করতে পারে না।"  (সূরা নাহলঃ ১১৬)
Top