ভেতরে বাহিরে অসহ্য সুন্দর
কৃতঃ গোলাম দস্তগীর লিসানী
-----
একটা গল্প বলি?
গল্পটা তিন স্তরের।
আমার শাইখের বাসায় গেলেন এক আলিম পাশ (ইন্টারমিডিয়েট) ছাত্র। শাইখ তাঁকে মেহমান-ঘরের বাইরে রেখে ভেতরে গেলেন। তখনি সে ছাত্র বাইরে থেকে বাথরুম ঘষার আওয়াজ পেলেন।
শাইখ তার ছোট্ট তরুণ মুরিদকে বিদায় দেয়ার পর সেই ত্বলিব বাথরুমে গিয়ে দেখে অবস্থা ভয়ানক। শাইখ আসলেই নিজহাতে কমোড ঘষে ধুয়ে ঝকঝকে করে পানি ঢেলে গেছেন।
অথচ তখন তাঁর মুরিদ সংখ্যা কম হলেও ৬০ লাখ। তাঁর প্রতিষ্ঠানে পড়া সাবেক বর্তমান মাদ্রাসা ছাত্রর সংখ্যা কয়েক লাখ। আলিম-উলামা মুরিদের সংখ্যাই কয়েক লাখ।
এই শাইখের দাদাপীর এবং দাদাজান ছিলেন বিরাট ব্যবসায়ী। রেঙ্গুন থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার বন্দর তক তাঁর কাপড়ের ব্যবসা ছিল। স্থল ও জলপথে।
ভিন্ন ভিন্ন মহাদেশে তাঁর ছিল আক্ষরিক জমিদারি। কালে কালে সে সম্পদ বেড়েছে। তো, সেই দাদাজান ছিলেন বিরাট আলিম। মুরিদ হবার আগেই বহু মানুষকে মুসলিম করেছেন। বহু অনৈসলামিক জনপদে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছেন।
সেই বিরাট সফল বিজনেস টাইকুন + সফল ধর্মপ্রচারক + সফল আলিম বৃদ্ধ বয়সে মুরিদ হলেন। তারপর? ১০ বছর ২২ কিলোমিটার দূরের আপন পীরের বাড়িতে পাহাড় ডিঙিয়ে জঙ্গল ডিঙিয়ে মাথায় করে লাকড়ি নিয়ে যেতেন।
কেন?
কেন হেঁটে যেতেন বৃদ্ধ আলিম, দা'য়ী জমিদার?
কেন একজন সম্মানিত বয়স্ক নবীবংশধর হয়ে এ কাজ করতেন?
কারণ-
কাল একজন চর্মরোগী ইন্তেকাল করেন।
দুর্গন্ধ ছুটছে।
আত্মীয় স্বজনরা কেউ ছুঁবেন না।
কে ছুঁলো? কে গোসল করালো? কে কাঁধে নিয়ে কবরে নামিয়ে দিয়ে এল?
সূফিপথের গল্প শুনেছি কেবল? চোখে দেখিনি?
গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ এর মানবিক টিমের সদস্য আমার পীরভাইরা করোনাকাল থেকে বিনা খরচে ২ হাজারের বেশি লাশ দাফন কাফন গোসল পরিবহন করেছেন।
সারাদেশে। শতাধিক কেন্দ্র থেকে।
সৎকারকৃতদের মধ্যে মুসলিম তো আছেনই, আছেন সব ধর্মমতের মানুষ।
অজস্র মানুষকে বাসায় বাসায় গিয়ে দিয়েছেন ফ্রি অক্সিজেন সেবা।
দিয়েছেন ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা।
পঞ্চাশ লক্ষাধিক টাকার নগদ অর্থ চালডাল সাবান দিয়েছেন।
করেছেন কোয়ারান্টাইন হাউস।
এখন করতে যাচ্ছেন বিশ্বমানের হাসপাতাল।
হায়, এরা কি জীবনে লাশ টেনেছে? অনেকে মায়ের স্নেহের আধিক্যে এক গ্লাস পানিও ঢেলে খায়নি। কেউ মাদ্রাসা ছাত্র তো কেউ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের। কেউ ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবী, গৃহিণী, ডাক্তার, শিক্ষক।
যখন করোনায় সবাই মরার ভয়ে ভীত,
গাউসিয়া কমিটির হাজার হাজার ভাইবোন তখন ঘর ছেড়েছেন।
ফল চোখে দেখা যাচ্ছে।
মানুষ মারার জন্য আজকে কোটি কোটি মুসলিম প্রস্তুত সারা পৃথিবীতে।
মানুষ হবার জন্য প্রস্তুতি দেন সূফিরা। ভেতর বাহিরে এ কী রূপ!
ভুবনও মোহনও রূপ দেখতে চমৎকার-
মাওলানার রূপেরও বাহার-
মাওলানার রূপেরও বাহার!
(আমাকে দেখতে হলে মাদ্রাসাকে দেখো,
আমাকে ভালবাসলে মাদ্রাসাকে ভালবাসো...)