টিভির অ্যাডভারটাইজমেন্টে, বিলবোর্ড, মিডিয়ায় নারীদেহের প্রদর্শন কি নারীকে আদৌ কোনো সম্মান বা স্বাধীনতা দিয়েছে?

গাড়ির অ্যাডের সাথে সাজ-সজ্জায় অর্ধনগ্ন নারী, পুরুষের ব্যবহৃত পণ্যের অ্যাডেও নারী, বিশাল বিলবোর্ডে পণ্যের সাথে নারী, বাচ্চাদের চকলেট, আইসক্রিমের অ্যাডে,পুরুষের বডি স্প্রে, শেভিং ক্রিম এর অ্যাডে যৌনউদ্দীপক নারী, ফ্যাশন শো, সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা সবখানেই কেবল নারীদেহ প্রদর্শনীর প্রতিযোগিতা।

পণ্যের মার্কেটিং এর একমাত্র হাতিয়ার হলো নারী দেহ। আর এইসব বিজ্ঞাপন নিমার্তার অধিকাংশই পুরুষ, তারা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এন্টারটেইনের কথা বিবেচনা করেই বিজ্ঞাপন সাজায়। তারা জানে যে এই সমাজে নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি আসলে কেমন। নারীকে পুরুষেরা শুধু পণ্যই ভাবে, তাই পণ্যের বিজ্ঞাপনে নারী দেহের প্রদর্শন খুব বেশী প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। 

সেজন্য তারা এটাকেই পুঁজি করে বিজ্ঞাপন সাজায়। আর নারী হয় শুধুই স্ক্রিপ্টের বুলি আওড়ানো পুতুল।

এই বিকৃত মানসিকতা নারীদেরকে পণ্যের কাতারে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বিজ্ঞাপনে নারী প্রদর্শন দেখে লক্ষ্য এবং উপলক্ষ্যের মধ্যেপার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। পণ্যের মান যাই হোক লাস্যময়ী যৌনউদ্দিপক নারী উপস্থাপনই হয় প্রধান লক্ষ্য। এর পেছনে বিকৃত মনের পুরুষ শ্রেণীই প্রধানত দায়ী।

এছাড়া মিডিয়ার কল্যাণে ‘সাহসী নারী’ এর সংজ্ঞাটাও যেন পাল্টে গেছে। এই সমাজের কুপ্রথা, যৌতুক, দেনমোহর বা পিতৃসম্পদের ন্যায্য হিসাবের জন্য লড়াই করা, নারীর প্রতি অবিচার, সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়াটা যত না সাহসিকতার পরিচয় তার চেয়ে বেশি সাহসিকতা বলতে এখন অন্যকিছুকে বোঝানো হয়।

‘সাহসী নারী’ বলতে প্রথমত: নাটকসিনেমার সেইসব নারীদের বুঝানো হয় যারা ক্যামেরার সামনে কাপড় ছেড়েখোলামেলা হতে পারেন। আবার তারাও সাহসী নারী যারা প্রকাশ্যে সামাজিক এবংধর্মীয় রীতিনীতিতে নিষিদ্ধ জীবনাচার যেমন- লিভ টুগেদার, পরকীয়া এবংবহুগামিতার জীবনাচারে অভ্যস্থ। 

কিন্তুসাহসী কাছে আসার ‘পরকীয়া’ প্রেম বা ‘জরায়ুর স্বাধীনতা’ নামক স্বেচ্ছাচারিতা যে আসলে কোনো সাহসিকতার কিছুই বহন করে না, শুধু ধর্মীয় আর সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়কেই ত্বরান্বিত করে, এটুকু বোঝার মতো বুদ্ধিও অনেকের নেই।


মিডিয়া যেভাবে নারীকে দেখায় পুরুষতান্ত্রিক সমাজও নারীদের সেভাবেই বিবেচনা করে। তাই তারা নারীকে ‘মা’ হিসেবে নয় বরং ‘মাল’ হিসেবেই ভাবতে থাকে। ফলস্রুতিতে নারীকে ইভটিজিং, যৌনহয়রানি আর ধর্ষনের মতো জঘন্য অবিচার সহ্য করতে হয়। যেকোনো বয়সের নারী, এমনকি কন্যাশিশুরাও এইসব শিকারীর হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না।

বিপুল সংখ্যক নারী প্রতিনিয়ত শিক্ষা আর কর্মের জন্য ঘর থেকে বের হচ্ছে। কিন্তু তাদের নিরাপত্তা সেভাবে বাড়ছে না। কর্মস্থলে, বাহিরে, যানবাহনে এমনকি ঘরেও তারা নিরাপদ নয়। নারীর প্রতি পুরুষের এই দৃষ্টিভঙ্গি কারণে নারী নির্যাতন এবং সহিংসতা দিন দিন যেন বেড়েই চলছে যা আমাদের সামাজিক সভ্যতার ভিতে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে। 

নারীর প্রতি পুরুষের এই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। বিজ্ঞাপনসহ সকল ক্ষেত্রে নারীদেহের অযাচিত প্রদর্শন বন্ধ করতে হবে। নারী ভোগের পাত্র নয়, পণ্য বিজ্ঞাপনের প্রদর্শনীর বস্তু নয়। নারী সম্মানের, নারী তার মেধা আর যোগ্যতায় মানুষ হিসেবে বাঁচুক। নারী পণ্য নয়, সম্মানিত হয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচুক।

'নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে'

ড. উম্মে বুশরা সুমনা

Top