শাবানের যে কি বাহার! কি যে আলোচনা করব। স্বয়ং রাসূলে পাক ﷺ ইরশাদ করেন, শাবান আমার মাস আর রমযান আল্লাহর মাস। [১]


সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা রা. একদিন রাসূলে কারীমকে ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ ﷺ! সকল মাসের চেয়ে কি আপনার নিকট শাবনের রোযা রাখা অধিক প্রিয়? রাসূলে কারীম ﷺ ইরশাদ করলেন, আল্লাহ তায়ালা এই বৎসরে সকল মৃত্যুবরণকারীদের নাম এই মাসে লিখে দেন এবং আমি পছন্দ করি যে যখন আমার বিদায়ের সময় আসবে তখন যেন আমি রোযা অবস্থায় থাকি। অর্থাৎ রাসূলে কারীম ﷺ সম্পূর্ণ শাবান মাসে রোযা রাখতেন। [২]


১৫ ই শাবানুল মুয়াজ্জামের রাত্রিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যপারে গুনিয়াতুত তালাবীনে আছে, অনেক কাফন ধুয়ে তৈরী করে রাখা হয় কিন্তু পরিধানকারীরা রাস্তায়-বাজারে ঘুরাফেরায় রত থাকে। কত কবর খনন করা হয় কিন্তু যারা দাফন হবে তারা হাসি-খুশিতে বিভোর থাকে। বহু দালানের নির্মাণ কাজ পূর্ণ হতে চলছে এদিকে দালানের মালিকেরও মৃত্যুর সময় পূ্র্ণ হতে চলছে।[৩] আল্লাহু আকবার!


সায়্যিদুনা আলিউল মুরতাদ্বা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলে কারীম ﷺ ইরশাদ করেন, যখন শাবানের ১৫ তম রাত আসে তখন রাতে কিয়াম করো আর দিনে রোযা রাখ। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা সূর্যাস্থের পর থেকে প্রথম আসমানে বিশেষ তাজাল্লী বর্ষণ করেন। আর বলতে থাকেন, কে আছ আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনাকারী! আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কেউ আছ কি জীবিকা প্রার্থনাকারী আমি তাকে জীবিকা দিব।


কেউ আছ কি মুসিবতগ্রস্থ আমি তাকে উদ্ধার করব। কেউ আছ কি! কেউ আছ কি! সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত এরুপ বলতে থাকেন। [৪]


আল্লাহ আকবার। স্বয়ং রব তায়ালার রহমতের ডাক আসছে আর আপনি ইবাদত না করে ঘুমিয়ে কাটাবেন এই মহান রাত্রিটি? এটা হতে পারে না। তবে কিছু হতভাগা এমন আছে যারা এই রাত্রিতেও ক্ষমা পাবে না!


এই রাতটি খুবই মহান। তাই অলসতা করে কাটানো উচিত নয়। এই রাতে আল্লাহ তায়ালা বনি কালব গোত্রের ছাগলের পশমের চেয়েও অধিক পরিমাণ ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন। কিতাবে আছে বনি কালব গোত্রটি আরবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছাগল পালন করত। তবে রাসূলে কারীম ﷺ ইরশাদ করেন, ৬ প্রকারের ব্যক্তিকে এ রাতেও ক্ষমা করা হয় না। 


মদ্যপানে অভ্যস্থ, পিতা-মাতার অবাধ্য, ব্যাভিচারী, চুগলখোর, ছবি প্রস্তুতকারী, আত্নীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী। [৫]


অনুরুপভাবে যাদুকর, গণক, মুসলমানদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী, অহংকার সহকারে কাপড় বা পায়জামা গোড়ালির নিচে ঝুলিয়ে পরিধানকারীদের ব্যপারেও সতর্কতা আছে।


আল্লাহ যেন এসব গুণাহ থেকে আমাদের মেহফুজ রাখেন আর এই পবিত্র রাত্রিটিতে বেশি বেশি ইবাদত করার তৌফিক দেন।


রেফারেন্সঃ

[১] আল জামেয়ুল সগীর, ৩০১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪৮৮৯।

[২] মুসনাদে আবু ইয়ালা, ৪র্থ খন্ড, ২৭৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪৮৯০।

[৩] গুনিয়াতুত তালিবীন, ১ম খন্ড, ৩৪৮ পৃষ্ঠা। 

[৪] সুনানে ইবন মাযাহ, ২য় খন্ড, ১৬০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৩৮৮।

[৫] ফাযায়েলুল আওকাত, ১ম খন্ড, ১৩০ পৃষ্ঠা, ২৭ নং হাদীস। 


Top