শানে রিসালাতে বিয়াদবীকারী, আহলে বাইত ও সাহাবায়ে কেরামের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী- এই তিন শ্রেণির মানুষের আমল কোন কাজে আসবেনা এবং তাদের উপর আল্লাহ'র লানত। রাসূলুল্লাহ ﷺ ভবিষ্যদ্বাণী করেন উম্মাতে মুহাম্মাদী ৭৩ ফেরকায় বিভক্ত হবে তন্মধ্যে একটিমাত্র দল জান্নাতী হবে। বর্তমানে যেসব বিদআতী আকীদা পোষণকারী বাতিল ফেরকা দেখা যায় তাদের মধ্যে উপরিউক্ত তিনটি বৈশিষ্ট্যের অন্ততপক্ষে একটি হলেও মোটাদাগে দেখতে পাবেন। এই প্রত্যেক শ্রেণির মানুষদের জন্য কুরআন এবং হাদিসে কঠোর সতর্কবাণী এসেছে।

নবীজির শানে বেয়াদবী করা, আহলে বাইত ও সাহাবায়ে কেরামকে কষ্ট দেয়া, তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা- এসবের কারণে রাসূলুল্লাহ ﷺ কষ্ট পান। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ কে কষ্ট দিলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা কষ্ট পান।

আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ হুঁশিয়ার (সাবধান)! আমার সাহাবীদের বিষয়ে আল্লাহ্ তা'আলাকে ভয় কর। আমার পরে তোমরা তাদেরকে (গালি, বিদ্রুপ, সমালোচনার) লক্ষ্যবস্তু বানিও না। যেহেতু যে ব্যক্তি তাদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করল, সে আমার প্রতি ভালোবাসার খাতিরেই তাদেরকে ভালোবাসল। আর যে ব্যক্তি তাদের প্রতি শক্রতা ও হিংসা পোষণ করল, সে আমার প্রতি শক্রতা ও হিংসাবশেই তাদের প্রতি শক্ৰতা ও হিংসা পোষণ করল। যে ব্যক্তি তাদেরকে কষ্ট দিল, সে আমাকেই কষ্ট দিল। যে আমাকে কষ্ট দিল, সে আল্লাহ তা’আলাকেই কষ্ট দিল। আর যে আল্লাহ তা'আলাকে কষ্ট দিল, শীঘ্রই আল্লাহ তা'আলা তাকে পাকড়াও করবেন।
(সূনান আত তিরমিজী ৩৮৬২)

"নিশ্চয় যারা কষ্ট দেয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে, তাদের উপর আল্লাহর লানত (অভিসম্পাত) দুনিয়া ও আখিরাতে এবং আল্লাহ তাদের জন্য লাঞ্চনার শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।" (সূরা আহযাবঃ ৫৭)

ঐ তিনশ্রেণির মানুষই যে অভিশপ্ত এ বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। বিশেষ করে যারা শানে রিসালাতে গোস্তাখী করেছে তারা যে অভিশপ্ত হয়েছে এ বিষয়ে সিহাহ সিত্তার হাদিসে পাকে, এমনকি বাস্তব জীবনেও আমরা অনেক প্রমাণ দেখতে পাই। শানে রিসালাতে সামান্যতমও যেন বেয়াদবী না হয়ে যায় সেজন্য মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা সতর্ক করে বলছেন,

"ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা নবীর আওয়াজের উপর তোমাদের আওয়াজ উচ্চ করো না। তোমরা নিজেরা পরস্পরে যেমন উচ্চ আওয়াজে কথা বল, তাঁর সঙ্গে সে রকম উচ্চ আওয়াজে কথা বলো না। তা করলে তোমাদের (যাবতীয়) আমল নিস্ফল হয়ে যাবে, আর তোমরা একটু টেরও পাবে না।" (সূরা হুজরাত, আয়াত ২)

(উক্ত আয়াত নাযিলের পর) হযরত উমার (রাঃ) যখন নবী ﷺ এঁর সঙ্গে কোন কথা বলতেন, তখন (আওয়াজ উচ্চ হয়ে যাওয়ার ভয়ে) গোপন বিষয়ের আলাপকারীর মত চুপে চুপে বলতেন, এমন কি তা শোনা যেত না যতক্ষণ না নবী ﷺ তাকে আবার জিজ্ঞেস করতেন। (সহিহ বুখারী ৭৩০২)

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, একদা নবী ﷺ সাবিত ইবনু কায়স (রাঃ) কে খুঁজে পেলেন না। একজন সাহাবী বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! আমি আপনার কাছে তাঁর সংবাদ নিয়ে আসছি। তারপর তিনি তাঁর কাছে গিয়ে দেখলেন যে, তিনি তাঁর ঘরে মাথা নীচু করে বসে আছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কী অবস্থা? তিনি বললেন, অত্যন্ত খারাপ। কারণ (এই অধম), তার আওয়াজ (স্বর) নবী ﷺ এঁর আওয়াজ হতে উচ্চ হয়েছিল। ফলে, তার ‘আমল বরবাদ হয়ে গেছে এবং সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। [এগুলো তিনি আশংকার কারণে বলছিলেন কেননা জন্মগতভাবেই তাঁর আওয়াজ উচ্চ ছিল। আর তিনি হলেন সেই সাহাবী যাঁকে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এঁর খতীব বলা হত। আহ! ইনাদের কেমন আল্লাহভীতি এবং প্রিয় নবী ﷺ এঁর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ছিল!] তারপর ঐ সাহাবী নবী ﷺ এঁর কাছে ফিরে এসে খবর দিলেন যে, তিনি এমন এমন কথা বলছেন। মূসা ইবনু আনাস রহঃ বলেন, এরপর ঐ সাহাবী এক মহা সুসংবাদ নিয়ে তাঁর [সাবিত ইবনু কায়স (রাঃ)] কাছে ফিরে গেলেন (এবং বললেন) নবী ﷺ আমাকে বলেছেন, তুমি যাও এবং তাকে বল, তুমি জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত নও বরং তুমি জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত। (সহিহ বুখারী ৩৬১৩, ৪৮৪৬)

উক্ত আয়াতের তাফসীরে উলামায়ে কেরাম বলেন, প্রিয় নবী ﷺ কে কষ্ট দেয়া, তার শানে বেয়াদবী করা কুফর যার কারণে সমস্ত আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। অথচ ঐসব তথাকথিত লাগামহীন বক্তাদের অবস্থা কেমন..!

সূরা হুজরাতের ২-৩ নং আয়াতের তাফসীরে, তাফসীরে জালালাইনের হাশিয়াতে উল্লেখ রয়েছে, রাসূল ﷺ এঁর প্রতি আদব প্রদর্শন ও তাকওয়া (আল্লাহভীতি) পরস্পর ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যাদের অন্তরে যত বেশি খোদাভীতি রয়েছে তারা নবী করীম ﷺ এঁর প্রতি ততবেশি আদব প্রদর্শন করবে, তাঁকে ভালবাসবে, তাঁর অনুগত থাকবে। পক্ষান্তরে যাদের অন্তরে খোদাভীতির বালাই নেই তারা যে, নবী করীম ﷺ এঁর প্রতি শুধু অশ্রদ্ধাই পোষণ করবে তা-ই নয়, তাঁকে অপমানিত করতেও কুন্ঠিত হবে না। নবী করীম ﷺ এঁর সাথে বেয়াদবী করা অন্তরে খোদাভীতির অনুপস্থিতিকেই প্রমাণিত করে, যা মূলত কুফরীরই লক্ষণ। এছাড়াও সেখানে এই আয়াতখানাও আনা হয়েছে, "আর যে কেউ আল্লাহর নিদর্শনগুলোকে সম্মান করবে সে তো তার অন্তরস্থিত আল্লাহ-ভীতি থেকেই তা করবে।" (সূরা হজ্জ্ব, আয়াত ৩২)

সাহাবায়ে কেরামকে (উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকরতঃ) গালমন্দ-কারীদের আমল বিনষ্টঃ

হযরত ওয়াইম ইবনু সায়েদা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তাআলা আমাকে (নিজ পছন্দনীয় রাসূল) মনােনীত করেছেন এবং আমার জন্য আমার সাহাবাদেরকে মনােনীত করেছেন। তিনি আমার জন্য তাদের মধ্য থেকে ওজিরগণ, বৈবাহিক আত্মীয় (জামাতা ও শ্বশুর) এবং আনছার (সাহায্যকারী) বানালেন। সুতরাং যে তাদেরকে গালি দেয় তার উপর আল্লাহ্ তা'আলার, তার ফেরেশতাদের এবং সমস্ত লােকদের অভিসম্পাত (লানত) হােক এবং কেয়ামতের দিনে আল্লাহ তা'আলা তাদের কোন ফরজ ও নফল কবুল করবেন না। (মুসতাদরেক হাকেম, ৩/৭৩২, হাদীস নং ৬৬৫৬, আল মু'জামুল আওসাত, ১/১৪৪, হাদীস নং ৪৫৬, আল মুজামুল কবীর, ১৭/১৪০; হাদীস নং ৩৪৯)

আহলে বাইতের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীর আমল বিনষ্টঃ

রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, যদি কোন ব্যক্তি রুকন ও মক্কামে ইব্রাহীমের মাঝখানে অবস্থান করে, অতঃপর (তাতে) নামাজ আদায় করে এবং রােজা রাখে, অতঃপর (এমতাবস্থায়) মারা গেল যে, সে মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এঁর পরিবার বর্গের (আহলে বাইত) সাথে হিংসা পােষণকারী, (তাহলে) সে জাহান্নামে প্রবেশ করল। [আল মু'জামুল কাবীর-১১: ১৪২ (১১৪১২), আল মুসতাদরেক -৩:১৬১ (৪৭১২)]

আহলে বাইতের ভালবাসা ঈমানের অঙ্গ। আহলে বাইতের ভালবাসা ব্যতিত অন্তরে ঈমান প্রবেশ করতে পারেনা। তাই ঈমানবিহীন আমল মূল্যহীন।

হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) বলেন, আমরা কুরায়শ গোত্রের লোকদের সমাবেশে তাদের পারস্পরিক আলোচনাকালে তাদের সাথে সাক্ষাৎ করলে তারা তাদের আলোচনা বন্ধ করে দিত। আমরা বিষয়টি রাসূলুল্লাহ ﷺ -এঁর নিকট উল্লেখ করলে তিনি বলেনঃ লোকেদের কী হল যে, তাদের পারস্পরিক আলোচনাকালে আমার আহলে বাইতের কোন লোককে দেখলে তারা তাদের কথাবার্তা বন্ধ করে দেয়? আল্লাহ্‌র শপথ! কোন ব্যক্তির অন্তরে ঈমান প্রবেশ করতে পারে না যতক্ষণ সে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য এবং আমার সাথে তাদের আত্মীয় সম্পর্কের কারণে তাঁদেরকে (আহলে বাইতকে) ভালোবাসবে না। (সুনানে ইবনে মাজাহ ১৪০, মুসনাদে আহমাদ ১৭৭৫)

উক্ত প্রসঙ্গে এভাবেও এসেছে,

হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) রাগান্বিত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর নিকটে যান। তিনি ﷺ প্রশ্ন করেনঃ কিসে আপনাকে রাগান্বিত করেছে? তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! আমাদের সাথে কুরাইশদের কি হল? তারা নিজেরা যখন পরস্পর মিলিত হয় তখন উজ্জ্বল চেহারায় মিলিত হয়। কিন্তু তারা আমাদের (হাশিমীদের) সাথে এর বিপরীত অবস্থায় মিলিত হয়। রাবী বলেন, (এ বক্তব্য) রাসূলুল্লাহ ﷺ এতই রাগান্বিত হন যে, তাঁর মুখমণ্ডল রক্তিম রর্ণ ধারণ করে। তারপর তিনি ﷺ বলেনঃ সেই মহান সত্তার শপথ, যার কাছে আমার জীবন! কোন ব্যক্তির অন্তরে ঈমান প্রবেশ করতে পারে না, যতক্ষণ না সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সন্তুষ্টির) জন্য আপনাদেরকে ভালোবাসে। এরপর তিনি বললেনঃ হে লোকেরা! যে কেউ আমার চাচাকে দুঃখ দিল সে যেন আমাকেই দুঃখ দিল। কেননা কোন লোকের চাচা তার পিতার মত (সম্মানীয়)। (সূনান আত তিরমিজী ৩৭৫৮, মিশকাত ৬১৪৭)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেন,

(হে প্রিয় হাবিব) আপনি বলুন, ‘আমি সেটার (নবুয়তি দায়িত্ব পালনে আমার পরিশ্রমের) জন্য তোমাদের নিকট থেকে কোন পারিশ্রমিক চাই না, কিন্তু চাই নিকটাত্মীয়ের ভালোবাসা। (সূরা আশ-শূরাঃ ২৩)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি আমার পরিবারবর্গে'র ব্যাপারে আমাকে কষ্ট দেয় আল্লাহ তা'আলা তার ওপরে ভীষণ রাগান্বিত হন। (যেহেতু উনার পরিবারবর্গকে কষ্ট দেয়া মানে নবীকে কষ্ট দেয়া) [কানযুল উম্মাল, আল মুত্তাকীউল হিন্দ, ১২:৭১৩ (৩৪১৪৩]

হাদিসে পাকে স্পষ্টভাবে আহলে বাইতকে আঁকড়ে ধরার কথা আসার পরও যারা এটাকে অস্বীকার করে, তারা কি মিথ্যাবাদী নয়!! মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা যাদের পবিত্রতা ঘোষণা করেছেন, তাঁর প্রিয় হাবিব ﷺ পথভ্রষ্টতা থেকে বাঁচতে কুরআন-সুন্নাহ'র সাথে যাদেরকেও আঁকড়ে ধরতে নির্দেশ দিয়ে তাদেরকে সম্মানিত করেছেন, সেই আহলে বাইতকে আঁকড়ে ধরার বিষয়কে, হাদিসকে অস্বীকার করা মানে, তাদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন নয় কি?? সহিহ সনদে আসার পরেও মাওলা আলী রাঃ ইলমের শহরের দরজা-এ সম্পর্কিত হাদিসকে দূর্বল-বানোয়াট, শিয়াদের বানানো বলা কি রাসূলের হাদিসের প্রতি ধৃষ্টতা নয়!! আহলে বাইতের মর্যাদার কথা শুনলেই শিয়া অপবাদ দিয়ে দেয়া অন্তরে তাদের প্রতি বিদ্বেষের প্রমাণ নয় কি!! এসব আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়া নয় কি??

ইমাম বুখারী রহঃ উল্লেখ করেন,

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ফাতিমা রাঃ আমার (দেহের/ কলিজার) টুকরা। যে তাকে দুঃখ দিবে, সে যেন আমাকে দুঃখ দিল। (সহীহ বুখারী ৩৭১৪)

ইমাম মুসলিম রহঃ উল্লেখ করেন,

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, "আমার কন্যা আমারই একটা অংশ। যা তাকে সম্মানহানি করে তা আমাকেও সম্মানহানি করে, তাকে যা কষ্ট দেয়, আমাকেও তা কষ্ট দেয়।" (সহীহ মুসলিম ৬২০১)

ইমাম ইবনে মাজাহ রহঃ উল্লেখ করেন,

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ যে ব্যক্তি হাসান ও হুসায়নকে ভালোবাসে, সে আমাকেই ভালোবাসে এবং যে ব্যক্তি তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে সে আমার প্রতিই বিদ্বেষ পোষণ করে। (সূনানে ইবনে মাজাহ ১৪৩)

ইমাম তিরমিজী রহঃ উল্লেখ করেন,

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, "তোমরা আল্লাহ তা'আলাকে ভালবাস কেননা তিনি তোমাদেরকে তার নিয়ামতরাজি খাবার খাওয়াচ্ছেন। আর আল্লাহ্ তা'আলার প্রতি ভালবাসার কারণে তোমরা আমাকেও ভালবাস এবং আমার ভালবাসার কারণে আমার আহলে বাইতকেও ভালবাস।" (সূনান আত তিরমিজী ৩৭৮৯)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ তোমাদের কাছে আমি এমন (দুটি) জিনিস রেখে যাচ্ছি যা তোমরা শক্তরূপে আঁকড়ে ধরলে আমার পরে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তার একটি অন্যটির তুলনায় বেশি মর্যাদাপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণঃ (একটি হল) আল্লাহ তা'আলার কিতাব যা আকাশ হতে মাটি পর্যন্ত দীর্ঘ এক রশি এবং (অন্যটি) আমার আহলে বাইত। এ দুটি কখনও বিচ্ছিন্ন হবে না কাউসার নামক ঝর্ণায় আমার সঙ্গে একত্রিত না হওয়া পর্যন্ত। অতএব তোমরা লক্ষ্য রেখ আমার পরে উভয়ের সঙ্গে কিভাবে আচরণ কর। (সূনান আত তিরমিজী ৩৭৮৮)

সিদ্দিকে আকবর আবূ বকর (আঃ) হুকুম করেন,

মুহাম্মাদ ﷺ এঁর পরিবার পরিজনের (আহলে বাইত) প্রতি তোমরা অধিক সম্মান প্রদর্শন করবে। (সহীহ বুখারী ৩৭১৩)

তিনি আরো বলেন, মুহাম্মাদ ﷺ এঁর সন্তুষ্টি, তাঁর পরিবারবর্গের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে অর্জন কর। (সহীহ বুখারী ৩৭৫১)

হযরত আলী রাঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি আমার পরিবারবর্গ ও আনসারদের অধিকার সম্পর্কে জানেনা সে নিশ্চয় তিনজনের একজন। ১. হয়ত সে মুনাফিক, ২. অথবা সে জারজ, ৩. অথবা সে নাপাকীর সন্তান; অর্থাৎ তার মা তাকে ঋতুকালীন অবস্থায় গর্ভধারণ করেছে। [শুয়াবুল ঈমান-২:২৩২ (১৬১৪)।]

সুতরাং নবীজির শানে বেয়াদবী করা, আহলে বাইত ও সাহাবায়ে কেরামকে কষ্ট দেয়া, তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার অর্থ হলো রাসূলুল্লাহ ﷺ কে কষ্ট দেয়া। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ কে কষ্ট দিলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা কষ্ট পান। আর আল্লাহর বাণী অনুযায়ী, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, তাদের জন্য আল্লাহ'র লানত দুনিয়া ও আখিরাতে। নবীজির হাদিস অনুযায়ী, এদের নামাজ-রোজা যাবতীয় কোন আমল কোন কাজে আসবে না।
Top