হাসিমুখে কথা বলা ইবাদত
হাসিমুখে কথা বলা ইবাদত


হাসিমুখে কথা বলা ইবাদত

সংকলকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি


রাসুলুল্লাহ (ﷺ) মুচকি হাসতেনঃ


  • হজরত আবদুল্লাহ ইবনে হারেস (رضي الله عنه) বলেছেন, মুচকি হাসিতে রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর চেয়ে অগ্রগামী কাউকে আমি দেখিনি। (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস : ২২৭)


  • মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলার গুরুত্ব দিতে গিয়ে নবী (ﷺ) তাঁর এক প্রিয় সাহাবি আবু জার (رضي الله عنه)-কে বলেছিলেন, ‘কোনো ভালো কাজকেই তুচ্ছ মনে করবে না, এমনকি তা যদি তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করার বিষয়ও হয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬২৬)


প্রিয় নবী (ﷺ) সর্বদা সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন। কারো সঙ্গে দেখা হলে কমপক্ষে হাসিমুখে তাকে শুভেচ্ছা জানাতেন। 

  • হজরত জারির ইবনে আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) বলেন, ‘আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকে রাসূল (ﷺ) আমাকে তার দরবারে উপস্থিত হতে বাঁধা দিতেন না এবং আমাকে দেখলেই তিনি মুচকি হাসতেন। ’ -সহিহ বোখারি : ৩৮২২


হজরত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সর্বদা বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলতেন। তিনি ছিলেন সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও আলংকারিক ভাষার কৃতিত্বধারী। তার শব্দ ও বাক্য, উচ্চারণ ও ভঙ্গিমা সবকিছুই ছিলো- বিশুদ্ধতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ; বরং বলা যায় সাহিত্যের উত্তম নিদর্শন। 


  • এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, ‘রাসূল (ﷺ) ছিলেন আরবের সবচেয়ে বিশুদ্ধ ভাষী। ’ -কানজুল উম্মাল : ৩৫৪৭১


অপর ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে কথা বলা সদকাহঃ 


(‘সদকা’ মানে দান, যার বিনিময়ে আল্লাহ আখিরাতে পুরস্কৃত করবেন।) 


  • রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, প্রতিটি ভালো কাজ সদকা। আর গুরুত্বপূর্ণ একটি ভালো কাজ হলো অপর ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৭০)


  • অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমার ভাইয়ের (সাক্ষাতে) মুচকি হাসাও একটি সদকা।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৫৬)


  • ‘যে ব্যক্তি নিজের কোনো মুসলিম ভাইকে খুশি করার জন্য এমনভাবে সাক্ষাৎ করে, যেমনটি সে নিজের জন্য পছন্দ করে। কেয়ামতের দিন (বিনিময়ে) আল্লাহ তাআলা তাকে খুশি করবেন।’ (তাবারানি, হাদিস : ১১৭৮)


  • হজরত কায়েস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, আমি জারির (رضي الله عنه)-কে বলতে শুনেছি, ‘আমার ইসলাম গ্রহণের পর থেকে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) যখনই আমাকে দেখেছেন, আমার সামনে মুচকি হাসি দিয়েছেন।’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ২৪৯)


কথাবার্তা ও আলাপচারিতায় মানুষের ব্যক্তিত্বের ছাপ ফুটে ওঠে। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (ﷺ) তার জীবন ও আদর্শের মাধ্যমে আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছেন।


হাসিমুখে কথা বলাও সওয়াবের কাজঃ


  • হাদিস শরিফে রয়েছে: ‘কোনো মুসলমানের সঙ্গে দেখা হলে, হাসিমুখে কথা বলা সদকা করার সমান সওয়াব।’ অর্থাৎ দানে যেমন পুণ্য হয় ও আত্মা পবিত্র হয় এবং প্রশান্তি লাভ করে; অনুরূপ হাসি দ্বারা পুণ্য অর্জন হয়, মন পরিষ্কার হয় ও শান্তি লাভ হয়। (শামায়েলে তিরমিজি শরিফ)।


  • হাদিসে পাকে এসেছে, ‘কেউ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করলে তোমরা তাকে এর বিনিময় দেবে। যদি বিনিময় দেয়ার মত কিছু না থাকে তবে তার জন্য তোমাদের মনে এ ধারণা হওয়া পর্যন্ত দোয়া করতে থাকবে যে, ‘তোমরা তার সমপরিমাণ বিনিময় দিতে সক্ষম হয়েছো।’ (আবু দাউদ)


প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সঙ্গী-সাথীদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলার জন্য নসিহত করেছেন। কারণ হাসি মুখে কথা বলা বা সৌজন্যতা প্রদর্শনেও রয়েছে সাওয়াব।


  • রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমার কোনো মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাও সাওয়াবের কাজ।’ (তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ)


  • এ কারণেই প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পরিপূর্ণ ঈমানদার হলো ওই ব্যক্তি, যার চরিত্র সর্বোত্তম।’ (আবু দাউদ, মিশকাত)


প্রথমে সালাম তারপর কথাঃ


কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে রাসূল (ﷺ) প্রথমে সালাম প্রদান করতেন। অতপর তিনি কথা বলতেন।


  • এ প্রসঙ্গে হাদিসে হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘আগে সালাম পরে কথা। ’ -সুনানে তিরমিজি : ২৮৪২


  • নবী করিম (ﷺ) ছোট-বড় সবাইকে সালাম প্রদান করতেন এবং প্রথমে সালাম দিতেন। হজরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, ‘তিনি রাসূল (ﷺ)-এর সঙ্গে পথ চলছিলেন। তখন রাসূল (ﷺ) কয়েকটি শিশুকে অতিক্রম  করছিলেন। তিনি তাদেরকে সালাম করলেন। ’ সহিহ মুসলিম : ৫৭৯৩


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কথা বলার ধরণঃ


হজরত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কথা বলার সময় যেমন তাড়াহুড়া করতেন না, তেমনি এতো ধীরে বলতেন না যাতে কথার ছন্দপতন হয়। বরং প্রতিটি কথা স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করতেন। 


  • হজরত আয়েশা (رضي الله عنه) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তোমাদের মতো এক নাগারে তাড়াহুড়া করে কথা বলতেন না; বরং তিনি প্রতিটি কথা পৃথক পৃথক স্পষ্ট ভাষায় বলতেন। যাতে তার পাশে উপবিষ্ট ব্যক্তিরা তা হৃদয়ঙ্গম করতে পারে। ’ -সুনানে তিরমিজি : ৩৬৩৯


  • রাসূলে আকরাম (ﷺ) যখন কোনো মজলিসে কথা বলতেন, তখন গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো তিনবার পর্যন্ত পুনরাবৃত্তি করতেন। হজরত আনাস ইবনে মালেক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূল (ﷺ) তার কথাকে তিনবার পর্যন্ত পুনরাবৃত্তি করতেন, যেনো তা ভালোভাবে বোঝা যায়। ’ -শামায়েলে তিরমিজি : ২২২


রাসূলে আকরাম (ﷺ) এর রসিকতা/ কৌতুকঃ


হজরত রাসূলে আকরাম (ﷺ) কথাবার্তায় কখনও কখনও রসিকতা করতেন। তবে সত্য কৌতুক করতেন। কখনও মিথ্যার আশ্রয় নিতেন না। 


  • হজরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘সাহাবাগণ বললো, হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় আপনি আমাদের সঙ্গে হাসি-কৌতুক করেন। তিনি বললেন, নিশ্চয় আমি শুধু সত্যই বলি (কৌতুক করি)। ’- শামায়েলে তিরমিজি : ১৯৪


রাসূল (ﷺ) এমন কোনো রসিকতা করতেন না যাতে মানুষের সম্মান নষ্ট হয় বা মনে কষ্ট পায়; বরং তিনি রসিকতার জন্য সত্য উপাদান বেছে নিতেন। যেমনঃ


  • হজরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, ‘নবী সা. তাকে কৌতুক করে দুই কানওয়ালা ডেকে ছিলেন। ’ -সুনানে আবু দাউদ : ৫০০৪

Top