আম্মাজান আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি নবী ﷺ-এঁর অন্য কোন স্ত্রীর প্রতি এতটুকু ঈর্ষা করিনি যতটুকু খাদীজাহ (রাঃ)-এঁর প্রতি করেছি। অথচ আমি তাঁকে দেখিনি। কিন্তু নবী ﷺ তাঁর কথা বেশি সময় আলোচনা করতেন। কোন কোন সময় বকরী যবহ করে গোশ্তের পরিমাণ বিবেচনায় হাড়-গোশ্তকে ছোট ছোট টুকরা করে হলেও খাদীজাহ (রাঃ)-এর বান্ধবীদের ঘরে পৌঁছে দিতেন। আমি কোন সময় ঈর্ষা ভরে নবী ﷺ-কে বলতাম, মনে হয়, খাদীজাহ (রাঃ) ছাড়া দুনিয়াতে যেন আর কোন নারী নাই। উত্তরে তিনি ﷺ বলতেন, হ্যাঁ। তিনি এমন ছিলেন, এমন ছিলেন, তাঁর গর্ভে আমার সন্তানাদি জন্মেছিল। (সহীহ বুখারী ৩৮১৮)
আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, একদিন আমি তাঁকে (নবী ﷺ কে) রাগান্বিত করার জন্য বললাম, শুধু খাদীজাহ খাদীজাহ (খাদীজাহকে এতই ভালবাসেন?) রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন বললেনঃ তার ভালোবাসা আমার অন্তরে গেঁথে দেয়া হয়েছে। (সহীহ মুসলিম ৬১৭২)
আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি নবী ﷺ-কে তাঁর (অর্থ্যাৎ আম্মাজান খাদীজাহ সালামুল্লাহি আলাইহা এঁর) কথা বারবার আলোচনা করতে শুনেছি, অথচ আমাকে বিবাহ করার (তিন বছর) আগেই তিনি ওফাতবরণ করেছিলেন। খাদীজাহ (রাঃ)-কে জান্নাতে মণি-মুক্তা খচিত একটি প্রাসাদের খোশ খবর দেয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ-কে আদেশ করেন। কোন দিন বকরী যবেহ হলে খাদীজাহ (রাঃ)-এঁর বান্ধবীদের নিকট তাদের প্রত্যেকের দরকার মত গোশ্ত নবী ﷺ উপঢৌকন হিসেবে পাঠিয়ে দিতেন।
(সহীহ বুখারী ৩৮১৬, ৩৮১৭, ৫২২৯, ৬০০৪)
(একদিন) জিব্রাঈল (আঃ) নবী ﷺ-এঁর নিকট হাযির হয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! ঐ যে খাদীজাহ (রাঃ) একটি পাত্র হাতে নিয়ে আসছেন। ঐ পাত্রে তরকারী, অথবা খাদ্যদ্রব্য অথবা পানীয় ছিল। যখন তিনি পৌঁছে যাবেন তখন তাঁকে তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ হতে এবং আমার পক্ষ থেকেও সালাম জানাবেন আর তাঁকে জান্নাতের এমন একটি ভবনের খোশ খবর দিবেন যার অভ্যন্তর ভাগ ফাঁকা-মোতি দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে থাকবে না কোন প্রকার শোরগোল; কোন প্রকার দুঃখ-ক্লেশ। (সহীহ বুখারী ৩৮২০)
রাসূলুল্লাহ ﷺ শুধু আম্মাজান খাদীজাহ রাঃ কে ভালবাসতেন এমন নয়। বরং তিনি সকলকেই ভালবাসতেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এঁর মর্যাদা নারীদের উপর এমন যেমন সারীদের** মর্যাদা অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের উপর। (সহীহ বুখারী ৩৭৭০, ৫৪২৮)
**গোশত এবং রুটি দ্বারা তৈরী খাদ্য বিশেষ এর মর্যাদা অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের উপর।
আম্মাজান আয়িশাহ (রাঃ) বলেনঃ একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, হে আয়িশাহ! জিব্রীল (আঃ) তোমাকে সালাম দিচ্ছেন। তখন তিনি বললেন, ওয়া আলাইহিস্ সালাম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহু। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর উদ্দেশ্যে বললেনঃ আমরা যা দেখছি না, তা আপনি দেখছেন। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আপনি এমন কিছু দেখেন যা আমি দেখতে পাই না। (সহীহ বুখারী ৩২১৭, ৩৭৬৮, ৬২০১, ৬২৪৯)
এক লোক আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ)-এর নিকটে বসে আম্মাজান আয়িশাহ (রাঃ) প্রসঙ্গে কিছু বিরুপ মন্তব্য করলে আম্মার (রাঃ) বলেনঃ দূর হও পাপিষ্ঠ এখান থেকে! তুমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর প্রিয়তমাকে কষ্ট দিচ্ছ। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) বলেন, তিনি (আম্মাজান আয়িশাহ রাঃ) নবী ﷺ-এঁর স্ত্রী দুনিয়াতে এবং আখিরাতেও। (সূনান আত তিরমিজী ৩৮৮৮, ৩৮৮৯)
আনাস (রাঃ) বলেন, বলা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! লোকদের মধ্যে কে আপনার সর্বাধিক প্রিয়? তিনি বললেন, আয়িশাহ। পুনরায় প্রশ্ন করা হল, পুরুষদের মাঝে কে? তিনি বললেনঃ তার পিতা। (সূনান আত তিরমিজী ৩৮৯০)
এভাবে তিনি একেক জায়গায় একেক জনের নাম উল্লেখ করেছেন। কখনো মাওলা আলী রাঃ ও ফাতিমাহ রাঃ এঁর নাম, আবার কখনো হাসান-হুসাইনের নাম। (সূনান আত তিরমিজি ৩৭৭২, ৩৮৬৮, ৩৮৭৪.....)
সকলেই তো উনার নিকট প্রিয়। সকল উম্মতকেই তিনি কতই না ভালবাসেন!! সকল গুনাহগার উম্মতের জন্যই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এর চেয়ে বড় ভালবাসা আর কি হতে পারে!!
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ আমার হায়াত তোমাদের জন্য উত্তম বা রহমত। কেননা আমি তোমাদের সাথে কথা বলি তোমরাও আমার সাথে কথা বলতে পারছ। এমনকি আমার ওফাতও তোমাদের জন্য উত্তম বা নেয়ামত। কেননা তোমাদের আমল আমার নিকট পেশ করা হবে এবং আমি তা দেখবো। যদি তোমাদের কোন ভালো আমল দেখি তাহলে আমি আল্লাহর নিকট প্রশংসা করবো, আর তোমাদের মন্দ কাজ দেখলে আল্লাহর কাছে তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবো। (ইমাম বাযযার রহঃ আল-মুসনাদঃ ৫/৩০৮ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ১৯২৫, জালালুদ্দিন সুয়ূতি রহঃ জামিউস সগীরঃ ১/২৮২ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৩৭৭০-৭১, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৪/২৫৭ পৃষ্ঠা,...)