সুলতান আবদুল হামিদ খান এর নির্বাসন ও উসমানীয় খিলাফতের পতন
১৯০৯ সাল 🥀
অঝোরে বৃষ্টি ঝড়ছে ইস্তাম্বুলে। হিম শীতল আবহাওয়া। ইলদিজ প্রাসাদের জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকালেন পেরেশান সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদ। প্রাসাদের সামনে সোরগোল। প্রাসাদ রক্ষীদের হাত করে ফেলেছে বিদ্রোহী সেনারা।
সুলতানের প্রাসাদের প্রবেশ করলো ৫ সদস্যের এমপিদের একটি প্রতিনিধি দল। দলের নেতা সেলানিকের ইহুদী নেতা ইমানুয়েল কারাসু।
সুলতানকে রুক্ষ কন্ঠে আদেশ দিচ্ছে সিংহাসন ছেড়ে দিতে। পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করতে। সুলতান হুংকার দিলেন, তোমাদের এতো বড় সাহস? কে পাঠিয়েছে তোমাদের। ইমানুয়েল বলল এটা জাতির সিদ্ধান্ত। মিল্লাতের মতামত।
সুলতান বলল, আমি উসমানী সালতানাতের সুলতান ও মুসলিম মিল্লাতের খলিফা। আমাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ফরমান নিয়ে আসার মতো কোন মুসলিম নেতা কি ছিলো না?
মুসলিম জাতির খলিফাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এসেছে একজন সেলানিক ইহুদী, একজন আর্মেনি খৃষ্টান, একজন অকৃতজ্ঞ আলবেনিয়ান?
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস অস্ত্রের মুখে সুলতানকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাতে রাতেই সিরকেজি রেলস্টেশন থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় শেফার্ডিক ইহুদীদর আখড়া সেলানিক শহরে। সেলানিক বতর্মানে গ্রীসের থেসালনিক শহর। এটি উসমানী সাম্রাজ্যের অন্যতম বন্দরনগরী ছিল।
সেখানে সুলতানকে সপরিবারে বন্দি করে রাখা হয় আরেক ইহুদী ধনকুবেরের বাগান বাড়িতে। নাম তার আলাতিনি কসকু। সুলতানকে ইস্তাম্বুলের জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন করে নির্বাসিত করে রাখা হয়।
উসমানী খলিফা দ্বিতীয় আবদুল হামিদকে অবৈধভাবে ক্ষমতাচ্যুত করার মাধ্যমেই মূলত শেষ হয়ে যায় উসমানী খিলাফাতের ইতিহাস। অনেকটা সিরাজ উদ দৌলার পতনের বাংলার স্বাধীনতা হারানোর মত। পরে যারা নবাব ছিল তারা ছিল পুতুল।
প্রথমে খলিফা আবদুল হামিদকে, পর্যায়ক্রমে উসমানী খিলাফাত উচ্ছেেদর জন্য গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয় প্যারিসে। ব্রিটিশ ফরাসিদের সে ষড়যন্ত্রের যোগ দেয় জায়নবাদী ইহুদীরাও। তাদের তুরুপের তাস বানানো হয় কথিত তুর্কি জাতীয়তাবাদী গুপ্ত সংগঠন ইয়াং তুর্ককে। ইসলামী জাতি সত্বার চিহ্ন বিলুপ্ত করে আদিম তুর্কি পরিচয়কে সামনে রেখে সেক্যুলার রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার জন্য হাত কেটে রক্ত মেখে শপথ পড়ানো হয় একদল তুর্কিকে। সাথে থাকে আর্মিনি খৃষ্টান ও সেলানিক ইহুদীরা।
উসমানী সেনাবাহিনীর ভেতর বাড়তে থাকে গুপ্ত ঘাতকদের এই বিষ বৃক্ষ। ১৯০৯ সালে এই ইয়াং তুর্কদের সামরিক অভূত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় খলিফা আবদুল হামিদকে। তারপর সাজানো ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে ইয়াং তুর্ক। পরবর্তী ১০ বছর ধরে তুরস্কে চলে ব্যাপক সেক্যুলারাইশন, লুটপাট, তুর্কি জাতির নামে অন্য জাতিদের উপর নির্যাতন, ১ম বিশ্বযুদ্ধে যোগ দিয়ে উসমানী সাম্রাজ্যের পরাজয়, ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় গোপন অনুমোদন।
ইয়াং তুর্ক ইদুরের মত ছিন্ন বিচ্ছিন্ন ও দুর্বল করে ফেলে উসমানী সাম্রাজ্যকে। বিলুপ্ত হল উসমানের প্রতিষ্ঠা করা সেই সম্রাজ্যের। মূলত আব্দুল হামিদকে অপসারিত করার মাধ্যেমে বিলুপ্ত হয়েছিল সম্রাজ্যটি।
আজ সালতানাতে উসমানীয়ার ৩৪ তম মহান সুলতান, খলিফাতুল মুসলিমিন, খাদেমুল হারামাইন শরিফাইন, খায়সার ই রুম সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ খান (রহ) এর ১০৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী।
আল্লাহ মুসলিম উম্মাহর এই মহান সুলতানকে জান্নাতের উঁচু মাকাম এবং সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ খানের মতো দরদী নবীপ্রেমী একজন অভিভাবক দান করুন, আমিন।