সুলতান-উল-হিন্দ, খাজা[১] মইনুদ্দিন চিশতী (উর্দু/معین الدین چشتی) (ফার্সি: چشتی,উর্দু: چشتی - Čištī) (আরবি: ششتى - চিশতী) হলেন চিশতীয় ধারার ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত সুফি সাধক। তিনি ১১৩৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন ও ১২৩৫ সালে পরলোকগমন করেন। তিনি গরিবে নেওয়াজ (غریب نواز) নামেও পরিচিত। মইনুদ্দিন চিশতীই উপমহাদেশে প্রথম এই ধারা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচিত করেন। তিনি ভারতে চিশতী ধারার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক ধারা বা সিলসিলা এমনভাবে পরিচিত করেন ;পরবর্তীতে তার অনুসারীরা যেমন, কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী, বাবা ফরিদ, নিজামুদ্দিন আউলিয়া সহ (প্রত্যেকে ক্রমানুযায়ী পূর্ববর্তীজনের শিষ্য) আরো অনেকে ভারতের ইতিহাসে সুফি ধারাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান।[২]
প্রারম্ভিক জীবন ও নেপথ্য
ধারণা করা হয়, খাজা মইনুদ্দিন চিশতী ৫৩৭ হিজরী/১১৩৮ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব পারস্যের শকস্থান রাজ্যের চিশতীতে জন্মগ্রহণ করেন।[৩] তিনি পারস্যে বেড়ে উঠেন। পনেরো বছর বয়সে তার পিতা-মাতা মৃত্যুবরণ করেন। তিনি তার পিতার কাছ থেকে একটি বাতচক্র (উইন্ডমিল) ও একটি ফলের বাগান উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করেন। কিংবদন্তী অনুসারে, একদিন তিনি তার ফলবাগানে জল দিচ্ছিলেন তখন তার ফলবাগানে আসেন বিখ্যাত সুফি শেখ ইবরাহিম কুন্দুজী (কুন্দুজী নামটি জন্মস্থান কুন্দুজ থেকে এসেছে)। যুবক মইনুদ্দিন তটস্থ হয়ে যান এবং কুন্দুজীকে কিছু ফল দিয়ে আপ্যায়ন করেন। এর প্রতিদানস্বরূপ কুন্দুজী মইনুদ্দিনকে এক টুকরা রুটি দেন ও তা খেতে বলেন। এর পর তিনি তার সম্পত্তি এবং অন্যান্য জিনিসপত্র গরীবদের মাঝে বিতরণ করে দেন। এরপর তিনি বিশ্বের মায়া ত্যাগ করে জ্ঞানার্জন ও উচ্চ শিক্ষার জন্য বুখারার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।[৪
সুফি দীক্ষা
খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী বোখারা থেকে নিশাপুরে আসেন। সেখানে চিশতীয়া তরীকার অপর প্রসিদ্ধ সুফি সাধক খাজা উসমান হারুনীর নিকট মুরীদ হন/শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তার সেবায় ২০ বছর একাগ্রভাবে নিয়োজিত ছিলেন। পরে উসমান হারুনী তাকে খিলাফত বা সুফি প্রতিনিধিত্ব প্রদান করেন।[১]
ভ্রমণ
খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী বহু দেশ ভ্রমণ করেন। তৎকালীন বিভিন্ন জ্ঞানী, গুণী, পন্ডিত, দার্শনিকসহ অসংখ্য সুফি সাধকের সাথে সাক্ষাত করেন বলে নানা গ্রন্থে তথ্য পাওয়া যায়। তিনি ইরাকের বাগদাদে আবদুল কাদির জিলানীর সাহচর্যে ৫৭ দিন অবস্থান করেন। তার জীবনীতে বর্ণিত আছে যে, এ সময় আব্দুল কাদির জিলানী তাকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন, ইরাকের দায়িত্ব শায়েক শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীকে আর হিন্দুস্থানের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হলো। তিনি আরব হতে ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান হয়ে প্রথমে লাহোর পরে দিল্লী হয়ে আজমিরে বসতি স্থাপন করেন।[৫]
ধর্ম প্রচার
খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারে কিংবদন্তিতুল্য একজন ঐতিহাসিক সুফি ব্যক্তিত্ব। তিনি স্বীয় পীর উসমান হারুনীর নির্দেশে ভারতে আগমন করে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দেন এবং তারই মাধ্যমে বহু লোক ইসলাম গ্রহণ করেন।[১][৫] তার বিখ্যাত একটি গ্রন্থ হল "আনিসুল আরওয়াহ"।
খেলাফত প্রদান
তিনি কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকীকে খিলাফতের দায়িত্ব অর্পণ[৫] করে সিলসিলার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন।
মৃত্যু
খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী ৬৩৩ হিজরীর ৫ রজব দিবাগত রাত অর্থাৎ ৬ রজব সূর্যোদয়ের সময় ইনতিকাল করেন। তখন তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। বড় ছেলে খাজা ফখরুদ্দীন চিশতী তার নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন। প্রতিবছর ১লা রজব হতে ৬ রজব পর্যন্ত আজমির শরীফে তার সমাধিস্থলে ওরস অনুষ্ঠিত হয়। নানা ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ হতে সমবেত হয়।[৬]
তথ্যসূত্র
- ↑ ক খ গ "সংবাদ মাধ্যম: দৈনিক ইত্তেফাক, শিরোনাম: সুলতানুল হিন্দ গরীবেনাওয়ায (রাহ.)-এর জীবনদর্শন, লেখক: ড. শাহ্ কাওসার মুস্তাফা চিশ্তী আবুলউলায়ী, তারিখ: শুক্রবার, ১৭ মে ২০১৩"।
- ↑ Bhakti poetry in medieval India By Neeti M. Sadarangani . Pg 60
- ↑ Official Dargah Sharif's website ওয়েব্যাক মেশিনেআর্কাইভকৃত ৪ আগস্ট ২০১১ তারিখে. Other accounts say that he was born in the city of Isfahān, in Iran.
- ↑ Embodiment of syncretic traditions- Mohammed Iqbal
- ↑ ক খ গ "সংবাদ মাধ্যম: দৈনিক আল ইহসান, শিরোনাম: সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা মঈনুদ্দীন হাসান চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফাযায়িল-ফযীলত, লেখক: মাওলানা সাইয়্যিদ আব্দুল্লাহ উফিয়াআনহু, তারিখ: ২৯ মে, ২০১২"।
- ↑ "সংবাদ মাধ্যম: বেঙ্গলীনিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম, শিরোনাম: আজমির শরীফ দর্শন, লেখক: মাওলানা সাইয়্যিদ আব্দুল্লাহ উফিয়াআনহু, তারিখ: 30 আগস্ট, 2013"।