রজব মাস হল সেই মাস যাকে আল্লাহর মাস বলা হয়েছে। আল-কুরআনে বর্ণিত হারাম ৪টি মাসের মধ্যে এই রজব মাস একটি। যেই মাসে সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যুদ্ধ-বিগ্রহ হারাম। বছরের পাঁচটি দোয়া কবুলের রাত্রির মধ্যে একটি। সাধ্যমতো নফল ইবাদত করুন।


রজব মাসের ১ম ও ১০ম রজনীর ফজিলত

🕋হজরত উমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, অতি মহান চারটি রাত হলো: রজব মাসের প্রথম রাত, শাবান মাসের মধ্য দিবসের রাত (শবে বরাত), শাওয়াল মাসের প্রথম রাত (ঈদুল ফিতর বা রমজানের ঈদের রাত), জিলহজ মাসের দশম রাত (ঈদুল আজহা বা কোরবানি ঈদের রাত)।

🕋হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘(দুনিয়াতে) পাঁচটি রাত এমন আছে; যে রাতগুলোতে বান্দার দোয়া আল্লাহ তাআলা ফিরিয়ে দেন না। অর্থাৎ বান্দার দোয়া কবুল করেন। রাতগুলো হলো-

১) (সপ্তাহিক) জুমআর রাত,
২) রজব মাসের প্রথম রাত,
৩) মাহে শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত (শবে বরাত)
৪) ঈদুল ফিতরের রাত এবং
৫) ঈদুল আজহার রাত।’ (মুসান্নেফে আবদুর রাজ্জাক)

🕋বান্দার দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে পাঁচটি বিশেষ রাতের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। পাঁচটি রাতের প্রথমটি হলো জুমার রাত, দ্বিতীয়টি ঈদুল ফিতরের রাত, তৃতীয়টি ঈদুল আজহার রাত, চতুর্থটি রজব মাসের চাঁদ উদয়ের প্রথম রাত, পঞ্চমটি মাহে শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত। (সুনানে বায়হাকি শরিফ ৩/৩১৯)

🕋তাফসিরে কুরতুবি ৯/৩৩২-এ উল্লেখ করা হয়েছেঃ হজরত কায়েস ইবনে উবাদা বলেন, রজব মাসের দশ তারিখে আল্লাহ বান্দার দোয়া কবুল করেন।"
এক কথায় বলা হয়, রজব হলো দোয়া কবুলের মাস। বান্দার ক্ষমা লাভের মাস। রমজানের প্রস্তুতি নেওয়ার মাস।

এ মাসের প্রথম রজনীর আমল

🕋হজরত সালমান ফারসি (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রজব মাসের প্রথম তারিখে ১০ রাকাত নফল নামাজ পড়তে হয়। 

🕋হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে- হজরত রাসূল (সা.) বলেছেন, হে সালমান! এমন কোনো মুমিন পুরুষ বা মুমিনা স্ত্রীলোক কি নেই যে, এ মাসের প্রথম তারিখে মাগরিব ও এশার ওয়াক্তের মধ্যবর্তী সময় ৪০ রাকাত (অন্যত্র ২০ রাকাত উল্লেখ আছে) নামাজ পড়বে; তা পড়ার নিয়ম হলো, প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার পর তিনবার সূরা ইখলাছ, তিনবার সূরা কাফেরুন পড়বে, এতে আল্লাহতায়ালা ওই বান্দার সব গুনাহ মাফ করে দেবেন। আর আল্লাহতায়ালা তাকে কেয়ামতের দিন শহীদের দলের সঙ্গে উঠাবেন এবং আল্লাহতায়ালা তাকে বড় আবেদ হিসেবে গণ্য করবেন। আর সে যেন এক বছর নহে, একশ' বছর ধরে ইবাদত-বন্দেগি করেছে এবং আল্লাহতায়ালা ওই ব্যক্তিকে জান্নাতে হাজারো মর্যাদা দান করবেন। এ মাসের ২৭ তারিখে রোজা রাখলে আল্লাহ জাহান্নামের আগুনকে রোজাদারের জন্য হারাম করে দেবেন এবং তার ওপর জান্নাত ওয়াজিব করে দেবেন; আর ওই ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার কাছে অবশ্যই গৃহীত হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে রজব মাসের ফয়জ বরকত লাভের তৌফিক দান করক।

🕋প্রথম বৃহস্পতিবার রাতকে লাইলাতুল রাগায়িব বলা হয়। এ মাসের ১৫ তারিখের রাতকে লাইলাতুল ইস্তিফতাহ বলা হয়। এ মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতকে শবেমেরাজ বলা হয়। হজরত রাসূলের (সা.) মাধ্যমে যে কয়েকটি মোজেজা সংঘটিত হয়েছিল, এর মধ্যে মেরাজ হজরত রাসূলের (সা.) সর্বোচ্চ মোজেজা। মেরাজের রাতের ফজিলত ও গুরুত্ব অপরিসীম। হজরত রাসূলের (সা.) নবুয়ত লাভ-পরবর্তী ঘটনাগুলোর মধ্যে মেরাজ সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা।

চারটি হারাম মাসের মধ্যে একটি

🕋কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, 'আসমান সমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই মহান আল্লাহর বিধানে মাসের সংখ্যা বারোটি, এর মধ্যে চারটি হচ্ছে (যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্য) নিষিদ্ধ মাস; এটা নির্ভুল ব্যবস্থা। অতএব, তার ভেতরে (হানাহানি করে) তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করো না।' (সুরা তাওবা :৩৬)।

🕋হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যেদিন আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন সেদিন যেভাবে সময় নির্ধারিত ছিল তা ফিরে এসেছে। ১২ মাসে এক বছর। এর মধ্যে চার মাস নিষিদ্ধ ও সম্মানিত। তিন মাস পরপর জিলকদ, জিলহজ ও মহররম এবং অপর মাস হলো মুজার গোত্র যাকে রজব মাস বলে জানে। যা জমাদিউসসানি ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস নং ৪৩৮৫; মুসলিম শরিফ, হাদিস নং ১৬৭৯)।

এ মাসে রসুল (দ.) যে দোয়া পড়তেনঃ

🕋জলিলুল কদর সাহাবি হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রজব মাস শুরু হলে রসুল (সা.) এই দোয়া পড়তেন—
‘আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি রাজাবাও ওয়া শা’বান ওয়া বাল্লিগনা ইলা শাহরি রমাদান।’
অর্থ— ‘হে আল্লাহ আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করে দিন। আর আমাদের রমজান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (নাসায়ী শরিফ, হাদিস নং ৬৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ২৩৪৬)

এ মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা

🕋উম্মে সালমা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) রমজান মাস ছাড়া সবচেয়ে বেশি রোজা পালন করতেন শাবান মাসে, অতঃপর রজব মাসে।

🕋হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘যখন রজব মাস আসত, তা আমরা নবীজি (সা.)–এর আমলের আধিক্য দেখে বুঝতে পারতাম।’

🕋কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, নবীজি (সা.) রজব মাসে ১০টি রোজা রাখতেন, শাবান মাসে ২০টি রোজা রাখতেন; রমজান মাসে ৩০টি রোজা রাখতেন। (দারিমি)।

রজব মাসের উচ্চ মাকাম

🕋রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রজব হলো আল্লাহর মাস, শাবান হলো আমার (নবীজির) মাস; রমজান হলো আমার উম্মতের মাস।’ (তিরমিজি)।

🕋প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-‘যে ব্যক্তি রজব মাসে (ইবাদত দ্বারা অন্তরের) জমিন চাষাবাদ করল না আর শাবান মাসে (ইবাদতের মাধ্যমে মনের) জমিন আগাছামুক্ত করল না; সে রমজান মাসে (ইবাদতের) ফসল তুলতে পারবে না।’ (বায়হাকি)

🕋হজরত আবু বকর বলখি (রহ.) বলেন, ‘রজব ফসল রোপণের মাস, শাবান ফসলে পানি সেচ দেওয়ার মাস আর রমজান হলো ফসল তোলার মাস। তিনি আরও বলেন, ‘রজব মাস ঠাণ্ডা বাতাসের মতো, শাবান মাস মেঘমালার মতো। আর রমজান মাস হলো বৃষ্টির মতো’— (লাতায়েফুল মা’আরেফ-১৪৩)।

🕋ইমাম আবুবকর জাসসাস (রহ.) বলেন, ‘এসব মাসে ইবাদতের প্রতি যত্নবান হলে, বাকি মাসগুলোয় ইবাদত করা সহজ হয়। আর এ মাসগুলোতে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকলে অন্য মাসেও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়। (আহকামুল কোরআন, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৬৩)।
Top