“গাউছ” মানে “সাহায্যকারী”, “আযম” মানে “মহান”। সুতরাং,গাউসুল আযম মানে মহান সাহায্যকারী,এটা একমাত্র আল্লাহ,তাই কাউকে গাউসুল আযম বলা শিরিক।(আউযুবিল্লাহ)।বাংলা যুক্তিতে শিরিকের ফতোয়া দাড় করিয়ে দেয়ার কাজটা ইদানিং খুব সহজেই করে যাচ্ছেন সালাফী ভাইয়েরা।(সালাফী বললাম,কারণ গাউছ শব্দ নিয়ে ওলামায়ে দেওবন্দ কে ফলোকারীরা আপত্তি তুলবেন না।)

কিন্তু বাস্তবিকভাবে যেটা সত্য এবং গ্রহণযোগ্য সেটা আমরা দেখার চেষ্টা করবো।অনুরোধ করবো অল্পস্বল্প আরবী বুঝেন,না বুঝলে বুঝার চেষ্টা করেন।যদি এমন হয় যে,”আরবী আমাদের কাজ না,আমরা অন্য লাইনের”। তাহলে বলব যত্রতত্র মাথা ঘামিয়ে গুনাহগার হবেন না।

“গাউছুল আযম” শব্দটা “Common Noun” বা সাধারণ নামবাচক শব্দ, যা দ্বারা বিশেষ ব্যক্তিকে বুঝানো হলেও “গাউছুল আযম” যে দুটো শব্দ নিয়ে গঠিত, {غوث}/গাউছ হল Verb/Noun তবে এখানে Verb এর হিসেবে এবং {أعظم}/আজম, যা কিনা Adjective.আমরা প্রথমে শব্দদুটো ব্যাখ্যা করবো।এরপর সিদ্ধান্তের দিকে যাবো।

আল্লামা রাগেব আসবাহানী ,গাউস শব্দের ক্ষেত্রে লিখেন,
{ الغَوْثُ يقال في النّصرة، والغَيْثُ في المطر، واسْتَغَثْتُهُ: طلبت الغوث أو الغيث}
মানে, গাউছ অর্থ 'সাহায্য' এবং গাইছ অর্থ বৃষ্টি। ইস্তেগাছা অর্থ হল কারো কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা অথবা আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করা।[1]
তাহলে, এ অনুসারে যার কাছে সাহায্য চাওয়া হয় তিনি গাউছ,আর সাহায্য বৃষ্টি হলে, স্থূলবুদ্ধিতে সেই গাউছ হন আল্লাহ।
কিন্তু, আল্লাহর ব্যাপারে 'গাউছ' শব্দ ব্যবহারের জন্য এতটুকু যথেষ্ঠ নয়।কেননা, কোরআনে গাউছ শব্দটি সরাসরি না এলেও এর আশপাশের শব্দগুলো এসেছে।
⬛যেমনঃ আনফালের নবম আয়াতে রব্বে করীম এরশাদ করেন,
{.....اِذۡ تَسۡتَغِیۡثُوۡنَ رَبَّکُمۡ}
বা,যখন তোমরা (বদর দিবসে[2]) তোমাদের রবের নিকট (সাহায্য চেয়ে/ফাস্তাগিছু) ইস্তেগাছা/প্রার্থনা করেছিলে।
⬛ক্বাসাস এর পঞ্চদশতম আয়াতে উল্লেখ—
{...… فَاسۡتَغَاثَہُ الَّذِیۡ مِنۡ شِیۡعَتِہٖ عَلَی الَّذِیۡ مِنۡ عَدُوِّہٖ……}
বা,তখন ঐ লোক যে তাঁর দলের ছিলো,যে মুসার কাছে সাহায্য চাইলো (ফাস্তাগাছাহু) তারই বিরুদ্ধে,যে তাঁর শত্রুদের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
⬛আবার হাদীস শরীফে আছে,
{…… فَبَيْنَا هُمْ كَذَلِكَ اسْتَغَاثُوا بِآدَمَ ثُمَّ بِمُوسَى ثُمَّ بِمُحَمَّدٍ وَزَادَ …}
মানে,(কিয়ামতের দিবসে মানুষ) যখন তারা এই অবস্থায় থাকবে, তখন তারা সাহায্য চাইবে (ইস্তাগাছু) আদম (‘আ.)-এর কাছে, অতঃপর মূসা (‘আ.)-এর কাছে, তারপর হাবিব মুহাম্মাদ ﷺ-এর কাছে।[3]
⬛আরো এসেছে,নবীজী ﷺ র চেহারা আনোয়ারের উসীলা দিয়ে বৃষ্টি প্রার্থনা করা হয়েছে—
{اخرج ابن عساكر في تاريخه ، عن جلهمة بن عرفطة قال : قدمت مكة وهم في قحط، فقالت قریش : يا أبا طالب اقحط الوادي وأجدب العيال، فهلم واستسق فخرج كأنه أبو طالب ومعه غلام شمس دجن تجلت عنه سحابة قتماء وحوله أغيلمة، فأخذه ابو طالب فألصق ظهره بالكعبة ولاذ بإصبعه الغلام وما في السماء قزعة فأقبل السحاب من ها هنا وها هنا، واغدق وأغدودق وانفجر له الوادي وأخصب البادي والنادي......(إلى آخر الحديث)}
অর্থঃ ইবনে আসাকির স্বীয় ইতিহাস গ্রন্থে জালহামা ইবনে আরকাতাহ থেকে রেওয়ায়েত করেন যে, তিনি বলেনঃ আমি মক্কায় এলাম। তখন দুর্ভিক্ষ চলছিল। কোরায়শরা বললঃ হে আবু তালেব! উপত্যকায় ভীষণ দুর্ভিক্ষ। মানুষ ক্ষুধায় মৃত্যুবরণ করছে।আপনি ইস্তেসকা করুন বা বৃষ্টির জন্য দোয়া। আবু তালেব বের হলেন। তাঁর সঙ্গে অনুপম সৌন্দর্যমণ্ডিত এক বালক ছিল তার উপমা এমন যেন কাল মেঘ সরে গিয়ে রৌদ্র বের হয়ে এসেছে। তাঁর চারপাশে ছোট ছোট শিশুরা ছিল। আবু তালেব তাঁর হাত ধরে কাবার প্রাচীরে ঠেস দিলেন এবং আপন অঙ্গুলি দিয়ে বালক ﷺ কে স্পর্শ করলেন। তখন আকাশে এক খণ্ড মেঘও ছিল না। কিন্তু দেখতে দেখতে চতুর্দিক থেকে মেঘ এসে গেল এবং প্রবল বৃষ্টি বর্ষণ করল। উপত্যকা পানিতে ভরে গেল। নগর ও গ্রাম সবুজ ও সতেজ হয়ে গেল।[4]
এখানে তাহলে এটা স্পষ্ট যে,গাউছের আশপাশের শব্দগুলো(ইস্তিগাছা/ফাস্তাগিছু) আল্লাহ,নবী-রসুল উভয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়।মানে যে গুণটায় বান্দা গুণান্বিত হয় সেগুণটা রব্বে করীমের শানে প্রযোজ্য নয়।অর্থাৎ,বান্দা গাউছ হতে পারে।কিন্তু আল্লাহ মূল সাহায্যকারী হবার সত্ত্বেও উনার ক্ষেত্রে গাউছ শব্দ ব্যবহার করা হবে না।সুতরাং স্পটতই গাউছ শব্দ দ্বারা শিরিক বুঝায় না।

আল্লাহর মতো কিছুই নয়,আল্লাহর সিফাত অন্য কারো মধ্যে থাকতে পারে না।তবে আল্লাহ যদি কাউকে গুণান্বিত করেন তবে ব্যক্তিকে আল্লাহর সিফাতী নামে ডাকা অবশ্যই যাবে। এতে ব্যক্তি মর্যাদাবান হয়,এই অর্থে যে,সে আল্লাহর অনুগ্রহে গুনান্বিত,এবং কখনোই আল্লাহর সমকক্ষ নয়।উদাহরণ— আল্লাহ বলেনঃ
{لَقَدۡ جَآءَکُمۡ رَسُوۡلٌ مِّنۡ اَنۡفُسِکُمۡ عَزِیۡزٌ عَلَیۡہِ مَا عَنِتُّمۡ حَرِیۡصٌ عَلَیۡکُمۡ بِالۡمُؤۡمِنِیۡنَ رَءُوۡفٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۱۲۸﴾}
মানে, নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট তাশরিফ এনেছেন তোমাদের মধ্য হতে ঐ রাসূল, যাঁর নিকট তোমাদের কষ্টে পড়া কষ্টদায়ক,তোমাদের কল্যাণ অতিমাত্রায় কামনাকারী, মুমিনদের প্রতি তিনি রউফ ও রহিম।(তাওবাঃ১২৮)
এখানে,আল্লাহ নবীজিকে 'রউফ' এবং 'রহিম' গুণদুটি প্রদান করেছেন।তাই সমগ্র সৃষ্ট জগতে নবীজীর মত কোনো রউফ ও রহিম নেই।আর উনাকে এটা প্রদান করেছেন যিনি স্বয়ং নবীজীরও 'রউফ-রহিম” রব্বুল আলামিন। এ আয়াত প্রমাণ করে যে,আল্লাহ চাইলেই যে কাউকে ক্ষমতা প্রদান করতে পারেন।
আল্লাহ রব্বুল আলামিন নিজেকে সাহায্যকারী হিসেবে পরিচয় দিতে যেসকল আসমা-উল-হুসনা ব্যবহার করেছেন সেগুলো হলো নাসির {نَصِيرٍ}এবং ওয়ালি { وَلِيٍّ}.
তাহলে আবারো স্থূলবুদ্ধিতে ব্যাপারটা এমন হওয়া উচিত যে,কেউ যদি “নাসির” বা “ওয়ালি” শব্দগুলা ব্যবহার করে তবে সেটা শিরক।
সরাসরি হাদিসে এসেছে,নবীজী (ﷺ), মওলা আলী আলাইহিস সালাম এর ব্যাপারে বলেন,
{وَهُوَ وَلِيُّ كُلِّ مُؤْمِنٍ بَعْدِي……}
মানে,(নবীজী বলেন) আমার পরে সে (আলী) সমস্ত মোমিনের ওয়ালি বা বন্ধু/সাহায্যকারী/অভিভাবক।[5]
আবার যারা হিজরতের পর মুহাজের দেরকে আশ্রয় দিয়েছিলেন তাদেরকে বলা হয় আনসার,{الأنصار}, (নাসির এর আশপাশের শব্দ)।

আবার নড়েচড়ে বসার মত আয়াত এসেছে কোরআনে।আল্লাহ বলেন,
{....یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُوۡنُوۡۤا اَنۡصَارَ اللّٰہِ}
মানে,(আল্লাহ বলছেন),হে ঈমানদারগণ!তোমরা আল্লাহর দ্বীনের সাহায্যকারী হও।(সুরা সাফ শেষ আয়াত)
আবার ঐ একই আয়াতে, রুহুল্লাহ ঈসা আলাইহিস সালাম, একই শব্দ “নাসির” প্রয়োগে,সাহায্য চাচ্ছেন উনার অনুসারীদের কাছে—
{... قَالَ عِیۡسَی ابۡنُ مَرۡیَمَ لِلۡحَوَارِیّٖنَ مَنۡ اَنۡصَارِیۡۤ اِلَی اللّٰہِ ؕ...}
বা,, ঈসা ইবনে মরীয়ম হাওয়ারিগণকে জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহর পথে কারা আমার সাহায্যকারী হবে?
এবং হাওয়ারীরা বললো—
{...… قَالَ الۡحَوَارِیُّوۡنَ نَحۡنُ اَنۡصَارُ اللّٰہِ …}
বা, হাওয়ারীরা বললেন,আমরাই আল্লাহর পথে আপনার সাহায্যকারী।
এখন প্রশ্ন কোরআন কে করুন,যদি সাহায্যচাওয়া শিরক হত,তাহলে আল্লাহর পয়গম্বর কেন হাওয়ারিদের কাছে সাহায্য চাইলেন?আর হাওয়ারীরাও কেন এটা বললো না যে,আমাদের কাছে সাহায্য চাইবেন না এটা শিরক?

যে ব্যক্তি হাক্বিকাতান/প্রকৃতভাবে কাউকে আল্লাহর সমতূল্য ভেবে বা আল্লাহ হতে পৃথক ভাবে নিজ শক্তিতে অন্যকে সাহায্যকারী ভাবে সে শিরক করলো।কিন্তু,কেউ যদি আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা বলে,কোনো বান্দাকে আল্লাহর ক্ষমতা দ্বারা সাহায্যকারী মানে,তবে তা শিরক কি প্রকারে হতে পারে?
আর আওলিয়া কিরামের ব্যাপারে আল্লাহ স্পষ্ট ঘোষণা করেন—
{.... حَتَّى أُحِبَّهُ فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ وَيَدَهُ الَّتِي يَبْطِشُ بِهَا وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا وَإِنْ سَأَلَنِي لأُ×عْطِيَنَّهُ وَلَئِنْ اسْتَعَاذَنِي لأعِيذَنَّهُ.....}
অর্থঃ (আল্লাহ বলেন) এমন কি অবশেষে আমি তাকে (যে পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়েছে/আউলিয়া) আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নেই যে, আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কোন কিছু চায়, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই।[6]
সুতরাঙ আউলিয়া কেরামের কাছে সাহায্য চাওয়াকে অস্বীকার করা, তাদের উপর সন্দেহ পোষন করা, প্রকারান্তরে হাদীসে কুদসিকেই অস্বীকার করা।

এতটুকু প্রমাণ হলো যে,যেখানে আল্লাহ মনে না করে “নাসির”, ”ওয়ালী”,”রউফ” এবং “রহিম” ইত্যাদী সিফাতী নামকে ডাকা শিরক না হয়,তবে সেখানে সিফাতী নামের বহির্ভুত “গাউছ” শব্দ ব্যবহার করলে শিরক হবার প্রশ্নই আসেনা।অতএব গাউছ শব্দটি আল্লাহর শানে প্রযোজ্য নয়।এটা বান্দার শান।

এবার আসি 'আজম/{اعظم}' শব্দের ব্যাখ্যায়।কোরআনুল করীমে কমবেশি ৩টি স্থানে আজম শব্দটি এসেছে।
প্রথমত,সুরা তাওবা-২০
اَلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ ہَاجَرُوۡا وَ جٰہَدُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ بِاَمۡوَالِہِمۡ وَ اَنۡفُسِہِمۡ ۙ اَعۡظَمُ دَرَجَۃً عِنۡدَ اللّٰہِ ؕ وَ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡفَآئِزُوۡنَ ﴿۲۰﴾
বা, যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং নিজেদের সম্পদ ও নিজেদের জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে তারা আল্লাহর কাছে মর্যাদায় শ্ৰেষ্ঠ (আ'জামু দারাজাত) । আর তারাই সফলকাম।
দ্বিতীয়ত, সুরা হাদীদ -২০
.... اُولٰٓئِکَ اَعۡظَمُ دَرَجَۃً مِّنَ الَّذِیۡنَ اَنۡفَقُوۡا مِنۡۢ بَعۡدُ وَ قٰتَلُوۡا ؕ....
বা, তারা মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ (আ'জামু দারাজাত) তাদের চেয়ে যারা পরবর্তী কালে ব্যয় করেছে ও যুদ্ধ করেছে।
সর্বশেষ, মুযযাম্মিল-২০(আয়াতাংশ)
.... وَ مَا تُقَدِّمُوۡا لِاَنۡفُسِکُمۡ مِّنۡ خَیۡرٍ تَجِدُوۡہُ عِنۡدَ اللّٰہِ ہُوَ خَیۡرًا وَّ اَعۡظَمَ اَجۡرًا ؕ....
বা,আর নিজের জন্য যে সৎকর্ম আগে প্রেরণ করবে সেটাকে আল্লাহর নিকট অধিকতর উত্তম (আ'জামা খাইরা) এবং ও মহাপুরষ্কারেরই (উপযোগী) পাবে।
সুতরাং,স্পষ্টত যে,কুরআন কেবলমাত্র বান্দার মর্যাদা বুঝাতে,আল্লাহ হতে পাওয়া বান্দার প্রতিদান সম্পর্কে আজম শব্দ ব্যবহার করেছে। এবং “আজম” শব্দ আল্লাহর জন্য ব্যবহার হয়নি।
সুতরাং,একেবারেই স্পষ্ট যে,আল্লাহর জন্য না গাউছ শব্দ বসে, আর না বসে আজম।
আল্লাহ তাহলে নিজের জন্য কি শব্দ ব্যবহার করেন?
উত্তর খুব সোজা,রুকুতে সবাই পড়ে,সোবাহানা রব্বিয়াল আজিম (আজম নয়)।বা,আল্লাহর বড়ত্ব, মহত্ব বুঝাতে “আজিম” শব্দ বসে,”আজম” বসে না।“সোবহান” শব্দ বসে,”নাসির” বসে,”ওয়ালী” বসে, “গাউছ” বসে না।

অপ্রাসঙ্গিক দিকে যাই একটু, “আজিম” বসালেও যে শিরক হয় এমন ও না।
যেমনঃ কোরআনেই এসেছে,বড় সংবাদ কে আজিম বলা হয়েছে(নাবাইল আজিম)।কোরআনুল করিম নিজেই আজিম।
আবার সুরা মায়েদার ১৫নং আয়াতের তাফসিরে আল্লামা সৈয়দ মাহমুদ আলুসী বাগদাদী হানাফি রহঃ বলেন—
{.....نور عظيم وهو نور الأنوار....}
বা, নবীজী হলেন সর্বাপেক্ষা বড় ও মহান নূর(নুরুন আজিমুন) ।সকল নূরেরও নূর।
আর এসব কোরআনিক বিশ্লেষণ দ্বারা স্পষ্ট যে,গাউছুল আযম এটা আল্লাহর শান নয়।বরং আল্লাহ চাইলে যাকে ইচ্ছা “গাউছিয়ত” পদ দ্বারা সম্মানিত করতে পারেন।
এর পরও যদি কারো প্রশ্ন থাকে,তাহলে বলব,আল্লাহ বলেন—
{وَ مَنۡ اَصۡدَقُ مِنَ اللّٰہِ حَدِیۡثًا..........}
বা, আর আল্লাহ্‌র চেয়ে বেশী সত্যবাদী(সিদ্দিক/আসদাক্বু) কে?
অথচ,নবীজী হযরত আবু বকর রাঃ কে সিদ্দিক ঘোষণা করেন।[7]আর ইমাম ইবনে বাত্তাহ একটি হাদিস উল্লেখের পর এভাবে মতামত দিচ্ছেন,
{……هذا يا إخواني الصديق الأكبر يتخوف}
বা, “আমার ভাইয়েরা,এই যে,সিদ্দিকে আকবর প্রসংশিত হলেন”......... [8]
আর ইমাম আবু হানিফার জীবনী উল্লেখ করতে গিয়ে ইমাম যাহাবী শিরোনাম দেন এভাবে, “আবু হানিফা ইমাম আ'জম”।[9]
ওলামায়ে দেওবন্দের আলেমগণের দ্বারা শায়খ মুহিউদ্দীন আব্দিল ক্বাদীর রাঃ কে গাউছুল আযম বলার ঘটনা প্রমাণিত।[10]

গাউছ শব্দের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধকতা দেখান সালাফী-আহলে হাদিস স্কলার রা ।দেখেন তাহলে, আহলে হাদীস আন্দোলনের পুরোধা নওয়াব সিদ্দিক হাসান খাঁন ভূপালি কি লিখেন—
.{ أَن الْغَوْث الْأَعْظَم والقطب الأفخم الشَّيْخ عبد الْقَادِر الجيلاني رَضِي الله عَنهُ حَامِل مذْهبه وتابع أَقْوَاله وَلذَلِك ثَبت ذكره فِي الْحَنَابِلَة وَكَانَ حنبليا على الْمَشْهُور الْمُقَرّر انْتهى}
বা,নিঃসন্দেহে গাউছুল আযম ক্বুতুবুল আফখাম শায়খ আব্দিল ক্বাদির রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হাম্বলি মাযহাব অনুসরণ করেছিলেন……[11]

যাই হোক।আক্বায়েদে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জাম'আ যুক্তি-মতবাদের জোরে প্রতিষ্ঠিত নয় বরং তাসাউফ পন্থীদের ব্যবহৃত শব্দ গাউস-কুতুব-আবদাল ইত্যাদি মর্যাদা ও কর্মকান্ড হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।



তথ্যসূত্রঃ—
(১)আল-মুফরাদাত ,আল্লামা রাগেব আসবাহানী,৬১৭পৃষ্ঠা
(২)আল ইস্তেগাসা,ড.তাহিরুল কাদেরী।
{ইস্তেগাছা হল কারো কাছে সাহায্য চাওয়া}
তরজমায়ে কানযুল ঈমান ও তাফসিরে খাযায়িনুল ইরফানের টীকা।কৃতঃ ইমামে আহলে সুন্নত আহমদ রযা খাঁ ফাদ্বেলে বেরেলী এবং আল্লামা নঈমুদ্দীন গঞ্জে মুরাদাবাদী রহঃ
বুখারী,কিতাবুয যাকাত,{ بَاب مَنْ سَأَلَ النَّاسَ تَكَثُّرًا},৫২নং বাব,১৪৭৫ নং হাদিস।
কিফায়াতিত তালিবিল লাবিব ফি খাসায়িসিল হাবিব(মশহুরুন আল খাসায়িস আল কোবরা), { باب استسقاء ابي طالب به ﷺ},১/১৪৬,ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী।
এই এবারত টি উসীলার প্রমাণ।এটা আমরা এখানে ব্যবহার করেছি,কারণ ইস্তেগাছা বা সাহায্য প্রার্থনা এবং উসীলা মূলগতভাবে একই জিনিস।আর কোরআনে স্পষ্ট উসীলার কথা উল্লেখ আছে(মায়িদা-৩৫)
সুনানু তিরমিজী,#৩৭১২,{ كتاب المناقب}
(১)বুখারী,#৬৫০২,কিতাবুর রিক্বাক। (২)রিয়াযুস সালেহীন #৯৫,#৩৮৬, (৩)ইমাম নববী,#৩৮,হাদীসে আরবা'ইন
মুসলিম, باب مِنْ فَضَائِلِ طَلْحَةَ وَالزُّبَيْرِ رضى الله عنهما,২৪১৭
আল ইবানাতু আন-শারীয়াতুল ফিরকাতুন নাজিয়াহ ওয়া মুজানাবাতুল ফিরাক্বিল মাযমুমাত (মশহুরিন আল ইবানাতুল কুবরা),কিতাবুল ঈমান,১/২৪৬,#৭৭. ইমাম ইবনে আল বাত্তাহ (৩৮৭ হিজরী)।ইমাম বাত্তাহ এর ব্যাপারে ইমাম যাহাবী বলেন,
{كان إماما في السنة، إماما في الفقه، صاحب أحوال وإجابة دعوة}
বা,(ইমাম বাত্তাহ)তিনি যুগের ইমাম ছিলেন,ফকিহগণের ইমাম ছিলেন।তাঁর বিশেষত্ব ছিল,উনি মুস্তাজাবুদ দা'ওয়া বা যাঁর দোয়া কবুল হয়।[মিযানুল ই'তেদাল, ৩য় খন্ড, ১৫পৃষ্ঠা]
9.তাযকিরাতুল হুফফাজ,১/১৬৮, ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী রহঃ
10. (১)“হাদ্বরাত আশরফ আলী থানভী কা পসন্দিদা ওয়াক্বিয়াহ”,৩৬পৃষ্ঠা,ঘটনার শিরোনাম ই হল “গাউসে আযম রাঃ এর ধোপার ঘটনা”।(উর্দু বাজার,লাহোর হতে প্রকাশিত)
(২) মওলানা এহতেশাম হাসান কান্ধলভী শায়খ জিলানীর জীবনীর কিতাব লিখেছেন, যার নাম “গাউসে আযম”।(তাবলীগ কুতুবখানা,পাকিস্তান)
11.আল খিত্তাহ ফিয যিকর আস-সিহাহ আস-সিত্তাহ,২৬০পৃষ্ঠা (দারুল কুতুব ইলমিয়াহ,বৈরুত,লিবনান),নওয়াব সিদ্দিক হাসান খাঁন ভুপালি।

✍️ Raffehaan, KUET
Top