যিনি অন্যকে শিক্ষা দিবেন, তাকে তো আগে সব বিষয়ে জানতে হবে। আল্লাহ পাক বলছেন, (হে নবী) আল্লাহ্ আপনার উপর কিতাব ও হিকমত অবতীর্ণ করেছেন আর আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা কিছু আপনি জানতেন না এবং আপনার উপর আল্লাহ'র মহা অনুগ্রহ রয়েছে।" [৩]
মহান আল্লাহ যাঁর উপর মহা অনুগ্রহ করলেন, যাঁকে শিক্ষা দিলেন যা কিছু তিনি জানতেন না, তাঁকে আমরা কি করে বলি, তিনি এটা জানতেন না, ওটা জানতেন না!! তাঁর জ্ঞান নিয়ে সমালোচনা করা, কটুক্তি করা স্বয়ং আল্লাহর উপর অপবাদ দেওয়া নয় কি!! কেননা তাঁর শিক্ষক তো হলেন স্বয়ং আল্লাহ। মনে রাখা উচিৎ, পরিস্থিতি সাপেক্ষে কোন বিষয় প্রকাশ না করা আর ঐ বিষয়ে জ্ঞান না থাকা এক কথা নয়। [এছাড়াও বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে, আবূ হুরাইরা (রা.) বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে দু’পাত্র ‘ইলম আয়ত্ত করে রেখেছিলাম। তার একটি পাত্র আমি বিতরণ করে দিয়েছি। আর অপরটি এমন যে, প্রকাশ করলে আমার কণ্ঠনালী কেটে দেয়া হবে] সুতরাং কোন একটা হাদিস কিংবা ঘটনা দিয়েই একটা পুরো বিষয়কে বিবেচনা করা/ ঐ বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া উচিৎ নয় বরং ঐ বিষয়ে কুরআন হাদিসের সকল বর্ণনা বিবেচনা করেই এবং অত্র বিষয়ের ব্যাখ্যায় ফোকাহায়ে কেরাম/ ইমামগণ কি বলেছেন সেগুলো বিবেচনা করেই পুরো বিষয়টাকে মূল্যায়ন করতে হবে। যদি এমন না হয়, তাহলে কেউ কি মনে করে যে, কবরের মধ্যে একটিমাত্র প্রশ্নই করা হবে!! কেননা বুখারী মুসলিমে তো ঐ একটা প্রশ্নেরই (প্রিয় নবী ﷺ কে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করা হবে তুমি দুনিয়াতে তাঁর ব্যাপারে কি বলতে বা কি ধারণা পোষণ করতে!) উল্লেখ আছে। আবার, প্রিয় নবী ﷺ দুনিয়ার কারো কাছ থেকে লেখাপড়া শিখেননি এবং তিনি সচরাচর লিখতেনও না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তিনি লিখতে পড়তে জানতেন না, আরবি হরফ চিনতেন না। তিনি সাহাবায়ে কেরামকে এগুলোও শিক্ষা দিয়েছেন।
হযরত মুয়াবিয়া রাঃ হুযূর পাক ﷺ এঁর সামনে (ওহী) লিখতেন; অতঃপর হুযূর ﷺ তাকে অক্ষর লিখার পদ্ধতি শিক্ষা দিয়ে এরশাদ করেন, দোয়াত এভাবে রাখ, কলম এভাবে ঘুরাও, “با” (বা) কে এভাবে সোজা করে লিখ, سين (সীন) কে পৃথক কর, আর ميم (মীম) কে বাঁকা করোনা, অথচ তিনি দুনিয়াবী কোন কাতিব বা লিখকের নিকট থেকে লিখা শিখেননি, আর কোন প্রাচীনকালীন কিতাব থেকেও তা পড়েননি। [৪]
হুদায়বিয়াতে (মক্কাবাসীদের সঙ্গে) সন্ধিপত্র লিখতে গিয়ে মুসলিমরা লিখলেন, এ সন্ধিপত্র সম্পাদন করেছেন, ‘আল্লাহ্র রাসূল মুহাম্মাদ' ﷺ। মুশরিকরা আপত্তি করে বলল, ‘আমরা তাঁর রিসালাত স্বীকার করি না। আমরা যদি জানতাম যে, আপনি আল্লাহ্র রাসূল তাহলে আপনাকে বাধা দিতাম না। তবে আপনি হলেন, "আবদুল্লাহ্'র পুত্র মুহাম্মদ"। তিনি ﷺ বললেন, ‘আমি আল্লাহ্র রাসূল এবং ‘আবদুল্লাহ্'র পুত্র মুহাম্মদ।’ অতঃপর তিনি হযরত আলী (রাঃ) কে বললেন, রাসূলুল্লাহ শব্দটি মুছে দাও। আলী (রা.) রাজি হলেন না। তিনি বললেন, আল্লাহ্র কসম, আমি আপনাকে কখনো মুছব না।’ (আহ! কেমন ছিল উঁনাদের আদব, প্রেম!!) রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন চুক্তিপত্রটি নিলেন (এবং নিজ হাতে তা মুছে দিলেন [৫]) এবং লিখলেন, ‘এ সন্ধিপত্র মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ সম্পন্ন করেন- খাপবদ্ধ অস্ত্র ব্যতীত আর কিছু নিয়ে তিনি মক্কায় প্রবেশ করবেন না। মক্কাবাসীদের কেউ তাঁর সঙ্গে যেতে চাইলে তিনি বের করে নিবেন না। আর তাঁর সঙ্গীদের কেউ মক্কায় থাকতে চাইলে তাঁকে বাধা দিবেন না।’ [৬]
তাঁর যদি অক্ষরের জ্ঞান না থাকত, তিনি যদি "আলিফ-বা-তা" না চিনতেন, তাহলে কিভাবে মুয়াবিয়া রাঃ কে হরফ লিখার নিয়ম শিখালেন! কিভাবে তিনি নিজ হাতে রাসূলুল্লাহ শব্দটি মুছতে সক্ষম হলেন! কিভাবে নতুন করে লিখে দিলেন!
মহান আল্লাহ তাঁকে শুধুমাত্র দৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান দিয়েছেন তা নয়, তাঁকে অদৃশ্য বিষয়গুলোও অবহিত করে দিয়েছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা বলেন, "(হে সর্বসাধারণ!) আল্লাহর শান এ নয় যে, তোমাদেরকে অদৃশ্যের জ্ঞান দিয়ে দেবেন। তবে আল্লাহ নির্বাচিত করে নেন তাঁর রাসূলগণের মধ্য থেকে যাঁকে চান। সুতরাং ঈমান আনো আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের উপর এবং যদি তোমরা ঈমান আনো এবং পরহেযগারী অবলম্বন করো, তবে তোমাদের জন্য মহা প্রতিদান রয়েছে।" [৭]
একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ ফজর হতে মাগরিব পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে নামাজসমূহ আদায়ের পরপর মিম্বরে আরোহণ করে খুতবা (বর্ণনা) দিতে থাকেন। এ ভাষণে তিনি পূর্বে যা ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে যা ঘটবে সব জানিয়ে দেন। [৮] তিনি ﷺ সৃষ্টির সূচনা সম্পর্কে জ্ঞাত করলেন। অবশেষে তিনি জান্নাতবাসী ও জাহান্নাম বাসীর নিজ নিজ নির্দিষ্ট স্থানে প্রবেশ করার কথাও উল্লেখ করলেন। যাদের স্মরণশক্তি ভাল ছিল, তারা এগুলো স্মরণ রাখতে পেরেছেন। [৯] তিনি ﷺ কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে বলে জানান সেসবের কিছু ঘটলেই সাহাবায়ে কেরাম তা এরূপ স্মরণ করতে পারতেন যেরূপ কেউ তার পরিচিত লোকের অনুপস্থিতিতে তার চেহারা স্মরণ রাখে। অতঃপর তাকে দেখা মাত্র চিনে ফেলে। [১০] হযরত হুযায়ফা (রাঃ) আল্লাহ্র কসম করে বলেন যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ কিয়ামত পর্যন্ত ফিতনা সৃষ্টিকারী কোন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করতে বাদ দেননি, যাদের সংখ্যা হবে তিন শ’রও বেশী। তিনি তাদের নাম, তাদের পিতার নাম এবং তাদের গোত্রের নামও উল্লেখ করেন। [১১] এছাড়াও রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, দাজ্জালের সংবাদ সংগ্রাহক দলের (দশজন অশ্বারোহী ব্যক্তির) প্রতিটি ব্যক্তির নাম, তাদের বাপ-দাদার নাম এবং তাদের ঘোড়ার রং সম্পর্কেও তিনি অবগত আছেন। এ পৃথিবীর সর্বোত্তম অশ্বারোহী দল সেদিন তারাই হবে। [১২]
প্রিয় নবী ﷺ মিম্বরে আরোহণ করে ঘোষণা করলেন, তোমরা আমাকে যা-ই প্রশ্ন করবে, আমি তারই উত্তর প্রদান করব (এমন কথা তো তিনিই বলতে পারেন, যিনি সব বিষয়ে জ্ঞাত হয়েছেন। হ্যা, তিনি ﷺ জানবেন নাই বা কেন!! স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা-ই তো বলছেন, তিনি তাকে সবকিছুই জানিয়ে দিয়েছেন যা যা তিনি ﷺ জানতেন না)। অতঃপর এমন এক ব্যক্তি, যাকে পারস্পরিক বাকবিতণ্ডার সময় অন্য এক ব্যক্তির (যে প্রকৃতপক্ষে তার পিতা নয়) সন্তান বলে সম্বোধন করা হতো, (তিনি) উঠে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহ'র নবী! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা হুযাফা। [১৩] তারপর তিনি বার বার বলতে লাগলেনঃ তোমরা আমার কাছে প্রশ্ন কর, আমার কাছে প্রশ্ন কর। এতে হযরত উমর (রাঃ) হাঁটু গেড়ে বসে গেলেন এবং বললেন, আমরা আল্লাহ্কে রব হিসাবে মেনে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করে এবং মুহাম্মাদ ﷺ কে রাসূল হিসেবে বিশ্বাস করে সন্তুষ্ট আছি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ ﷺ থামলেন। [১৪]
আল্লাহু আকবার। যিনি সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, পূর্বে কি ঘটেছে, ভবিষ্যতে কি ঘটবে, জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীর নিজ নিজ স্থানে প্রবেশসহ বর্ণনা করে দিলেন, তার কাছে আর কোন বিষয়টি অজানা থাকল!! তাঁর জ্ঞানের সীমা আমরা কি করে নির্ধারণ করতে পারব!! এখন কারো মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, এত অল্প সময়ে কি করে প্রিয় নবী ﷺ এতকিছুর বর্ণনা করলেন!! হ্যা, এটা হচ্ছে তাঁর মুজিযা (আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা)। এমন একটি মুজিযা হযরত দাউদ আঃ কেও দান করা হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, দাউদ (আঃ) এঁর জন্য কুরআন (যাবুর) তেলাওয়াত সহজ করে দেয়া হয়েছিল। তিনি তাঁর পশুযানে গদি বাঁধার আদেশ করতেন, তখন তার উপর গদি বাঁধা হতো। অতঃপর তাঁর পশুযানের উপর গদি বাঁধার পূর্বেই তিনি যাবুর তিলাওয়াত করে শেষ করে ফেলতেন। [১৫] এছাড়াও রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আমি ‘জাওয়ামিউল কালিম (ব্যাপক অর্থবহ সংক্ষিপ্ত কথা) সহ প্রেরিত হয়েছি এবং আমাকে প্রভাব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে। (অর্থাৎ তিনি এমন সংক্ষিপ্ত কথা বলতেন যা শব্দ বা উচ্চারণের দিক থেকে হত অল্প কিন্তু ব্যাপক অর্থবোধক) [১৬]
একবার প্রিয় নবী ﷺ মদীনার টিলাসমূহের একটির উপর উঠে বললেনঃ আমি যা দেখি তোমরা কি তা দেখতে পাও? উত্তর আসলো, না। তখন নবী ﷺ বললেনঃ অবশ্যই আমি দেখতে পাচ্ছি, তোমাদের ঘরগুলোর ফাঁকে ফাঁকে ফিতনা বৃষ্টির মতো পতিত হচ্ছে। [১৭] রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন এক ভ্রমণ থেকে প্রত্যাগমন করে মদীনার সন্নিকটবর্তী স্থানে পৌছলে এমনভাবে প্রচণ্ডবেগে বাতাস প্রবাহিত হয় যে, মনে হচ্ছিল যেন আরোহীকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ কোন মুনাফিকের মৃত্যুর কারণে এ বাতাস প্রবাহিত হয়েছে। যখন তিনি মদীনায় পৌছলেন, তখন দেখা গেল, একজন বড় মুনাফিকের মৃত্যু ঘটেছে। [১৮]
একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ হঠাৎ একটি বিকট আওয়াজ শুনতে পেলেন। তখন নবী ﷺ বললেন, তোমরা কি জান, এটা কিসের আওয়াজ? সাহাবারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বললেন, এ একটি পাথর যা সত্তর বছর আগে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তারপর তা কেবল নিম্নে পতিত হতে হতে এখন সেটা তার তলদেশে গিয়ে পৌছেছে। [১৯] অন্য একদিন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ কবরে আযাবরত দুজনের কথা এবং তাদের আযাবের কারণও জানিয়ে দেন। [২০]
হ্যা, রাসূলুল্লাহ ﷺ আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতায় জমিনের ভেতরের অবস্থা সম্পর্কেও জ্ঞাত ছিলেন। শুধু তা-ই নয়, ইঁনি আসমানী খবর সম্পর্কেও অবহিত ছিলেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ আমি যা দেখি তোমরা তা দেখ না, আর আমি যা শুনতে পাই তোমরা তা শুনতে পাও না। আসমান তো চড়চড় শব্দ করছে, আর সে এই শব্দ করার যোগ্য। তাতে এমন চার আঙ্গুল পরিমাণ জায়গাও নেই যেখানে কোন ফিরিশতা আল্লাহ্ তা'আলার জন্যে অবনত মস্তকে সাজদায় পড়ে না আছে। অতঃপর বললেন, আল্লাহর কসম! আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তাহলে তোমরা খুব কমই হাসতে, বেশি কাঁদতে, বাড়ী-ঘর ছেড়ে পথে-প্রান্তরে বেরিয়ে পড়তে, আল্লাহ তা'আলার সামনে কাকুতি-মিনতি করতে। [২১]
আসমান কিবা জমিনের ভেতর
কোথাও চলছে আযাব কোথাও যিকর
জমিনের উপর দাঁড়িয়েই দেন এসব খবর
ওরা কি করে বলে, তিনি ﷺ অদৃশ্য সম্পর্কে বেখবর
আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতায় তিনি জানেন এসব খবরাখবর
বদরের যুদ্ধের আগের দিন রাসূলুল্লাহ ﷺ নাম ধরে ধরে অনেকের মৃত্যুর কথা এবং মাটির উপর নিজ হাত রেখে রেখে তাদের মৃত্যুর স্থানের কথাও জানিয়ে দেন। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, সেই সত্ত্বার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! কাফিরদের কেউই রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর হাত রাখার নির্দিষ্ট স্থান অতিক্রম করেনি। [২২] আল্লাহ তায়ালা বলেছেনই, তিনি ﷺ অদৃশ্যের বিষয় বলতে কৃপণতা করেননা। [২৩]
কোথায় হবে কাফিরদের মৃত্যুর বিছানা,
পূর্বেই যে, তিনি ﷺ জানিয়ে দেন এসব নিশানা
আল্লাহ প্রদত্ত ইলমে গায়েবে, তবুও কি বিশ্বাস আনবেনা!
উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র সত্ত্বাগত ইলমে গায়েবের অধিকারী কিন্তু তিনি তাঁর মনোনীত রাসূলদের গায়েবের খবর জানিয়েছেন, এটা রাসূলদের জন্য সত্ত্বাগত নয়, আল্লাহ প্রদত্ত। এছাড়াও আপনি "নবী/ prophet" শব্দের অর্থ খুঁজলেই দেখতে পাবেন যে, এর অর্থ হল "ভবিষ্যদ্বক্তা/ অদৃশ্যের সংবাদদাতা"। "আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা" আর "আল্লাহর সত্ত্বাগত ক্ষমতা" একই কথা নয়, তাই "প্রিয় নবী ﷺ আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতায় গায়েবের খবর জানেন" এ আকীদা পোষণ করা কখনোই কুফরী হতে পারে না কিংবা শিরক নয়। আল্লাহ'র জ্ঞান তো অসীম। আল্লাহ পাক মহা অনুগ্রহ করে তাঁর রাসূলকে যা যা দরকার সবই জানিয়ে দিয়েছেন। কতটুকু জানিয়েছেন তার সীমা নির্ধারণ করার অধিকার আমাদের নেই, সেটা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ ই ভালো জানেন। কিন্তু আমাদের জ্ঞান আল্লাহ'র রাসূলের জ্ঞানের তুলনায় অতি নগন্য।
এক খ্রিস্টান ব্যক্তি মুসলিম হল এবং সূরা বাকারাহ ও সূরা আলে-ইমরান শিখে নিল। নবী ﷺ-এঁর জন্য সে ওহী লিখত। অতঃপর সে আবার খ্রিস্টান হয়ে গেল। সে বলতে লাগল, আমি মুহাম্মাদ ﷺ-কে যা লিখে দিতাম তার চেয়ে বেশি কিছু তিনি জানেন না। (নাউজুবিল্লাহ)
তার মৃত্যুর পর তাকে দাফন করার পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে। খ্রিস্টানরা এটাকে নবীজি এবং সাহাবাদের কাজ বলে মনে করল। পরবর্তীতে দাফনের পর আরো দুবার এমন হল। তখন তারাও বুঝল, এটা মানুষের কাজ নয়। কাজেই তারা লাশটি ফেলে রাখল। [২৪]
আল্লাহ তায়ালা বলছেন, "নিশ্চয় যারা কষ্ট দেয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে, তাদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত দুনিয়া ও আখিরাতে এবং আল্লাহ তাদের জন্য লাঞ্চনার শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।" [২৫] তারা কি জানে না যে, যে ব্যক্তি বিরোধিতা করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের, তবে তার জন্য জাহান্নামের আগুন রয়েছে, সেখানে সে স্হায়ীভাবে থাকবে। এটাই বড় লাঞ্চনা।[২৬]
---
[১] সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৬৪
[২] সূরা বাক্বারাহ, আয়াত ১৫০, ১৫১
[৩] সূরা নিসা, আয়াত ১১৩
[৪] ফতহুল বারী লি শরহে বুখারী ৭/৫০৪, আস শিফা বিতারীফি হুকমিল মুস্তফা ১/৩৫৮, কিতাবু জামিউল কুরআন ১/১৪১, তাফসীরে কুরতুবী ১৩/৩৫৩
[৫] সহিহ বুখারী ২৬৯৮
[৬] সহিহ বুখারী ২৬৯৯
[৭] সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৭৯
[৮] সহীহ মুসলিম ৭১৫৯
[৯] সহীহ বুখারী ৩১৯২
[১০] সুনান আবূ দাউদ ৪২৪০
[১১] সূনান আবু দাউদ ৪২৪১
[১২] সহীহ মুসলিম ৭১৭৩
[১৩] সহীহ বুখারী ৭০৮৯
[১৪] সহীহ বুখারী ৭২৯৪
[১৫] সহীহ বুখারী ৩৪১৭
[১৬] সহীহ বুখারী ৭২৭৩
[১৭] সহীহ বুখারী ৭০৬০
[১৮] সহীহ মুসলিম ৬৯৩৪
[১৯] সহীহ মুসলিম ৭০৫৯
[২০] সহিহ বুখারী ৬০৫২
[২১] সূনান আত তিরমিজী ২৩১২, সুনান ইবনে মাজাহ ৪১৯০
[২২] সুনান আবূ দাউদ ২৬৮১, সহিহ মুসলিম ৪৫১৩
[২৩] সূরা তাকভীর, আয়াত ২৪
[২৪] সহীহ বুখারী ৩৬১৭
[২৫] সূরা আহযাব, আয়াত ৫৭
[২৬] সূরা তাওবাহ, আয়াত ৬৩