কাকে জান্নাতুল মুয়াল্লাতে মা খাদিজাতুল কোবরা রা. এর রওজা পাকের পাদদেশে হযরত খাজা ওসমান হারুনী রা. এর কবর শরীফের পাশে সমাহিত করা হয়?
-----
এই মানের কমপ্রিহেনসিভ লেখা আরও অনেক দরকার সব বিষয়েই
-----
ভারত কিংবা পাকিস্তান থেকে যখন কেউ মক্কা শরীফে আসত, আমরা দেখতে চাইতাম যে তিনি সুন্নী কিনা। আমরা কেবল তাঁর সামনে ইমামে আহলে সুন্নাত আহমদ রেজা খাঁনের নাম উল্লেখ করতাম। যদি তার মুখটি খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠত তবে আমরা ধরে নিতাম যে তিনি সুন্নী।
এবং যদি মুখে অসন্তুষ্টি দেখা যেত তবে আমরা অন্য আক্বিদার লোক বলে ধরে নিতাম।
~ড. হাবিব মোহাম্মদ বিন আলাওয়ী আল মালিকী আল মাক্কী।
|শায়খ আলাওয়ী আল মালিকীর পরিচিতি|
- শায়খ আলাউয়ী জাজিরাতুল আরবের গবেষক, মাত্র ২৫ বছর বয়সে যিনি মিশর আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাদীস শাস্ত্রে পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণা কর্মের জন্য উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় তাকে "সম্মানজনক অধ্যাপক" সনদ এবং হাদীস শাস্ত্রে তাকি ইমাম আবু যাহরার সমমর্যাদা প্রদান করে।
- নবী বংশের সন্তান, উভয় হেরেমের হাদীসের সম্মানিত শিক্ষক এবং সফল গবেষক হিসেবে তার খ্যাতি শুধু আরব জগতে নয়, বরং বিশ্বজনীন সমাদৃত। তিনি জন্মগ্রহণ করেন পবিত্র মক্কা নগরীতে। হেরেমের অন্তর্গত রুচাইফাতে তার বাড়ি।
- বংশগতভাবে তিনি সৈয়দ, আর মাযহাবের দিক থেকে তিনি মালেকী এবং তরিকতের দিক থেকে শা-যলী। তার পূর্বপুরুষ গণের মধ্যে ৫ জন ব্যক্তি মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেছেন।
- তার দাদা সৈয়দ আব্বাস মালেকী মক্কা শরীফের প্রধান বিচারক ও মসজিদে হারামের ছিলেন। তার লেখাপড়া হাতে খড়ি স্বীয় পিতার হাতে হলেও তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নানান বিষয়ের শাইখদের কাছ থেকে প্রায় দুইশত সনদ অর্জন করেন।
- ১৯৭০ সালে তিনি মক্কা শরীফের উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। দু'বছর অধ্যাপনা করার পর পিতার আদেশক্রমে তিনি মসজিদে হারামের হাদীসের দরস দানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন যেখানে তার পিতা দরস দিতেন। সময়ে সময়ে তিনি মসজিদে নববীতেও হাদিসের দরস দিতেন।
- তার রুচাইফের বাড়িও ছিল হাদীসের দরস স্থল। প্রতিদিন সন্ধ্যায় ওই আঙ্গিনায় প্রায় পাঁচশত ছাত্রের জমায়েত হত।
- রাষ্ট্রীয়ভাবে তিনি মক্কা শরীফে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কেরাত সম্মেলন তিন-তিন বার প্রধান বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন।
- তার লিখিত "মাফাহিম ইয়াজিবু আন তুছাহহাহা" কিতাবের কারণে আল আরবের গ্র্যান্ড মুফতি তাওহীদ বিরোধী ফতোয়া প্রদান করলে তাকে নানান কষ্ট ভোগ করতে হয়। আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আলেম এবং তরীকতপন্থী হওয়ার কারণে নির্বাসনে জীবন বরণ করতে হয় তাকে।
তবে নির্ভীক এই কলম সৈনিকের বুদ্ধি ভিত্তিক যুদ্ধ থেমে যায়নি। তিনি একাধারে অধ্যাপনা ও লেখালেখির কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।
- ইন্তিকালের পূর্ব দিনেও তিনি তার বাড়ির দরসস্থলে হাদীসের শিক্ষা দান করেন। আকিদা, তাফসীর, ও উসূলে তাফসীর, হাদীস ও উসুলে হাদীস, দাওয়াহ, ফিকহ-ফতওয়া, সীরাত ইত্যাদি বিষয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ রচনাবলী দিকভ্রান্ত মানুষকে সঠিক পথের দিশা দিয়ে যাচ্ছে।
- মাফাহীম, আল-মিনহালুল লাতীফ, আল-কাওয়ায়িদ আল-আসসাসিয়্যাহ, শরীয়াতুল্লাহিল খালিদাহ, ফি রিহাবিল বায়তিল হারাম। আযযিয়ারাতুন নববীয়াহ বাইনাশ শারিয়াহ ওয়াল বেদাইয়াহ, ইত্যাদি তাঁর প্রসিদ্ধ কিতাব। তিনি যে বিষয়ে লিখেছেন তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের মোদ্দাকথা। বহু গবেষকদের সারকথাই তিনি যেন সহজভাবে উপস্থাপন করেছেন।
- তার লিখিত কিতাবগুলো উচ্চপর্যায়ের বিদ্যাপীঠের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার উপযোগী। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, কুয়েত, দুবাই, ইয়েমেন, সুদান, মরক্কো, সিরিয়া, লিবিয়া, আলজেরিয়া, ভারত ও বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বহু রাষ্ট্রের তার অগণিত ছাত্র ও ভক্ত-অনুরক্ত রয়েছে।
- উপমহাদেশের আল্লামা আবুল ওয়াফা আফগানি আল-হানাফী, মুফতিয়ে আজম হিন্দ মোস্তফা রেজা খান, মুফতি মুহাম্মদ শফি, মুহাদ্দিস জাকারিয়া খান্দালভী, আল্লামা আবদুল মুয়িদ হায়দ্রাবাদি, মুহাদ্দিস হাবিবুর রহমান আজমী, আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভী, শাইখুল হাদিস মুহাম্মদ আবদুল হামীদ (যিনি চট্টগ্রাম জামিয়া আহমাদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার সাবেক শাইখুল হাদীস) তার ছাত্রত্ব গ্রহণ করেছেন।
- তার পুত্র সৈয়দ আহমাদ বিন মুহাম্মদ তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে হাদীসের খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। বিশ্ব বিখ্যাত খ্যাতিমান পুরুষ ২০০৪ সালের পবিত্র রমজান মাসে ইন্তেকাল করেন এবং তাঁকে জান্নাতুল মুয়াল্লাতে মা খাদিজাতুল কোবরা এর রওজা পাকের পাদদেশে হযরত খাজা ওসমান হারুনী এর কবর শরীফের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
- বাদশাহ আবদুল্লাহ তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছিলেন, "শেখ আলভী দ্বীন ও দেশের জন্য আমানতদার বড় মাপের ব্যক্তিত্ব ছিলেন"।