অভিশাপ
মুহাম্মদ সিরাজুম মুনির তানভীর 


আমাদের উচ্চবিত্ত আর নিম্নবিত্তদের মাঝে অদ্ভুত কিছু মিল দেখা যায়। এদের সামাজিক দায়বদ্ধতা নাই বললেই চলে। যা ইচ্ছে যে ভাবে ইচ্ছে জীবন যাপন করে সমাজকে তোয়াক্কা না করেই। আবার আমাদের সমাজে যারা নিষিদ্ধ মরন নেশার অবৈধ ব্যবসা করছে প্রশাসন এর নাকের ডগায়, মরন নেশার বিভিন্ন জায়গায় চলে নরকের অশ্লিলতা সেগুলো কেন বন্ধ করা হয় না !!! 


কেন একটি যুব সমাজকে কিছু মাদক ব্যবসায়ীর হাতে নষ্ট হতে দিবে রাষ্ট্র?

এক্ষেত্রে রষ্ট্রের ভূমিকা আরও কঠিন হওয়া উচিত।বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের যে আইন আছে তার ব্যবহার আরো জোরালো হওয়া উচিত। তাই নামে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থাকবে কিন্তু চোখের সামনে যুব সমাজের এমন অধঃপতন আমাদের সমাজকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে সেই প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে। উচ্চবিত্ত কত মেয়েরা মরণ নেশায় আকন্ঠ ডুবে আছে মাঝে মাঝেই ওদের ক্রাইম করা দেখলে সেই চিত্র সামনে উঠে আসে। ঐশির আগে আমরা দেখেছি মাদকাসক্ত পুত্রের হাতে সচিবের খুন হওয়া। কত মাকে

দেখেছি মাদকাসক্ত পুত্রের হাতে নির্মমভাবে খুন হওয়ার। এখন তো এগুলো গণনা করে শেষ করা মুশকিল। 


আর আমাদের সকলের চোখের রাস্তার ধারে মাদকাসক্তদের প্রকাশ্যে হেরোইন নেয়ার দৃশ্য কে না দেখেছে। বিভিন্ন পার্কে, ফুটওভার ব্রিজে প্রকাশ্যে চলে অবাধ নেশার বিচরন ওদের। গুলিস্তানের হকি স্টেডিয়ামের পাশে ভলিবল খেলার মাঠটির সামনে একদল মাদকাসক্ত নারী-পুরুষকে ওভাবে নেশা করতে দেখে নিজেকে কতবার প্রশ্ন করেছি ওরাও কি মানুষ? ওদের ব্যাপারে কোন ভূমিকা দেখি নাই প্রশাসনকে। এখন ওরা গুলিস্তান পার্কে যেন আবাস গড়েছে। তাদের জীবন ধারাকে সৃষ্টির সেরা জীবন মানুষ বলতে আমার কষ্ট হয়। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে নিজেকে বড়ই অসহায় লাগে ওদের দেখলে।


আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম ৮/১০ বছরের শিশুরা যাদের আমরা টোকাই বলি ওদের দিকে তাকানোর কেউ নেই যেনো। রাস্তার কোনায় বসে প্রকাশ্যে দুই/তিনজন মিলে ওরা অদ্ভুত ধরনের নেশা করছে ! জুতো পেস্টিং করার গাম দিয়ে ওরা নেশা করে !!! একটি পলেথিনের মধ্যে ঐ গামের কৌটা নিয়ে পলেথিন থেকে শ্বাস নিচ্ছে আর ছাড়ছে। কি ভয়ঙ্কর ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ঐ শিশুগুলির ফসফুস ! এটা এমন এক নেশা যা শিশুরা ছাড়তে পারে না কয়েকদিন ব্যবহার করবার ফলে। এরপর এরাই চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই করা শুরু করে এবং দিনে দিনে সন্ত্রাসী হয়ে উঠে নেশার টাকা যোগান দিতে। মৃত্যু এসে ধীরে ধীরে গ্রাস করতে থাকে ওদের। শরীর শুকিয়ে যায়, ফুসফুসে বাসা বাধে কঠিন ব্যাধি, ক্যান্সার।

ঐ শিশু গুলোও নেশার টাকার জন্যে খুনি হয়ে উঠতে দ্বিধা করে না। নেশাকে না বলার মত কোন মিডিয়াকে সামনে এগিয়ে আসতে দেখি না। আমরা সবাই এই বিষয়টা এড়িয়ে যাচ্ছি !!! 


মধ্যবিত্তদের ঘরে একটি মাদকাসক্ত সন্তান যেনো অভিশাপ। সেই পরিবারটি লজ্জায় গোপন করতে করতে এমন একটা পর্যায়ে আসে তখন আর কিছুই করবার থাকে না। সবাই জেনে যায় অভিশপ্ত সন্তানটির কুকর্ম। অথচ সচেতন হলে সন্তানকে সঠিক পথে নিয়ে আসা যে অসম্ভব নয় সেটিও নিজের চোখে দেখেছি। আজ মরণ নেশা আমাদের সমাজকে কুড়ে কুড়ে গ্রাস করছে। উচচবিত্ত, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত কেউ বাদ যাচ্ছে না। সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি রাষ্ট্রকে এই ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। নেশার গোড়াতেই ওদের বিষদাঁত ভেঙে দেয়ার জন্যে এদেশে যেন অবৈধভাবে মাদকদ্রব্য প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে কঠোর আইন করতে হবে। মাদক ব্যবসায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।


মাদক ব্যবসায়ীদের যদি সর্বোচ্চ সাজা প্রদান করা হয় তবেই কমে আসবে মরণ নেশার ভয়ংকর ছোবল। সর্বোপরি দূর্নীতি কমাতে পারলে আমাদের দেশের সামাজিক অবক্ষয় কমে আসবে বলে আমার বিশ্বাস। দূর্নীতি আর মাদক ওতোপ্রতোভাবে জড়িত।

Top