জানাজার নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করার বৈধতা
অতি দুঃখের সহিত বলতে হচ্ছে! ইদানিংকালে জানাযার নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দোয়া করাকে এক শ্রেণীর মানুষ বিদআত বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে আমি তাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়ার সামান্য চেষ্টা করছি মাত্র। জানাজার পর মৃত ব্যক্তির কল্যাণের জন্য দো’আ করা জায়েজ এবং সুন্নাত নিন্মোক্ত দলিল সমুহ অবলোকন করলেই আমরা জানতে পারবো ইনশাআল্লাহঃ
❏ দলীল নং- ০১:
পবিত্র কোরআনে ৩০পারা, ৯৪ নং সুরা ইনশিরাহ, ৭-৮ নং আয়াত, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন,
ﻓﺎﺫﺍ ﻓﺮﻏﺖ ﻓﺎﻧﺼﺐ- ﻭﺍﻟﻰ ﺭﺑﻚ ﻓﺎﺭﻏﺐ –
আর যখন আপনি অবসর হবেন, পরিশ্রম করুন এবং আপনার প্রতিপালকের দিকে মনোনিবেশ করুন। এ আয়াতের তাফসীরে আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة الله) বলেন, ﻋﻦ ﻗﺘﺎﺩﺓ
ﻭﺍﻟﻀﺤﺎﻙ ﻭﻣﻘﺎﺗﻞ ﻓﻰ ﻗﻮﻟﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ - ( ﻓﺎﺫﺍ ﻓﺮﻏﺖ ﻓﺎﻧﺼﺐ ) ﺍﻯ ﺍﺫﺍ ﻓﺮﻏﺖ
ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺍﻟﻤﻜﺘﻮﺑﺔ ﻓﺎﻧﺼﺐ ﺍﻟﻰ ﺭﺑﻚ ﻓﻰ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﻭ ﺍﺭﻏﺐ ﺍﻟﻴﻪ ﻓﻰ
ﺍﻟﻤﺴﺂﻟﺔ ﻳﻌﻄﻴﻚ –
অর্থাৎ হযরত কাতাদাহ, দাহ’হাক মাকাতিল (رضي الله عنه) আনহুম আল্লাহ পাকের এই বানী সম্পর্কে বলেন :- ﻓﺎﺫﺍ ﻓﺮﻏﺖ ﻓﺎﻧﺼﺐ এর মর্মার্থ হল আপনি যখন ফরয সালাত শেষ করবেন, তখন নিজেকে দো’আ করার জন্য নিয়োজিত করে নেবেন এবং প্রার্থনা করার জন্য তারই প্রতি মনোনিবেশ করবেন। তিনি আপনাকে প্রদান করবেন। বর্ণিত আয়াতের তাফসীরকারকদের মতে, নামাযের দোয়ার কথা বলা হয়েছে।"
সুতরাং জানাযা নামায যেহেতু এক প্রকার ফরয নামায যদি ও তা ফরযে কেফায়া। সেহেতু জানাযা নামাযের পর দো’য়া করা ও প্রমানিত।
❏ দলীল নং- ০২:
ﻋﻦ ﺍﻣﺎﻣﺔ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻗﻴﻞ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ
ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻱ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﺍﺳﻤﻊ ؟ ﻗﺎﻝ ﺟﻮﻑ ﺍﻟﻠﻴﻞ ﺍﻻﺧﺮﻭﺩﺑﺮ ﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ ﺍﻟﻤﻜﺘﻮﺑﺎﺕ –
অর্থাৎ হযরত আবু উমামাহ বাহেলী (رضي الله عنه) হতে বর্নিত তিনি বলেন রাসূল (ﷺ) কে জিঙ্ঘেস করা হলো যে, কোন মুহূর্তের দো’আ অধিক কবূল হয়ে থাকে? তখন রাসূল (ﷺ) বললেন রাতের শেষাংশের দো’আ
(তাহাজ্জুদের সময়) এবং ফরয নামায সমূহের পরের দো’আ (দ্রুত কবূল হয়ে থাকে)”।
যেহেতু জানাজার নামাজ ফরযে কেফায়ার তাই এ নামাযের পরে ও দো’আ করা এ হাদীসের ভিত্তিতে জায়েয, যেভাবে পাচঁ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পরেও জায়েয।
❏ দলীল নং- ০৩:
মিশকাত শরীফ, ১৬৭৪ নং হাদিস:
ﻋﻦ ﺍﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﺳﻤﻌﺖ ﺭﺳﻮﻝ
ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ ﺍﺫﺍ ﺻﻠﻴﺘﻢ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻴﺖ ﻓﺎﺧﻠﺼﻮﺍ ﻟﻪ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ (رواه ابو داود)
– অর্থাৎ হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি রাসুল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন যখন তোমরা মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায পড়ে ফেলবে তখন সাথে সাথেই (বিলম্ব না করেই) তার জন্য একটি খাস দো’আ কর। (ইবনে মাজাহ, হা/ ১৪৯৭ ও আবু দাউদ, হা/ ৩১৯৯)
এ হাদীস দ্বারা প্রমানিত হল যে, জানাযা নামাযের পর পরই মৃত ব্যক্তির জন্য খাস করে দো’আ করতে হবে। জানাযা নামাযের পর দো’আ অস্বীকারকারীগণ এ হাদীসের উল্লেখিত দোয়াকে নামাযের মধ্যে পঠিত দো’আ অথবা মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর কবরস্থানে দো’আ করাকে বুঝাতে আপ্রান চেষ্টা চালায়। তাদের জ্ঞাতার্থে বলতে চাই, আলোচ্য হাদীসে ﻓﺎﺧﻠﺼﻮﺍ শব্দের মধ্যে ﻓﺎﺀ হরফের অর্থ কি?
+আল্লামা সিরাজুদ্দীন উসমান (رحمة الله) এর নাহু শাস্ত্রের বিখ্যাত কিতাব হেদায়াতুন নাহুতে হরফের অধ্যায়ে ﻓﺎﺀ হরফের অর্থ লিখা হয়েছে ﺍﻟﻔﺎﺀ ﻟﻠﺘﺮﺗﻴﺐ ﺑﻼ
ﻣﻬﻠﺔ ﻧﺤﻮ ﻗﺎﻡ ﻃﻔﻴﻞ ﻓﺒﺮﻫﺎﻥ ﻭ ﺍﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻄﻔﻴﻞ ﻣﺘﻘﺪﻡ ﻭﺑﺮﻫﺎﻥ ﻣﺘﺎﺧﺮﺍ ﺑﻼ
ﻣﻬﻠﺔ অর্থাৎ ﻓﺎﺀ হরফটি বিলম্বহীন পর্যায়ক্রমিক অর্থে ব্যবহার হয়। যেমন ﻗﺎﻡ ﻃﻔﻴﻞ ﻭﺑﺮﻫﺎﻥ অর্থ তুফাইল দাঁড়ালো অতঃপর বুরহান দাঁড়ালো। এ উদাহরনটিতে তুফাইলের দাঁড়ানো বুরহানের পূর্বে হবে এবং বুরহানের দাঁড়ানো বিলম্বহীন ভাবে তুফাইলের পরে হবে। অর্থাৎ বুরহানের দাঁড়ানো তুফাইলের পূর্বে বা তার সাথে হবে না। এমনকি তুফাইলের দাঁড়ানোর অনেক পরে ও হবে না বরং তুফাইল দাঁড়ানোর পর তার সাথে সাথেই বুরহান দাঁড়াবে। সুতরাং উক্ত হাদীস শরীফের ইবারত হল- ﺍﺫﺍ ﺻﻠﻴﺘﻢ
ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻴﺖ ﻓﺎﺧﻠﺼﻮﺍ ﻟﻪ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ অর্থাৎ যখন তোমরা মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায পড়ে ফেল। অতঃপর তাঁর জন্য খাস করে দো’আ কর। আলোচ্য ইবারতে প্রথমে নামায পড়ার কথা বলা হয়েছে। তার পর দো’আ করার জন্য বলা হয়েছে। তাই উক্ত দোয়াটি নামাযে পঠিত দো’আ হিসেবে গন্য হবেনা। নামাযের পরেই বিলম্ব না করে দো’আ করতে হবে। এবং নামাযের পর দাফন পর্যন্ত বিলম্ব করে তার পরে পঠিত দো’আ হিসেবে ও উক্ত দো’আটি যদি দাফনের পরবর্তী দোআ হিসেবে বুঝানো হত তাহলে হাদীস শরীফের ইবারতে ﻓﺎﺀ হরফ ব্যবহার না করে ﺛﻢ (ছুম্মা) হরফ ব্যবহার করা হত কারণ ছুম্মা হরফের অর্থ হলো ﺍﻟﺘﺮﺗﻴﺐ ﺑﻤﻬﻠﺔ অর্থাৎ বিলম্বের সহিত পর্যায়ক্রম। যেমন বলা হয়। ﺩﺧﻞ ﺍﻧﻮﺍﺭ
ﺛﻢ ﻣﺤﻤﻮﺩ অর্থাৎ আনওয়ার প্রবেশ করল অতঃপর
বিলম্ব করে মাহমুদ প্রবেশ করল। অনুরূপ ফা হরফের অর্থ দুরুসুল বালাগাত কিতাবের প্রনেতা আল্লামা বেগ নাসেফ, মুহাম্মদ বেগ দিয়াব, মুস্তফা তাম্মুম ও সুলতান আফেন্দী (رحمة الله) বর্ননা করেছেন”। অনুরূপ ফা হরফের অর্থ কাফিয়া কিতাবের প্রনেতা আল্লামা জালালুদ্দীন ইবনে হাযেব (رحمة الله) বর্ননা করেছেন”।
অনুরূপ (ফা) হরফের অর্থ নুরুল আনওয়ার কিতাবের ব্যাখ্যাকার আল্লামা মোল্লা জীউন (رحمة الله) বর্ননা করেছেন”।
❏ দলীল নং- ০৪:
প্রসিদ্ধ ফকীহ ইমাম কামালুদ্দীন ইবনুল হুমাম (رحمة الله) তার ফাতাওয়ার কিতাবে মুতার যুদ্ধের ঘটনা উল্লেখ করেন। হযরত আব্দুল জাব্বার বিন উমারাহ (رضي الله عنه) তিনি হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবী বাকরাহ (رضي الله عنه) থেকে তিনি বলেন যখন (শামদেশে) মুতানামক স্থানে (মুসলমান এবং কাফের) যুদ্ধ শুরু করল। তখন রাসুলে পাক (ﷺ) (মদিনা শরীফের মসজিদে নববীর) মিম্বরে বসা ছিলেন, তখন তার এবং শ্যাম দেশের মধ্যবর্তী স্থানের সকল আবরন দূর করে উন্মক্ত করে দেয়া হল। তিনি মুতার যুদ্ধ সরাসরি প্রত্যক্ষ করতে লাগলেন। অতঃপর রাসুলে পাক (ﷺ) বললেন হযরত যায়েদ ইবনে হারেসা (رضي الله عنه) (ইসলামের) পতাকা হাতে নিয়েছেন। কিছুক্ষন অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি শাহাদাত বরণ করলেন।আল্লাহর হাবীব (ﷺ) তাঁর জানাযার নামায পড়লেন এবং তার জন্য দোআ করলেন ও (উপস্থিত সাহাবীদের উদ্দেশ্যে) বললেন তোমরা তাঁর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি জান্নাতে প্রবেশ করে সেখানে ঘুরাফেরা
করছেন। অতঃপর হযরত জাফর ইবনু আবী তালেব (رضي الله عنه) পতাকা নিজ হাতে নিলেন কিছুক্ষন অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি শাহাদাত বরণ করলেন। ﻓﺼﻠﻰ ﻋﻠﻴﻪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭﺩﻋﺎ ﻟﻪ ﻭﻗﺎﻝ
ﺍﺳﺘﻐﻔﺮﻭﺍ ﻟﻪ
অর্থাৎ অতঃপর রসুল (ﷺ) তার জানাযা নামায পড়লেন এবং তার জন্য দোআ করলেন লোকদেরকে ও তার মাগফিরাতের জন্য দোআ করতে বললেন”।
❏ দলীল নং- ০৫:
মুতার যুদ্ধে রাসুল (ﷺ) সাহাবীরা জানাযার নামাযের পর কী করলেন তা ইমাম বায়হাক্বী (رحمة الله) সুন্দর করে সহীহ সনদে এভাবে বর্ননা দিচ্ছেন
ﻋﻦ ﻋﺎﺻﻢ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﻗﺘﺎﺩﺓ ﺍﻥ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻟﻤﺎ ﻗﺘﻞ
ﺯﻳﺪ ﺍﺧﺬ ﺍﻟﺮﺍﻳﺔ ﺟﻌﻔﺮ ﺑﻦ ﺍﺑﻰ ﻃﺎﻟﺐ ﻓﺠﺎﺀﻩ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ﻓﺠﺒﺐ ﺍﻟﻴﻪ ﺍﻟﺤﻴﺎﺓ
ﻭﻛﺮﻩ ﺍﻟﻴﻪ ﺍﻟﻤﻮﺗﻰ ﻭﻣﻨﻪ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻻﻥ ﺣﻴﻦ ﺍﺳﺘﺤﻠﻢ ﺍﻻﻳﻤﺎﻥ ﻓﻰ ﻓﻠﻮﺏ
ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﺗﻤﻨﻴﻨﻰ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ؟ ﺛﻢ ﻣﻀﻰ ﻗﺪﻭﻣﺎ ﺣﺘﻰ ﺍﺳﺘﺸﻬﺪ ﻓﺼﻠﻰ ﻋﻠﻴﻪ
ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭﺩﻋﺎ ﻟﻪ ﻭﻗﺎﻝ ﺍﺳﺘﻐﻔﺮﻭﺍﻻﺧﻴﻜﻢ ﻓﺎﻧﻪ ﺷﺎﻫﺪ ﺩﺧﻞ
ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻭﻫﻮ ﻳﻄﻴﺮ ﻓﻰ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺑﺠﻨﺎﺣﻴﻦ ﻣﻦ ﻳﺎﻗﻮﺕ ﺣﻴﺚ ﻳﺸﺎﺀ ﻣﻦ ﺍﻟﺠﻨﺔ
অর্থাৎ হযরত আছিম বিন উমর বিন কাতদাহ (رضي الله عنه) বর্ননা করেন, অতঃপর রাসূল (ﷺ) তাঁর জানাযার নামায পড়লেন এবং তাঁর জন্য দোআ করলেন তারপর বললেন তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর দরবারে ইস্তিগফার কর, নিশ্চয়ই সে এখন শহীদ হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করেছে এবং ইয়াকুত ডানায় ভর করে জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা সেখানে উড়ে বেড়াচ্ছেন।"
❏ দলীর নং- ০৬:
বিখ্যাত হানাফী ফকীহ ও মুহাদ্দিস আল্লামা কাসানী ওফাত ৫৮৭ হিজরী হাদীসটি দুজন সাহাবী এ ভাবে বর্ননা করেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) এবং হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্নিত-
ﻓﺎﺗﺘﻬﻤﺎ ﺻﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﺟﻨﺎﺯﺓ ﻓﻠﻤﺎ ﺣﻀﺮﺍ ﻣﺎ ﺯﺍﺩ ﻋﻠﻰ ﺍﻻﺳﺘﻐﻔﺎﺭ ﻟﻪ ﻭ ﺭﻭﻱ
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﺳﻼﻡ ﺍﻧﻪ ﻓﺎﺗﺘﻪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﺟﻨﺎﺯﺓ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ
ﻓﻠﻤﺎ ﺣﻀﺮ ﻗﺎﻝ : ﺍﻥ ﺳﺒﻘﺘﻤﻮﻧﻰ ﺑﺎﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻴﻪ ﻓﻼ ﺗﺴﺒﻘﻮﻧﻰ ﺑﺎﻟﺪﻋﺎﺀ ﻟﻪ –
অর্থাৎ উভয়ে এক জানাযায় গিয়ে জানাযার নামায না পেয়ে মায়্যিতের জন্য ইস্তিগফার পড়লেন বা দোআ করলেন। আরেক বর্ননায় রয়েছে একদা হযরত উমর (رضي الله عنه) এর জানাযা যখনই শেষ হয়ে গেল তখন হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম (رضي الله عنه) আসলেন, তিনি বললেন হে আমার সাথীরা! তোমরা আমার পূবেই জানাযার নামায পড়ে ফেলেছো কিন্তু জানাযার পর দোআ আমাকে বাদ দিয়ে করো না অর্থাৎ আমাকে সাথে নিয়েই দোআ করো।"
উক্ত বর্ণনার দ্বারা প্রমানিত হয় যে, সাহাবায়ে কেরামগন জানাযার পর পুনরায় দোআ করতেন। এটা ছিল সাহাবাগনের সম্মিলিত আমল, সুতরাং জানাযার পর দোআ করা সাহাবীদের সুন্নাত।
❏ দলীল নং- ০৭:
হযরত ইবরাহীম হিজরী (رضي الله عنه) বললেন আমি হযরত আবদুল্লাহ বিন আওফা (رضي الله عنه) যিনি বাইতুর রিদওয়ানের তাঁর কন্যার ওফাত হলে তিনি তাঁর মেয়ের কফিনের পেছনে একটি খচ্ছরের উপর সওয়ার হয়ে যাচ্ছেন। তখন মহিলারা কান্না করতে ছিলেন। তিনি তাদেরকে বললেন তোমরা মর্সিয়া করোনা, যেহেতু রাসূল (ﷺ) মর্সিয়া করতে নিষেধ করেছেন। তবে তোমাদের মধ্যে যে কেউ চায় অশ্রু ঝরাতে পারবে।
ﺛﻢ ﺻﻠﻰ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻓﻜﺒﺮ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺍﺭﺑﻌﺎ ’
ﺛﻢ ﻗﺎﻡ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺮﺍﺑﻌﺔ ﻗﺪ ﺭﺑﻴﻦ ﻣﺎ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺘﻜﺒﺮﺗﻴﻦ ﻳﺴﺘﻐﻔﺮ ﻟﻬﺎ ﻭﻳﺪﻋﻮ ﻭﻗﺎﻝ :
ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻳﺼﻨﻊ ﻫﻜﺬﺍ
এরপর জানাযার নামায চারটি তাকবীরের মধ্যে সম্পন্ন করলেন। চতুর্থ তাকবীরের পর, দুই তাকবীরের মধ্যখানের সময় পরিমান দো’আ করতে ছিলেন এবং তিনি (সাহাবী) বললেন অনূরূপ রাসুল (ﷺ) জানাযায় করতেন”।
❏ দলীল নং- ০৮:
বর্নিত হয়েছে একবার রাসূল (ﷺ) একটা জানাযার নামায শেষ করলেন। এরপর হযরত ওমর (رضي الله عنه) উপস্থিত হলেন তাঁর সাথে কিছু লোক ও ছিল। তিনি দ্বিতীয়বার জানাযার নামায পড়তে চাইলেন। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন জানাযার নামায দ্বিতীয় বার পড়া যায়না
ﻭﻟﻜﻦ ﺍﺩﻉ ﻟﻠﻤﻴﺖ ﻭ
ﺍﺳﺘﻐﻔﺮ ﻟﻪ
তবে তুমি মৃত ব্যক্তির জন্য দোআ করত পার এবং তাঁর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো”।
সুতরাং উপরোক্ত দলিলাদির মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারলাম জানাযা নামাযের পর মৃত ব্যক্তির জন্য তাঁর বিদায় বেলায় মুনাজাত বা দোআ করা একটি উত্তম উপহার। আমাদের সাধারণ বিবেক বলে এত দিন যারা আমাদের একান্ত আপনজন হিসেবে ছিলেন যারা আমাদের সুখে-দুঃখে ছিলেন তাদের উপকার করার জন্য কোন উপায় আমাদের নেই। কেবল তাদের জন্য দোআ করাই একমাত্র উপহার। শরীয়ত সম্মত একটি উত্তম আমল জানাযার পর দোআ করার বিরোধিতা করতে গিয়ে সমাজে ফিৎনা ফাসাদ সৃষ্টি কারীরা একটি খোড়া যুক্তি অবতারনা করে বলে বেড়ায় জানাযাই তো দোআ আবার দোয়ার কী প্রয়োজন?
আমরা বলতে চাই দোআ করা যদি না জায়েয হয় তাহলে ভাত খাওয়ার পর আর কিছু খাওয়া যাবে না। কারন খাওয়ার পর আবার কিসের খাওয়া? বিষয়টি একবারে হাস্যকর। মূলত জানাযা কেবল দোআ হিসেবে আখ্যায়িত করা অজ্ঞতার নামান্তর। কারণ যে কারণে তারা জানাযাকে দোআ বলতে চায় সে কারনে অন্যান্য নামাযকে ও দোআ বলতে হবে। কেননা সকল নামাযের ভিতরে কোন না কোনোভাবে দোআ রয়েছে। এবার যুক্তিকে যুক্তি দিয়ে খন্ডন করা প্রয়োজন। মূলত জানাযার নামায দোআ নয়। নামাযের সকল শর্তাবলী জানাযার নামাযে ও বিদ্যমান।
জানাযার নামাজ ও দোয়ার মধ্যে পার্থক্যঃ
● ১) জানাযার জন্য ওযু কিংবা তায়াম্মুম শর্ত কিন্তু দোয়ার জন্য শর্ত নয়।
● ২) জানাযার জন্য কিবলামুখী হওয়াশর্ত কিন্তু দোয়ার জন্য নয়।
● ৩) জানাযার জন্য কিয়াম তথা দাড়ানো শর্ত দোয়ার জন্য নয়।
● ৪) ফিকহের কিতাব সমূহে কোথাও জানাযাকে দোআ হিসেহে উল্লেখ করা হয়নি বরং সব জায়গায় লিখা আছে “সালাতুল জানাযাহ” তথা জানাযার নামায। এমনকি জানাযার পূর্বে যে নিয়ত করা হয় তাতে ও আমরা বলে থাকি “সালাতিল জানাযাহ” দোআ -ইল- জানাযাহ কেউ বলেনা।
● ৫) যে কারনে নামায ভঙ্গ হয় সে কারণে জানাযার নামায ও ভঙ্গ হয়।
● ৬) নামায জামাতে হয় জানাযা ও জামাতে হয়।
● ৭) নামাযে নিয়্যত আছে জানাযায় ও নিয়্যত আছে।
● ৮) নামাযে সালাম আছে জানাযায় ও সালাম আছে।
● ৯) জানাযায় রুকু সিজদা নেই একেক ধরনের নামায একেক ধরনের হয় যেমন ইস্তিকার নামায, ইস্তিখারার নামায, সালাতুত তাসবীহ ইত্যাদি বিভিন্ন রূপ (উসুলুশ শাশী)।
● ১০) নামায থেকে সালাম দ্বারা বের হতে হয় জানাযায় ও তাই কিন্তু দোআ থেকে পৃথক হতে সালাম প্রয়োজন হয়না।
● ১১) ফরয নামাযের পর দোআ হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমানিত জানাযার নামায ফরযে কেফায়া তাই এতে ও দোআ অপরিহার্য।
● ১২) সালাতুল মাগরিবকে মাগরিবের দোআ বলা হয় না বরং নামায বলা হয় তাহলে সালাতুল জানাযাকে জানাযার দোআ কেন বলা হবে? তাই এটা ও নামায।
● ১৩) নামাযের জন্য আযান আছে, জানাযার জন্য ও এলান (ঘোষনা) আছে সকল নামাযেই দোআ আছে শুধু জানাযাকে খাস করা ঠিক নয়।
● ১৪) নামাযে মাসবুক (বিলম্বে আসলে) যেভাবে পরবর্তীতে নামায সম্পন্ন করতে হয় একই ভাবে জানাযার একই হুকুম। কিন্তু দোআয় মাসবুকের মাসআলা নেই।
● ১৫) দোআয় এদিক সেদিক তাকানো যায়, নামাযে ও জানাযায় তাকানো যায়না, তাই জানাযার নামায দোআ হয় কী করে।
● ১৬) নামাযে মুক্তাদীর জন্য “ইক্তিদা” আছে জানাযায় ও আছে।
● ১৭) ইস্তিসকার নামায মাঠে ময়দানে হয় জানাযার নামায ও তাই বরং প্রয়োজনে মসজিদে ও পড়া যায়।
● ১৮) বিশ্ববিখ্যাত তাফসীরের কিতাব তফসীরে জালালাইন কিতাবে ৫০২ পৃষ্টা মধ্য সূরা ইনশিরাহ ৭-৮ নং আয়াতে আছে, আর যখন নামায হতে অবসর গ্রহন করবে অতঃপর দোয়ার মধ্যে মশগুল হয়ে যাও। নামায শেষ হওয়ার পর দোয়ার কথা বলা হয়েছে। জানাযা দোআ নয় বরং নামায, তাই তাঁর পর দোআ করতে হবে। সুতরাং একটি ফরযে কিফায়ার নামাযকে কেবল দোআ হিসেবে আখ্যায়িত করে তাকে হালকা করে দেয়ার কোন মানে হয়না।
অতএব আসুন তর্কের খাতিরে তর্ক নয় বরং সত্যকে জানার চেষ্টা করি। মহান আল্লাহ তায়ালা ও রাসুল (ﷺ) এর আনুগত্যকে মান্য করার চেষ্টা করি। বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালীন (ﷺ)