জান্নাতের কিছু বর্ননাঃ
১. জান্নাতের ১০০টি স্তর রয়েছে। প্রতি দুই স্তরের মাঝে আসমান-জমিনের সমান ব্যবধান বর্তমান। ফিরদাওস হচ্ছে সবচেয়ে উঁচু স্তরের জান্নাত, সেখান থেকেই জান্নাতের চারটি ঝর্ণা প্রবাহিত হয় এবং এর উপরেই (আল্লাহ তাআলার) আরশ স্থাপিত। নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘তোমরা আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করার সময় ফিরদাওসের প্রার্থনা করবে।’’ (তিরমিজি ২৫৩১)
.
২. জান্নাতে রয়েছে নির্মল পানির সমুদ্র, মধুর সমুদ্র, দুধের সমুদ্র এবং মদের সমুদ্র। এগুলো থেকে আরো ঝর্ণা বা নদী-সমূহ প্রবাহিত হবে। (তিরমিজি ২৫৭১) জান্নাতের এই মদে জ্ঞান শূন্য হয় না, কোনো মাথা ব্যথায়ও ধরে না। (সূরা আল-ওয়াকিআ ১৯)
.
৩. জান্নাতবাসীনী কোনো নারী যদি পৃথিবীর দিকে উঁকি দেয়, তবে গোটা জগত আলোকিত হয়ে যাবে এবং আসমান-জমিনের মধ্যবর্তী স্থান সুগন্ধিতে মোহিত হয়ে যাবে। তাদের মাথার ওড়নাও গোটা দুনিয়া ও তার সম্পদরাশি থেকে উত্তম। (বুখারী ৬৫৬৮)
.
৪. জান্নাতে কারো ধনুক অথবা কারো পা রাখার স্থান দুনিয়া ও তাতে যা আছে, তা থেকেও উত্তম। (বুখারী ৬৫৬৮)
.
৫. জান্নাতের একটি গাছের নিচের ছায়ায় কোনো সওয়ারী যদি ১০০ বছরও সওয়ার করে, তবুও তার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। (বুখারী ৬৫৫২)
.
৬. জান্নাতে মুক্তা দিয়ে তৈরি ৬০ মাইল লম্বা একটি তাঁবু থাকবে। জান্নাতের পাত্র ও সামগ্রী হবে সোনা ও রূপার। (বুখারী ৪৮৭৯)
.
৭. সেখানে জান্নাতীগণের জন্য থাকবে প্রাসাদ আর প্রাসাদ। প্রাসাদের উপর নির্মিত থাকবে আরো প্রাসাদ। (সূরা আয-যুমার ২০)
.
৮. পূর্ণিমার চাঁদের মতো রূপ ধারণ করে জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের অন্তরে কোনো হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। তারা কখনো রোগাক্রান্ত হবে না। তাদের প্রস্রাব-পায়খানা হবে না। তারা থুথু ফেলবে না। তাদের নাক দিয়ে ময়লা ঝড়বে না। তাদের চিরুনী হবে সোনার চিরুনী। তাদের ধুনীর জ্বালানী হবে আগরের। তাদের গায়ের গন্ধ হবে কস্তুরির মতো সুগন্ধি। তাদের স্বভাব হবে এক ব্যক্তির ন্যায়। তাদের শারীরিক গঠন হবে (আদী পিতা) আদাম (আঃ)-এর মতো (অর্থাৎ ৬০ হাত লম্বা)। (বুখারী ৩৩২৭)
.
৯. জান্নাতীদের খাবারগুলো ঢেকুর এবং মিশকঘ্রাণযুক্ত ঘর্ম দ্বারা নিঃশেষ হয়ে যাবে। (মুসলিম ৭০৪৬)
.
১০. জান্নাতীরা সুখ-শান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যে ডুবে থাকবে। হতাশা, দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনা থাকবে না। পোশাক-পরিচ্ছেদ ময়লা হবে না, পুরাতন হবে না। তাদের যৌবনও নিঃশেষ হবে না। (তিরমিজি ২৫২৬)
.
১১. জান্নাতবাসীরা সব-সময় জীবিত থাকবে। কখনো মৃত্যুবরণ করবে না। সব-সময় যুবক-যুবতি থাকবে, বৃদ্ধ হবে না। (মুসলিম ৭০৪৯)
.
১২. জান্নাতবাসীদের প্রতি আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘‘আমি তোমাদের উপর আমার সন্তুষ্টি অবধারিত করবো। অতঃপর আমি আর কখনো তোমাদের উপর অসন্তুষ্ট হবো না।’’ (বুখারী ৬৫৪৯)
.
১৩. জান্নাতের ইট স্বর্ণ ও রোপ্য দ্বারা তৈরি। কঙ্কর হলো মণিমুক্তা, আর মসল্লা হলো সুগন্ধীময় কস্তুরী। (তিরমিজি ২৫২৬)
.
১৪. জান্নাতের সকল গাছের কাণ্ড হবে সোনার। (তিরমিজি ২৫২৫)
.
১৫. জান্নাতের ১০০ স্তরের যেকোনো এক স্তরে সারা বিশ্বের সকল মানুষ একত্রিত হলেও তা যথেষ্ট হবে। (তিরমিজি)
.
১৬. জান্নাতে প্রত্যেক ব্যক্তিকে ১০০ জন পুরুষের সমান যৌনশক্তি ও সঙ্গম ক্ষমতা প্রদান করা হবে। (তিরমিজি ২৫৩৬)
.
১৭. জান্নাতবাসীগণ লোম, গোঁফ ও দাড়িবিহীন হবে। তাদের চোক সুরমায়িত হবে। (তিরমিজি ২৫৪৫)
.
১৮. জান্নাতবাসী উট ও ঘোড়া চাইলে দু’টোই পাবে এবং তা ইচ্ছেমতো দ্রুত উড়িয়ে নিয়ে যাবে। তাতে সেসব জিনিস পাবে, যা কিছু মন চাইবে এবং নয়ন জুড়াবে। (তিরমিজি)
.
১৯. জান্নাতে একটি বাজার থাকবে। প্রত্যেক জুমুআয় জান্নাতী লোকেরা এতে একত্রিত হবে। তারপর উত্তরদিকের বায়ু প্রবাহিত হয়ে সেখানকার ধুলাবালি তাদের মুখমণ্ডল ও পোশাক-পরিচ্ছদে গিয়ে লাগবে। এতে তাদের সৌন্দর্য এবং শরীরের রং আরো বেড়ে যাবে। তারপর তারা নিজের পরিবারের কাছে ফিরে আসবে। এসে দেখবে, তাদেরও শরীরের রং এবং সৌন্দর্য বহু বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের পরিবারের লোকেরা বলবে, ‘আল্লাহর শপথ! আমাদের নিকট হতে যাবার পর তোমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে।’ উত্তরে তারাও বলবে, ‘আল্লাহর শপথ! তোমাদের শরীরের সৌন্দর্য তোমাদের নিকট থেকে যাবার পর বহুগুণে বেড়ে গেছে।’ (মুসলিম ৭০৩৮)
.
২০. জান্নাতে একজন কৃষি কাজ করতে চাইবে। তারপর সে বীজ বপণ করবে এবং চোখের পলকে অঙ্কুরিত হবে, পোক্ত হবে এবং ফসল কাটা হবে। এমনকি পাহাড় পরিমাণ স্তুপ হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘‘হে আদাম সন্তান! এগুলো নিয়ে যাও, কোনো কিছুই তোমাকে তৃপ্তি দেয় না!’’ (বুখারী ২৩৪৮)
.
২১. জান্নাতে এমন সব নিয়ামত প্রস্তুত রয়েছে, যা কখনো কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং কোনো অন্তর কল্পনাও করেনি। (বুখারী ৩২৪৪)
আল্লাহ রাববুলআলামিন আমাদের কে জান্নাতে যাবার জন্য আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জনের আমল করার তাওফিক দিন। আমীন