লা মাযহাবী ও আহলে হাদীস আব্দর রাজ্জাক তিনি ৬ মাস ধরে গবেষণা করে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খুজে পায় না এটা নাকি এক সাথে লেখা শির্ক (নাউজুবিল্লাহ)
অথচ অনেক হাদিছে কি বলে দেখুন
عن انس بن مالك قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: دَخَلْتُ الجَنَّةَ فَرَأيْتُ فِي عارِضَتِي الجَنَّةِ مَكْتُوباً ثلاثة أسطر بالذهب: السطر الأول لا إله إِلَّا الله محمَّدٌ رَسوُلُ الله والسَّطرُ الثَّانِي ما قدمنا وَجَدْنا وَمَا أكَلْنا رَبِحْنا وَمَا خَلَّفْنا خَسِرْنا والسَّطْرُ الثَّالِثُ أُمَّةٌ مُذْنِبَةٌ وَرَبٌّ غَفُورٌ
“হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ইরশাদ করেন, মেরাজকালে আমি বেহেশতে প্রবেশের সময় এর দু’পাশে দেখি তিনটি লাইনে স্বর্ণাক্ষরে লেখা :
এক. লা ইলাহা ইল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।
দুই. আমরা যে ভালো কর্ম পেশ করেছি, তা পেয়েছি। যা খেয়েছি তা থেকে উপকৃত হয়েছি। যা ছেড়ে এসেছি, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
তিন. উম্মত হলো গোনাহগার, আর রব হলো ক্ষমাশীল।
(জামেউস সগীর সুয়ূতী ১/৮৭১ হাদীস নং ৪১৮৬, ইমাম সুয়ূতী লেখেন, হাদীসটি সহীহ)
হাদীস নম্বর দুই.
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত লম্বা একটি হাদীসে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তদানীন্তন কাফের ও সত্যিকারের মুসলমানদের অবস্থার বিবরণ দিতে গিয়ে বর্ণিত আয়াতের আলোকে বলেন-
إِذْ جَعَلَ الَّذِينَ كَفَرُوا فِي قُلُوبِهِمُ الْحَمِيَّةَ حَمِيَّةَ الْجَاهِلِيَّةِ فَأَنْزَلَ اللَّهُ سَكِينَتَهُ عَلَى رَسُولِهِ وَعَلَى الْمُؤْمِنِينَ وَأَلْزَمَهُمْ كَلِمَةَ التَّقْوَى وَكَانُوا أَحَقَّ بِهَا وَأَهْلَهَا وهى لا اله إلا الله محمد رسول الله”
কাফেররা মুসলমানদের সাথে সেই অজ্ঞ যুগের বাড়াবাড়িতে লিপ্ত ছিল। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা’আ লা (মুসলমানদের একত্মবাদের ফলে) রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও মুমিনদের ওপর স্বীয় প্রশান্তি অবতরণ করেন। আর তাদের জন্য তাকওয়ার কালিমা আবশ্যক করে দেন। যার সত্যিকার ধারক তারাই। এই তাকওয়ার কালিমাটি হলো “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (বায়হাকী পৃ. ১৩১ কিতাবুল আসমা ওয়াসসিফাত)
এই হাদীসের সব বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য, হাদীসটি সহীহ।
উল্লেখ্য, এই হাদীসটি মূলত কুরআনে কারীমের সূরায়ে ফাতহ-এর ২৬ নম্বর আয়াতে উল্লিখিত كلمة التقوى (কালিমায়ে তাক্বওয়া)-এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বর্ণিত অসংখ্য হাদীসের একটি মাত্র। এ ছাড়া তাফসীরের প্রায় সব কিতাবে কালিমায়ে তাক্বওয়ার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখেছেন, তা হলো “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রায় ৫০টিরও বেশি তাফসীর গ্রন্থ আমরা যাচাই করেছি। বিশেষ কয়েকটি গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/১৬৫, রূহুল মা’আনী ১৩/২৯২, কুরতুবী ১৬/১৯০, তাবারী ১১/৩৬৫, বাগাবী ৫/১১৬)
হাদীস নম্বর তিন.
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেন, কুরআনে কারীমের সূরায়ে কাহাফের ৮২ নম্বর আয়াত- “এর নিচে ছিল তাদের গুপ্ত ধন” গুপ্ত ধন বলতে একটি স্বর্ণের বোর্ড, এতে কয়েকটি বিষয় লেখা ছিল। সবশেষে লেখা ছিল “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (তাবরানী কিতাবুদ দু’আ হাদীস নং ১৬২৯, বায়হাকী যুহদ, হাদীস নং ৫৪৪, সুয়ূতী আদদুররুল মনসূর ৯/৬০০)
এই হাদীসের সব বর্ণনাকারী পরিপূর্ণ নির্ভরযোগ্য বা ثقة শুধু বুশাইর নামক একজন যাকে صدوق বা গ্রহণযোগ্য
বলা হয়েছে। তাই হাদীসটি হাসান বা অন্যান্য হাদীসের সমন্বয়ে সহীহ।
হাদীস নম্বর চার.
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: «كَانَتْ رَايَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَوْدَاءَ وَلِوَاؤُهُ أَبْيَضُ، مَكْتُوبٌ عَلَيْهِ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ»
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর ঝা-াটি ছিল কালো এবং পতাকাটি ছিল সাদা রঙের। এই পতাকায় লেখা ছিল “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”। (আল মু’জামুল আওসাত তাবরানী ১/১২৫ হাদীস নং ২২১, শামায়েলে ইমাম বাগাবী হাদীস নং ৮৯৪) এই হাদীসের বর্ণনাকারীগণ সবাই নির্ভরযোগ্য। একজন বর্ণনাকারী “হাইয়্যান” কেউ কেউ অপরিচিত বলে আপত্তি করার সুযোগ খুঁজেছেন। কিন্তু এতে এমন কোনো সুযোগ নেই। তার সম্পর্কে হাদীস বিশারদ ইমাম আবু হাতেম (রহ.) বলেন صدوق নির্ভরযোগ্য। এ ছাড়া ইমাম বাযযার (রহ.) তাকে সুপ্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস বলে অবি হত ক রে ন। ( আলজারহু ওয়াত্তা’দিল ৩/২৪৬)
হাদীস নম্বর পাঁচ.
عن يوسف بن صهيب، عن عبد اللَّه بن بريدة، عن أبيه، قال: انطلق أبو ذر ونعيم ابن عم أبي ذر، وأنا معهم يطلب رسول اللَّه صلّى اللَّه عليه وآله وسلّم وهو مستتر بالجبل، فقال له أبو ذر: يا محمد، أتيناك لنسمع ما تقول، قال: أقول لا إله إلا اللَّه محمد رسول اللَّه، فآمن به أبو ذر وصاحبه.
বুরাইদা (রা.) বলেন, আবুজর ও নুআইম তারা দুজন রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খুঁজে বের হন। আমি তাঁদের সাথে ছিলাম। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন এক পাহাড়ের আড়ালে ছিলেন। তখন আবুজর তাঁকে বলেন, হে মুহাম্মদ আপনি কি বলেন আমরা শুনতে এসেছি। তখন রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি বলি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”। (আল ইসাবা ইবনে হাজর ৬/৩৬৫, হাদীস নং
৮৮০৯, যিয়াদাতুল মাগাযী ইউনুস ইবনে বুকাইর)
এই হাদীসের সনদ সহীহ, সব বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য।
তাছাড়া উম্মতের ইজমা ও নিরবচ্ছিন্ন আমলী সূত্র পরম্পরায়ও তা কালিমায়ে তাইয়্যিবাহ হিসেবে স্বীকৃত। সৌদী আরবের পতাকায়ও এ কালিমা অংকিত আছে।
আল্লাহ তাআলা এমন অজ্ঞ গবেষকদের মুর্খতাসূলভ গবেষণা থেকে উম্মতের ঈমান ও আমলকে হিফাযত করুন। (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)