২০০২ সালে এরদোগান তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নতুন করে কাজ শুরু করেন। তার দল এ কে পার্টি প্রতিষ্ঠার পর তার বক্তব্য ছিল, কোন কিছুই আর পুরাতনের মতো হবে না। কথাগুলো সামনে নিয়ে নতুন তুরস্ক গঠনে প্রচÐ গতিতে উন্নয়নে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ২০০২ সালের নির্বাচনে জয়ের পর থেকে একটানা ১৫ বছর এ কে পার্টি তুরস্কের শাসন ক্ষমতায় আছে। কতটা পরিবর্তন হয়েছে তুরস্কে? এরদোগানের প্রতিশ্রæত নতুন তুরস্ক কি নতুনের মতো হয়েছে, নাকি পুরাতনই থেকে গেছে? তাহলে চলুন দেখে নেই তার দেশের প্রতিটি সেক্টরে তিনি কী রকম উন্নতি করেছেন।
এরদোগান ক্ষমতায় বসার ৩ বছরের মধ্যে যা করেন তাহলো অর্থনীতি, শিক্ষা, যোগাযোগ ও স্বাস্থ্যখাতে বড় ধরনের পরিবর্তন করেন। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১১.১% করেন। আগের সরকারগুলো ৭৯ বছরে রাস্তা করে ৬ হাজার কিলোমিটার। এরদোগান সরকার ১৫ বছরে করেছে ১৮ হাজার কিলোমিটার। ২০০২ সালে মাথা পিছু আয় ছিল ৩ হাজার ডলার, তার সরকার করেছে সাড়ে দশ হাজার ডলার। আগের সরকারের সময় রফতানি ছিল ৩৬ মিলিয়ন ডলার, এখন হয়েছে ১৫৫ বিলিয়ন ডলার।
আইএমএফের ২৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ সরকার শূন্যেতে নিয়ে এসেছে। আগে একেক শ্রেণীতে ৭০-৮০ জন ছাত্র পড়াশোনা করতো, এখন আজকের বিশ্ব মানের সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিটি শ্রেণীতে ২৩-২৪ জন ছাত্র পড়ে। আগে লোকজন ফ্লোরে শুয়ে চিকিৎসা নিতো। এখন ফাইভস্টার মানের হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। যেমন স্বাস্থ্য খাতে এতই উন্নতি হয়েছে যেটা আমেরিকা করতে পারেনি। আগে তুরস্কের লোক ইউরোপে গিয়ে চিকিৎসা নিতো, এখন ইউরোপের অনেক লোক তুরস্কে এসে চিকিৎসা গ্রহণ করে। পুরো তুরস্কের অবকাঠামো উন্নয়ন, সামাজিক উন্নতিসহ বিশেষ করে যাতায়াতে সড়ক পথ, রেলপথ, আকাশপথে এত বেশি উন্নয়ন হয়েছে যেটা তুরস্কে ৮ কোটি জনগণ কোনদিন স্বপ্নেও চিন্তা করতে পারেনি।
এ কে পার্টি ২০১১ সালে ভীশন ২০২৩ ঘোষণা করে তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের ১০০ বছর পূর্তিতে নতুন এক তুরস্ক গঠনের অঙ্গীকার করে, যে তুরস্ক বিশ্বের নেতৃত্ব দেবে। সে জন্য দেশের অভ্যন্তরেও সকল সেক্টরকে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সকল সেক্টরে সুবিশাল এক উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং বিশ্ব রাজনীতিতে তুরস্ককে মর্যাদার আসনে নিয়ে যেতেই এখন এ কে পার্টি কাজ করছে। এ কে পার্টি শুরু থেকেই রাজনীতিকে জনগণের আস্থায় নিয়ে আসা, রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি একটি সুশাসন নিশ্চিত করেছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা: এ কে পার্টি ২০০২ সালে যখন ক্ষমতায় আসে তখন সারা দেশে ছিল ৬১১৯ কিলোমিটার সড়ক। ২০১৬ সালের শেষের দিকে এসে তা ২৫১৯৭ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। আগে তুরস্কের মোট ৫৯৬৭টি সেতু ও ব্রিজ ছিল যেগুলোর মোট দৈর্ঘ্য ছিল ৩১১ কিলোমিটার। ২০১৬ এসে তা দাঁড়িয়েছে ৮১০০টিতে যার মোট দৈর্ঘ্য ৫২০ কিলোমিটার। ২০১৩ বরফ রাশ ট্যানেলের পানির ৫৬ মিটার নিচ দিয়ে নির্মাণ করা মারামারাই রেলপথ (টানেল) উদ্বোধন করা হয়। যা এখন দৈনিক ১ লাখ ৮২ হাজার যাত্রী পরিবহন করে। এশিয়া ইউরোপের দুই মহাদেশের মধ্যে যোগাযোগকারী এই রেল টানেলটি পুরো ইস্তামবুলের যাতায়াত ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। খরচ হয়েছে ৪ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয়টি হলো ইউরোশিয়া (ইউরোপ-এশিয়া) টানেল যা বরফ রাশ পানির ১০৫ মিটার নিচ দিয়ে যাওয়া রেল ও সড়ক পথ। এটি নির্মাণ করতে খরচ হয়েছে ১.২ বিলিয়ন ডলার। তৃতীয় বড় প্রজেক্ট হলো, বরফ রাশ সেতু ইয়াভুজ সুলতান সেলিম ব্রিজ যা ২.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে নির্মিত। এই সেতুটি ইস্তাম্বুলের শুধু বর্তমানের লোকদের নয় বরং ভবিষ্যত প্রজন্মকে বিশাল সেবা দেবে।
রেল লাইন: ২০১৩ সালের ৯ মার্চ আনকারা ইস কে শিহিরহাই স্পিড লাইনের মাধ্যমে তুরস্কের ইতিহাসে প্রথম হাইস্পিড ট্রেন (দ্রæত গতির রেল লাইন) চালু হয়। হাইস্পিড ট্রেন ব্যবহার শুরু হয়েছিলো ১৯৫৭ জাপানে এবং ’৬৫ সালেই ইউরোপে চালু হয়েছে। পাশাপাশি আনকারা ইজসির, আনকারা সিডস, বুরসা বিনেজিক ও চোনিয়া কারমানসহ আরও বেশ কিছু দ্রæত গতির রেললাইন এখন নির্মাণাধীন। সরকার মোট ১৮০৫ কিলোমিটার হাইস্পিড ট্রেন লাইন নির্মাণ করেছে এবং ৩৪৮১ কিলোমিটারের কাজ দ্রæত গতিতে চলছে। এই ট্রেনের গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার। ২০০ কিলোমিটার বেগে যখন এই ট্রেন ছোটে তখন মনে হয় চোখের পলকেই মাইলের পর মাইল চলে যাচ্ছে। কোন শব্দ নেই। নিঃশব্দে এগিয়ে যায় এই দ্রæতগতির বাহনটি। হাইস্পিড ট্রেনের স্টেশনগুলোকে খুবই আধুনিক। যার প্রথমটি করা হয়েছে রাজধানী আনকারাতে। বাইরে থেকে দেখলে বুঝার উপায় নেই যে এটি কোন স্টেশন। মনে হবে ফাইভস্টার হোটেল ও মল। ২০০৩ সালে সাধারণ রেললাইন ১০৯৫৯ কিলোমিটার থেকে বেড়ে বর্তমানে ১২৫০২ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। শহরগুলোতে আধুনিক মেট্রো ও পাতাল রেল স্থাপন করা হয়েছে।
আকাশ যোগাযোগ: ২০০৩ সালে তুরস্কে ২৬টি এয়ারপোর্ট ছিল। ২০১৬ সালের শেষে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৫৫টি। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া তার্কিশ এয়ার অভ্যন্তরীণ রুটে ২টি গন্তব্য থেকে ২৬টি রুটে যেত, এখন তা বৃদ্ধি পেয়ে ৭টি গন্তব্য থেকে ৫৫টি রুটে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি ৬টি অন্যান্য বড় বিমান পরিবহন সংস্থা তাদের ফ্লাইট চালু করেছে। ২০০২ সালে যেখানে ৮.৫ মিলিয়ন লোক অভ্যন্তরীণ বিমান ব্যবহার করছে। যেখানে ২০১৩ সালে এসে ৭৬ মিলিয়ন যাত্রী অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ব্যবহার করছে। উদাহরণ স্বরূপ আনকারা ইস্তাম্বুল দূরত্ব প্রায় ৬০০ কিলোমিটার। সড়ক পথে যেতে সময় লাগে ৭ ঘণ্টা। ভাড়া যাওয়া-আসা ১৪০ লিরা। বাংলাদেশি তিন হাজার টাকা। আর আনাদুলু জেট এয়ার যাওয়া-আসার ভাড়া ৮০ লিরা বাংলাদেশি টাকায় ১৭শ’ টাকা। ২০০০ সালে তার্কিশ এয়ার বিশ্বের ৬০টি রুটে যেত, এখন সেটা দাঁড়িয়েছে ২২৯-তে। ২০০২ সালে তার্কিশ এয়ার ২৪ মিলিয়ন যাত্রী পরিবহন করেছে। ২০১৩ সালে ৭৩ মিলিয়ন করেছে। তার্কিশ বিশ্বের সেরা ১০টি এয়ারের অন্যতম।
এরদোগান অবহেলিত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একমাত্র খাঁটি ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তার প্রমাণ তার আমলেই আফ্রিকার প্রায় সবগুলো দেশেই তুরস্কের দূতাবাস স্থাপিত হয়েছে। ২০০৪ সালে যেখানে ১২টি দূতাবাস ছিল ২০১৬ সালে এসে তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯টিতে। এরদোগান নিজে উদ্যোগ নিয়ে আফ্রিকার অধিকাংশ দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ নানা ক্ষেত্রে তার কার্যক্রম প্রসারিত করেছেন। অনেক দেশে আন্তর্জাতিক মানের এয়ারক্রাফট নেই; তাই তার্কিশ এয়ার তাদের ৩০টি দেশের ৪০টি এয়ারপোর্টে নিয়মিত যাওয়া-আসা করে। মানবদরদী এরদোগানের কারণে আফ্রিকার দেশগুলো বিমানের এই সার্ভিস পেয়ে অনায়াসে বিশ্বের যে কোন দেশে ভায়া ইস্তাম্বুল হয়ে স্বল্প সময়ে যাতায়াত করতে পারে।
তুরস্কের ইস্তাম্বুলের দুটি বিমানবন্দর কামাল আতাতুর্ক ও সাবিহা গুকচেন পৃথিবীর অন্যতম ট্রানজিট বিমানবন্দর। অনেক বেশি ব্যস্ত এই দুটি বিমানবন্দর। বর্তমানে চাপ সামলাতে কষ্ট হচ্ছে। সে জন্য ইস্তাম্বুলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এয়ারপোর্ট নির্মাণ কাজ চলছে যা তুরস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ প্রজেক্ট। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে এর উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে। বছরে ৯০ মিলিয়ন যাত্রী পরিবহন করতে পারবে নতুন এ এয়ারপোর্ট। পুরো কাজ শেষ হলে এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ১৫০ মিলিয়নে।
স্বাস্থ্য খাত: মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে স্বাস্থ্য অন্যতম। এ কে পার্টি তার ১৫ বছরের শাসনে এ সেক্টরে সীমাহীন পরিবর্তন করেছে। সকল নাগরিকদের জন্য ইন্স্যুরেন্স ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে যার মাধ্যমে নাগরিকরা বিনামূল্যে সব ধরনের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানো থেকে নিয়ে অস্ত্রপ্রচার, নানা রকমের পরীক্ষাসহ কেবিন বেড বিনা অর্থে পাবেন। ২০০২ সালের পর বর্তমান সরকার এ পর্যন্ত ২৪৯৪টি নতুন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট স্থাপনা নির্মাণ করেছে। এর মধ্যে ৭৫৭টি হাসপাতাল এবং ১৭৩৭টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র। আগের মেডিকেল কলেজগুলোকে রাতারাতি আসন সংখ্যা দ্বিগুণ এবং নার্সিং ইন্সটিটিউটে আড়াই গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতিটি মহল্লা/গ্রামে একটি করে স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে বিশেষ করে মা-শিশুরা চিকিৎসাসেবা পায়। হাসপাতালে এম্বুলেন্স সংখ্যা ২০০২ সালে ছিল ৬১৭টি, বর্তমানে ৪৮৪০টিতে দাঁড়িয়েছে। জরুরি চিকিৎসা কেন্দ্র ৪৮১ থেকে বর্তমানে ২১৬৫টি। জনগণকে আরো বেশি করে জরুরি চিকিৎসা দিতে ১৭টি হেলিকপ্টার এম্বুলেন্স, ৩টি এয়ার এম্বুলেন্স, ৬টি সি এম্বুলেন্স এবং ৩৩০টি বরফের উপর দিয়ে চলতে পারে এমন এম্বুলেন্স বরাদ্দ করা হয়েছে। ১১২-তে ফোন করে যে কোন লোক ওই সব সেবা পেতে পারে।
শিক্ষা ব্যবস্থা, উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা: শিক্ষা জাতীয় উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এ কে পার্টি তার ১৫ বছরের সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা, শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। শ্রেণী কক্ষের সংখ্যাও দ্বিগুণ করেছে। সে সাথে ছাত্রদের বিনামূল্যে বই প্রদান, ক্লাস রুমকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে ডিজিটাল করা, অঞ্চলভিত্তিক শিক্ষা বৈষম্য দূর করা ও সকল স্কুলে সবচেয়ে গতিশীল ইন্টারনেট কানেকশনের ওয়াই ফাই-এর ব্যবস্থা করেছে।
উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণায় এ কে পার্টি বিরাট পরিবর্তন সাধন করেছে। ২০০২ সালে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ৫১টি, এ আমলে হয়েছে ১২২টি। আগে বেসরকারি ছিল ২২টি, বর্তমানে হয়েছে ৫৫টি। ২০০৩ সালে সরকারি কলেজ ছিল ৪২৫টি বর্তমানে হয়েছে ২৪২২টি। বিজ্ঞান কলেজ আগে ছিল ৫৮টি, বর্তমানে আছে ২৯৪টি। সামাজিক বিজ্ঞান কলেজ আগে ছিল ৫৮টি, বর্তমানে ৯৩টি। ইমাম হাতির কলেজ আগে ছিল ৫৩৫টি, বর্তমানে ১৪০৮টি। ২০০২ সলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংখ্যা ১৯,১৮,৪৮৩ জন ছিল; বর্তমানে আছে ৭,৩১৩,৪০৩ জন। ২০০২ সালে শিক্ষা খাতে বাজেট ছিল ৭.৫ বিলিয়ন লিরা, বর্তমানে ৮৫ বিলিয়ন লিরা। উচ্চ শিক্ষা বাজেট আগে ছিল ২.৫ বিলিয়ন লিরা বর্তমানে ২৫ বিলিয়ন লিরা। বিদেশি ছাত্রদের ব্যাপকভিত্তিক মাস্টার্স ও পিএইচডিতে স্কলারশিপ দিচ্ছে সরকার। এতে বছরে বিশ্বের ২০০টি দেশ থেকে ৫ হাজার ছাত্র এ সুযোগ পেয়ে তুরস্কে এসে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। সরকার গবেষণার গুরুত্ব দিতে স¤প্রতি বেশ কিছু নতুন বিশ্ববিদ্যালয় চালু করেছে। এতে ছাত্ররা শুধুমাত্র মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্স করে। সা¤প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয়েছে যেগুলো পুরো বিশ্বের জন্য মডেল হতে পারে। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের জন্য। যেগুলোতে রয়েছে মন-মগজে ইসলামী দর্শন ও শিক্ষার পুরোপুরি এক পাঠ্যক্রম। পাশাপাশি ইসলামী রিসার্চ নামে ইস্তাম্বুলে বিশাল এক গবেষণা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে যাতে ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে কাজ করা গবেষকদের খোরাক পূরণ হবে। আর হচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ লাইব্রেরি যেখানে ৫ মিলিয়ন বই রাখার ব্যবস্থা থাকবে। শুধু কি তাই এর পাশাপাশি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় যেটি ২০১৯ সালের শেষে উদ্বোধন হবে এবং এ কে পার্টি প্রতিটি বড় বড় সিটিতে একটি করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রকল্প তৈরি করছে।
এছাড়াও সরকার ৩০টি বৃহৎ স্টেডিয়াম নির্মাণ করেছে। গত ১৫ বছরে ১৮৩টি ইনডোর স্টেডিয়াম নির্মাণ করেছে, তুরস্কের মিডিয়াও সম্প্রসারিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় টিভি ১৪টি, মোট টিভি চ্যানেল ৫০০টি। এছাড়া ১১ শতাধিক রেডিও স্টেশন রয়েছে। ৪১টি ভাষায় টিভি অনুষ্ঠান প্রচার করে। দেশে ১৩৯৭টি পৌরসভা ও ৩০টি সিটি কর্পোরেশন রয়েছে। এর মধ্যে ৮৮৪ ও ১৮ জন মেয়র এ কে পার্টির।
অর্থনীতি: ২০০২ সালে যেখানে জাতীয় আয় ছিল ২৩০ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০১৪ সালে এসে দাঁড়ায় ৮২২ বিলিয়ন ডলার। মাথা পিছু আয় ২০০২ সালে যেখানে ৩৫০০ ডলার, সেখানে ২০১৩ সালে এসে দাঁড়ায় ১০৮০৭ ডলার। ২০০২ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২৬.৭ বিলিয়ন যা এখন বেড়ে ১১৩.৩ ডলারে পৌঁছেছে। স্বর্ণের রিজার্ভ ১৩২.৯ ডলার। ২০০০, ২০০১, ২০০২ তুরস্ক ছিল আইএমএফের অন্যতম শীর্ষ ঋণকারী দেশ। এ কে পার্টি ক্ষমতায় আসার পর ২০১৩ সালে এসে তা শূন্য ঋণে পরিণত হয়েছে। ২০০২ সালে তুরস্ক যেখানে ৩৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করতো, বর্তমানে করে ১৪৩ বিলিয়ন ডলার। তুরস্ক বিশ্বের ২২তম রফতানিকারী দেশ হিসেবে পরিচিত। ভিশন ২০২৩ অনুযায়ী রফতানি আয় ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল এক লক্ষ্যে পুরোদমে কাজ করছে সরকার।
তুরস্কের নির্মাণ ও ঠিকাদারি কোম্পানিগুলো বর্তমান বিশ্বের অন্যান্য দেশেও প্রভাবশালী স্থান দখল করে আছে। রাশিয়া থেকে মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া, বালকান, আফ্রিকাসহ বিশ্বের ১০৪টি দেশে তুরস্ক নির্মাণ সেক্টরে কাজ করছে। এসব দেশে ২৯৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ৭৬১৪টি প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করছে। ২০১৪ সালের নির্মাণ সেক্টরে বিশ্বে বৃহৎ ২৫০ কোম্পানির মধ্যে ৪২টি কোম্পানি স্থান পেয়ে তুরস্ক দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে, যেখানে চীন প্রথম।
মুসলিম বিশ্বের জন্য নিবেদিত এরদোগানের নতুন তুরস্ক বর্তমানে ছুটছে ভিশন ২০২৩ বাস্তবায়নের পথে। ২০২৩ সালে তুরস্ককে আরো মর্যাদা সম্পন্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বড় বড় পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। একদিকে বিশ্ব বাণিজ্য তুরস্ক অন্যতম রফতানিকারক দেশে পৌঁছতে পদক্ষেপ নিচ্ছে অন্যদিকে প্রতিরক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিল্পায়ন, স্থানীয়ভাবে মোটর গাড়ি নির্মাণসহ অর্থনীতিকে এক শক্তিশালী ভিতের উপর স্থাপন করতে কাজ করছে। বিশেষ করে প্রতিরক্ষায় তুরস্ক বরাবরই ন্যাটোর দেশগুলোর উপর নির্ভরশীল ছিল কিংবা অনেকাংশে এখনও আছে। তুরস্ক পঞ্চাশের দশক থেকেই সেই অর্থে নিজস্ব কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে পারেনি। সরকার এখন নিজস্ব প্রযুক্তি ও স্বনির্ভর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরিতে সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে। দেশের রাষ্ট্র প্রধান, তার সঙ্গী, সাথী, মন্ত্রী, এমপি ও সচিবরা যদি সৎ চরিত্রবান ও খোদা ভীরু হন, তাহলে যে কোন দেশকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দেয়া যায়, যার বাস্তব প্রমাণ আজকের তুরস্ক। গত ১৫ বছরে ন্যূনতম শতাধিক বিলিয়ন ডলার খরচে যে উন্নতি করেছে তা রূপ কথার গল্পকে হার মানাবে।
লেখক: নিউইয়র্ক প্রবাসী, গবেষক ও সমাজসেবক।